"ফুলেশ্বরী"
পিউ তিন বছর বয়েস থেকেই ফুল গাছে লাফ ঝাপ মারা প্রজাপতি, ভ্রমরের পিছনে ছুটতে ছুটতে মা শেফালী কে বলতো ধরে দাও আমি আদর করবো, নয়তো ঘাস ফড়িং এর লেজ বা গঙ্গা ফরি্্ এর লেজ ধরে চেঁচিয়ে বলতো সুতোয় বেঁধে দাও আমি ওর সাথে খেলবো । দাদা কৌশিক বহু কৌশলে প্রজাপতি কালো ভ্রমর ,ঘাস ফড়িং গঙ্গা ফরি্্ ধরে সুতোয় বেঁধে দিতো মনের আনন্দে খেলতো পিউ । কৌশিক কে বলতো থ্যনক ইউ সোনা ভাই ।আর কৌশিক বলতো আর জ্বালাস না ফুলেশ্বরী , আমি পড়তে বসবো ।
সোনাভাই ফুলেশ্বরী ক্রমান্বয়ে বড় হয় ।সে ডাকতারি পড়তে চলে যায় অরুনাচল প্রদেশ ।একা একা খেলে পিউ । তার কথা বলার সঙ্গী ফুল বাগানের ভ্রমর প্রজাপতি ঘাস ফড়িং গঙ্গা ফরি্্ ।
মা শেফালী গাছ লাগান, ফুল গাছের কাটিং করেন বাবা অমিয় ভূষণ ইস্কুলের মাষ্টার ছাড়া ও দলে দলে ছাত্র পড়ান ।গাছ গাছালির দিকে নজর দেবার সময় হয় না ।
অমিয় ভূষণ এর ছাত্র তীর্থঙ্কর সদ্য ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে বাড়িতে এসেছে ।আজ দেখা করতে এসেছে অমিয ভূষণ স্যার এর সাথে । উঠানে দাঁড়াতেই দেখা হয় পিউ র সাথে । প্রথম দর্শনেই তীর্থঙ্কর দেখলো বহু রঙ্গা ফুল বাগানে দাঁড়িয়ে আছে পিউ নামে মানবী প্রজাপতি ।
তীর্থঙ্কর কৌশিক এর সহপাঠী সে সুত্রে আগে ও যাতায়ত ছিলো কিন্তু আজ দেখলো এ পিউ সে পিউ নয় এ যে রূপের হাটে এ অপরূপা ফুল কলি ।
তীর্থঙ্কর হেসে বলল কেমন আছো ফুলেশ্বরী ।
পিউ বললো ফুলেশ্বরী বললে কেন ,
তীর্থঙ্কর বললে আমার ইচ্ছে হলো তাই ডাকলাম ,যদি সু্যোগ পাই বাকি জীবন ডাকবো ফুলেশ্বরী বলে ।
এ আমার সোনাভাই এর দেওয়া নাম ,আর কেউ ফুলেশ্বরী বলে ডাকলে সাড়া দেবো না ।
তীর্থঙ্কর বলে আমার অপরাধ কি ।
পিউ বলে জানিনা। আপনি আমাকে আর কখনো ফুলেশ্বরী বলে ডাকবেন না ।
পিউর বিয়ে হয়ে যায় । তীর্থঙ্কর এর সাথে নয় তমাল এর সাথে ।তমাল স্কুল শিক্ষক । এম এস সি পাশ । তমাল ভদ্র ।পিউ দের বাড়ি থেকে চার বাড়ি পরে । স্বামীর স্্সারে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আরাম আয়েশ এর কমতি নেই । সাজানো গোছানো বাড়ি ঘর । সারা উঠোন জুড়ে ফুলের বাগান । বাড়ির এ কোন ও কোন এ ফুটে থাকে বাহারি রঙের ফুল গুলো । ফুলের সৌন্দর্য সৌরভের লোভে ছুটে আসে অলি ,নাচ গান করে প্রজাপতি লাফায় ঝাপায় ঘাস ফড়িং গঙ্গা ফরি্্ ।পিউর জীবন পূর্ণতা পায় একটা পুত্র সন্তান এর জন্ম দিয়ে ।
পিউর সুখ দুখ আনন্দ বেদনা ভালো মন্দ মিশে যায় তমাল এর জীবনের সাথে ।
পিউর জীবনে ঝড় আসে । চোখে নামে ঢল । এ ঢল আজীবন ব ইতে হবে দু চোখে ।জানে না এর নিস্পত্তি কোথায় ।
ফুলের বাগানে দাঁড়িয়ে এখন ছবি তোলে না পিউ , ছেলের জন্য ধরে না প্রজাপতি ঘাস ফড়িং বা গঙ্গা ফরি্্ । শুধু হতাশা গ্রাস করে পিউ তমাল এর জীবনে ।
সোনাভাই কৌশিক ফুলেশ্বরী বলে ডাকলে সাড়া দেয় না ।
তমালের চাকরি চলে গেছে ।সে এখন কর্মহীন বেকার । সুপ্রিয় কোর্ট রায় দিয়েছে ও শিক্ষা দানের অযোগ্য ।পিউর স্বামী তমাল হতভাগা দশহাজার তিনশো তেইশ এর ছাঁটাই হ ওয়া শিক্ষক ।
ফুলবাগানে ঝাঁক ঝাঁক প্রজাপতি নাচলে ও খিলখিলিয়ে আর হাসে না ফুলেশ্বরী ।
-------
0 মন্তব্যসমূহ