✍️ মাধুরী লোধ
সৈবতী শেফালী ফুলের চারা লাগালো পশ্চিম দিকের বাউন্ডারি র ইটের কোল ঘেঁষে ।বারো ফুট উঁচু বাউন্ডারী দিয়েছে পশ্চিম সীমানার মালিক গঙগারাম সাহা ।সৈবতী ঐ সাহার কাছ থেকে বাড়ির জায়গা কিনেছে । পূর্ব শর্ত মতো টাকা নিলে ও সে পরিমাণ জায়গা দেয়নি গঙ্গারাম ,মাপে কারচুপি করে ম্যাপ পাল্টে দিয়ে সৈবতী কে ঠকিয়েছে ।ধরা পরার পর গঙ্গারাম বলছে টাকা দিয়ে যেটুকু বাউন্ডারী র ভিতরে আছে তা লিখিয়ে নেবে বেল গাছের নামে দান হিসেবে ।
এমন জালিয়াতি কানড কারখানা দেখে আকাশ থেকে পড়ে সৈবতী । মানুষের মুখ খর মুখোশ নিয়ে ভাবে ।তার নাওয়া খাওয়া মাথায় উঠে, সুগার বাড়ে প্রেসার বাড়ে । কয়েক দিনে শুকিয়ে কাঠ হয় ।ওর স্বামী পরেশ বসু বলে মেয়েলোক মস্তান কে কৌশলে হারিয়েছে গঙ্গারাম ।
বাউন্ডারী ওয়াল এর ভিতরে সৈবতীর খতিয়ান এর জায়গা সেটা লিখিয়ে নেবার জন্য গঙ্গারাম আইনী নোটিশ পাঠায়।
বিমূঢ় সৈবতী পাশের বাড়ির উলিক কে ডেকে এনে আইনী নোটিশ দেখায় , উকিল আইনী জবাব দেয় ।পরে সৈবতী বুঝতে পারে ঐ উকিল ছেলেটি ও যোগ দিয়েছে গঙ্গারাম এর দলে । সৈবতী বুঝতে পারে তার চারপাশে গঙ্গারাম এর চক্র ব্যুহ ।তার স্বামী পরেশ ও চাইছে টাকা নিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তি করতে । আইনী ঝামেলার চাইতে অল্প তেই সন্তুষ্ট হ ওয়া ভালো ।
সৈবতী কে ঠকিয়েছে গঙ্গারাম ।পৌর নিগম এর নিয়ম অনুযায়ী বাউন্ডারী ওয়াল থেকে তিনফুট তিন ইঞ্চি দুরত্বে ঘর তৈরি করতে হবে যাতে প্রতিবেশীর বাড়িতে জল বা বর্জ্য প্রতিবেশী র বাড়িতে যেতে না পার , কিন্তু গঙ্গারাম এর বাড়ির একটি ঘরের জল বৃষ্টি হলেই এসে পরে সৈবতীর ঘরের ভিতর । বারবার অভিযোগ পত্র দিয়ে ও কোন সুরাহা করেনি পৌরসভা ।সৈবতী বুঝতে পারে পৌরসভার কাউন্সিলর বা অফিসার গঙ্গারাম এর পক্ষে । ওদের আসকারা পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে গঙ্গারাম । এখন সৈবতীর সে ঘরে উই এর বাসা ।ঐ ঘর ওকে ভেঙ্গে ফেলতে হবে । পূর্ব তম বাড়ির মালিক এভাবে ওকে ঠকাবে ভাবতে ও পারেনি সৈবতী । এখন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে অবস্থায় জায়গা টা আছে ওখানেই নতুন করে ঘর তৈরি করে বসবাস করবে ।পুরান ঘরগুলো ভেঙ্গে চুরে বাড়ির ভোল পাল্টে দেবে ।আর কোন যোগাযোগ বা সম্পর্ক রাখবে না গঙ্গারাম এর সাথে ।
সৈবতীর ছেলে রাস্তার পাশ থেকে তুলে এনেছে একটা শেফালী ফুলের চারা । বলেছে এটা বড় হলে ফুল ফুটবে । ঠাকুর পটে দেওয়া যাবে । শেফালী ফুলের চারা কোথায় লাগাবে জায়গা খুঁজতে থাকে সৈবতী । ছেলে বলে বাউন্ডারী র কাছে লাগাও ।
সৈবতী বলে চার ফুট এদিকে লাগাতে হবে ।
ছেলে বলে ঐ বাড়ির বেল গাছের পাতা তো আমাদের বা বড়িতে এসে পরছে , পৌরসভা র অফিসার চোখে দেখে না ।
সৈবতী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে বেল গাছ আমাদের , ওরা জোর করে ওয়াল দিয়ে আটকে রেখেছে ।
ছেলে বলে তুমি শেফালী ফুলের চারা এখানে লাগাও । ফুল ফুটলে ঐ বাড়িতে ও পড়বে ।
ছেলের পরামর্শ মেনে শেফালী ফুলের চারা লাগায় সৈবতী বাউন্ডারী ওয়াল এর কোল ঘেঁষে ।ঐ ছোট্ট চারা বর্তমানে ডালপালা মেলে এ বাড়ি ও বাড়ির দেয়াল ছেড়ে উপর উঠে যাচ্ছে ।
এবারের শরৎ কালে শেফালী ফুলের চারা য় ফুল ফুটেছে । সন্ধ্যায় ভোরে মৌ মৌ করে সুগন্ধে । প্রজাপতি আসে , মৌমাছি আসে । ফুল তোলে সৈবতী । ফুলের বিছানা পড়ে দু পরিবারের সীমানায় । ফুলের সাজি হাতে ফুল নিতে আসে প্রতিবেশীরা । সার্থক হয় শেফালী ফুলের গাছ ।
সৈবতী অপেক্ষা করে আইনী নোটিশ এর । কিন্তু আসে না উকিল নোটিশ , আসে না পৌরসভার কাউন্সিলর ,শহর কমিশনার ।
পুর চেয়ারম্যানের বলেন শান্তিতে বসবাস করুন ।পৌর আইন সকলের জন্য সমান । আপনাদের সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব আমাদের ।
0 মন্তব্যসমূহ