✍️ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য
ছয় ঋতুকে ঘিরেই বাঙালীর উৎসব,সংস্কৃতি, যাপনকথা। আর শীতকালটা প্রত্যেক ভোজন রসিক বাঙালীর কাছেই এক কাঙ্খিত ঋতু। ঋতু চক্রের আবর্তনে যখন শীত জাঁকিয়ে বসে , তখনই মাঠে মাঠে ফসল কাটা আরম্ভ হয়। নূতন চালে নবান্নের উৎসব শুরু হয় গ্রামে গজ্ঞে। আর তার রেশ এসে লাগে শহুরে জন জীবনেও। আখের গুঁড়, খেজুর গুঁড়, নলেন গুঁড়, পাটালি গুঁড় দিয়ে তৈরী নূতন চালের নানা ধরনের পিঠে পুলি তৈরী হয় এই সময়েই। কারণ শীত মানেই যে রকমারী খাবারের সময় !
এই শীতেই পৌষের শেষে দিনে বাঙালিদের মকর সংক্রান্তি উৎসব হয়ে থাকে। বাচ্চারা ধান কাটার পর মাঠ থেকে খড় এনে উঠোনে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে রাত জেগে রান্না বান্না করে সবাই প্রাণ খোলা আনন্দ করে। আর পরদিন সকালে স্নান করে এই ঘরে আগুন জ্বালিয়ে সবাই তাপ নেয়। রান্নাঘরে তখন দু’দিন ধরে চলে পিঠে পুলি তৈরীর জোড় প্রস্তুতি। প্রত্যেক হেঁসেলে মা ঠাকুমারা ব্যাস্ত থাকেন চিরায়ত পিঠে পুলি তৈরীতে।পাটিসাপটা, নূতন চালের গুড়োর মালপোয়া,চানার পিঠে, নূতন আলুর পিঠে, সুজির পিঠে,লবঙ্গ, বকফুল, নূতন ধানের চিড়ের পিঠে, বিরোন চালের পায়েস আর কাঁচা বাঁশে বিরোন চাল ঢুকিয়ে চোঙা পিঠে.....এ সমস্ত পিঠে বিশেষত এই একটা দিনেই বিশেষ গ্রহনযোগ্যতা পায়।
গ্রাম বাঙলার এ উৎসব কিন্তু আমাদের শহুরে ব্যাস্ত জীবনেও যথেষ্ট সমাদৃত। আসলে বাঙালি মানেই খাওয়া দাওয়া,হুল্লোড়,উৎসব- আর বহমান নগরায়নেও মাস, তিথি, বছরের ছোট ছোট উদযাপন । এই উদযাপনেই পিঠে পুলি উৎসব অর্থাৎ মকর সংক্রান্তিও বাঙালিকে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।আর যতদিন বাঙালি থাকবে, ততদিন এই পিঠে পুলি তৈরীও প্রতিটি বাঙালির রান্নাঘরে স্থান পাবে। তাই গর্ব করে বলতেই হয় — “বেঁচে থাক বাঙালী, তুমি বেঁচে ওঠ “..........
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন