পেটের জ্বালা

🖋শ্যাম মালাকার 

ধূপকাঠি নেবে বাবু 
     ধূপকাঠি ! 
হরেক রকম ধূপকাঠি।
  শিউলি চন্দন আর গোলাপের রাশ 
ধূপকাঠি আমার মধুর সুবাস ।
ধূপকাঠি নেবে বাবু 
     ধূপকাঠি !
যাদবপুরের ক্যাম্পাস থেকে 
    তখন স্টেশনে ।
সামনে দিয়ে চলে গেলো ,
   ক্ষুদে ধূপকাঠি ওয়ালা। 
মনে ভারি কষ্ট তখন , 
 ভাবতে লাগলাম আমার সেই 
      শৈশব বেলা ।
যে বয়সে আমি স্কুলে গিয়েছি ,
    বই পড়েছি ঘুরেছি অনেক মেলা ।
না জানি তখন খেলেছি কত  
      নৃত্য নতুন খেলা । 
রঙ তামাশার এই দুনিয়ায় 
  রাজনীতির ঐ বহুরুপী তে 
এই ক্ষুদে আজ এই বয়সে - 
       সেজেছে আজ - 
   ধূপকাঠি ওয়ালা। 
কারণ রঙ তামাশার এই দুনিয়ায় - 
     হাতছানি দেয় - 
 পেটের জ্বালা ।
   বাবা সাহেবের সেই নিয়ম - 
লুন্ঠিত আজ স্বাধীন দেশে ।
 কারণ শিশু শ্রমিক ধূপকাঠি বেচে 
   ছন্দ বলে হেঁসে হেঁসে।  
 সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে,
যাদবপুরের ক্যাম্পাস থেকে 
   তখন স্টেশনে ।
ঘুঘনী মুড়ির দোকানে যখন 
     খাবার খেতে যাই । 
তখন বললাম আমি - 
   কাকা মুড়ি ঘুঘনী দাও ।
এই নাও দাদা তোমার টা ।
 তাড়াতাড়ি বলো আরক কী চাও ।
দাদা ডাক টা শুনে 
বুক টা তখন কেঁপে উঠলো ।
  মুখ তুলে চেয়ে দেখি-  
মুড়ি ঘুঘনী দিতে আসলো  
   একটা ছোট্ট পারিজাত পুষ্প ।
মুখে তার কালো কয়লার দাগ ,
    হাত তখন আমার স্তব্ধ। 
চোখ দুটি ঐ পারিজাত পুষ্পের মুখে -
     থমকে গেছে ।
হঠাৎই একটা ভয়ঙ্কর আওয়াজে 
   আমার নিরবতা কাটলো ।
সেই হাঁসি মুখে কয়লার কালো দাগ
তখন আর মধুর নয় ।
  কারণ পিছন থেকে একটা 
যম কালো ভদ্রলোক বলে উঠলো রাগে
শ্যাম একটা কাজ করতে এতক্ষন ! 
তখন মুখে নেই সেই মলিন হাঁসি - 
   যা ছিল ভরা কয়লার কালো দাগে ।
এতক্ষণে জানতে পারলাম- 
  ঐ পারিজাতের নাম আর আমার নাম এক।
স্তব্ধ তখন এই দুই নয়ন ।
 ভাবতে লাগলাম আমার সেই -
    শৈশব বেলা ।
যে বয়সে আমি স্কুলে গিয়েছি ,
    বই পড়েছি ঘুরেছি অনেক মেলা ।
না জানি তখন খেলেছি কত  
      নৃত্য নতুন খেলা । 
রঙ তামাশার এই দুনিয়ায় 
  রাজনীতির ঐ বহুরুপী তে 
এই ক্ষুদে আজ এই বয়সে - 
       সেজেছে সে আজ - 
ঘুঘনী ওয়ালা ।
কারণ রঙ তামাশার এই দুনিয়ায় - 
     হাতছানি দেয় - 
 পেটের জ্বালা ।
   বাবা সাহেবের সেই নিয়ম - 
লুন্ঠিত আজ স্বাধীন দেশে ।
 মধ্যবিত্ত কত শ্যামের ঝুলিতে আজ -
      B.A, M.A,B.ED এর ডিগ্রী।
তারাই হবে রাজনৈতিক নেতা ।
    গলায় তাদের প্রশংসার মালা 
আর রঙ তামাশার এই দুনিয়ায় - 
যে ক্ষুদে শ্যাম ধূপকাঠি বেচে - 
   আচার বেচে আর ঘুঘনী বেচে ,
তাদের ঝুলি তে থাকে - 
  মায়ের ঔষধের চিরকূট 
অথবা ছোট্ট বোনের দুধের প্যাকেট। 
  সম্মানের মালা দূরের কথা । 
এই শীতে তে জোটেনি তাদের- 
    পরনের সেই গরম জ্যাকেট। 
যাদবপুরের ক্যাম্পাস থেকে 
    তখন স্টেশনে ।
ধূপকাঠি নেবে বাবু 
     ধূপকাঠি ! 
হরেক রকম ধূপকাঠি।
  শিউলি চন্দন আর গোলাপের রাশ 
ধূপকাঠি আমার মধুর সুবাস ।
ধূপকাঠি নেবে বাবু 
     ধূপকাঠি !
সামনে দিয়ে চলে গেলো ,
   ক্ষুদে ধূপকাঠি ওয়ালা। 
সারাদিন সে ধূপকাঠি বেচবে
কারণ রঙ তামাশার এই দুনিয়ায় - 
     হাতছানি দেয় - 
   পেটের জ্বালা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ