✒️জহরলাল দাস
বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি ", " কে যাসরে ভাটি গাঙ বাইয়া, আমি টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল, "আমি সব ভুলে যাই, তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল "--- উপরোক্ত গানের পঙক্তি গুলো উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে শ্রোতা সাধরনের মানসপটে যে ছবি ভেসে ওঠে, তাকে নতুন করে পরিচিতি দেওয়ার তেমন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারত উপমহাদেশ তথা বাংলা মায়ের এই সুসন্তান কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী আমাদের প্রিয় সুরসম্রাট শিল্পী শচীন দেববর্মণ বা শচীন কর্তা আমাদের ত্রিপুরার এক গর্বের নাম।গোটা দেশের সঙ্গীত প্রিয় মানুষকে তিনি মুগ্ধ করেছিলেন তাঁর সুরের মূর্চ্ছনায়। সারা দেশে এস.ডি. বর্মণ নামে নামে খ্যাত হলেও ত্রিপুরায় তিনি সকলের প্রিয় শচীন কর্তা। কারন এই দেশবরেন্য শিল্পী আমাদের ত্রিপুরার ভূমিপুত্র।তৎকালীন রাজন্য শাসিত বৃহত্তর ত্রিপুরার কুমিল্লা শিল্পীর জন্মস্থান। ত্রিপুরা মানিক্য রাজবংশের রাজা ঈশান চন্দ্র মানিক্যের দ্বিতীয় পুত্র নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ ছিলেন শচীন দেববর্মণের পিতা।কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে শচীন দেববর্মণের পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ রাজ সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেন নি। যারফলে নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ রাজধানী আগরতলা ছেড়ে 1281 ত্রিপুরাব্দের আষাঢ় মাসে কুমিল্লায় গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। 1906 সালের 1লা অক্টোবর বৃহত্তর ত্রিপুরার এই কুমিল্লাতেই শচীন দেববর্মণ জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লার এক সাংস্কৃতিক পরিবেশ পরিমণ্ডলে শচীন দেববর্মণ বড় হয়ে উঠেন। কারন শচীন দেববর্মণের পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ নিজেই ছিলেন একজন ধ্রুপদী সঙ্গীতের দক্ষ শিল্পী।চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্যের প্রতি ও ছিল তাঁর পিতার প্রবল আকর্ষণ। স্বভাবতই জন্মসূত্র এবং প্রকৃতিদত্তভাবেই এসব সদ্গুনের প্রভাব ছেলে শচীন দেববর্মণের উপর পরেছিল।
তাছাড়া কুমিল্লায় তাঁদের বাড়িতে বড় বড় জ্ঞানীগুনী শিল্পীদের আনাগোনা ছোটবেলা থেকেই শচীন দেববর্মণ প্রত্যক্ষ করতেন। অনেকটা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির মত। যার প্রভাব পরবতীর্তে রবীন্দ্রনাথের উপর পড়েছিল। যাইহোক এই কুমিল্লাতেই শচীন দেববর্মণের শৈশব, কৈশোর, যৌবনের দিনগুলো কেটেছিল। কুমিল্লার চোরথায় ছিল তাঁদের বড় বাড়ি। "আম- জাম-কাঁঠালের ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়"- এই কুমিল্লা-ই শচীন দেববর্মণের জীবনের ভিত্তিভূমি। 1920 খ্রিস্টাব্দে শচীন দেববর্মণ জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে আই এ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু স্কুলের লেখাপড়ার চাইতে গানবাজনার প্রতি তাঁর মন নিবদ্ধ থাকত। খেলাধুলার প্রতি ও ছিল প্রবল আগ্রহ।
শচীন দেববর্মণের পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেববর্মণ চেয়েছিলেন শচীনকে বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে আনবেন কিন্তু সঙ্গীতে যার মন আবদ্ধ তাকে কি করে ফিরানো যায়? শচীন দেববর্মণ রাজপরিবারের সমস্ত কৌলিন্য, আভিজাত্য ইত্যাদিকে তোয়াক্কা না করে গানের এক পাগল নেশায় কুমিল্লা জনপদের আউল বাউল ফকির মুর্শিদ সহ আমজনতার সাথে ও মিশে যেতেন নিরদিধায়। এ ব্যাপারে বাড়ির বড়দের আদেশ নির্দেশ ও তিনি মানতেন না।
এ বিষয়ে তাঁর নিজস্ব কৈফিয়তটি উল্লেখ করা যেতে পারে---" রাজবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী জনসাধারণ থেকে আমাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে গুরুজনেরা আমাদের শৈশব থেকেই সচেতন করে দিতেন। তাঁরা তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতেন যাতে আমরা সাধরন লোকের সাথে মেলামেশা না করি। আমি তাঁদের এ আদেশ কোনওদিন ও মেনে চলতে পারি নি। কেন জানি না জ্ঞান হবার সঙ্গে সঙ্গেই মাটির টান অনুভব করে মাটির কোলেই থাকতেই ভালবাসতাম। আর বড়ো আপন লাগত সেই সহজ সরল মাটির মানুষগুলোকে।"
কুমিল্লা অঞ্চল তখন থেকেই একটি বর্ধিষ্ণু এলাকা হিসেবে পরিচিত। শচীন দেববর্মণদের বাড়িতে তখন থেকেই অনেক জ্ঞানীগুনী শিল্পী সাহিত্যিকদের আড্ডাস্হল।
পল্লীবাংলার সেরা গায়কেরা এখানে এসে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। শচীন দেববর্মণ তখন থেকেই এদের প্রভাবে প্রভাবান্বিত হন। উচ্চশিক্ষার জন্য পিতা অনেক চেষ্টা করা সত্বেও ছেলে শচী দেববর্মণের সঙ্গীত নেশার কাছে হার মানেন।1925 সালে বিখ্যাত গায়ক কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে গান শিখতে শুরু করেন। ওস্তাদ ভীষ্মদেবের কাজে ও তিনি গান শেখেন। তখন থেকেই সঙ্গীতই হলো শচীন দেববর্মণের ধ্যান জ্ঞান।
কুমিল্লার বাড়ীতে থাকাকালীন সময়েই নজরুল ইসলাম ও শচীন দেববর্মণদের বাড়িতে আসতেন এবং শচীন দেববর্মণের সাথে গান গাইতেন। আগরতলা- কলকাতা- কুমিল্লা গানের টানে ছুটে বেড়াতেন শচীন দেববর্মন।
তবে শচীন দেববর্মণের প্রানের গান হলো--" লোকগান বা পল্লীগান।
আগেই বলেছি কুমিল্লার পল্লীবাংলার প্রকৃতি হাট- মাঠ- বাট- নদী- নালা, আকাশ- বাতাস শৈশব থেকেই শচীন দেববর্মণের উপর প্রভাব ফেলেছিল। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল বালক শচীনের কাছে পর্বত-দুহিতা চপলা গোমতী নদী। এই নদীর তীরে ছুটে যেতেন, বসে বসে বাজাতেন বাঁশের বাঁশি। আর নৌকার মাঝির ভাটিয়ালি গান শুনে তাঁর মন উদাস হয়ে যেত। এই পরিবেশ তাঁকে ভাবুক হতে সাহায্য করেছিল।
বৃহত্তর ত্রিপুরার বঙ্গসংস্কৃতি প্রভাবিত কুমিল্লাতে হাটে-মাঠে-বাটে তখন থেকেই মাঝি- মাল্লা, আউল- বাউল ফকির মুর্শিদের গানের সুর ভেসে বেড়াতো আকাশে বাতাসে। শৈশব থেকেই শচীনের রক্তে মজ্জায় এগুলো মাখামাখি হয়েছে।পরবর্তী সময়ে তাঁর কন্ঠে আমরা শুনতে পাই " কে যাসরে ভাটি গাঙ বাইয়া, আমার ভাই ধনরে কইও নাইয়র নিত আইয়্যা "। নববধূর আকুতি মেশানো এই গানখানি।
তাছাড়া কুমিল্লার বাড়ীতেই ছোটবেলা থেকেই শচীন তাঁর বাবা এবং তাঁদের বাড়িতে আনোয়ার এবং মাধব নামে দু'জন কাজের লোকের কাছে সঙ্গীত শিক্ষার তালিম নিতেন।
মাধব ও আনোয়ার সন্ধ্যা বেলা ভাটিয়ালি গান করতেন যে গানের ভক্ত ছিলেন শচীন।
1906 সাল থেকে 1924 এই আঠার ঊনিশ বছর শচীনকর্তার কুমিল্লায় কেটেছে লেখাপড়া, খেলাধুলা আর গানের সংমিশ্রণে।
1924 সাল থেকে শচীন কর্তার কলকাতার জীবন শুরু হল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি নিয়ে এম.এ.পড়তে ভর্তি হলেন। কিন্তু রক্তে যার গানের নেশা তাঁর কি পড়াতে মন বসে? একবছর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ায় ইতি দিয়ে 1925 সালে গায়ক কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে গান শিখতে শুরু করেন। তাঁর বাবা ছেলের এই খেয়ালীপনায় যদিও মনক্ষুন্ন হন কিন্তু তাঁর এই সঙ্গীত নেশা আটকানো সম্ভব হয় নি। বাবা নবদ্বীপ চন্দ্র চেয়েছিলেন শচীনকে বিলেতে পাঠিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে আনবেন কিন্তু বাবার ইচ্ছে আর বাস্তবায়িত হল না।
কলকাতায় থেকে ও শচীনের মন পরে থাকত তাঁর সাধের প্রিয় জন্মভূমি কুমিল্লায়। সঙ্গীতের দুনির্বার নেশায় তিনি গায়ক কৃষ্ণচন্দ্রকে নিয়ে আসতেন কুমিল্লায় কখনো আগরতলায়।
কুমিল্লা বা আগরতলা গেলেই শচীন কর্তা গানের খোঁজে গ্রামে চলে যেতেন। নতুন নতুন গান তুলে আনতেন। নবদ্বীপ কর্তার আগরতলা বাড়ির বৈঠকখানায় গানের আসর বসাতেন। ফকির বৈষ্ণবদের ডেকে আনতেন। এসব কাজে তাঁর কোন কুন্ঠা ছিল না। পরবর্তীসময় নিজের আত্মজীবনীতে তিনি নিজেই লিখেছেন--" পূর্ববঙ্গের ওই অঞ্চলের এমন কোন গ্রাম নেই বা এমন কোন নদী নেই, যেখানে আমি না ঘুরেছি।ছুটি ও পড়াশোনার ফাঁকে আমি গান সংগ্রহ করতাম। আমার এখনকার যা কিছু সংগ্রহ যা কিছু পুঁজি সে সবই ওই সময়কার সংগ্রহেরই সম্পদ। আজ আমি শুধু ঐ একটি সম্পদেই সমৃদ্ধ, সে সম্পদের আস্বাদন করে আমার মনপ্রাণ আজ ও ভরে ওঠে। যে সম্পদের জোরে আমি সুরের সেবা করে চলছি--- তার আদি হল আমার ওইসব দিনের সংগ্রহ ও স্মৃতি। "
আগরতলার নিজস্ব " শকুন্তলা রোডের পৈতৃক বাড়িতে ( বর্তমানে যেখানে রবীন্দ্রভবন) গানের মজলিসে তাঁর সঙ্গীত পিয়াসী মন সঙ্গীতের সুধারসে সিক্ত করতেন শচীন। আগরতলায় দুর্গাবাড়ির দিঘির ( কৃষ্ণসাগর) পাড়ে বসে গভীর রাতে আনমনে পল্লীগানের সুরের মায়াজাল বিস্তার করে চলতেন। এইভাবে চলত শচীনের সঙ্গীতের সুরকে করায়ত্ত করার সাধনা।
1925 থেকে 1930 -- এই ছ' বছর শচীন কর্তা কলকাতায় কৃষ্ণচন্দ্র দে, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, শ্যামলাল ক্ষেত্রী ও বদল খাঁ-র কাছে তালিম নিয়েছেন । শচীন দেববর্মণ প্রথম দিকে 1923 খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কলকাতায় তখনও তেমন নাম ডাক হয় নি। কলকাতায় " মহানির্বান রোডে"ওর বাড়িটির নাম ছিল " সুরলোক"। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, হিমাংশু দত্ত, সুধীর চক্রবর্তী অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখদের ছিল নিয়মিত আড্ডা। ওখানে সঙ্গীত নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা, আলোচনা, গবেষণা করতেন ওঁরা।
কলকাতায় তিনি প্রথম গানের রেকর্ড করেন---"ডাকলে কোকিল রোজবিহানে।"(1মপীঠ)
2য় পীঠে--"এই পথে এসো প্রিয়"।
শচীন কর্তা ছিলেন রাগপ্রধান, ধ্রুপদী, পল্লীগীতি ও ভাটিয়ালি গানের পরিবেশনের যথার্থ দূত-শিল্পী।ত্রিপুরাকে তিনি বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন।
এরপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকান নি তিনি। এই কালজয়ী কিন্নরের কন্ঠে গীত হয়ে একের পর এক রেকর্ড বেরুতে লাগল।
ও কালো মেঘ বলতে পারো/ আমি জল ফেলে জল ভরি/ তুমি নি আমার বন্ধুরে/ গৌর রূপ দেখিয়া হয়েছি পাগল/নিশীথে যাইও ফুলবনে ভ্রমরা/ শ্যামরূপ ধরিয়া/ এসেছে মরন/ কালসাগরের মরন দোলায়/ বিদেশিরে উদাসীরে ফিরে তুমি যাও/ধিক ধিক আমার এ জীবনে/ মন দুঃখ মরিরে সুবলসখা/ ব্রজের কিশোরী রাধা বিনে/ মালা খানা ছিল হাতে/মেখলা নিশি ভোরে মন যে কেমন করে/পদ্মার ঢেউরে মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে/আজো নয় প্রিয় আজো/ প্রেম যমুনার পাড়ে/প্রেমের সমাধি তীরে/ ঝন ঝন মঞ্জিরা/ওরে সুজন নাইয়া চাঁদের ডিঙি বাইয়া/বন্দর ছাড়ো যাত্রীরা সব জোয়ার এসেছে আজ/আমি ছিনু একা বাসর জাগায়ে/ মধু বৃন্দাবনে দোলে রাধা/ কথা কও দাও সাড়া/ রঙীলা রঙীলারে আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই গেলারে/ এ পথে এসো না প্রিয়ে/ কহু কহু কোয়েলিয়া ইত্যাদি সব কালজয়ী ভাটিয়ালি, কীর্তন, আধুনিক, রাগপ্রধান, পল্লীগীতি, ঝুমুর, নজরুল সঙ্গীত প্রভৃতি শতাধিক রেকর্ড।
শচীন কর্তার কর্মময় জীবনকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। (1906---1924)--শৈশব ও কৈশোর কুমিল্লায় , দ্বিতীয় অধ্যায়ে (1925--1940)--- কলকাতার কর্মময় জীবন, তৃতীয় অধ্যায়(1944--1975) মুম্বই- এর জীবন। এখানেই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়। সঙ্গীতজ্ঞ ও সঙ্গীত নির্দেশক হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি এই সময়টাতেই।
শচীন দেববর্মণ মোট 131টি বাংলা গান গেয়েছেন। 127টি একক গান। বাকী 4 টি স্ত্রী মীরা দেববর্মনের সঙ্গে দ্বৈত কন্ঠে গেয়েছেন। 114টি গানে শচীন কর্তা শিল্পী ও সুরকার। বন্ধু অজয় ভট্টাচার্যের লেখা মোট 140টি বাংলা গান তিনি গেয়েছেন। যাঁর লেখা বাংলা গান শচীন কর্তা সবচেয়ে বেশি গেয়েছিলেন তিনি বন্ধু অজয় ভট্টাচার্য।
1943 সালে তাঁর জীবনের শেষ বছরে তিনি দুটি ছবি পরিচালনা করেন। একটি ছবি 1943 সালে ও দ্বিতীয় ছবিটি 1944 সালে মুক্তি লাভ করেছে। 1943 সালের ছবির নাম "ছদ্মবেশি" এবং 1944 সালের ছবির নাম "অশোক"।
এই দুই ছবিতেই সুর দিয়েছেন শচীন দেববর্মণ।1944 সালে শচীন দেববর্মণ "ছদ্মবেশি" ছবিতে সুর সংযোজনার জন্য শ্রেষ্ঠ সুরকারের পুরস্কার পান।
"আরাধনা"ছবি প্রথম তাঁকে রাষ্ট্রীয় সন্মানের সুযোগ এনে দেয়। তিনি পদ্মশ্রী খেতাব লাভ করেন এ ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করে। এরপর অসংখ্য ছায়া ছবিতে সুর দিয়েছেন, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন তিনি।1964 সালে "ক্যায়সে কঁহু" ছবিটিতে সুরসৃষ্টির জন্য সুরসৃঙার সংসদ কর্তৃক সন্ত হরিদাস পুরস্কার পান। এর পূর্বে 1959 খ্রীষ্টাব্দে লন্ডনে এশিয়াড ফিল্ম সোসাইটি " পিয়াসা" ছবিতে সুরারোপ করার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পুরস্কার পান। "ফিল্ম ফেয়ার " পুরস্কার পেয়েছেন দু' বার 1953 ও 1974। 1958 সালে সঙ্গীত নাটক একাডেমীতে পুরস্কৃত হন।1962 সালে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে সঙ্গীত প্রতিযোগীতার অন্যতম জুরি হিসেবে মনোনীত হন।
প্রসঙ্গত এইসব পুরস্কার খ্যাতি তিনি 1944 সালের পর স্ত্রী মীরা দেববর্মন ও পুত্র রাহুলকে নিয়ে সপরিবারে মুম্বইতে আসার পর বৃহত্তর সঙ্গীত জীবনে প্রবেশের পর পেয়েছিলেন। এতক্ষণ যতটুকু বললাম তা হলো শিল্পীর বিশাল কর্মময় জীবনের এক ক্ষুদ্র খন্ডাংশ।শিল্পীর বহুবর্ণময় জীবনের আরো অনেক কিছুই বাকী রয়ে গেছে। সারাদিন লিখেও শেষ করা যাবে না। যাইহোক মুম্বই- এর মত চাকচিক্যময় অভিজাত শহরে খ্যাতি ও সন্মানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে ও তিনি নিজ মাতৃভূমি কিংবা জন্মভূমি আপন শিকড়ের কথা ভুলতেন না। সময় সুযোগ পেলেই চলে আসতেন কুমিল্লা, আগরতলায় মা- মাটি- মানুষের টানে। এখানেই শিল্পীর বিশেষত্ব, মহত্ত্ব। যা শিল্পীকে মানুষের গোপন হৃদয়ের অন্তস্তলে ভালবাসার চিরবেদী স্থাপন করে দিয়েছে। 1975 সালে 31অক্টোবর গন মানুষের প্রিয় শিল্পী বাংলা মায়ের কোল ছেড়ে অমর ধামের কোলে চলে গেলেন। রেখে গেলেন মেঠো সুরের রূপ ও গন্ধ।
0 মন্তব্যসমূহ