উষ্ণ সংসার

   ✍️ শুক্লা চক্রবর্তী

গ্রীষ্ম তুমি থাকো সদা আমার হয়ে, 
ছেড়ে আমায় অন্য শহরে কভু যেওনা তুমি সখা। 
তোমার আগমনে চিনতে পেরেছি আমি সখা,
আমার প্রিয়জন সেজে থাকা প্রিয় পরিযায়ী পাখিদের! 
যারা কোনো এক হেমন্তের বিকেলে... 
এসে দাঁড়িয়েছিল আমার উঠোনে।
ভরা বসন্তে যে ছিল ওরা আমার ঘরে আমার প্রিয়জন হয়ে, 
তবে যে আজ ওরা সবে মাত্র গেলো, 
আমার ঘরটি ফাঁকা করে আমায় ছেড়ে! 
গ্রীষ্ম তোমায় উষ্ণ বলে বলে দিক না কেনো গালমন্দ, 
আমার যে তোমার উষ্ণতার-ই প্রয়োজন। 
হয়তো গ্রীষ্ম তোমার সনে আসবে... 
সেই বিধ্বংসী কালবৈশাখী ঝড়, 
ঝড়ে হয়ে যাবে আমার শহরের সমস্তকিছুই তছনছ, 
তবে আবার শহরটাকে নতুন করে সাজিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখবো আমি। 
গ্রীষ্ম তোমার নিকট রইলো আমার আবদার... 
তুমি কভু ছেড়ে যেওনা আর, 
চাইনা আর তোমায় ছাড়া আমি
আমার শহরে ওই হেমন্ত কিংবা বসন্তকে। 
কারণ গ্রীষ্ম আমি যে এখন শুধু-ই, 
তোমার সনে বাঁধতে চাই আমার উষ্ণ সংসার!

করোনা তুমি

    ✍️ প্রতীক হালদার 

বছর বছর নতুন রূপে 
করোনা যে দেয় হানা,
সবকিছু কবে ঠিক হবে?
কারোর যে নেই জানা।
নিল কত প্রাণ,করোনার থাবা
অকালে হল মরণ,
চাইনি তো কেউ এসব কিছু
করেনি করোনাকে বরণ।
কেন তুমি এলে ধরনীর বুকে?
সুখ কে নিলে কেড়ে,
প্রিয়জন শোকে কত যে মানুষ 
বেদনায় হাহাকার করে ।
থামাও তোমার ধ্বংসলীলা
বন্ধ কর এবার,
তোমার ওই উন্মত্ত খেলাতে
পুড়েছে জীবন সবার।
শিক্ষা সবার থমকে গেছে
ভবিষ্যতটা আঁধারে,
কর্মজীবন টেনেছে ইতি
এই সমাজ মাঝারে।
আর হয়ো না পাষাণ তুমি
এবার বিদায় নাও,
সবকিছু ঠিক হোক যে আবার
যাও করোনা যাও।

দুটি মন

   ✍️ সুবর্ণা

জোছন ভরা স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় 
উন্মুক্ত আকাশের নীচে 
বসবো আবার লক্ষ তারার মাঝে, 
শুনবো তোমার এক সমুদ্র অভিমান। 
আমি শুনাবো আস্ত একটা কবিতা। 

দু‌‌‌‌‌‌‌‌‌টি মন হারাবে নীল সাগরের নোনাজলে। 
বিরহের সমাধানে আবার হারিয়ে যাবো
ঐ নীল  সমুদ্দুরের বুকে। 

তোমার সাথে পা মিলিয়ে 
হেঁটে যাবো পলাশ রাঙানো মেঠো পথে, 
হাতে ধরা ফুল টা গেঁথে দেবো তোমার কবরীতে।
তুমি আলতো করে ছুঁয়ে দেখবে 
স্বভাবসুলভ হাসিতে। 

সকল অনুযোগের সমাপ্তি ঘটবে
সহজেই.....
পূর্ণিমার চাঁদের আলোয়। 

গা ভাসিয়ে হারিয়ে যাবো 
লাগামহীন জোয়ারে, 
পুনর্জন্ম হবে হৃদয়প্রাপ্তির,

আহরণ করি তবে অপার্থিব সৌন্দর্য, 
নবজীবনের সুখবর ছড়ায়ে
হউক বেহিসাবী ভালোবাসার সুখময় সৃষ্টি। 

মুগ্ধতা

    ✍️ অসীম দেববর্মা

মৈথুন ক্ষণেকের তৃপ্ততা, 
এতে নেই কোনো মুগ্ধতা! 
          মুগ্ধতা তো, 
প্রেমিকের -   ঢেউ তোলা চুলে 
                   তার মুখের হাসিতে
                     টোল পড়া গালে
                   তার চোখের চাহনিতে। 
                      কথা বলার ভঙ্গিতে
                  তার আসাতে - যাওয়াতে 
                          আলতো স্পর্শতে
                   তার আদর করে ডাকাতে 
                   কাঁধে মাথা রেখে পাওয়া, 
                   না- পাওয়া হিসেব করাতে
                      জীবনের চলার পথে 
                  যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে
                   সামলে নিয়ে আমার হয়ে লড়াই 
                                   করতে।

স্বপ্নালু পরিবেশ

    ✍️ সঙ্ঘমিত্রা নিয়োগী।

মনে পড়ে,দুজনে কাছাকাছি, স্পর্শ পেয়েছি,হাত ধরে হেঁটেছি,কিন্তু অদৃশ্য।দুজনে ভেবেছিলাম দূরে যাবো,
বুকখোলা মাঠ পেরিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি,
জেগে ওঠেছি ভোরের ফুলের মতো ।
দেখেছি আকাশপ্রদীপ  চোখে,
 অমোঘ নির্বাসন!
 আমরাই ছিলাম লোকমুখে নামতার মতো গঠিত চরিত্র।

দীন অন্ধকার!ভয় পেলাম,খুব ভয় পেলাম ;খানিকটা সময় কান পেতে শুনেছি তোমার  কম্পিত গলার স্বর টিনের ওপর জল পড়ার মতো।

জলের ডালায় বসে উপভোগ করেছি স্বপ্নালু পরিবেশ।।

প্রেমিক মনের লেখা

   ✍️ দীপ্র দাস চৌধুরী

আলতো হাসি কয়েক মিনিট যেই ছড়ালে ঠোঁটে 
হৃদয় আমার পাগল হ'য়ে ঘোড়ার মতো ছোটে।

ছুটতে ছুটতে গ্রীষ্মকালীন আদ্রতাদের ভুলে-
ক্লিপের মতো জড়িয়ে পড়ে, তোমার খোলা চুলে...

সব হিসেবই বেঠিক দেখায়, সঠিক কেবল তুমি
আসলে তুমি কালবোশেখী, নইলে মরুভূমি। 

সব প্রাচীরেই বিভেদ থাকে, সব প্রেমেতে বিষাদ,
তবুও তুমি আসলে এ' মন পায় হারানো দিশা।

যা ছিল সব প্রাচীন কথা,  আজকে তাদের ছুটি
প্রেমেই নতুন ভিত তুলে আজ জীবন বাঁধুক খুঁটি।

তাই তো আমি ছুটছি কেবল, আদ্রতাদের ভুলে
আকাশ জুড়ে মেঘ জমে আজ তোমার খোলা চুলের...

জমতে জমতে বৃষ্টি নামুক, ভিজতে এ'মন চায়
হয় তো সবাই একেই বলে প্রেমিক মনের দায়!

শুধু বসন্ত

    ✍️ কানু বনিক

তুমি বসন্তের যে প্রান্তে দাড়িয়ে আছো, তার দৈর্ঘ্য বরাবর আমি হেঁটে চলেছি। 

শুধুমাত্র কয়েক গজ এগিয়ে এসো, নীলপদ্ম অরণ‍্যেই দেখতে পাবে আমায়। 

অনেকটা বছর পেরিয়ে আজ যখন জোৎস্না পথে শুধু জোনাকির আলো দেখি, আমি অলকানন্দার জলে তখন শুভ্রতার ছোঁয়া পেতে চাই। 

এখন শুধু একটু খোলামেলা আকাশ চাই; সেই আকাশের গভীরে  তুমি  অনন্তলোকের কথাগুলো ছড়িয়ে দিও। 

আমি এখন নিশি প্রহর গুনছি,  পারলে অমৃতলোকের কথাগুলো  শুনিয়ে যেও। 

ঘন নীল আকাশটা আর আগের মত নেই, 
অনেকটা অভিমানী হয়ে গেছে;
ঘন কালোমেঘে ঢেকে গেছে তার অনেকটাই। 

তবুও তার গভীরে শুধু বসন্তই আছে, এ-কথাটাই শুধু মনে করি। 

আমার বসন্ত  যদি তোমার সহস্রমার্গের বাসনা পূর্ণ করতে পারে, তবে সেরকমটাই করে দিয়ে যাবো, সেটাই বলে গেলাম আজ। 

এতটুকু মনে রেখো, কালোর গভীরেও কিন্তু আলো আছে, তাই-তো আমার কথায় শুধু বসন্ত আর বসন্ত।

হারিয়ে যাচ্ছে

   ✍️ রাজা দেবরায়


হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো অনেক কিছু, যেমন- আব্বাসউদ্দিনের গান, নানা রকমের খেলা (গোল্লাছুট, কানামাছি, চোর-পুলিশ, ইকির-মিকির ইত্যাদি), নানা রকমের পিঠে-পুলি ইত্যাদি। হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসা, মূল্যবোধ, সততা, প্রকৃত বন্ধুত্ব, শিক্ষামূলক বিজ্ঞাপন। হারিয়ে যাচ্ছে গবেষণা-বিশ্লেষণ করার শিক্ষা, তথ্য যাচাই করার প্রবণতা, যুক্তিসঙ্গত ভাবনাচিন্তা। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সরলতা, সহজ-সরল জীবন, প্রকৃত মেধা ও প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা ইত্যাদি।

কিন্তু হারাচ্ছে না তো অত্যধিক অর্থের লোভ, হাতাহাতি-মারামারি, হিংসা-বিদ্বেষ, (কু)সংস্কার ইত্যাদি!!

মনের কথা

       ✍️ সুধীর রায়                                         

না। আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসিনি,
ভালোবেসেছি শুধু মাত্র তোমার মনটাকে!
আমি ভালোবেসেছি তোমার মনের ভেতর লুকানো দুঃখ কষ্ট গুলো কে,
ভালোবেসেছি তোমার অনুভূতি গুলো কে।

না। আমি কখনোই তোমার শরীরটাকে ভালোবাসিনি,
তোমার রূপ,লাবন্য, যৌবন কোনোটাকেই ভালোবাসিনি!
ভালোবেসেছি শুধু তোমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুন্দর মন নামক মানুষটাকে,
আমি ভালোবেসেছি তোমার ভেতর চুপ থাকা মানুষটাকে!

না। আমি তোমার লিপস্টিক পড়া রাঙ্গা ঠোঁটের হাসিটা কে ভালোবাসিনি!
অথবা তোমার বেগুনী রঙের শাড়ির আঁচল!
কিংবা কাজল কালো দুটো চোখ!
কোনো কিছুই আমার হৃদয় স্পর্শ করতে পারে নি!

শুধুমাত্র তোমার আচার-আচরণ,
তোমার শান্ত শীতল সত্য কথা গুলো আমার হৃদয়ে ভালোবাসার ঝড় তুলেছে!
যা কখনও কখনও আমাকে ভীষন ভাবে ভাবিয়ে তোলে!
আমার এ মন হয়তো কখনো তোমাকে যাবে না ভুলে।

জানিনা তুমি একে ভালোবাসা বলবে?
না,অন্য কিছু?

অপেক্ষা

   ✍️ শ্যাম মালাকার 

আমি এক প্রেমহীন প্রেমিক , 
    আজ তিন বছর পর - 
না বলা কিছু কথা নিয়ে আমি আজ - 
   অমাবস্যার রাতে জেগে আছি । 
আর করছি শুধুই - 
         অপেক্ষা । 
আজ আমার গল্প শোনার কেউ নেই । 
 তাই রাত জেগে করছি চাঁদের- 
            অপেক্ষা । 
ও চাঁদ আজ তুমি যেমন - 
    অমাবস্যার গহীন অন্ধকারের মধ্যে, 
আমিও তেমন বিরহের বেদনাতে । 
 তুমি যেমন প্রকৃতি কে দেখার জন্য করছো - 
                   অপেক্ষা ।
আমিও তেমন আমার মনের মানুষ কে - 
  তোমার মধ্যে দেখতে করছি তোমার , 
                 অপেক্ষা ।
চাঁদ তুমি তো জানো 
    আমার মনের প্রিয় কতো সুন্দর । 
তুমি কী তাকে দেখতে পাও ? 
     যেদিন তাকে প্রথম দেখেছিলাম- 
হলুদ রঙের ঐ শাড়ির মাঝে । 
    তাকে দিয়েছিলাম আমার হৃদয়, 
তার মায়াবী মুখে মুগ্ধ হয়ে- 
   তার কেশের বেশে মহিত হয়ে ।
তার ঠোঁটের কোণে সেই কালো তিল , 
    হায় - তার নাকের কোণে সেই ছোট্ট নলক । 
দেখে তার কাজল কালো আঁখি , 
     পড়তো না আমার চোখের পলক ।
 বসন্তের আগমনে মোর - 
      মন প্রিয়া হতো আরো সুন্দরী ।
তার খোপাতে থাকতো - 
    শিমূল পলাশ অধবা রক্ত করবী ।
রোজ বিকালে সেই কৃষ্ণচূড়ার তলে - 
     করতাম আমি তার অপেক্ষা । 
তার সেই মায়াবী হাঁসিকে - 
  আমি বড্ড ভালোবাসতাম । 
আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম- 
     পাগলের মতো তাকে ভালোবাসতাম ।
কিন্তু আমি বলতে সাহস পায়নি । 
    আর মোর মন প্রিয়া(প্রিয়) - 
বুঝেও বুঝতে চায়নি । 
    বন্ধুরা বলতো ভাই দেবাশিস- 
করিস না এতো আশ - 
    এ তোর এক তরফা ভালোবাসা , 
শেষ পরিণতি তোকে না করে দেয় দেবদাস । 
       সে সময় শুনি নাই তাদের কথা , 
 চারিদিকে তখন মন প্রিয়ার সুর কথা । 
      আজ আমি অমাবস্যার এই রাতে , 
 পূর্ণিমার সেই মনের সখী চাঁদনি কে খুঁজে- 
      করছি অপেক্ষা । 
পাইনা আঃ আঃ আমি পাইনা তার দেখা ।
      অমাবস্যার এই নিষ্ঠুর অন্ধকার । 
নিয়েছে সব কেড়ে । 
   বিরহের বিষাদে আমাকে - 
দিয়েছে সে একা ছেড়ে । 
    ও চাঁদ ঐ গহীন কালো গগণের 
ভয়ঙ্কর অন্ধকার থেকে তুমি যদি - 
   মোর মন প্রিয় কে দেখতে পাও ।
তবে তাকে বলে দিও - 
    আমি তাকে অনেক ভালোবেসেছিলাম ।
কিন্তু চাঁদ তুমি জানো ? 
      আজ মনের সেই প্রাণ প্রিয় - 
আমাকে চিনেও না চেনার ভান করছে । 
    আমার হৃদয় তখন ফেটে যায় ।
তখন মাটি থেকে যেনো সরে যায় আমার পা 
ও চাঁদ তুমি যদি তাকে দেখতে পাও -
    তবে তাকে বলে দিও , 
তার পথ প্রানে চেয়ে- 
আমি আজীবন করবো তার -

জীবন সংগ্রাম

   ✍️ মনচলি চক্রবর্তী 

দুমুঠো গ্রাসের জন্য শ্রম 
দিবা রাত্রি, সংগ্রামে কত শত নারী,
রোগ, বিপদ, ঝড়ের প্রতিকূলতায়
সাহসে বুক বেঁধে পথে দেয়  পাড়ি।

কাজের মাসি

     ✍️ বিপ্লব গোস্বামী

আমাদের পুরোনো কাজের মাসি
                     কথায় কথায় হাসে,
         খাওয়ায় পরায় স্নান করায়
                সত‍্যি খুব ভালোবাসে।

         মাসির কাছে রেখে আমায়
                মা যান রোজ অফিসে,
          যা কিছু চাই তা'ই তো পাই
                 সব যোগায় মাসি যে।

            দুষ্টামি আর আবদারেতে
                            মা দেন বকুনি,
              মাসি আমায় সব'ই দেয়
                            যা চাই যখনি।

            দুষ্টামি আর আবদারেতে 
                          মাসি শুধু হাসে,
          মায়ের চেয়ে মাসি আমায়
                      বেশি ভালোবাসে।

হৃদয়ের মানুষ

✍️ সৈকত মজুমদার

যে মানুষটা তোমার 
কারণে অকারণে পাশে থাকে,
তোমার হঠাৎ মন খারাপ বোঝে
নিজের ব্যস্ততা ফেলে
আগে তোমার ফোন তোলে,
তোমার ভালমন্দ বিচার না করে
পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়,
সেই তোমার হৃদয়ের মানুষ। 

সেই মানুষের অগোচরে
যদি কখনো কেউ ফুল ছিঁড়ে
হৃদয়ের অনেকটা গভীরে লাগে। 

অভুক্ত প্রাণী

✍️ অনুকূল দেবনাথ

লক ডাউন আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কেন জানেন? এই যে ধরুন স্কুলের সামনে, হাটে কিংবা বাজারে, অফিসে, রাস্তার দোকানের সামনে, বাসস্ট্যান্ডে, প্রতিনিয়ত আমি যখন প্রভৃতি স্থানে যাইতাম, তখন ঐ স্থানগুলিতে কিছু নিরীহ প্রাণী এবং ভবঘুরে দেখতে পাইতাম। আজ বিশ্বব্যাপী মহামারীতে বিশ্বের দাবড় দাবড় রাষ্ট্রের সাথে ভুগছে আমার ধ্যানের ভারতবর্ষও। দেশে চলছে লক ডাউন। লক ডাউনের আগের ভারতকে দেখতাম আমি এক ব্যস্ততম পর্যায়ে। সময়ের মূল্য ছিল অগণিত। প্রতিটা গলি ছিল চা আর কাজের ব্যস্ততায় এবং আড্ডায় ভরপুর। আজকের ভারত যেন অন্যকথা বলছে। দোকানির অনেকদিন হল ঝাঁট দেওয়া হচ্ছে না দোকান। সামান্যমাত্র কয়েকটি মুদিখানা খুলছে তাও সময়ের সাপেক্ষে। মানুষ সেখান থেকে গন্ডির লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছে। সবজি বিক্রেতা খুব সুন্দর করে দোকান সাজিয়ে বসে থাকলেও মিলছেনা চাহিদা অধিক ক্রেতা। ফল বিক্রেতা দাড়িয়ে রয়েছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। ভরসা পাচ্ছেনা কেউ কোনোকিছুতেই। কী ছিল আর কী হয়ে গেল এই সোনার ভারতবর্ষ? 
আমি ভাবিয়া পাইনা কেন আজ মোরা এই নিদারুন পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি? ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে করোনা মৃত্যু সাইক্লোন আর করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। একেকটা দিন কাটছে ভয় আর বিস্ময়ের মধ্যে দিয়ে। মানুষ আজ হয়েছে গৃহবন্দী। প্রকৃতির জীবজন্তুরা পেয়েছে আজ অবাধ স্বাধীনতা। 
কিন্তু ভারতবর্ষকে আজ আমি দুটো পিঠে দেখতে পাচ্ছি। ভারতের এক পিঠে চলছে লক ডাউন মান্য করা আর মরণব্যাধি সারানোর লড়াই। অপর পিট যদি দেখি করুণায় আশ্রিত অশ্রুজল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা এই স্বজনদের চোখে।যাঁরা মানুষের ফেলা জিনিসটুকু খেয়ে বাসস্ট্যান্ডে বা রাস্তার ধারের ফুটপাতে কিংবা ডাস্টবিন থেকে খেয়ে জীবনধারণ করতো আজ তারা সেটাও পাচ্ছেনা কিছুতেই। কেননা আজ অভুক্তদের জন্য ফেলছে না কেউ সেই বাড়তি খাবার। নিত্যদিনের মতো বাসে উঠার জন্য আসছেনা যাত্রীরা। অফিস বাবুরা যাচ্ছে না কর্মস্থলে। তাহলে কেমন করে মিলবে সেই অভুক্তদের পেটে খাবার? আজ সেই কুকুরটা শুধু এদিক-ওদিক ঘুরছে কিন্তু দোকানিকে কিংবা গাড়ির জন্য অপেক্ষারত লোকটিকে দেখতে পাচ্ছেনা। দেখলে হয়তো একটা বিস্কুট অথবা একটু খাবার জুটতো তার ভাগ্যে। কোথাও সে লোক সমাগমের ভীড় দেখতে পাচ্ছেনা। রাস্তা পারাপারের জন্য আজ তাকে বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। একমাত্র আজ সে সম্মুখীন হল একমুঠো খাদ্যের জন্য। দিনের পর দিন সে খাবারের জন্য কাতরাচ্ছে। মানুষ-তো নিদিষ্ট পরিমাণ খাবার সংগ্রহ করে জীবনধারণ করছে। কিন্তু এই অভুক্তরা কী পারছে তা করতে? রাস্তার ধারের ভবঘুরেরা আজ বুঝতে পারছে না কিছু। তাঁরাও আজ অনেকটা নরকঙ্কালের বেশ ধারণ করেছে। কেউ আজ তাঁদের একটা অর্ধেক রুটিখানা কিংবা সামান্য একটু জলখাবার তুলে দিচ্ছে না। রাস্তার পাগলটাও আজ এই নিদারুণ পরিস্থিতির স্বীকার হল। সেও খুদায় পেটের জ্বালায় কাতর হয়েছে। পাগলামি ছেড়ে আজ সেও দিশেহারা হয়ে চুপটি করে বন্ধ দোকানের বারান্দার উপর বসে বসে কী যেন ভাবছে... একমনে। কিন্তু এই অভুক্তরা হল আজ স্বাধীন। কেউ তাঁদের আজ মানা করছে না কোনো কিছুতে।
একেকটা পরিস্থিতি যেন কিছু শেখাতে আসে। স্বাধীন মানুষ আজ গৃহবন্দী হল আর পরাধীনরা আজ উন্মুক্ত খোলা আকাশের নীচে স্বাধীন মনে আছে। সবাই ব্যস্ত হয়ে আছে কোনদিন একটা নতুন সূর্য দেখতে পাবে? প্রত্যেকটা দিন যেন কাটে একটা নিদারুণ মৃত্য যাত্রীর সঙ্গী হয়ে। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক মানুষ চলতে বাধ্য হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অমান্য করতেও বাধ্য করা হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষকে। গ্যালিলিও সেইদিন বলেছিল পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। কিন্তু বিশ্বের ধর্মীয় ব্যবস্থা সেদিন এটা স্বীকার করেনি কিছুতেই। গ্যালিলিওকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধর্মীয় কায়েম ব্যবস্থার কাছে। যার কারণে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীকে। কিন্তু শেষে এই গ্যালিলিওর কথাই ফলপ্রসূ হল। মানতে হল সবাইকে একদিন গ্যালিলিও-ই ছিল সঠিক। আজ যখন চিনদেশ এই কারোনা ভাইরাস এর উৎপত্তি ঘটাল তখন তা বিশ্বের মধ্যে মানুষ মারার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটা দিন মরছে হাজার হাজার মানুষ। বিশ্বের দাবড় দাবড় রাষ্ট্রগুলো পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে। চিনের এই অমানুষিক ভাইরাস উৎপত্তির কারণে সারা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর মিছিল ক্রমশ এগিয়ে চলছে। ভুক্ত থেকে অভুক্ত মরছে সবাই। আর এর উল্টো দিকে ধর্মীয় কায়েমে অন্তর্ভুক্ত কিছু ব্যক্তি এখনো করোনার মতো ভাইরাসের কাছে তাঁরা মাথা নোয়াতে নারাজ। প্রতিদিনকার মতো তাঁরা এখনো ধর্মীয় সুরে ধমকি দিচ্ছে করোনাকে। আজ এজন্যই গ্যালিলিও-র গল্পটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আমার কাছে। ধর্ম মানুষকে শান্ত করে আর শিষ্টাচার শেখায়। অন্যদিকে বিজ্ঞান মানুষকে জ্ঞান তথ্যের বিশ্লেষণে উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে বাঁচার পথ দেখায়। কিন্তু আজ ধর্ম আর বিজ্ঞান একে অপরের বিপরীত হয়ে গেল ধর্মের নামে বিভ্রান্তিকর ব্যক্তিদের কাছে। ২২ এপ্রিল ২০২০ এর দুপুরবেলায় মনের একাকিত্বে ভাবনা।

শূন্যতা

   ✍️ সম্পা কর্মকার

গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রকৃতি যেমন...
খা খা করে উঠে..!
তেমনি হৃদয়ের কুটির থেকে,
যেনো আর্তনাদ বেরিয়ে আসে ।।
মনে হয় কি যেনো এক অব্যক্ত বেদনা...
মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ।।
মরুভূমির নিস্তব্ধ ঝড়,
হৃদয় সমুদ্রে তুলছে ঢেউ ।।
সমুদ্র সৈকতের বালুরাশির ঘরের মতো ভেঙ্গে হচ্ছে খন্ড বিখণ্ড ।।
মনে হচ্ছে,
কোথায় যেনো এক অসীম শূন্যতা ।।

.....প্রথম অংশ ।

পূর্ণিমার চাঁদ

   ✍️ কৃষ্ণ দাস

রাতের অন্ধকারে গেস্টাপো আমার প্রিয় চা এর গন্ধ ,
হটাৎ করে মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়ে চাঁদ ,
আমার ঠোঁটে গরম চা এর চুমো।
আমি আমার আমিকে এক নিমিষে ভুলিয়ে  দিয়ে এক কাগজেই বারবার রিস্টার্ট করছি।
মনে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আলোকিত মানুষ দের দেখে, ভাবী আমি কি একাই এই নির্জন নিহারিকা পৃথিবীতে।?
এক কাপ চা আর গরম সিঙ্গাড়া , অনেক স্মৃতি নিয়ে আসে, অতীতের।
মানুষ পূর্ণিমার চাঁদের মতোই সময় বুঝে আসে।
পরে উধাও হয়ে মিলিয়ে যায় এক সমুদ্রের অতলে।
    *প্রথম অংশ

নিয়মনীতি

   ✍️ মিলন পুরকাইত 

"ওমা এ আবার কি কথা, এখন বিয়ে করবি না মানে?"
অষ্টম আশ্চর্য চাক্ষুস করার মত গোলগোল চোখ করে বলে মিতিনমাসি। সুরে সুর মিলিয়ে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেয় টুকাইদিও। কৌতুকের স্বরে চোখ নাচিয়ে বলে,
"কেন রে, লটঘট কেস নাকি? লাল কার্ড দেখিয়েছে বুঝি কেউ? নাকি এখনও বেকার সে!"

বোঝো কান্ড! কি কথার কি যুক্তি! এইজন্য কোনো আত্মীয়ের বাড়ি, অনুষ্ঠান, পালা পার্বনে যেতে ইচ্ছে করে না আজকাল রিমঝিমের। দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে সব কৌতূহলী মানুষজন। অন্য কোনো কথা নেই ঘুরে ফিরে সেই একই কথা। 'বিয়েটা কবে করছিস?' যেন সমস্ত পৃথিবী রসাতলে যাবে রিমঝিম বিয়েটা না করলে! কেন রে বাবা আর কথা নেই তোদের। আমি বিয়ে করি বা না করি তোদের কি যায় আসে? আর মাম্মামটাও হয়েছে তেমন। শত্রুপুরীতে একা ফেলে, কোথায় যে চলে গেল কে জানে!

ব্যাজার মুখে বসে মনেমনে এসবই ভাবছিল রিমঝিম। হঠাৎ পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় টুকানদা। মৃদু ধমক দিয়ে বলে মাকে
"আহ মা, ছাড়ো না ওসব। কত বছর পর দেখা হল পুচকির সাথে, কত ভালো নাম্বার নিয়ে পাশ করেছে মেয়েটা। এইটুকু বয়সে কত দায়িত্বশীল পদে চাকরি পেয়েছে,সেসব গল্প নেই! কি এক বিয়ে বিয়ে করে যাচ্ছ তখন থেকে।"

ছেলের ধমক খেয়ে তখনকার মত চুপ করে গেলেও হাল ছাড়ে না মিতিনমাসি। অন্যপাশে সরে গিয়ে গলা মেলায় সমমানসিক দিদি বৌদিদের সাথে।

"বাব্বা তেজ কিগো ওইটুকু মেয়ের! কি বা এমন ভুল বলেছ, বলো তো? এমন করে ফোঁস করতে হবে তাতে?"
সমবেদক কেউ একজন সুর টেনে বলে, অন্যজন ধুয়ো ধরে তালে তাল মিলিয়ে,
"সত্যি বাবা, কলেজ ইউনিভার্সিটি শেষ, তাও বলে কিনা 'এখন বিয়ে করবে না!' ঠিকই বলেছে টুকাই, নিগঘাত কিছু লটরপটর করে রেখেছে মেয়ে তলায় তলায়, দেখো গে যাও।"

"আসলে দিদিরই আদিখ্যেতা যত। ছোট থেকেই মাথায় তুলে নাচছে। কি না লেখাপড়ায় ভালো। তা সে যেমনি হোক, নিয়মনীতি বলেও ত কিছু আছে নাকি সমাজে? সোমত্ত মেয়ে বিদ্যেধরী হয়ে করবেটা কি বলো দেখি? বাপমাকে খাওয়াবে পরাবে নাকি সংসার টানবে? যে বয়সের যা। বুড়ি হয়ে গেলে তখন হাজার হা পিত্তেশ করেও জুটবেনা কেউ,বুঝবে তখন। আমার কি!"
ফোঁস ফোঁস করে বলে মিতিনও। মাসি মাসি করে পায়ে পায়ে ঘোরা মেয়েটা, এমন ঝ্যাক ঝ্যাক করে বলল ওকে। সাদা মনে কাদা নেই বলেই না জিগ্যেস করতে গেছিল, ভালো চায় বলেই না, নইলে ভারী দায় পড়েছে ওর যেচে পরে কারোর হাঁড়ির হাল জানতে।

গোটা পৃথিবীটাই মাঝে মাঝে এজন্য শত্রুপুরীই মনে হয় আজকাল রিমঝিমের। আশ্চর্য মানসিকতা মানুষের। আর আজব যত নিয়ম নীতি সমাজের। 'পঁচিশ পেরিয়ে গেল আর কবে বিয়ে হবে? এর পরে কি জৈলুস থাকবে চেহারায়।' না থাকলেই বা কি? বিয়ে করবে না রিমঝিম। একটা মেয়ে বড় হলেই তার জন্য এই একটাই সীমানা ? একটা ছেলের জন্য এমন ভাবনা পোষণ করে নাতো কেউ?

সেই ছোট থেকেই পরিবারে এই বৈষম্য দেখছে রিমঝিম। শুধু ছেলে বলে সব ভালো জিনিসের ভাগ অনায়াসেই পেয়ে গেছে টুবাই।রিমঝিমের জ্যেঠুর ছেলে। কয়েক মাসের পিঠোপিঠি দুজন। ছোটবেলাটা একসাথেই কেটেছে ওদের। ঠাম্মি দাদু, জেম্মা, জ্যেঠুর সাথেই। দুজন সমবয়সী ছেলেমেয়ের মধ্যে আর কেউ অতটা তফাৎ না করলেও ঠাম্মি করেছে বরাবর। নাতিকে চোখে হারায় কিনা।

টুবাইও পূর্ণ সুযোগ নিয়ে গেছে ঠাম্মির অন্ধ ভালোবাসার। ছোটমোট দোষ করলে নিশ্চিন্তে বোনের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দাঁত বের করে নির্লজ্জের মত হেসেছে আড়ালে,ক্যাডবেরি ঘুষ দিয়ে ভাব করে বোনকে বলেছে, "এই শেষবার! রাগ করিস না বনু"।
বলেছে, কিন্তু আড়ালেই, সামনে সেই গুড বয় ইমেজ। আর কিছু না করেও কথা শুনেছে রিমঝিম। কত কথা। মনে আছে একটা কথা প্রায়ই বলত ঠাম্মি "সিস্টি ছাড়া!" রিমঝিম আর পরমা দুজনের উদ্দেশ্যেই ছিল তার সেই এক মন্তব্য।

মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগত ওর। প্রশ্ন জাগত শিশু মনে। নিজে মেয়ে হয়েও শুধু মেয়ে বলে এত দূর ছাই করে কেন ঠাম্মি! হাজার ভালো কাজ করলেও কোনোদিন ঠোঁট ফাঁক করে সুখ্যাত করে না একটা। উল্টে এমন ভাব করে যেন 'এ আর এমন কি!'
পড়ালেখায় ভালো বলে ছোট থেকেই এক রাশ প্রাইজ নিয়ে বাড়ি আসত রিমঝিম বার্ষিক অনুষ্ঠানের দিন। বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতে ওর হাত থেকে সেসব নিয়ে হইহই করে ছুটে যেত টুবাই ঠাম্মিকে দেখাবে বলে । বোনের গর্বে ঝলমল করত ওর চোখমুখ। ঠাম্মি কিন্তু ছুঁয়েও দেখত না সেসব। উল্টে মুখ বেঁকিয়ে বলত," দেখেছ কি বড় মন আমার নাতির। একফোঁটা হিংসে নেই মনে। তা নইলে বোনের প্রাইজ নিয়ে আহ্লাদ করে এত!"

সংসারে বৈষম্যের বীজ বোধহয় এভাবেই বোনা হয়।ছোট থেকেই অতিরিক্ত প্রাধান্য পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে পরে ছেলেরা। অজান্তেই স্বার্থপরও হয়ে যায় হয়ত কিছুটা। খাবার হোক বা জামা, শখ হোক বা প্রয়োজন, সব ভালো তার জন্য হাজির, সব অনিয়মই তার জন্য মুকুব। এমনটাই নিয়ম লাগু হয়ে যায় সেই গোড়ার দিনগুলোতেই। যদিও নিয়ম না বলে অনিয়ম বলাই শ্রেয় তাকে। যে নীতিতে সাম্যতা নয় ভরপুর পক্ষপাতের সায়, সে আবার নিয়ম হবে কি করে?

ছোটবেলাটা তবু একরকম কেটেছে রিমঝিমের, বড় হয়ে ত আরেক জ্বালা! তখন সবে ওর ক্লাস সিক্স।ছুটির ঘন্টা পড়া মাত্র অন্যদিনের মতোই সেদিনও ছুটতে যাচ্ছিল রিমঝিম। টুম্পা টেনে নিয়ে গেল এক ধারে। ফিসফিস করে বলল "তোর স্কার্টটা লাল হয়ে গেছে মৌবনী, শিগগির টয়লেটে চল আমার সাথে।"
কি হয়েছে কিছু না বুঝেই হাউমাউ করে খুব কেঁদেছিল রিমঝিম। চোখ মুখ ফুলে গেছিল কেঁদে কেঁদে। পরে মাম্মাম বোঝাল, অমন নাকি সকলের হয়। মানুষের, ঠাকুরের আসলে সব মেয়েদেরই। এটাকেই নাকি 'বড় হওয়া' বলে। ভয়ের তেমন কিচ্ছু না। মাম্মামের আশ্বাস পেয়ে জ্বর জারির মত একটা স্বাভাবিক অসুখ বলেই মনে হয়েছিল এই চারদিনের অস্বস্তিকর 'শরীর খারাপ' নামের ব্যাপারটা। একবারও মনে হয়নি ও একজন আলাদা কেউ, এমন কেউ, যাকে ছুঁলে পাপ হয়!

গোপালের মিছরি মাখন দুই নাতি নাতনিকে সন্ধ্যেবেলা ভাগ করে দিত বুড়ি। অভ্যেস মত সেদিন যেই প্রসাদ নিতে গেছে তরাং করে ছিটকে ওঠে ঠাম্মি! গজগজ করে কি না বলে, শুধু কি ওকে, ওর মত সিস্টিছাড়া আলুক্ষে মেয়ের জন্ম দেওয়ার জন্য মাম্মামকেও কিছু বলতে বাকি রাখেনি মানুষটা। অন্যায়টা যে ঠিক কি সেটা ভালোভাবে না বুঝলেও অন্যায়ের গুরুত্ব যে অনেক, খিদের পেটে ভালোই বুঝেছিল রিমঝিম। প্রতিবাদে ভূখ হরতাল করেছিল মাম্মাম আর রিমঝিম, দুজনেই টানা দুদিন। স্রেফ জল খেয়ে নেতিয়ে ছিল সারাদিন। শেষে জেম্মা দিব্বি দেওয়ায় খাবার খায় মাম্মাম। আর তার দেখাদেখি রিমঝিমও। বুড়ি অবশ্য তখনও মুখ বেঁকিয়ে বলেছে, "যত সব নাটুকেপনা! মা, মেয়ে দুটোই সমান নাটুকে !"

অন্যদের মত মিতিনও সেই গতানুগতিক প্রশ্নবাণে মেয়েটাকে এভাবে জর্জরিত করবে ভাবেনি পরমা। তাই নিশ্চিন্তে ওকে সবার মধ্যে রেখে কিছুক্ষণ মায়ের কাছে বসেছিল সুখ দুঃখের গল্প নিয়ে। এর মধ্যে যে এত মহাভারত হবে কে জানত। মেয়ের থমথমে মুখ দেখে না বলতেও সবটা বুঝে যায় পরমা। কি যে পায় ওরা এসব করে। বারবার এক কথা বলে বলে বিরক্ত করে মারে মেয়েটাকে। এটাই মজা যেন ওদের। যেটা নেই সেটার কথা তাই শুধু, আর যেটা অন্য অনেকের নেই, তার বেলা? সেটাও আলোচনা করতে হয়, সমালোচক সমাজকে সেকথা আজ বুঝিয়েই ছাড়বে পরমা স্পষ্ট করে।

মেয়ের হাত ধরে জটলার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায় পরমা। রিমঝিম নয় সেখানে তখন অন্য কারো মুন্ডপাত হচ্ছে একই কায়দায়। প্রমুখ বক্তা যথারীতি সেই হাতে গোনা পাঁচ ছ জনই। বাকিরা শুধুই শ্রোতা।তারা শুধু মুখ বুজে শোনে, তালে তাল ঠোকে দরকার মত।

"আমাদের এক্ষুণি চলে যেতে হবে রে মিতিন। আই এ এস হওয়ার এইত জ্বালা। ইচ্ছে থাকলেও সাধারণ হওয়া যায় না। এজন্যই আসতে চায় নি মেয়েটা । খালি বলছিল ''তুমি চলে যাও একা। আমায় ত ফিরে আসতে হবে যখন তখন।কাজটাই এমন।" আমিই গোঁ ধরে বলেছিলাম "টুকাইয়ের বিয়ে আর তুই যাবি না! তাই হয়! মুখ দেখিয়েই চলে আসবো না হয়। তবু চল। মিতিন কত ভালোবাসে তোকে। দিদুনও। বিয়ের বাড়িতে দেখা হয়ে যাবে সবার সাথে।" এসব বলে ধরে করে নিয়ে ত এলাম মেয়েটাকে।কিন্তু কি হল! মুখ দেখিয়েই ত চলে যেতে হচ্ছে সেই!"

"তা আর কি করবে,মেয়ে কি আর তোমার যেমন তেমন কাজ করে পরমা। এটুকু সময় যে এসেছে সে মেয়ে তোমার কথা রেখে, এই কি কম কথা? কি বলো মিতিন।"
আলোচনার মোড় পাল্টে যায় রাতারাতি। চেনা, অচেনা, সকলের চোখেমুখে যেন প্রচ্ছন্ন গর্ব।
বিয়ে হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না, 'দেখগে যাও নির্ঘাত কিছু ব্যাপার আছে', 'নিজেই ঠিক করে রেখেছে' হয়ত' এসব ফিসফাস পাল্টে গেছে ততক্ষণে।রিমঝিম জানে এখন জোরদার গুঞ্জন চলবে ওর চাকরি, পদমর্যাদা, যোগ্যতা নিয়ে। তা চলুক। আলোচনার শেষে এরাই ত বলবে "ওহ, এজন্যই ত বিয়েটা করছে না মেয়েটা।" বলবেই ঠিক।

চোখে চোখেই হাসে মা মেয়ে নিঃশব্দে। কিছু প্রতিবাদ এভাবেও করা যায় আসলে। যে নিয়মনীতির আড়ে পক্ষপাত হয়ে চলেছে এতদিন, তাকেই তোপ বানিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রয়োগ করা যায় হয়ত এভাবেই। অন্তত এভাবেই আয়না দেখুক সমাজ। বুঝে নিক ছেলে আর মেয়েদের জায়গাটা আসলে সমান সমান।না বেশি না কম! যোগ্যতাই গুরুত্ব পাওয়ার মাপকাঠি, লিঙ্গ ভেদ নয়।


উত্তর শাসন,শাসন,বারুইপুর,উত্তর ২৪ পরগনা

সন্ধি সুত্র

   ✍️ মাধুরী লোধ

আমার কপালে ফুটাতে চাই সূর্য ফুল
আমায় সাহায্য করো
আজীবন গেঁথে রাখবো হৃদয়ে
ভোর হবার দিন গুলো ।
চাঁদফুল বসাবো নাক চাবিতে
আমায় সাহায্য করো   ,
আজীবন ব ইয়ে রাখবো শিরায় শিরায়
জোনাকির আলোভরা রাত গুলো ।
হাতের মেহেদী তে আঁকতে চাই গাছপালা
আমায় সাহায্য করো
আজীবন রাখতে চাই শ্বাস প্রশ্বাসের চাবি
প্রকৃতির মিঠে ঘ্রাণ ।
পায়ে আলতা দিয়ে আঁকতে চাই নদীর ঢেউ 
উচ্ছলতা কলকল নিশান
আমায় সাহায্য করো ,
আজীবন হতে চাই পানসীর মাঝি
দু পায়ে বাজাতে সমুদ্রের উত্তাল ঝুমুর ।
হৃদয় আয়নায় বসাতে চাই হৃদয় ফুল
বাজবে নূপুর নাচবে ঝুমুর ।
আমায় সাহায্য করো  ,
আজীবন গায়ে মাখতে চাই মেটে ফুল
 আকাশ ফুল, চাঁদফুল,তারা ফুল                    , হাসি ফুল  প্রেম ফুলের স্পর্শ
আর ভয় পাবো না বিশ্বায়নের থাবায়।

হে ঈশ্বর

   ✍️ তমাল দেবনাথ 

হে ঈশ্বর।।
সকল মানুষ আর মানুষ নয়,
হয়ত আমিও নয় মানুষ।
এখনও আমাদের অনেকের কোনো,
তোমার প্রতি নেই হোষ।

হে ঈশ্বর।।
কত সময় কাটায় আমরা,
দিনে বেলা অবেলায়।
শুধু সময় থাকে না আমাদের,
তোমার ই পূজার বেলায়।

হে ঈশ্বর।।
শুধু দুঃসময়ে ডাকি তোমায়,
রক্ষা করো তুমি আমায়।
আনন্দের মাঝে ডুবে গেলে,
তোমার নাম ভুলে যায়।

হে ঈশ্বর।।
কষ্টের মাঝে থাকলে আমরা,
বলি দাও মোদের শক্তি।
সেই শক্তি পেলে আমরা,
ভুলে যায় তোমায় করতে ভক্তি।

হে ঈশ্বর।।
সকল মানুষ আজ মানুষ নয়,
হয়ত আমিও নয় মানুষ।
তোমার দয়ায় কাজ মিটে গেলে,
তোমার রাখিনা কোনো খোঁজ।

একটি পুকুর ও এঁদো ডোবা

    ✍️ চৈতন্য ফকির 

আমাদের যৌথ পরিবারে তখন একটি পুকুর ছিলো।
একটি পানাপুকুর। পানাপুকুরকে আমরা ডোবা বলতাম।
একেবারে এঁদোডোবা যাকে বলে।
ছোটবেলা এই ডোবায় খাবি খেতে খেতে সাঁতার শিখি।

দুপুরে বড়শিতে জিওল ধরি।সকালে ফুলকপি ক্ষেতে
কলসি ভরে ভরে জল এনে বাড়ির দক্ষিণে দিতাম।
ঠাণ্ডায় হাত হিম হয়ে কেটে পড়বে এত শীতল তার জল।
গরমের সন্ধ্যায় পচাজলকেও মনে হতো 
বরফের দেশে স্বান করছি।
শরিকি পুকুরে মাছচাষ হতো।
মাঝেমাঝে মাছশিকার করে
ভাতাভাগি করে কারো পাতে মাগুর তো কারো শিংকইলাঠিগুলো যেতো।তা দিয়েই নানান স্বাদমতো 
রান্না চড়াতেন মা কাকি ঠানদিরা।

পাশের পুকুর ছিলো ঠাকুরদা মন্মথ আর ঠানদি রাণীর।
জলে নামলেই নানান নিষেধ। 
সকল নিষেধ ডিঙিয়ে আমরা মাঝেমাঝে স্নান সারতাম
সিগ্ধ লাগতো শরীর।

এখন আমাদের বাথরুম আছে সেই পানাপুকুর নেই 
এঁদো ডোবা নেই। বুকজলে স্নান নেই। 
মাছ শিকার নেই। যৌথ পরিবার নেই। ফুলকপি ক্ষেত নেই। 

যৌথ পরিবারের সেই সব দিন নেই আছে শুধু 
ভিডাব্লিউ এসের জীবাণুমুক্ত ব্লিচিং পাউডারজল।

নেই সে এঁদো ডোবা ও বিশুদ্ধ পুকুর! 

আত্মক্ষরণ

   ✍️ গোবিন্দ ধর

নেই নেই করেও আমাদের একপাল গরুছিলো।
আর বাতানে কয়েকটি দুধেল মহিষ।

 সব্জির বিছরা ছিলো।আর ছিলো ধানি জমি।

কোনোকালেই ছাগল আমাদের পোষে স্বাচ্ছন্দ পায়নি।

কিন্তু বরাবরই আমাদের ক্ষেতের ফসল 
খেয়ে দিব্বি তারা মাঠে চরতো।

আজো ছাগল আমার পিছু পিছু ধানপাতা মুড়িয়ে খায়।

নববর্ষ

    ✍️ সুপর্ণা মজুমদার 

নিশি অবসানে নূতনের বার্তায় ঐ বুঝি ভোর হয়! 
       নূতন সূর্যোদয়ের সাথে হোক 
       ফেলে আসা পুরাতনের ক্ষয়।
        কত না বেদনা, হাসি -কান্না 
             ছিল পুরাতন ঘিরে,
           নবাগতকে বরণ করা 
      নূতন আশা আর অঙ্গীকারে।
 .   কালের গতিতে চলে যায় দিন 
     ..    শুধুই নিয়মের পালা,
     আসা- যাওয়া তো বিধির বিধান 
            এক চির পুরাতন খেলা! 
        ভোরের পাখি গেয়ে গেল গান 
             নূতনের ভৈরব সুরে,
         নবচেতনার বোধদয় হোক 
        এই বিভাবড়ির পূন্য ভোরে।
      যা ছিল কলুষ,মুছে যাক আজ
          পুরাতন বিদায়ের সাথে-------,
      .   নূতনের সুর বেজে উঠুক 
           নববর্ষের পূন্য প্রভাতে।

অনুভব

    ✍️ চন্দন পাল

স্নেহ গভীর মায়া গভীর       গভীর শ্রদ্ধা ভক্তি
তার চেয়ে গভীর বেশি ভালবাসার শক্তি।

স্বপ্ন গভীর স্মৃতি গভীর      গভীর বুকের নীল
তার চেয়ে গভীর বেশি তোমার চোখের ঝিল।।

নদী গভীর সাগর গভীর      গভীর সবুজ বন
তার চেয়ে গভীর বেশি সরল পিয়ার মন।

প্রেম গভীর বেদনা গভীর     গভীর প্রকৃতির দান
তার চেয়ে গভীর বেশি কবি কবিতার টান।। 

আশা গভীর ভাষা গভীর      গভীর শাস্ত্র জ্ঞান
তার চেয়ে গভীর বেশি মাতৃভাষার টান।

তপ গভীর ছলনা গভীর      গভীর দাবার চাল
তার চেয়ে গভীর বেশি কূটনীতির চাল।।

জন্ম গভীর মৃত্যু গভীর      গভীর জীবনের ছন্দ। 
তার চেয়ে গভীর বেশি শুদ্ধ গুরুর সান্নিধ্য। 

ধর্ম গভীর বর্ণ গভীর      গভীর জাতির টান 
তার চেয়ে গভীর বেশি জন্মভূমির টান।।