ট্রেন সফর


  সংগীত শীল ✍️

সকাল আটটায় সাব্রুম থেকে আগতলার ট্রেন। প্রত্যেকবারের মত আজও বাবু বাইকে করে স্টেশনে নামিয়ে দিল। টিকেটের লাইনে দাঁড়িয়েছি। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা সারি। আমি বরাবর পুরুষ সারিতে দাঁড়াতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যদিও মেয়েলোকের তুলনায় পুরুষের লাইনে অনেকটা ভিড়াভিড়ি থাকে। তবুও...

মনে আছে এখনো, বাড়ি ফিরবো; ট্রাফিক জ্যামে দেরি হয়ে গিয়েছিল। টিকেটের লম্বা লাইন থেকে বাঁচতে আর একটু কৌতূহলবশত মহিলাদের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ি। চারদিকে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল আমাকে নিয়ে। অবশ্য মহিলাদের তর্কে হারানোর সাধ্য খানিকটা কম। আমি চুপ থাকি। অবুঝদের আত্মপরিচয় দিয়ে সময় নষ্ট করতে ভালো লাগে না। দুয়েকজন বলছিল - "আফনে চোখে দেখেন না? পুরুষ মহিলার আলাদা লাইন"। 
আমি চশমা পড়েছিলাম, খুলে নিই। খানিকক্ষণ পর আরেকজন বলে উঠলেন- " আন্নের লাইন ত হিয়ানদি বেডিয়েতের লাইনে থিয়াইছেন কিল্লাই?" 

স্টেশনে পুলিশদের হাতে বেশ বড় লাঠি থাকে। টিকেট না কেটে ট্রেনভ্রমণ করা উচিত নয়। কেউ কেউ টিকেট কাটে না। অবশ্য পরিস্থিতির শিকার হলে আলাদা ব্যাপার। ধরা পড়লে শেয়াল বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। হাহাহা!
এদিকে শোরগোল বেশী দেখা দিতেই একজন মহিলা পুলিশ আমাকে বললো -"ওই লাইনে যাও"। 
আমার পিঠে ব্যাগ। এন.সি.সি জ্যাকেট পড়েছিলাম। আমি স্টুডেন্ট। ইংরেজি খুব বেশী না বললেও চলে যাওয়ার মত টুকটাক হয়ে যায়। Male, Female  এর পাশে পুরুষ ও নারী লেখাটা আমি দেখেছি।
মাস্কটা খুলে বললাম- আমি চশমা পড়ে দেখি, না পড়েও দেখি। কেউ আর কোনো কথা বললো না। সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিলো। কৌতুহল যেন উনাদের ভর করেছে।
এইসবের মধ্যে টিকেট কাউন্টরের সামনে চলে গেলাম। টিকেটটা নিয়ে খুব যে স্বস্তি পেয়েছি তা নয়। বরং একঝাঁক প্রশ্নের সন্মূখীন আর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল।

কাউকে বলিনা সেসব কথা। রোজদিনের কত ঘটনা! এগুলি আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। ভাবতে ভাবতে উদয়পুর এসে পৌঁছালাম। স্টেশন থেকে মায়ের মন্দির চূড়া দেখা যাচ্ছে। প্রার্থনা করলাম- "হে মা ত্রিপুরেশ্বরী  তোমার সন্তানদের একটুখানি  মানবিকতা আর বিচারবুদ্ধি দিও"।
এগুলির জন্য টাকা পয়সা কিংবা শিক্ষাদীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। অবশ্য কত শিক্ষিত মানুষরাই নির্বোধের পরিচয় দেয়, বলাবাহুল্য নয়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই দেখি সামনে কালো চশমা পড়া এক ভদ্রলোক বসে আছে। উনার চশমায় আমাকে দেখা যাচ্ছে। আমি চুলটা ঠিক করে নিলাম। 

 গতরাতে নিমন্ত্রণ খেয়ে শরীরে তাল পাচ্ছি না। না খেয়েই সফর। এই সফরে ঝাল মুড়ি, বাদাম চিড়া গ্রিন মটর, বয়েল চানা, চা, কফি, জল পাওয়া যাবেই যাবে। আজ কিছু মেলেনি। আমি আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম। 

দূর্ভাগ্য! কি জানি মায়ের কাছে খুব বেশী চেয়ে ফেললাম নাকি!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ