ডাক

✒️ চন্দন পাল 

এখন আমরা সব ভদ্দর হয়ে গেছি।
উঁচু দেয়াল আর মুঠোফোনের দেয়ালে আটকে
শুনতে ভুলে গেছি সেই দাঁত কিড়মিড়ি গলা ফাটানো ডাক।  
মা ঝাঁড়ু শেষ করে কিংবা বাবা লাকড়ির বোঝা নামিয়ে ডাকতো,,,
"সঞ্জয়, ও সঞ্জু, সইঞ্জা, "
কিংবা ও বাড়ি থেকে 
"দুগ্গিইইই,,, ও ভুতুনি, ও বাদাইম্মা-বাদাম্নী,,,
কই গেলি, দুপুরে চারটা গিলে বেরুলি, আর বাড়ি ফিরে আসার নাম নেই!"

দেখতাম সে ডাক ভেসে যেতো
হাস মুরগী খোয়ারের উপর দিয়ে
গোয়ালঘরের ভিতর দিয়ে
ডানে, পানাপুকুরে ঢেউ তুলে
খেজুর গাছে ধাক্কা খেয়ে
বাঁদিকে, রাঙ্গামাটির বাক্ ধরে 
আমবাগানের নীচ দিয়ে
তুলসী পিদিমের শিখা কাঁপিয়ে 
দূরের কোন মাড ওয়ালের সংসারে, কিংবা
দক্ষিণের কোন মাথানোয়া ছনের চালায়
কিংবা পুবের কোন ঝুলকালির রসি ঘরে। 

কী এক ভীষণ দরকার লুকিয়ে থাকতো, ঐ ডাকে।
কখনো পড়া, কখনো এক ছটাক তেল, কখনো একটু জর্দা, কখনোবা ও বাড়ির পঞ্জিকাটা,
কখনো পাড়ার ঢিলাঢিলির বিচার,
কখনো অনেকক্ষণ না দেখার কষ্ট । 

ডায়ে, বাঁয়ে কিংবা পেছনের এক ফালং দূরে, 
মাড ওয়াল, চৌচালা, আমবাগান রা শুনতো,
খবর হয়ে যেতো,
ভুতু রা এখনো বাড়ি ফিরেনি, ফিরেনি !
যে-ই আগে দেখতো, বলতো "ও সঞ্জয়, ও দুর্গা,,  
যা যা তাড়াতাড়ি বাড়ি যা, নয়ত আজ,,,,
নয়ত আজ পিঠের ছাল উ ঠ বে।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ