সম্পাদকীয়

বাংলা ভাষার একটি রাষ্ট্র গঠন করার জন্য বাংলাদেশে যে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম চলেছিলো, বাঙালিরা তার সূচনা করেছিলো ১৯৪৮ সাল থেকে, কিন্তু এই সংগ্রাম প্রচন্ড তেজী হয়ে উঠেছিল ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে । যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়ে আত্মবলিদান করেছিলেন । সেই আত্মবলিদানের এবছর 74 তম বর্ষ ।

বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ২১শে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করেন। অনেক তরুণ প্রাণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত সহ আরো অনেক। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিশ্ব বাসির কাছে একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এই মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বহিঃপ্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রতি বছর আজকের দিন অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। এটি ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এইভাবেই এগিয়ে চলুক পৃথিবীর সকল ভাষারা।

নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকার এই সংখ্যাটি প্রত‍্যেক ব্যাক্তির ভাষার প্রতি ভালোবাসার একটি অঙ্গ। হয়তো সেটা অবিচ্ছিন্ন কোন স্মৃতি রূপে, হয়তো সেটা না বলা কোন কথা রূপে, হয়তো সেটা না পৌঁছানো কোন চিঠি রূপে অথবা হয়তো চোখের কোণে কোনো ভালোবাসা রূপে বা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা রূপে। আমরা শুধু নতুন শব্দ মালা গাঁথার জন্য সাগরের বালিকণায় মুক্তো খুঁজি না, নতুন আশা, নতুন ইচ্ছা, নতুন চাওয়া, নতুন অন্তমিলের জন্য আমরা বালিকণায় শব্দ খুঁজি। আর হয়তো ভাষার সাগরের জলেই এই বালিকণা দেখাবে আবার এক নতুন সৃষ্টির কাহিনী।

ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য আমাদের ত্রিপুরা। শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্যে আমাদের ত্রিপুরা সবসময়ই সমৃদ্ধ। আর সেই ভাবধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার আমূল অগ্রগতি অত্যন্ত লক্ষণীয়। 

এই পথে ত্রিপুরার নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকা রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য নাম। রাজ্য, বহিঃরাজ্য, বাংলাদেশ তথা নানান দেশ-বিদেশে নবোন্মেষের দিশা বিস্তারিত। আমরা মন খুলে স্বাগত জানাই নব চিন্তাকে, নব সৃষ্টিকে, নব ভাবনাকে। শ্রী গৌরাঙ্গ সরকার মহোদয়ের সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, ভালোবাসা তথা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ববোধের ফলই এই নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকা।

এই বিশেষ সংখ্যা ডিজিটালে প্রকাশ করার উৎসাহ পেয়েছি একমাত্র আপনাদের সাহিত্যের প্রতি একনিষ্ঠ অনুরাগ, সৃষ্টিশীল ভাবনা আর ভালোবাসার কারণে। আর এই পথে আমরা আরো এগিয়ে গিয়েছি আমাদের বিদগ্ধ অত্যন্ত গুণিজনদের আশীর্বাদ আর অফুরন্ত ভালোবাসায়৷ সাহিত্যিক বৃন্দের জ্ঞানের আলোয় তথা সবার সাহিত্য মনোরম দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এখন পর্যন্ত আমরা এগিয়ে যাচ্ছি৷ পাশাপাশি শুভাকাঙ্খীদের থেকেও সবসময় সহযোগিতা আর উৎসাহ পেয়েছি৷ তাই সবার কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ৷

ধন্যবাদ 
পান্থ দাস 
কার্যকরী সম্পাদক 
নবোন্মেষ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন