স্থল পদ্ম


✍️মাধুরী লোধ

নতুন বাড়িতে ফুলের চারা লাগানোর জন্য বিজনবিহারী চক্রবর্তী হন্যে হয়ে খুঁজছেন ফুল গাছের ডালপালা । লাগিয়েছেন বিভিন্ন রকমের জবা , গোলাপ এর ডালা , লাগিয়েছেন বাটারফ্লাই , নীলকন্ঠ,মরশুমী গ্যাদা চন্দ মল্লিকা ,মাধবী বারমেসে ফুলের ডালা , গাছের গোড়ায় জল দেবার জন্য ফিট করে রেখেছেন জলের পাইপ, মাঝে মাঝে স্প্রে করেন কীট নাশক ঔষধ ।ভো হলেই ফুলের সাজি হাতে ফুল তোলেন কিছু ফুল গৃহদেবতার জন্য রেখে বাকি গুলো রেখে আসেন যোগমায়া কালি বাড়ি তে মায়ের চরণে দেবার জন্য ।
গাছে আরো ফুল থাকে ভাড়াটিয়াদের পূজার জামা কখনো সখনো ফুল নিতে আসেন প্রতিবেশী গন ,বিজন বিহারী হাসিমুখে বলেন  ফুল ঠাকুরের পায়ে দিয়া আমার নাম কৈবেন ।এই ভাবেই যেনো বাকী দিন কাটাতে পারি ।
গাছে ফুল ফুটলে খুশি তে আত্মহারা হন বিজন বিহারী, ঠাকুর পূজায় দিয়ে মনে সন্তুষ্টি পান আর প্রতি বেশী বা ভাড়াটিয়া পূজায় ফুল দিলে আত্ম তৃপ্তি পান , মনে মনে ভাবেন কিছু তো করতে পারলাম ।
শালা বাবু শুখেন  জামাই বাবুর এমন ফুল প্রীতি দেখে বনধুর বাড়ি থেকে এনে দেয় দুটো স্থল পদ্মার ডালা পুতবার জন্য । একটা সাদা অন্যটি গোলাপী রঙের । মোবাইলে ফুটন্ত গাছের ছবি দেখায় জামাইবাবু কে । গাছের দৃশ্য দেখে বিজন বিহারী শালাকে বলে এই প্রথম কাজের কাজ করেছো । বিয়ের সময় তো পণ নিই নি । এখন মনে হচ্ছে তখন যদি পণ নিতাম অনেক ঝামেলা ও হতো ।আজ আর ফুলের ডালা গিফট পেতাম না ।
শালা বাবু হেসে খুন, দিদি হাসছেন মুখে আঁচল দিয়ে ।
শালা বাবু ঠাট্টা করে বলে আগে গাছে ফুল ফুটুক তারপর মালা গেঁথে আবার মালা বদলের অনুষ্ঠান করবো । উপস্থিত সকলে মুচকি হাসছেন ।বিজন বিহারী যথারীতি লেগে গেলেন স্থল পদ্মের ডালা লাগাবার কাজে ।
বিজন বিহারী চক্রবর্তীর স্ত্রী আলপণা বলে অনেক রকমের স্থল পদ্ম পাওয়া যায় । কাশ্মীরী স্থল পদ্ম থোকা থোকা ফুল ফোটে । সারা গাছ গোলাপী হয়ে যায় । কাশ্মীরী স্থল পদ্ম সাদা ও হয় । গাছের রঙ হয়ে যায় সাদা । অপূর্ব দৃশ্য , মনে হবে গাছের ডালায় বরফের কুচি ।
এবার স্ত্রীর উপর একচোট নেয় বিজন বিহারী চক্রবর্তী এতোদিন বলেনি কেন ,?
আলপণা থতমত খায় । আমতা আমতা স্বরে বলে  কি মুশকিল , উঠলো বাই তো কটক যাই !! 
বিজন বিহারী আক্ষেপ করে বলেন শালাবাবু গুলো কোন কাজের নয় ‌আসবে চা টিফিন খাবে অন্ন ধ্বংস করবে ,আর আমার খরচের বিল বাড়াবে !!
ভাইদের গাল মন্দ করছে দেখে ক্ষেপে যায় আলপণা ।বলে তোমার স্্সার তুমি সামলাও আমি একটা কুটো কাটা নাড়বো না ।
যাও যাও বাপের বাড়ি যাও । তোমার ভাই বৌরা ধান দূর্বা সাজিয়ে বসে আছে  !!
যাদের মা বাবা জীবিত থাকে না সে মেয়েদের বাপের বাড়ি বলে কিছু থাকে না ।
মান অভিমান শুরু হয় স্বামী স্ত্রীতে ।বিজন বিহারী স্ত্রী রাগ ভাঙ্গাতে গিয়ে বলেন ঘাট হয়েছে ।এই কান মলছি ,নাক খৎ দিচ্ছি । এবার রাগ থামাও । আমার জল চেষ্টা পেয়েছে ,জল আনো ।
আলপণা জল আনে খাবার জল ।ঢকঢক করে খায় বিজন বিহারী । স্ত্রীর আঁচল মুখ মোছে ঘখম মোছে । ক্লান্তি দূর করে টেনে ধরে হাত ।
আলপণা কে বলে কাশ্মীরী স্থল পদ্মের ডালা লাগাবো । শালা বাবু বলেছে স্থল পদ্মের মালা দিয়ে  পঞ্চাশ তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করবে ।
যা !! আলপণা লজ্জা পেয়ে বলে এসব করার দরকার নেই ।
বিজন বিহারী বলে এখন তো বুড়ো বুড়ির ষাটতম সত্তর তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করছে ছেলে মেয়েরা । যুগের ধর্ম মানতেই হবে । ছেলে মেয়ে জামাই নাতি শালা শালার বৌ চাইলে নিষেধ করবো কি করে  ?
আলপণার মুখের রঙ লাল হয়ে উঠে ।সতিই তো । ছেলে মেয়েদের ইচছের মূল্য দিতেই হবে ।
আলপণা বলে যৎকালে তৎ বিবেচনা ।
স্ত্রীর নীরব সম্মতি পেয়ে উৎফুল্ল হয় বিজন বিহারী চক্রবর্তী র অন্তর ।আলপণার কানের কাছে এসে বলে সেদিন কিন্তু কাশ্মীরী স্থল পদ্মের গোছা তোমার খোঁপায় গুঁজে দিতে বলবো বিউটিশিয়ান কে ।
খিলখিল করে হেসে উঠে আলপণা । শেষে ঠাট্টার ছলে বলে কাশ্মীরী স্থল পদ্মের গুষ্টি কিলাই  ! সাদা স্থল পদ্ম গোলাপী সথল পদ্মের মা বাপ কে কিলাই ।
আলপণার কথায় অট্টহাসি হেসে বলে বিজন বিহারী শালা বাবুর স্থল পদ্ম । যতন করে লাগাবো ।যতন করলে রতন পাবো হে গিন্নি !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ