কুলাল' সুভাষচন্দ্র বসু আজও একমেভদ্বিয়ম্ নেতাজী

||  'কুলাল' সুভাষচন্দ্র বসু আজও একমেভদ্বিয়ম্ নেতাজী... ||
✍️ শ্রী রঞ্জিৎ বিশ্বাস

আবার "পৌরুষের বজ্রকৌস্তভ, উল্কার অনলশিখা, রাজনীতির জ্বলন্ত ধূমকেতু" নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু জন্ম নিলেন । অর্থাৎ প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও বরেণ্য মহাপুরুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর এই বছর ১২৭ তম জন্মজয়ন্তী ।  আর ২৩ শে জানুয়ারী দিনটা প্রতিবছর দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেয় যে, নেতাজী সুভাষের মৃত্যু নেই তাঁর কেবল জন্ম হয় । সাম্রাজ্যবাদীরা নেতাজীকে জোর করে যতই মেরে ফেলার চেষ্টা করুক না কেন সে অজয়-অমর-অক্ষয় আছে ও থাকবে । প্রতি বছর প্রতি মুহূর্তে রহস্যময় এই দেশনায়ককে নিয়ে দেশের বিশ্লেষকদের মনে হাজার রকমের বিশ্লেষণ উদয় হয়ে থাকে। তাই, যারা গান্ধীজী, নেহেরু-র অন্ধ ভক্ত সেজে উদ্ভট বিশ্লেষণের ফুলঝড়ি করে থাকেন তাদের এবং প্রকৃত নেতাজী প্রেমী ভারতবাসীদের উদ্দেশ্যে বিশ্বখ্যাত মহান দার্শনিক "প্রাউট" দর্শনের প্রবক্তা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের সুস্পষ্ট, যথার্থ ও ক্ষুরধার বিশ্লেষণটি অবশ্যই ভেবে চিন্তে অনুধাবন করার জন্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে , তিনি বলেছেন---
"ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে যে উদগ্র কুলাল-চেতনা এখানকার জনম একে আলােড়িত, আন্দোলিত ও প্রমথিত করেছিল, সেটা ছিল রাজনৈতিক জগতে সুভাষ বােসের কৌলালিক ভূমিকা। ( 'কুলাল'-এর অর্থ হচ্ছে শিল্পগত বা ভাবগত বা আদর্শগত ব্যাপারে যাঁর বৈদগ্ধ্যিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে ও যিনি তদনুযায়ী পরিকল্পনা করে' এগিয়ে চলেছেন।) যাঁরা বিচার-বিমর্ষে নিরপেক্ষ হয়ে থাকতে ভালোবাসেন তাঁদের আজ জিনিসটা অনুধাবন করবার দিন এসেছে। সেকালের ভারতীয় নেতৃবর্গের প্রতি তিলমাত্র অশ্রদ্ধা না জানিয়েই বলতে পারি, তাঁদের মধ্যে সমাজ-চেতনা ও বৈপ্লবিক চেতনার অভাব তাে ছিলই--কোন দৃঢ়নিবদ্ধ অথনৈতিক চেতনা বা সংরচনাগত কুলালত্ব ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন, বিভিন্ন ভাবে জনমত গড়ে' তুলে ব্রিটিশকে তিক্ত-বিরক্ত করে' তাদের হাত থেকে স্বাধীনতা-রূপী ফসলটি আলতাে ভাবে কাস্তে চালিয়ে তুলে নিয়েই মারাইজাত করে' নেওয়া। এতে সাপও মরবে না--লাঠিও ভাঙ্গবে না। যাঁরা ভাবেন, অহিংসা নীতি কোন নীতিই নয়-অনন্যোপায় মানুষের একটি রাজনৈতিক চাল; তাঁদের মনে রাখা উচিত যে, সেদিনের নেতাদের এই মানসিকতা ঠিক অনন্যোপায় অবস্থা-প্রসূত ছিল না। জনগণের ওপর তাঁদের যে প্রভাব হল সেই প্রভাবের সাহায্যে তাঁরা গণচেতনাকে ব্যাপক ভাবে আন্দোলিত করে' স্বাধীনতা হাসিল করার চেষ্টা করতে পারতেন। একথা অনস্বীকার্য মহাত্মা গান্ধী গণজাগরণ আনিয়েছিলেন--কিন্তু উদ্বুদ্ধ গণচেতনাকে সংগ্রামের পথে পরিচালনা করেন নি। বলতে পারা যায় যে, তাঁদের সকল নীতির মৌলিকত্ব এক ধরণের‌ নেতিবাদে ও সংগ্রামহীনতাতেই আবর্তিত ছিল। সুভাষ বোসের কুলালত্ব ভিন্নধর্মীয়। তিনি চেয়েছিলেন অবস্থার সুযােগ নিয়ে, আরও স্পষ্ট বাংলায় ঝােপ বুঝে কোপ মেরে  প্রতিপক্ষকে বিনাশ করে' স্বাধীনতা হাসিল করা। এখানেই ছিল তাঁর তৎকালীন নেতৃত্বের সঙ্গে কুলালাত্বগত বিরােধ বা বৈষম্য। আর তাঁদের এই বৈয়ষ্টিক গরলের  অভিপ্রকাশ তথা অহিংসার অজগর সাপ–সুভাষ বােসের দেশত্যাগের অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ। রাজনীতির মর্মমূলে প্রবেশ না করেও ভাসা-ভাসা জ্ঞান নিয়ে অথবা ভিন্ন ধরণের উদ্দেশ্যপ্রণােদিত হয়ে যারা সুভাষ বােসকে কুলঘ্ন বা ভ্রান্ত-দেশপ্রেমিক বলত, তারা হয়তাে এটুকু খতিয়েও দেখেনি যে দৈশিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে অর্থনৈতিক মতবাদে ভিন্ন মেরু হওয়া সত্ত্বেও রুশের সঙ্গে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যদি এক পঙক্তিতে বসে ফলার করতে পারে, তাহলে একটি সামরিক শক্তিবিহীন স্বাধীনতাকামী দেশের পক্ষে অক্ষশক্তির (জার্মানী, জাপান ও ইতালী) সহায়তা নিয়ে সুভাষ বােস এমন কী মহাভারত অশুদ্ধ করেছিলেন! আসল যুদ্ধটা তাে ছিল দুটি সাম্রাজ্যবাদী তথা সম্প্রসারণবাদী শক্তির মধ্যে। কোনও পক্ষ গঙ্গাজলে ধােয়া তাবা-তুলসী পাতা ছিল না। সুভাষ বােস দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন আর তা চেয়েছিলেন উদগ্রভাবেই। তাই তিনি এ ব্যাপারে প্রকৃত
সুযােগ সন্ধানীর ভূমিকাতেই নেবেছিলেন। এতে কেউ যদি তার নিন্দা করে, তাহলে‌ বুঝতে হবে সে রাজনৈতিক জীবনে গায়ে আঁচড়টি না লাগিয়েই সস্তায় কিস্তীমাৎ করতে চেয়েছিল। মিত্রশক্তি (ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা ও রাশিয়া) যদি তাদের রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণে সুভাষ বােসকে নিন্দা করে থাকে তাহলে ভিন্ন কুলালত্বের অভিধারক হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোন ভারতবাসীর পক্ষে কি তাদের আওয়াজে আওয়াজ মিলিয়ে সুভাষবােসের বিরােধিতা করা সেই সময় সঙ্গত কাজ হয়েছিল ?" সেদিন স্বয়ং নেতাজী বলেছিলেন-- "কোটি কোটি ভারতবাসীর পক্ষে দাঁড়িয়ে তাঁদের মুক্তির প্রয়ােজনে আমি জীবন দিয়ে যাব; যদি সত্যের কোন মূল্য থাকে, এদেশের মানুষ একদিন বুঝবে আমার হৃদয়ের কথা।" আর আজ পুরো ভারতবাসী সেই হৃদয়ের কথা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে প্রতি মুহূর্তে বলে-- হ্যাঁ, ব্রিটিশমুক্ত স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী যদি নেতাজী হতো তাহলে ভারতবর্ষ এভাবে কখনোই টুকরো টুকরো হতো না ও বর্তমান ভারতের এমন ক্ষুধার্ত ও অরাজকতার অবস্থা দেখতে হতো না । অর্থাৎ বর্তমান ভারতের কেন এমন নিদারুণ অবস্থা ? তার সুস্পষ্ট উত্তর স্বয়ং নেতাজীই সেদিন বলেছিলেন--- "আমার ছেলেবেলায় আমি ব্রিটিশকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়াই সব চাইতে বড় কর্তব্য বলে মনে করতাম। পরে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি যে,ব্রিটিশকে তাড়ালেই আমার কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না।ভারতবর্ষে নোতুন সমাজব্যবস্থা চালু করার জন্য আর একটি বিপ্লবের প্রয়ােজন হবে।" আবারও বলেছিলেন--“ভারতকে যদি প্রকৃতই স্বাধীন হইতে হয় তবে আমাদের শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্র পাইলে চলিবেনা, সামাজিক গণতন্ত্র চাই, অর্থনৈতিক গণতন্ত্রও চাই”। সুতরাং, চলুন দেশবাসী, আর দেরি না করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্যে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ি ও এই মৌলিক স্বাধীনতা আদায় করে আনি আর তবেই দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করা সার্থক হবে । আজও তোমার আসন শূন্য হে বীর পূর্ণ করো হে পূর্ণ করো । জয়তু নেতাজী । লহ শতকোটি নতজানু প্রণাম ।
________________@__________
ইতি--
শ্রী রঞ্জিৎ বিশ্বাস
চড়িলাম, সিপাহীজলা, ত্রিপুরা
১৮/০১/২০২৩ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ