আঙ্কেল

 

-জহরলাল দাস ✍️

গত তিনদিন ধরে পাশ্ববর্তী বাজারের হরিনাম সংকীর্তন উৎসবের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে নিমাই।উৎসব কমিটির  সভাপতি, সম্পাদক ভজন, হারাধন, গোপাল সহ সবাই মিলে নিমাইকে বলে গেছে--" নিমাই তুই তো চাঁদা দিতে পারবি না। তাহলে তুই এক কাজ কর, চাঁদার বদলে উৎসবে তিন চারদিন কাজ করে দে। যে তিন চারদিন ওখানে কাজ করবি ওখানেই দু' বেলা খাওয়া দাওয়া করবি।উৎসব কমিটির দাদাদের সাথে আর বেশি বাক্যব্যয় না করে নিমাই ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে দেয়। 
দাদারা যাওয়ার পর নিমাই তার বউকে জিজ্ঞেস করে-- " কিগো টুটনের মা, তারা যে কইলো উৎসবের  চাঁদার বদলে তিন চারদিন কাম কইরা দিতাম। তুমি কিতা কও? আমি তো হেরার সামনে তোমারে কিছু জিগাইতাম পারছি না। কইয়া দিলাম- "করমু।"
 প্রশ্নের উত্তরে নিমাই- এর বউ বলল---" ভালই তো ।যাও না। চাঁদার বদলে তিন চারদিন কাম কইরা দিবা।আবার ঐখানে বলে তারা দুইবার কইরা খাওয়ন ও দিব। খারাপ কিতা।"
বউ-এর নিশ্চিত সমর্থন পেয়ে নিমাই পরদিন থেকেই উৎসবের কাজে যেতে থাকে।
এই শীত মরশুমে এই এলাকায় হরিনাম সংকীর্তনের সবচেয়ে বড় উৎসব। উৎসব শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই সাজো সাজো রব। পাশ্ববর্তী তিন চার গ্রাম থেকে লোক ভেঙে পড়ে উৎসবে। টানা সাতদিন উদয়াস্ত হরিনাম সংকীর্তনের আসর চলে। 
কত কাজ ওখানে। প্যান্ডেল বাঁধা। তাঁবু খাটানো। মানুষের বসার জন্য শুকনো খড় সংগ্রহ করা, বাঁশ,গাছ যোগাড় করা। মহাপ্রসাদ বিতরনের জন্য লাকড়ি, জল, পাতা ইত্যাদি কত কিছু সংগ্রহ করা।  
নিমাই আবার এসব গ্রাহস্থ কাজকর্ম ভালোই পারে। 
নিমাই পরদিন থেকেই উৎসবের কাজে প্রতিদিন নিয়ম করে চলে যায়। স্নান, খাওয়া সব ওখানেই চলে নিমাই- এর।
সকালে গিয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফেরে ।
বাড়ীতে শুধু তার একমাত্র বছর পাঁচেকের ছোট ছেলে আর বউ। এই তিনজন নিয়েই তাদের সংসার। গত বছর তার বৃদ্ধ মা মারা গেছে। 
এক পুত্র সন্তানের মা হলেও নিমাই- এর বউ এখনো ভর যুবতী।  শরীরের গঠন ও চেহারা-ছবি বেশ নজর কাড়া।
নিমাই একটু সোজা সরল মানুষ। 
সাত পাঁচে নেই। কাজ করে খায়। 
সাংসারিক কিছু টানাপোড়েন থাকলেও চলে যাচ্ছিল।
এ নিয়ে অবশ্য তাদের সংসারে কোন অশান্তি বা অসুখী দেখা যায় নি।
টানা চারদিন উৎসবের কাজ করে পরের দিন নিমাই একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে । 
বাড়ী ফিরে উঠোনে আসতেই দেখলো তার ছেলেটি ঘরের দাওয়ায় বসে একটি বাটিতে বড় বড় দুটো রসগোল্লা আর একটি সিঙ্গারা খাচ্ছিল। ছেলেকে এগুলো খেতে দেখেই একটু অবাক বিস্ময়ে নিমাই  জিজ্ঞেস করে---" কিরে বাবু এগুলো কোথায় পেলি? কে এনেছে?"
ছেলেটি খেতে খেতে তার বাবাকে বলছে--- " আন্কেল দিয়েছে, বাবা আন্কেল--- একটা আন্কেল!"
তুমি যখন বাড়ী থাক না তখন একটা আংকেল আমাকে আর মা-কে কতকিছু দিয়ে যায়। আমাকে আর মা- কে খুব আদর করে। "
এদিকে নিমাই-এর বউ ঘরের ভিতর থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে ছেলেকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়। 
নিমাই তখনো ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবতে থাকে।ভাবতেই থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ