কল্যানী ভট্টাচার্য্য ✍️
আমাদের কমপ্লেক্সে নানা ধর্মের লোক আছে। তাই প্রতি বছর দুর্গোপূজো,ঈদ,বড়দিন সবাই মিলে পালন করি। এরই মধ্যে আমাদের কমপ্লেক্সে এক নতুন দম্পতি এল ট্রান্সফার হয়ে। দুই বছর হল তাদের বিয়ে হয়েছে। এখন এডভান্স স্টেজ। আবাসনের মাঝখানে একটি ছোট পার্ক আছে। সেখানে বিকেল হলে ছোটরা সবাই মিলে হৈচৈ করে খেলাধুলা করে। ইন্দ্রাণীর (নতুন দম্পতি) বেশ ভালই লাগে এইসব। একদিন হয়েছে কি পার্কে যখন বাচ্চারা খেলা করছে তখন ইন্দ্রাণী দেখতে পেল পার্কের এক কোনায় একটি বাচ্চা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সে আস্তে আস্তে বাচ্চাটির কাছে গেল। গিয়ে তার কান্নার কারণ জানতে চাইলে বাচ্চাটি বলল ওর নাম যীশান। কিছুদিন আগে তার মা মারা যায়। বাবা ওকে ক্রেশে রেখে অফিস করে। তাই তার জন্মদিন আর কেউ পালন করে না। ইন্দ্রাণী বলল তোমার জন্মদিন কবে। সে বলল আগামী ২৫শে ডিসেম্বর। ইন্দ্রাণী বলল আমি তোমার জন্মদিন পালন করব। তুমি একদম কাঁদবে না। ইন্দ্রাণী ঘরে ফিরে সকলের সামনে কথাটি বলল। শুনে সকলে খুব খুশি হল। যীশানের বাবাকে খবর দেওয়া হল। তিনি এসে সবকিছু জেনে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কাঁদছেন। ঠিক হলো ২৫শে ডিসেম্বর এই পার্কেই যীশানের জন্মদিন পালন করা হবে। ইন্দ্রাণী নিজের হাতে পায়েস রান্না করেছে এবং একটি বড় কেক বানিয়েছে। আবাসনের সব বাচ্চাদের নিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় পার্কে ইন্দ্রাণীর পরিবার উপস্থিত হল। ঠিক সময়ে যীশান কে নিয়ে তার বাবা হাজির হয়। যীশান কে খুব সুন্দর জামা পড়িয়ে মাথায় সান্তা ক্লজ টুপি পড়িয়ে দিল ইন্দ্রাণী। রং
বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয় পার্ক। ইন্দ্রাণীর ঘর ও সাজানো হলো নানা রঙের বেলুন দিয়ে। সবার সামনে কেক ও পায়েস নিয়ে হাজির হল ইন্দ্রাণী। যীশান কেক কাটার সাথে সাথে বাচ্চারা গান ধরল Happy birthday to you.যীশান কে কেক এবং পায়েস খাওয়ানো হল। সেখানে ইন্দ্রাণী সকলের সামনে বলল এখন থেকে যীশানের আরেক মা ইন্দ্রাণী। সেদিন সবাই খুব খুশি হল এবং সকলে মিলে খুব আনন্দ করল। তারপর যে যার ঘরে ফিরে গেল। রাত ঠিক বারোটায় ইন্দ্রাণীর প্রসব বেদনা উঠে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ইন্দ্রাণী এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সকলে খুব খুশি। যীশান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন তার ছোট মা ভাই টাকে নিয়ে আসবে। ইন্দ্রাণী যখন বাড়ি আসল তখন যীশানের আনন্দ কে দেখে। যীশান তার ভাইয়ের নাম দিল কীষান। তখন থেকে যীশান কীষান একসাথেই থাকে। ইন্দ্রাণী মনে মনে বিড়বিড় করে বলে এখনও এমন হয় বুঝি।
0 মন্তব্যসমূহ