বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম সেরা ম্যাচ


✍️ রাজা দেবরায়


এবছর অর্থাৎ ২০২২ ইং অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফুটবলের সেরা মঞ্চ 'ফিফা বিশ্বকাপ'। ফিফা অর্থাৎ ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন। এই বছরের বিশ্বকাপ সহ এখন পর্যন্ত ২২টি বিশ্বকাপ হয়েছে। ১৯৩০ সাল থেকেই বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। তবে শুরুতে 'ফিফা বিশ্বকাপ' ছিলোনা, 'জুলে রিমে কাপ' ছিলো। ১৯৭০ সালে ল্যাটিন আমেরিকা ঘরানার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতে অর্থাৎ জুলে রিমে কাপ জিতে চিরকালের জন্য ঘরে তুলে নিয়েছে। কারণ এটাই কথা ছিলো, প্রথম যে দেশ তিনবার বিশ্বকাপ জিতবে সেই দেশ চিরকালের জন্য 'জুলে রিমে কাপ' বগলদাবা করবে। 'জুলে রিমে কাপ'-এর পরেই 'ফিফা বিশ্বকাপ' শুরু হয়।

এবছর ২০শে নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে 'ফিফা বিশ্বকাপ', শেষ হবে ১৮ই ডিসেম্বর। বত্রিশটি দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। গোটা বিশ্ব মুখিয়ে আছে দেখতে কার হাতে বিশ্বকাপ উঠবে। ১৯৩০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বহু বহু ম্যাচ হয়েছে। টানটান উত্তেজনা অনুভূত হয়েছে বহু ম্যাচ। তার মধ্যে মনে রাখার মতো ম্যাচও কম নয়। তবে চিরকাল মনে রাখার মতো ম্যাচের কথা বললে অবশ্যই ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত হওয়া আর্জেন্টিনা এবং ইংল্যাণ্ডের ম্যাচের কথা স্মরণ করতেই হবে।

মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত হওয়া ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপকে বরাবরই 'মারাদোনার বিশ্বকাপ' বলা হয়। যদিও এই কথাটি নিয়ে একটু বিতর্ক আছে বা বিতর্ক করা যায়। কারণ একটা বিশ্বকাপ শুধুমাত্র একজনের নামে উল্লেখিত হলে সেসময়ের বাকি খেলোয়াড়দের অবজ্ঞা করা হয়। আবার এটাও ঠিক যে এই বিশ্বকাপে বাঘা বাঘা খেলোয়াড় থাকলেও অধিক চর্চায় ছিলেন দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যাণ্ডের ম্যাচটি 'মারাদোনার বিশ্বকাপ' এই তকমাটিকে আরও বেশি উজ্জ্বল করেছে। 'হ্যাণ্ড অব গড' এবং 'গোল অব দ্যা সেঞ্চুরি' এই ম্যাচেই দেখতে পেয়েছেন আপামর ফুটবলপ্রেমীরা।

প্রথম হাফটাইম দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেও গোলশূন্য অবস্থায় থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় মারাদোনা ম্যাজিক। ৫১ মিনিটে হওয়া প্রথম গোলটিই ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত গোল, 'হ্যাণ্ড অব গড'! তিউনিশিয়ার রেফারির চোখকে ফাঁকি দিয়ে এবং ইংল্যাণ্ডের গোলকিপার পিটার শিলটনের মাথা টপকে হেড (হাত!) দিয়ে গোল করলেন 'ফুটবলশিল্পী' মারাদোনা। ১-০ গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেলো। এরপর চার মিনিট পরেই বিশ্ববাসী দেখতে পেলো শতাব্দীর অন্যতম সেরা গোল!

মাঝমাঠ তখন আর্জেন্টিনার দখলে। নিজেদের মধ্যে ছোটো ছোটো পাস দেওয়া চলছে তখন। মারাদোনার মুখ নিজের গোলপোস্টের দিকে। হঠাৎ পাস চলে আসে তাঁর দিকে। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন ইংল্যাণ্ডের স্টিভ হজ, পিটার ব্লেটস্লে এবং পিটার রিড। প্রথমে মারাদোনা বাঁ পা বলের উপরে নিয়ে গেলেন এবং এই মুভমেন্টেই এক লহমায় ঘুরে গেলেন ইংল্যাণ্ডের গোলপোস্টের দিকে। পিটার রিড, বুচার এবং উইক তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করলেও মারাদোনা দুর্বার গতিতে ছুটেই চলেছেন। গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এলেন শিলটন। শিলটনকে একপাশে ফেলে এবং ট্যাকল করার জন্য বুচারের শেষ চেষ্টাকে বিফল করে গোল করলেন মারাদোনা। 'গোল অব দ্যা সেঞ্চুরি'!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ