সম্পাদকীয়

✒️সম্পাদকীয়...

                     বীর সেনাদের রক্তে মাখা
                 গর্ব আমাদের জাতীয় পতাকা...

নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকার জানুয়ারি মাসের ই সংখ্যা রাজ্য, বহিঃরাজ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের কবি, লেখক, সাহিত্যিক বৃন্দের কলমে ফুটে উঠেছে। জানুয়ারি মাস বরাবরই সকলের জন্য একটি পবিত্র মাস। বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম, সর্বকালের সেরা নায়ক বীর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম এই মাসে, তাই আমরা এই সংখ্যাটি তাদেরই সমর্পণ করলাম। 

ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য আমাদের ত্রিপুরা । শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্যে আমাদের ত্রিপুরা সবসময়ই সমৃদ্ধ। আর সেই ভাবধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার আমূল অগ্রগতি অত্যন্ত লক্ষনীয়। 
এই পথে ত্রিপুরার নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকা রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য নাম। আমরা মন খুলে স্বাগতম জানাই নব চিন্তাকে, নব সৃষ্টিকে, নব ভাবনাকে। 

শ্রীযুক্ত গৌরাঙ্গ সরকার মহোদয়ের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই ব্যাতিক্রমি সাহিত্য পত্রিকার পথচলা। শ্রীযুক্ত  গৌরাঙ্গ সরকার মহোদয়ের সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ, ভালোবাসা তথা মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ববোধের ফলই এই নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকা।
পাশাপাশি শুভাকাঙ্খিদের থেকেও সবসময় সহযোগিতা আর উৎসাহ পেয়েছি ৷ তাই সবারকাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ ৷ নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকার সম্পূর্ণ কমিটির সদস্য, সদস্যার বৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই সংখ্যাটি। অনেক ধন্যবাদ জানাই তাদেরও।

আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই যারা যারা এই সংখ্যার সাথে জড়িত ছিলেন। এই সংখ্যাটি যদি সবার কাছে ভালো লাগে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক বলে বিবেচিত হবে ।

ধন্যবাদান্তে,
কার্যকরী সম্পাদক 
শ্রীযুক্ত পান্থ দাস 
নবোন্মেষ সাহিত্য পত্রিকা

ঘুড়ি

✍️ অধীর কুমার রায়


ঘুড়ি উড়ছে দিগন্তের নীলিমায়।

লাটাই নেই হাতে,

তবু স্মৃতির সুতো ধরে টানি।

ঘুড়ি ঘুরে ঘুরে বলে যায় কানে কানে

রোদ্দুর ভেজা দিনের কথা।

হিমেল সকালে বারান্দায় বসে দুজনে।

চায়ের পেয়ালা সাক্ষী থাকে

কিছু অবুঝ দিনের গল্পকথার।

গরম চায়ের ধোঁয়া উড়ছে

এখনো উত্তাপে ক্ষতবিক্ষত অনুভবি হৃদয়।


ঘুড়ি উড়ছে।

কখনো মেঘের চাদর ঢেকে দেয়।

আপ্রাণ সুতো ধরে টানি।

তবু কিছুতেই নামেনা সে ঘুড়ি

হৃদয় আকাশ হতে।

অনুভূতি প্রকাশের পথ


 

✍️ ইমরান খান রাজ 


সে আমায় হারায়নি 

হারিয়েছে অনুভূতি প্রকাশের পথ, 

আলো ঝলমলে রোদ্দুর। 

সে আমায় হারায়নি 

হারিয়েছে হাসি মুখ আর শীতল স্পর্শ, 

জোছনার মায়া কিংবা অভিযোগ। 

সে আমায় হারায়নি 

হারিয়েছে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা, 

হাত ধরে হাঁটার গতি। 

সে আমায় হারায়নি 

হারিয়েছে গন্তব্য এবং ঠিকানা, 

ভালোবাসি বলার মানুষ। 

অমর প্রেমের স্মৃতিচিহ্ন কবি চন্দ্রাবতী শিবমন্দির



✍️ লোকমান হোসেন পলা

কিশোরগঞ্জ মধ্যযুগের বাংলা সংস্কৃতির রাজধানী। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর আর সমতলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন জনপদ কিশোরগঞ্জের এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে শিল্প-সংস্কৃতির নানা নিদর্শন। মধ্যযুগের প্রখ্যাত ভাসান কবি দ্বিজ বংশী দাসের মেয়ে চন্দ্রাবতী তেমনি এক কিংবদন্তির নাম। তিনি ছিলেন মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহিলা কবি। মধ্যযুগে বাংলার প্রথম সার্থক মহিলা কবি চন্দ্রাবতী ছিলেন বাবার মতো ভাসান কবি, গীতিকার আর রামায়ণের রচয়িতা। মৈমনসিংহ গীতিকার পরতে পরতে মিশে আছে কবি চন্দ্রাবতীর অমর কাব্য, প্রেম আর বিরহের উপাখ্যান।
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পাতুয়াইর গ্রাম। একসময় নির্জন আর বন-জঙ্গলে ঘেরা অনেকটা দুর্গম পাতুয়াইর গ্রাম ছিল ফুলেশ্বরী নদীর তীরে। এখন আর নদীর কোনো চিহ্ন নেই। তবে পাথুয়াইর গ্রামেই মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির ও তার পূর্বপুরুষের বাড়ির স্মৃতি বয়ে চলছে আজো। কালের নীরব স্বাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির আর ভগ্নপ্রায় কয়েকশ’ বছরের পুরনো বাড়ি। যার প্রতিটি ইটের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে নানা কিংবদন্তি।
মনসা মঙ্গল কাব্যের অন্যতম রচয়িতা ও ভাসান কবি দ্বিজ বংশী দাস ও সুলোচনা দাসের মেয়ে চন্দ্রাবতীর জন্ম ১৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে। ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক ড. দীনেশ চন্দ্র সেন চন্দ্রাবতীর লেখা রামায়ণ প্রকাশ করেন। ভাটি বাংলার মানুষের জীবন-জীবিকা ও সুখ-দুঃখ নিয়ে চন্দ্রাবতী রচিত রামায়ণ, দস্যু কেনারামের পালা ও মলুয়া লোকপালা এখনো মানুষের মুখে মুখে। এখনও বৃহত্তর ময়মনসিংহে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে চন্দ্রাবতীর গীত। বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ চন্দ্রাবতীর পালা আর রামায়ণ।
কবি চন্দ্রাবতীর অমর প্রেমের স্মৃতি মিশে আছে শিব মন্দিরকে ঘিরে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহাসিক স্মৃতি। মন্দিরকে ঘিরে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা এবং কবির স্মৃতি রক্ষায় একটি পাঠাগার গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন পর্যটক ও এলাকাবাসী।
অনিন্দ্যসুন্দরী চন্দ্রাবতীর প্রণয় ছিল শৈশবের বন্ধ ও খেলার সাথী পার্শ্ববর্তী করিমগঞ্জ উপজেলার সুন্ধা গ্রামের জয়ানন্দের সঙ্গে। প্রভাতে দুই বন্ধু মিলে পূজার ফুল তুলে আনতেন। দু’জনের শিশুকালে প্রেম একসময় প্রণয়ের দিকে মোড় নিতে থাকে। স্থির হয় চন্দ্রার সঙ্গেই বিয়ে হবে জয়ানন্দের। প্রস্তুতি নেয়া হয় সেভাবেই। বিয়ের দিন-ক্ষণও নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যায় সেই ট্র্যাজিক ঘটনা। চন্দ্রাবতীর প্রেমিক সুদর্শন যুবক জয়ানন্দ স্থানীয় কাজীর সুন্দরী মেয়ে আসমানির প্রেমে পড়ে যান। চন্দ্রাবতীর সঙ্গে বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে ওই মুসলমান যুবতীর প্রেমে পড়ে ধর্মান্তরিত হন জয়ানন্দ। বিয়ে করেন ওই যুবতীকে।
এ খবরে হৃদয় ভেঙে যায় চন্দ্রাবতীর। বাবা দ্বিজ বংশী দাসের নির্দেশে আজীবন কুমারী থাকা আর ফুলেশ্বরী নদীর তীরে মন্দির স্থাপন করে শিবপূজায় মন দেন চন্দ্রা। এভাবেই কাটতে

ডিজিটাল সাংসার (অন্য প্রেমের গল্প) ১০

লোকমান হোসেন পলা

থাকে সময়। একসময় নিজের ভুল বুঝতে পেরে চন্দ্রাবতীর কাছে ছুটে আসে জয়ানন্দ। কিন্তু মন গলেনি চন্দ্রার।
অভিমানী চন্দ্রা আর মন্দিরের দরজা খোলেননি। অনেক ডাকাডাকির পর সন্ধ্যামালতী ফুল দিয়ে মন্দিরের কাঠের দরজায় চার লাইনের একটি আকুতিমূলক কাব্য লিখেন জয়ানন্দ। ‘শৈশব কালের সঙ্গী তুমি যৌবন কালের সাথী/ অপরাধ ক্ষমা করো তুমি চন্দ্রাবতী/ পাপিষ্ঠ জানিয়া আমোরেকা না হৈলা সম্মত/ বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মতো।’ এরপর ব্যর্থ প্রেমিক জয়ানন্দ আত্মগ্লানি আর দহনে পুড়ে ফুলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
অনেকক্ষণ পর ধ্যান ভাঙে চন্দ্রাবতীর। বুঝতে পারেন জয়ানন্দের স্পর্শে মন্দির অপবিত্র হয়ে পড়েছে। তাই পবিত্র করার জন্য ফুলেশ্বরী নদীতে যান জল আনতে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হৃদয়দহনে দগ্ধ হন তিনি। জয়ানন্দ আত্মহত্যা করেছেন জেনে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন চন্দ্রাবতী। তবে কারো কারো মতে, নদী থেকে ফিরে এসে চন্দ্রাবতী মন্দিরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার পাথুয়াইর গ্রামে কালের নীরব স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অষ্টকোণাকৃতির চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির। পাশেই রয়েছে আরো একটি মন্দির ও ভগ্নপ্রায় একটি দ্বিতল ভবন। বাড়িটি চন্দ্রাবতীর পূর্বপুরুষ জমিদার নীলকণ্ঠ রায়ের বলে ধারণা এলাকাবাসীর। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। কিন্তু মন্দিরের দৈন্যদশা দেখে হতাশ হন অনেকে। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষার দাবি তাদের।
বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার অমর প্রেমের স্মৃতিচিহ্ন চন্দ্রাবতী শিবমন্দির সংস্কার করে এখানে একটি সমৃদ্ধ পর্যটনকেন্দ্র ও পাঠাগার গড়ে তোলার দাবি এলাকাবাসীর।

ঠকে যাওয়া


 ✍️   অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী


এই পৃথিবীতে কেউ ঠকতে রাজি নয় 

সবাই শুধু ঠকাতে ব্যস্ত। 

প্রতিটি মুহুর্ত প্রতিটি দন্ড একে অপরকে ঠকাতে শশব্যস্ত। 

ঠকতে কে চায় বলুন, সবাই চায় জিতে হাসিল করতে, কিছু লাভ করতে। 

কিন্তু যে একবার ঠকে গেছে, যার একবার বিশ্বাসের পাহাড় টলে গেছে। 

সে আর ঠকতে ভয় পায় না, সে ঠকেও আনন্দ উপভোগ করতে শিখে গেছে। 

শিখে গেছে ঠকে যাওয়া রাস্তাকে লাভজনক রূপে পরিবর্তন করতে। 

রহস্যময় এই পৃথিবীতে সবাই ঠকে যায়। 

একবার না একবার সবাইকে ঠকতে হয় 

কারো না কারো কাছে ঠকতে হয়, 

নয় তো কোনো প্রিয় বস্তুর কাছে ঠকতেই হয়।।

নেতাজী

 


✍️ আলমগীর কবীর 


ওগো নেতাজী তুমি মহান তুমি দুঃসাহসিকবান

তুমিই সেই নেতা যার নেই কোনো তুলনা 

যতই আমরা যাই তোমায় ভুলে কিন্তুু তুমি মোদের ভুলছনা।


ওগো নেতাজী শুননা তোমার চরণধূলি মোরে দিয়ে দিবেকি একটু শান্তনা।

যখন আমি বুঝতে শিখেছি তখনই তোমার নাম শুনেছি 

তখন থেকেই হয়েছি পাগল অনেকে তোমায় চিনলনা।


আজও আমি গাই তোমার গান নাহি পাই মনে শান্তি 

তোমার জীবনী পড়ে মোর হচ্ছেনা কভু তৃপ্তি। 


ওগো নেতাজী যেখানেই থাকো জানাই আমি তোমায় প্রণাম

আমরা ভারতবাসী মহাভাগ্যবতি জন্মেছে এই দেশে এক বীরমহান।


ওগো নেতাজী তোমার মতো হতে পারবোকি জানিনাতো আমি

তবুও মনে ভালোবাসা জাগে মোদের জন্মভূমি। 


যখন তুমি ছিলে বন্দী, বন্দী নিজ গৃহে অনাহার

তারপর সেই ইংরেজবাহিনী তোমার ভয়ে আতঙ্ক আর হাহাকার।

ভীষণ অসুখ

 


✍️  দীপঙ্কর বিশ্বাস

 

ডাক্তার বাবু ডাক্তার বাবু…

শিরদাঁড়াটা ভীষণ ব্যথা

রাত্তিরে ঘুম নাই,

উপশম কি আছে কিছু

জানতে আমি চাই ।

হঠাৎ করেই কেমন জানি

হয়ে গেছে শক্ত

মনে হচ্ছে দেহে হরতাল

বন্ধ হয়েছে রক্ত !

এতদিন তো ছিল ভাল

বড়ই নমনীয়,

মাঝে মাঝে বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে

বানিয়ে ফেলতাম ‘ক্ষ’!

যেখানে সেখানে যেমন খুশি

হয়ে যেত ‘নিল ডাওন’

জীবন আমার ধন্য তখন

জগত সেরা ‘ক্লাউন’!

নৃত্য কত, নিত্য নতুন

ছিল আমার রপ্ত…

সকল প্রকার বাদ্য বাজিয়ে

সুর ছিল সব সপ্ত !

অমুক দাদা, তমুক দাদা,

সকল দাদার ভক্ত…

সকল দাদার পদযুগল

আমার তেলে সিক্ত।

সময় ছিল হাতের মুঠোয়

হামসে বড়া কউন?

আমার দাদা কি আসে যায়

ক্ষমতায় কে হউন…।

হঠাৎ করেই শিরদাঁড়াটা

হয়ে গেল সোজা!

ভীষণ অসুখ কেন হল

যাচ্ছে না তো বোঝা!

সমাজ আমায় কেমন করে

এমন মেনে নেবে

পরিবার কি এমন রূপে

আমায় দাম দেবে?

সারিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি

মূল্য পাবেন খাসা

সোনার থালা, রূপার থালা,

নইলে নতুন বাসা।

তাইতো বলি রক্ষা করুন

ওহে ডাক্তার বাবু

মেরুদণ্ড সোজা হয়ে

করেছে আমায় কাবু।

নেতাজী তোমায় কিছু বলার ছিল

 


✍️ সুপর্ণা মজুমদার রায়


নেতাজী,তোমায় কিছু লিখবো বলে

কলম ধরেছি আজ। 

আঁধারে কেন বিলীন হলো

তোমার রণসাজ? 

সত্যিই তুমি কোথায় আছো 

জানতে ইচ্ছে করে, 

তোমাকে ছাড়া বাঙালী আজ

কুকুরের মতো মরে। 

স্বাধীনতার বদলে রক্ত চাওয়া 

ছিল কি তোমার অন্যায়? 

তবে কেন তুমি হলে অপহৃত 

বুর্জোয়ার ছলনায়? 

আন্দামানে তোমার উড়ানো 

প্রথম ত্রিবর্ণ ধ্বজা, 

বিনিময়ে কি তুমি পেলে

এতো কঠোর সাজা? 

নেতাজী, তোমার আজাদ হিন্দ ফৌজ 

কোথায় কেমন আছে? 

একটিবারও জানতে চাও না 

দেশবাসীর কাছে? 

ধর্মের নামে অধর্ম চলে

অর্থের অপচয়,

দানবের আঘাতে জর্জরিত 

তোমার দেবালয়! 

হিংসার আঘাতে মা যে মোদের 

বড়োই অসহায়, 

তাঁর সুভাষ ফিরবে কবে

অধীর অপেক্ষায় । 

মন যে আরও বহু প্রশ্নের 

উত্তর জানতে চায়,

নেতাজী,তুমি ফিরবে কবে 

বাঙালী সেটাই জানতে চায় । 

আঁধারে নিজেকে করেছো গোপন

কাদের ইশারায়? 

আজও বাঙালী হন্যে হয়ে খোঁজে 

নেতাজী, তুমি কোথায়? 

নেতাজী, তুমি কোথায়? 

*******************

বীরপুরুষ নেতাজী

 


✍️ পূজা নাথ

হে বীরপুরুষ নেতাজী 


 তুমি কতো কিছুই না করেছো,


 দুঃখী দেশবাসীদের জন্য


 শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়েছো। 


নিজের কথা না ভেবে


 চেয়েছো মানুষের সুখ,


 আজও তাই নাম শুনলে


 গর্ভে ফুলে ওঠে ভারতবাসীর বুক। 


হে বীরপুরুষ নেতাজী


তুমি ভারতবাসীর সব দুঃখ সরিয়ে ,


অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে


 দেশবাসীকে দিয়েছো সুখ- শান্তিতে ভরিয়ে ।


জনগণ কে বলেছো -তোমরা আমাকে রক্ত দাও 


আমি তোমাদের দেবো স্বাধীনতা ,


এই বাণীটির মাধ্যমে


 সারাদেশে শোনা যায় তোমার বিজয় গাঁথা ।


হে বীরপুরুষ নেতাজী


 স্বাধীন ভারতে  আছে তোমার অনেক অবদান ,


তাই আজও দেশবাসীরা করে


 নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জয়গান ।

প্রেমিক

  ✒️রূপালী রায় 

একি শহরের ভীড়ে
 তুমি আমি একি পথের যাত্রী
 হ্যাঁ, আমি জানি তুমি গল্প প্রেমিক
 আমি কবিতাটাই বেশি ভালোবাসি।  
 তোমার নীল রং তা বেশি প্রিয় 
 আমি হলুদ ভালোবাসি । 
 তুমি অবেলায় আমার সুপ্রভাত বলো
 সে নিয়ে আমি প্রচন্ড অভিমানী
 তবু আমি শুধু তোমার সেই অবেলার সুপ্রভাতের অপেক্ষাতেই থাকি
 অমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
 শুনলে !
 আমি তোমাকেই ভালোবাসি।। 
 হ্যাঁ, তুমি কথায় কথায় বলো ঠিক ই
 আমি বড্ড মেজাজি মেয়ে
 তবে আমি এ ও জনি
 কেউ আমায় কিছু বললে
 তুমি হয়ে উঠো কি ভীষণ প্রতিবাদী।

নেতাজী তুমি আসতে যদি আবার

✒️পাপিয়া দাস

ছোটবেলায় দাদুর মুখে 
কত গল্প শুনেছি তোমার -
তোমায় নাকি দাদু দেখেছিল কতো জনসমাবেশে, আর কতো সভায়,
দেখেছিল দেশের স্বাধীনতার জন্য তোমার প্রানপণ লড়াই।

তোমার সেই বীরত্বের গল্প,
পড়েছি পাঠের ইতিহাসে।
তোমার সাহসিকতার গল্প শুনেছি,
ইতিহাসের স্যারের কাছে।

তোমায় একটিবার দেখার ইচ্ছে ছিল খুব,
কিন্তু তুমি এলেনা আর।
তুমি এলে না ফিরে এই কাপুরুষের দেশে,
চলে গেছো তুমি অজানা কোন দেশে?
তোমার মত সাহস ও বীরত্ব নিয়ে চলার মতো কাউকে
আজও আমাদের দেশ খুঁজে তোমায় বার বার,
নেতাজী তুমি ফিরে আসতে যদি আবার-

তুমি আসনি

 
✒️সানিয়া জাহান

আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা মনটা 
আবার জোড়তে চাই 
তোমার অপেক্ষায়। 

শ্রাবণের বিকেল বেলায়
তোমায় নিয়ে লিখা গান শুনে
মোর চোখের শ্রাবণ গুন গুন গায়। 

ওই হাওয়াদের গল্প শুনে শুনে গান বুনি
শুধু তোমার অপেক্ষায়।

আবার সাজিয়েছি গুছিয়েছি 
তবু কেন আসনি তুমি?

একা মন পাড়ায়
মোর স্বপ্নের সাথী।

তবু তুমি আসনি। 
আমার ভালোবাসা বোঝোনি 
খাঁটি সোনা আজও তুমি চেনো নি 

আমার গল্প গুলি শুনোনি 
তুমি আসনি।

ঘুড়ি

✒️অধীর কুমার রায়

ঘুড়ি উড়ছে দিগন্তের নীলিমায়।
লাটাই নেই হাতে,
তবু স্মৃতির সুতো ধরে টানি।
ঘুড়ি ঘুরে ঘুরে বলে যায় কানে কানে
রোদ্দুর ভেজা দিনের কথা।
হিমেল সকালে বারান্দায় বসে দুজনে।
চায়ের পেয়ালা সাক্ষী থাকে
কিছু অবুঝ দিনের গল্পকথার।
গরম চায়ের ধোঁয়া উড়ছে
এখনো উত্তাপে ক্ষতবিক্ষত অনুভবি হৃদয়।

ঘুড়ি উড়ছে।
কখনো মেঘের চাদর ঢেকে দেয়।
আপ্রাণ সুতো ধরে টানি।
তবু কিছুতেই নামেনা সে ঘুড়ি
হৃদয় আকাশ হতে।

বিবর্তনের মালা

✒️কামনা দেব
                                         
ভালোবাসা আকাঙ্ক্ষার,
বিত্ত ভাসে চোখের জলে 
নিত্য নতুন চায় সবাই
থাক্ বা না থাক্ তবু চাই,
চিত্তেই যখন দয়া নাই
হৃদয় চঞ্চল থাকে তাই
অপেক্ষার প্রহর তখন 
বেদনার ঐ পাপড়ির তলে।

ফুলের মালা শুকিয়ে যায়
নতুন ফুল ফুটবে বলে 
স্বপ্ন একদিন ভেঙ্গে যায় 
নতুন এক স্বপ্নের আশায় 
হৃদয় যখন হয় চঞ্চল 
ডাগর চোখে আসে জল
বেদনার ব্যথা হৃদয় পুড়ে 
নিজেই শুধু জ্বলে।

জীবনদীপ নিভে যায় 
নতুন রূপেতে আসবে বলে
আকাঙ্ক্ষারা ম্রিয়মাণ 
জীবন যখন অবসান
দুঃখ তখন দীপ্যমান 
সুখেরা শোকে হয় ম্লান
বেদনার আকাশ ফুঁড়ে 
বিবর্তনের মালা দোলে।

অস্তিত্ব

 


✍️ প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ


আমি ধুলোর গায়ে মিশে থাকি আর,

হালকা হাওয়ায় উড়ে বেড়াই।

ধরে রাখতে জানো যতদূর,

ভালোবেসে থেকে যেতে চাই।


বেলা অবেলার অবহেলায়

নীরবে হারিয়ে যাই।

কেউ জানতে পারেনি কণায় কণায়

কখন ভেঙে গুড়িয়ে ছাই।


মোহঘুম কেটে যেতেই দেখবে

চারপাশ জুড়ে যেন আমি আর নাই।

তবুও স্মৃতির দেওয়াল বেয়ে,

আপন অস্তিত্ব খুঁজে পাই।

সহযাত্রী

 


"""""""""""" ✍️ চন্দন পাল

অযোধ্যা থেকে রেল ফিরে-

সোঁ সোঁ আদুরে বাতাস গায়ে লাগে সরযূ কোশল মিথিলা দন্ডকারণ্য পঞ্চবটী কিষ্কিন্ধ্যা রামেশ্বরের।

গায়ে লাগে পবিত্র রাম নাম ! 

এখন আর কেহ 'রামের কিরা' কেটে মিথ্যা বলবে না।


কামড়ায় সোনার হরিনীর উপস্থিতি টের পাই!

সুবর্ণ ঝিলিক ছোটে, সুগন্ধে বিমোহিত দিক্বিদিক। 

ঘরে এসে জামা ঝারা দিতেই ছড়িয়ে পড়ে তার গন্ধ। 


আস্থা আর মায়ার শেষে! বিজ্ঞানের জয়যাত্রা নির্ঘাত শুরু। 


*************

নুডলসের গপ্পো (৬ষ্ঠ পর্ব)

 


✍️ ~ রাজা দেবরায়



MSG বা Monosodium Glutamate হলো কেতাদুরস্ত নাম! চালু নাম হলো "অজিনোমোটো"। চীন, জাপানে রান্নায় অজিনোমোটো'র ব্যবহার বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। আগে এটা সংগ্রহ করা হতো সামুদ্রিক শ্যাওলা থেকে। তারপরে চাহিদা মেটাতে কারখানায় শর্করা জাতীয় বস্তু বিশেষ পদ্ধতিতে গেঁজিয়ে (fermented) তৈরি করা হয়।


খাদ্যের যে নির্দিষ্ট স্বাদ বা গন্ধ রয়েছে সেটাকে বজায় রাখতে এবং আরও কিছুটা শক্তিশালী করতে এই সাদা রঙের গুঁড়ো অজিনোমোটো ব্যবহৃত হয়। তবে এটি খাদ্যে নতুন কোনো স্বাদ ও গন্ধ জুড়ে দেবার জন্য কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেনা।


অজিনোমোটো ভালো নাকি খারাপ এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত-


The safety of MSG, as related to the corporate image of Ajinomoto, has been a point of discussion since 1910, with unsubstantiated rumors relating to the use of serpents in its raw materials. Since the 1940s, safety concerns have been voiced several times by public institutions in both Japan and the United States. Additional concerns included Chinese restaurant syndrome in the 1960s and the call for greater regulation on the use of MSG, which was based on the work of Professor John Olney, in 1969. In 1996, the FDA commissioned the Federation of American Society for Experimental Biology (FASEB) to study the effects of MSG, who concluded that MSG is safe for most people. At the time, Ajinomoto also noted the possibility that asthma patients and carriers with symptoms of Chinese restaurant syndrome symptoms may be affected, but ultimately, the safety of this group was also confirmed by subsequent test results in the United States and Australia.


In 2020, Ajinomoto along with other activists launched the RedefineCRS campaign to combat the myth that MSG is harmful to people's health, which highlights both the underlying xenophobic biases against Asian cuisine and scientific evidence that the myth is false.

লজ্জা

 


✍️ সঙ্ঘমিত্রা নিয়োগী


রাজপথ জুড়ে ব্যস্ত নিঃশ্বাস ছুটছে

শীতকালীন  ঘুম শরীরময়

দুধারে দোকানীরা নিজেদের

অগণিত বিকি করছে

নগ্ন শিশুদের ফুটপাতে দাঁড়ানো দেখে 

জল কেঁপে ওঠে, অবশ হয়ে যায় আঙুল

 এসব বেঁচে থাকা 

 কবিতা লিখে লজ্জা ঢাকি।।

অনুভূতি প্রকাশের পথ

✒️ইমরান খান রাজ 

সে আমায় হারায়নি 
হারিয়েছে অনুভূতি প্রকাশের পথ, 
আলো ঝলমলে রোদ্দুর। 
সে আমায় হারায়নি 
হারিয়েছে হাসি মুখ আর শীতল স্পর্শ, 
জোছনার মায়া কিংবা অভিযোগ। 
সে আমায় হারায়নি 
হারিয়েছে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা, 
হাত ধরে হাঁটার গতি। 
সে আমায় হারায়নি 
হারিয়েছে গন্তব্য এবং ঠিকানা, 
ভালোবাসি বলার মানুষ। 

কাব্যগ্রন্থ

 


✍️ নীলিমা বেগম


জীবনের প্রতিটা দুঃখ যেন 

একটা করে শব্দ । 

অগণিত শব্দ কথা মিলিয়ে 

কবিতার পর কবিতা হবে।

আজন্ম প্রসব বেদনা সহ্য করে, 

অবশেষে একটা কাব্যগ্রন্থের 

জন্ম হবে।

শূন্যপ্রাপ্তি

 


    ✍️ বৈশালী নাগ

নতুন বছর দরজায় নিয়ে যে          

         এলো শূন্যতা,

শুন্যতায় মিলিত থাকে নিজস্ব এক মিষ্টি যন্ত্রনা;;

অভিমানগুলি পরিণত হয় যখন এক রাশ অভিযোগে

   প্রাপ্তির ঝুলিও ভরে উঠে শুন্যতাতে।

অধিকার ভরে উঠে অভিমানেতে যখন

উদ্দেশ্যেহীন ভালোবাসায় বাঁধে কি তখন মন?

পার্থিব জীবন বসন্ত পেতে চায়

 হাত বাড়ালেই সব যেনো দাবানল হয়ে যায়।

প্রত্যাশা যেখানে শূন্য থাকে

   স্নেহের ঘড়া ও পায়না পূর্ণতা,

 আশায় রয়ে যায় মন বছর শেষে যেনো শুন্যতা প্রাপ্তিতে পরিণত হয়।

বেরোলেই বুঝতে পারবি

 


*********************

✍️  টিংকুরঞ্জন দাস



গত বর্ষায় বলেছিলাম

তোকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজব

কিন্তু শরীর খারাপ করবে ভেবে

বৃষ্টিতে আর ভেজা হলো না।


চল, এই শীতে কুয়াশার চাদর ছিড়ে

ঘুরে আসি কোন গ্রামে

দেখে আসি কোন কৃষাণীর রান্নাঘরে

কতটা ক্ষিধে রান্না হচ্ছে।


জরিপ করে আসি

বেকারত্বের কতটা জ্বালা নিয়ে

এম এ পাস ছেলেটা ভাড়ার অটোতে

যাত্রীর জন্য পথের দিকে তাকিয়ে আছে।


যেতে যেতে পথে যদি

কোন পথশিশুকে দেখতে পাই

তার কাছ থেকে জেনে নেব

গ্রীষ্ম বর্ষা কিংবা শীতের পার্থক্য।


খুব মজা হবে,

বুঝতে পারবি, আট তলার ফ্ল্যাটে

যে সুখ নিয়ে খাচ্ছিস আর ঘুমাচ্ছিস

সেটা ভারতবর্ষের প্রকৃত মানচিত্র নয়।


আমার ভারতবর্ষ এখনও আধপেটা খেয়ে ঘুমায়

আমার ভারতবর্ষ ঋণগ্রস্থ হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়

আমার ভারতবর্ষ চিকিৎসার জন্য চিৎকার করতে পারে

শুধু ধর্মের কথা বলে দিলেই

দেখবি সবাই কেমন নিজেকে ভুলে যেতে পারে।

আমার স্বদেশ মা আমার গরিমা

 


🙏 রণদীপ সিংহ

নিখিল ভূবন মাঝে

আর তো দেখি না যে,

আমার দেশের মতো

বিশ্ব - ভূবনে যতো ।


এমন সোনার দেশ

নেই যে রূপের শেষ ,

পাহাড় - ঝর্ণা - নদী

বইছে নিরবধি ।


এখানে কোকিল ডাকে 

কাতরে চাতক হাঁকে ,

পাখি গায় গান --   

সেদেশ মা কে লাখো প্রণাম।


জাতি - ধর্ম - বর্ণ ভেদে 

নাগরিক খুশিতে মাতে,

আমার জন্মদাত্রী মায়ের মতো

আমি দেশ মায়ের গরিমায় আপ্লুত !


         ২১/০১/২০২৪

      -----------------------------

আসক্ত

 

✍️ দীপক রঞ্জন কর

-------

ফাস্ট বয় ধনঞ্জয়

স্কুলের মেধাবী ছাত্র ,

ভদ্র শালীন আচরণে

সকলের প্রিয় পাত্র ।


পড়ায় সেরা খেলায় বেশ 

গলাও ভালো গানে ,

মা-বাবার মানিক রতন

সকলের হৃদয় টানে ।


স্কুল কলেজ পড়া সেরে

বহিঃ রাজ্যে গেল পড়তে,

মা-বাবার ইচ্ছা পূরণে

স্বপ্নের আকাশ ধরতে ।


পড়ার খরচে নিচ্ছে টাকা

খরচ হিসাব পায় না ,

মা-বাবার চিন্তার ভাঁজ 

কেবলই টাকার বায়না ।


আসে না বাড়ি চিন্তা ভারী

খবর আসে মেইলে,

মেডিকেলে পড়তে গিয়ে

শয্যায় মেডিকেলে ।


খবর নিয়ে জানা গেছে

আসক্ত হলো নেশায়,

মায়ের স্বপ্ন চুরমার করে

জল ঢেলেছে আশায় ।

অসময়

 


✍️ স্বর্ণা রায়

বুকের পাঁজর খুলে পড়ছে

 অসময়ের অসুখে

রোজ তার রাত কাটে সেই শীতের নিস্তব্ধ আকাশের কুলে

তার সদ্য যৌবনবতী মেয়েটিও রাত জাগে লুকিয়ে 

সংসার, নিজের দায়িত্ব ও নিশাচর প্রেমিকের চিন্তায়,,

এইভাবেই তাদের দিন যায়,,,,

অসময়ে তাদের কোন  বন্ধু নেই,,,,, 

দরজার খিল খুলে দেওয়ার মতো কোন পরিজন নেই,,,,


,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,৷ 

ক্লান্ত হয়ে একসময় আতুড়ঘরে ঠাঁই হয়,,,,

ভাবনা

 



✍️ জয়ন্তী চৌধুরী
আগরতলা।
সারাদিন শুধু ভাবা আর ভাবা,
আমি ভাবি তুমি ভাবো, সবাই ভাবে,
ভুগছে সবাই হীনমন্যতায়
যেমন খুশি উড়াই ফানুস
ন্যায় নীতিতে বিশ্বাসী আমরা
কর্তব্যে হই বিচলিত আমরা।
কিছু করলেই ভাবি
কতকিছু করে ফেলেছি।
ভালোবাসা ভুলে যাই,
ভুলে যাই কর্তব্য,
কিছু করলেই মনে হয়
মহান হয়েছি আমরা সবাই।
এই ভাবনা ভুলে গিয়ে,
কাজ করি মিলেমিশে।

ইনফ‍্যাচুয়েশন"


✍️ শ্রীজনার্দন


রাতের গভীরে ঘুম, তার গভীরে স্বপ্ন ;

কালোনিদ্রায় স্বপ্নভঙ্গ, এক আকাশ বিরক্তি ;

পিরামিডের মতো অশান্ত বলয়;

যাকে ঘিরে শুধু বাসনা,

দিবারাত্র শুধু প্রলয়ের হুঙ্কার।


এই তো বেশ আছি,

যেচে গিয়ে মোহগ্রস্ত হয়েছি;

বেলে পথে চলতে গিয়ে,

হোঁচট খেয়েছি কতবার;

আপাদমস্তক ডুবিয়েছি সহস্রবার।


এবার হয়তো একটা ধাপ পিছিয়ে,

শোধনের এক ধাপ এগিয়ে,

ডেকোনা শুধু আমায়;

তোমরাই করে নাও তোমাদের মতো,

জয়জয়কার হোক তোমাদের।


একটু ঠিকঠাক হও,

কল্পনাপথে আড়ি দিয়ে ;

চলতে থাকো দুর্বার গতিতে,

হয়ো না মোহগ্রস্ত আমারই মতো;

তারপর, বিন্ধ‍্যাচলে শুয়ে দেখো,

সবই একটা ইনফ‍্যাচুয়েশন।

এ সময়ে সত্য বলা বড় বোকামি হলেও

✍️ অপাংশু দেবনাথ 

------------------------------------------------------

প্রাক-যৌবনে মাকে বোঝাতে পারিনি 

সত্য বলেছিলাম। 

প্রমাণের পথ না খুঁজে 

আঘাতে নিজেকেই ক্ষতবিক্ষত করেছি। 


বিলম্বিত যৌবনে তোমাকেও বোঝাতে পারিনা, সত্যই বলেছি প্রলম্বিত অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। 


সব কিছু মাথা পেতে নিতে পারি বোকার মত, বোকারাও অকারণ হুচোট খেলে মাঝে মাঝে বেঁকে বসে ঠিক। 

জীবনে কোনোকিছুই ঠিকঠাক চলেনা বলে 

এ সময়ে সত্য বলা বড় বোকামির কাজ,

এ কথা জেনেও বহু মানুষের মতো 

তার মুখোমুখি দাঁড় করাই নিজেকে।


জানি,অসংখ্য মিথ্যায়ও স্বধর্মে উজ্জ্বল সে,

জীবনের মতো সময় যতোই অপবাদ দিক,

টের পাই বুকের খোলা বারান্দায় বসে

সুদূরের সে বাউল একতারা বাজায় অহোরাত।

ভাগ্য



✍️ অর্পিতা বৈদ্য



কর্মের ফলে ভাগ্য মিলে

গুনীজনে কয়,

সঠিক কর্ম করলে পরে

জীবন হবে জয়।

নিজের দোষে দোষী হয়ে

ফেলে অন্যের গায়,

তারে কি আর গুণী বলে

মন্দ পানে ধায়।

ভালো কর্ম করলে পরে

সুখে কাটে কাল,

ছলচাতুরি করলে পরে

হয় যে জীবন ঢাল।

কর্ম করলে ভাগ্য ফলে

জীবন সুস্থ হয়,

সত্য পথে সহজ জীবন

মহান স্বর্গ জয়।

মিথ্যা ছেড়ে সত্য ধরি

সত্য পথে চল,

মিলবে তরে ভাগ্য ফলে

আসবে মনে বল।

শর্বরী

 


— ✍️ সংগীত শীল


ষোড়শী জোৎস্না আঁকা একটি আদর বেলায়

শান্ত কুটিরে স্বপ্নময়ীর শ্রোতা হয়েছিলাম।

কল্পনা চিত্রের মতো আঁকড়ে ধরেছিল সময়

বকুলতলায় আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়েছিল অভ্র ভেদে।

জীবন তরীর আনন্দঘন অভিলাষে,

থরে বিথরে আশ্রয়ের বাহানা খুঁজেছিলাম; পথের পথিকের মত।


সন্ধ্যারাত অবিরল নিস্তদ্ধ

হার মেনেছে দীর্ঘদিনের বিষন্নতাও!


অবনিত স্মৃতিপাতার কোটরে রয়ে গেছে সেই রাত,

শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরা আর সাক্ষী বকুলতলা।

প্রশ্নবাণ

 


✍️ রেহানা বেগম হেনা

__________________


তীরন্দাজ নই আমি,

তবু তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলাম

তোমাদের অন্ধ বিবেকের দিকে।

বিদ্ধ হোক তোমাদের হৃদয়

ক্ষত বিক্ষত হোক বিবেক বুদ্ধি চেতনা,

তোমাদের বিবেক থেকে উদ্গারিত -

নোংরা কালো ধোঁয়া গ্রাস করে নিচ্ছে -

প্রতিটি গ্রাম শহর জনপদ।

তোমাদের এই ধর্মান্ধতার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায়

শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের,

ওদের নিষ্পাপ হৃদয় জুড়ে 

   শুধুই তোমাদের প্রতি ধিক্কার।

তোমরা কিভাবে ছড়াচ্ছো এমন বিষবাষ্প?

এতোটুকুও লজ্জা বিবেকবোধ নেই তোমাদের?

এখনও সময় আছে - 

  মুক্তি দাও ওদের,

        বাঁচতে দাও, 

ওরা বাঁচুক নিজের মতো করে,

নির্মল হাসি আর মানুষ হয়ে।

স্পর্শকাতুরে



✍পূজা মজুমদার


কোমল দুটি হাতের স্পর্শ আমায় পাগল করে দেয়

মন মোর মরিয়া হয় ও হাতে আলতো চুমু দিতে

ও ঠোঁটে,গালে কিংবা সর্বাঙ্গে চুমু দিতে বাসনা জাগে

তোমার দর্শন এ মনে তীব্র প্রেমের ঝড় বইয়ে দেয় ।


সব কিছুর মানে অন্তর জানে

কবিতার খাতা টানি অভিমানে।


সত্যিই ক্ষেপে গেছি এবার

চুমুতে চুমুতে ছিঁড়ে নেব ঠোঁট।


    গোগ্রাসে ভালোবেসে যাব এক চোট।

      আমার প্রেমের স্পর্শে তুই খাবি হুচট।


     আমার কল্পনা তোর

শরীর ঘুরে আসে

উরু নয় নাভি নয়

ঠোঁট ভালোবাসে ।


আমি আর পারছি নারে অবশেষে ক্ষান্তি দিলাম

হিসেবটা মিলছে আর নারে কোথায় আছি কোথায় ছিলাম।

পণ প্রথার বিরুদ্ধে

 


✍️ মায়া রানী মজুমদার 


পণ প্রথা এখনও হয় নি একেবারে নির্মূল, 

সমাজে মনুষ্যরাই এখনও করছে ভুল। 

মানব সভ্যতার চরম লজ্জা এই পণ প্রথা, 

এখনও হচ্ছে অবিরাম অবিচার যথা তথা।

অপরের দুঃখকে ভাবে না নিজের দুঃখ, 

নিজে চায় শুধু নিজের পরিবারের সুখ।

কত কষ্ট করে বাবা যে সংসার চালান, 

বাবা'ই জানে শুধু নিজের কষ্টের পরিমাণ।

লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করান বাবা, 

ছেলের বাবা'ই এসে খেলতে চান দাবা।

মেয়ের বাবা বিত্তশালী হলেও অসহায়, 

জন্ম দিয়ে কন্যার একি হল ভীষণ দায়। 

কন্যা-দায় গ্রস্ত পিতা ভাবে বসে নিজে,

একি অরাজকতা চলছে মোদের সমাজে।

এত লেখালেখি,স্লোগানেও হচ্ছে না কাজ।

সমাজ বক্ষে ওদের নাম হয় ঠক্-বাজ।

বোধশক্তি হারিয়ে লোকে করে দরাদরি।

তবু মিঠে না আশ, বিয়েতে করে বাড়াবাড়ি।

নির্মুল হোক পণপ্রথা, চায় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা।

মনুষ্যত্ববোধ ব্যক্তিরাই হয়ে থাকেন ত্রাণ দাতা।

মজারু

 

 

          ✍️   মাধুরী লোধ

 

  হাসতে হাসতে আমি যখন কেঁদে ফেলি

      তুমি নাম দাও লোডশেডিং

ঠাকুরদা ঠাম্মা কে হুঁকো সাজাতে বলে

  তুমি বলো ঠাকুরদা খায় ভাত পাতে পুডিং।  

     মা সেজ বাতিতে তেল ঢালে

তুমি হেসে বলো আসবে পূর্নিমা 

  ছবির পট এ আমার ছবির নেই 

তুমি কেঁদে বলো হারিয়েছে অরুনিমা।

    নিশাচর পোটলা বাঁধে

   তুমি নাম দাও এবার গঙ্গা পাড়

   মানুষ মানুষে বাঁধে শেকলে

তুমি বলো এটার নাম কাঁটাতার।

  মোবাইল ইন্টারনেট নেই  এখানে

  যুবক বলে খাই পেঁপের শুক্ তানি

 মরিচ পোড়া খেয়ে দম লাগায় শ্রমিক রা

   ব্যবসা দার বলেন আমদানি রপ্তানি।

  মুখ ফসকে বলি ছুটি চাই

  মালিক বললো ঠকবাজ

কঠিন সময়ে কঠিন প্রবাদ

   মানুষ ভাবে এ যে মরন ফাঁদ।

  এক করো সব এক করো

  সবাই বলছে ঠকিও না আর

তুলা দন্ডে ফের বসায় ব্যাপারী

 তুমি বলো দেখো না মন হবে অসার।

নবান্ন

 


✍️ মনচলি চক্রবর্তী

হেমন্তের পরশে  প্রকৃতি নূতন রুপে সাজে,

সোনার ধানের আভরণে ধরনী হাসে।

সোনালী ধান আসো কৃষকের ঘরে ঘরে, 

মা লক্ষী আসেন তার সাথে হাসিমাখা মুখে। 

ধানের প্রাচুর্যে পূর্ণ হবে কৃষকের শুন্য ঘড়া-

আনন্দে উচ্ছাসে ভরে উঠে, 

দিনরাত খেটে খাওয়া চাষীদের মুখঝানা।

গোলা ভরা সেনার ধান,

আর বাটা ভরা সবুজ পান।

অন্নপূর্ণা এসো সবার জীবনে 

থাকো সবার ঘর আলো করে।

সবুজ ক্ষেত ভরে উঠে ধনধান্যে

হমন্তের শুভারম্ভে মেতে উঠে সবাই নবান্নে।

বু ক প কে টঃ

 


✍️ দীপ্র দাস চৌধুরী

আমার বুকে বসন্ত খেলা করে

স্বার্থ ভুলে দেখাই মনের কথা,

মনের মাঝে অশান্তিময় ঝড়ে

উপচে ওঠে তোমার আমার ব্যথা।


জীবন সে তো পার ভাঙা এক নদী

দুকূল ভাসে তোমার চোখের জলে...

এমনি কাছে তোমায় পেতাম যদি

বুঝিয়ে দিতাম প্রেম কাহাকে বলে?


একটুখানি শান্তি দিয়ে আমায়

কোথায় গেলে এমন পাগল দিনে

মেঘ-কুয়াশা আটকে নিয়ে জামায়-

বুক পকেটে রাখব আবেগ কিনে।


নন্দনতত্ত্ব



✍️ চৈতন্য ফকির 


ভালোবাসা ফেরি করে বুঝেছি 

মানুষ যতটা হিংস্র যতটা কামুক 

ততোটুকু প্রেমিক নয়।


প্রতিটি মানুষের মাঝেই হায়নার বসবাস 

শুধু দূর্বলকে আঘাত করার কৌশল বুনতে বুনতে 

আজীবন এক চক্রবুহ্যে ঢুকে যায়। 


ভালোবাসা বিলাতে বিলাতে আমি এক ফতুর বালক।


১৪:০১:২০২৪

ভোর :৬টা৫৫মি

কুমারঘাট।

জম্পুই ও তার সিঞ্চন


 ✍️ দিব্যেন্দু নাথ

উত্তর ত্রিপুরার জেলাশহর ধর্মনগর বা পেচারথল স্টেশনে নেমে,  ম্যাক্স (প্যাসেঞ্জার) বা ছোট গাড়ি রিজার্ভ নিয়ে আসা যায় দেওনদীর পারে অবস্থিত; নীল পাহাড়ের প্রান্তিক শহর কাঞ্চনপুর। এখান থেকে পূর্ব মুখিয়ে দাঁড়ালে চোখ ঝলসে যায়। প্রেম


বিষে নীল হয়ে ওঠা যুবতির শরীরের মতো হৃদয় কাতরে ভরা শায়িত, আর কেউ নয়! আমার-ই জম্পুই। কাঞ্চনের বুক থেকে কুড়ি কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি চড়াই উঠলেই তার জানুদেশ, মুনপই। উত্তরে নিতম্ব বেয়ে নেমে গেছে তার আলতা পরা পা, তুঙছুরাই পর্যন্ত। সেখানে থেকে চাইলে সদাইহাম পাড়া ঘেঁষে পূনরায় কাঞ্চনপুর আসা যায়।


জানুদেশ থেকে দক্ষিণে নাভি পেরোলে ডায়েবায়ে সুগভীর খাল। ক্লান্ত হৃৎপিণ্ডের মতো উঠানামা করা সড়ক পথ চলে গেছে  ক্লাঙতালাঙ পর্যন্ত। তারপর কাঁটা তার। নীল কন্যার এক পাশ বিঁধে রাখলেও মন তার খোলা আকাশে নীলময়। 


অনন্যার দুর্বিনীত স্তনযুগলের একটি ভাঙমুনের চার্চে রেখে দিলেও আরেকটি ফুলদুংসাইএর সুগভীর জঙ্গলে, শিবরাইখুং পাথর খণ্ডে। যার বংলা অর্থ শিব মন্দির। মাত্র আশি বছর আগের এই শিবরাইখুং।  মিজোরামের খ্রিস্টান রাজা খাতিন চাওম্যুএর রাজত্ব কালেও মিজোরা এই স্থানটিকে 'থাইদর' নামে জানত। মিজো ভাষায় 'থাই' শব্দের অর্থ, সন্তানহীন বিবাহিত মহিলা আর দর - পূজা। অর্থাৎ সন্তান প্রাপ্তির আশায় তারা এখানে পূজা দিত। 


১৯৪৩ সালের রিয়াং বিদ্রোহের অধিনায়ক সাধু রতনমণি এখানে একটি পাথর খণ্ড দ্বারা এই শিবরাইখুং স্থাপন করে ছিলেন। কিন্তু কে বা কারা এক ঐতিহাসিক রাতের অন্ধকারে, সাধুর পাথর খণ্ড সরিয়ে ক্রশ বসিয়ে দেয়। এটা বিতর্কিত বিষয়; তা নিয়ে নাড়াচাড়া না করাই ভালো। হয়েছে তো ঈশ্বরের কোনও পয়গম্বরের স্থান।


পরবর্তীকালে সরকারি সার্ভে অনুসারে এই স্থানটি ত্রিপুরার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ পরিচিতি লাভ করে এবং নাম হয় বেতলিংশিব। আজও ফুলদংশাই পাহাড়ের কোলে ঘন জঙ্গলের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে নিঃসঙ্গ একাকী। তবে আজকেরণ অদৃশ্য ঘণ্টাপাখির ডাকে উন্মত্ত নীল-দুহিতার মুখরিত অঙ্গ আরেক সুরেলা বিহঙ্গের গানে আমোদিত হতো একসময়। ঘণ্টা পাখির কথা সব পর্যটক জানলেও এই পরোপকারী বিহঙ্গের কথা অনেকেই জানেন না। কারণ তারা আর বেঁচে নেই। ঘণ্টাপাখির গানের মতো তাদের গান আর শোনা যায় না। ঘণ্টাপাখির বিদুরিত আওয়াজ, প্রথমে কৌতুকপ্রদ মনে হলেও দীর্ঘক্ষণ বিচরণের পর মনে হয় খুব বিরক্তকর। কিন্তু সেই  সুরেলা বিহঙ্গের গান ছিল মধুময়। তারা শুধু গান করত না! এক পরাগ সংযোগকারী পতঙ্গের জন্য সুস্বাদু খাবার প্রদান করত। তা মুলত তাদের বিষ্ঠা। এই বিষ্ঠা খেয়ে পরোপকারি পতঙ্গরা বেঁচে থাকত। সর্বক্ষণ তারা নীল দুহিতার কমলা রঙা উরুতে ব্যস্ত থাকত পরাগ সংযোগে। আধুনিক বহরতায় ডুবে থাকা এক শ্রেণির সর্বভূক তাদের  পৈচাশিক খাবারের চরিত্রার্থ করতে গুলিবিদ্ধ করে ধ্বংশ করেছে এই বিহঙ্গকে। 


মুক্ত বিহঙ্গকে শূন্য করে নগ্ন করেছে নীল দুহিতার শরীর। যারজন্য লজ্জায় সে, আর কমলা ঠোঁটে হাসে না। শুধু বাঁচার তাগিদে সবাইকে আপ্লুত দেখাতে, সাঁতকরা আর সুপোরির নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে এখন। মাতাল হয়ে বিচরণ করে কংকীটের কংকালসার বাসরে। প্রায় ভুলতে বসেছে, বাঁশবেতের গাইরিংয়ে( টংঘর) বাধা কাঠের সানসিতে (সিঁড়ি) পা রাখতে। যেন উন্মাদ যুবতী। একদিন যার সুবাসিত কমলা গন্ধে মনে উঠত - বিনোদ আর আহ্লাদ। যার আওলা কেশের সুগন্ধ ছড়িয়ে যেত নীলদিগন্তে। আজ আর সেই সুবাস নেই। নেই সেই বিহঙ্গের সুরেলা গান। তবে আছে জানুদেশে, সুরেলা ঝর্ণার শীতল ঢেউয়ের হাতছানি আর সারা গায়ে সবুজ ভরা কিছু মৌতাতের ডাক। 


বিধাতার বড় প্রিয় এই নীলাম্বরী এখনও। ত্রিপুরার অন্যান্য পাহাড়গুলিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা দিলেও জম্পুইকে করেছেন রাজরাণী। বিহঙ্গহীন প্রিয়তমা করেও তার মতো কাউকে এতটা শিক্ষা-দীক্ষায়, ধনসম্পদে সমৃদ্ধ করেননি তিনি। কেন তাঁর এই নিষ্ঠুরতা, এই দ্বিচারিতা। আজও সকল পর্যটকের মনে প্রশ্নের বহর তুলে। 


ফুলদুংশাই থেকে আরও কিলোমিটার দশেক এগোলে ইন্দ-বাংলা বর্ডার। এখানে থেকেই আবার মিজোরাম রাজ্যের লুংলে জেলা শুরু। পাহাড়ের  গগনচুম্বী গাছগুলি আকাশের নীল ছুঁতে ছুঁতে পশ্চিমে ঢলে পড়ে। বাতাস বয়ে নিয়ে যায় শাখানের কাছে। ঘন কালো বিনুনীর কমলা সুবাসে মাতাল হয় সে। যুবতীর ঘামেলু কামুক গন্ধে শিউরে ওঠে তার তন্ময় দেহ।  


মৌতাত-ভরা নারীর প্রেম, যুবক কেন কোনও পুরুষ-ই ফিরিয়ে দিতে পারে না। শাখান তো এক সটান চির যুবক! কিছুতেই নীরব থাকতে পারল না। আপ্লুত হয়ে সুমু বাজাতে লাগল মনকাড়া সুরে। একদিন অনুনয় হাতছানি দিয়ে প্রেমের বহরতা মাপতে ধীরে ধীরে নামতে লাগল পাদদেশে।


মায়াময় ইশারায় জম্পুই টগবগে।  সাড়া না দিয়ে পারে? সে-ও প্রেমসিঞ্চনে নামতে লাগল পুরুষ শাসিত সমাজের সব অপবাদ ভুলে।  আদৌ কি সেকথা  ভুলে গেছিল সে? নাকি উন্মাদিনী হয়ে ছিল? নিজকে ভাসিয়ে দিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক তারা ছাড়া জ্যোৎস্না ভরা সন্ধ্যায়।  তার কমলা রঙা পায়ে কি সেদিন  নূপূরছন্দা ছিল! কে জানত। 


মেয়েদের গোপনে রাখা অন্তর বিকশিত প্রেম সিঞ্চন, অজান্তেই বনানী কল্লোলিত করে দিল। পুরুষ শাসিত সমাজে, কোনো মেয়ে কি আর জানলে? তার অহংকার বিলিয়ে দেয়! অচেনা সুমুর সুরের টানে ছুটে যায়? - যায়, প্রেমের মাধুর্য তো এখানেই। অজান্তেই নিজের সবকিছু হারিয়ে যায়। পাখিরা মিলনের গানে ভরে দিল সবুজ গাছগাছালির ডাল। আলিঙ্গন অভিলাশে তারা অনুসন্ধান করতে করতে দুজন একদিন একত্রিত হল। একে অপরকে ভালো করে দেখার আগেই এক দৈত্য গিলে ফেলল দুজনকে। কোন শাপ থেকে নাকি মুক্তি পেতে! সে কুমারী জম্পুই আর কুমার শাখান দেখে বসেছিল এই পবিত্র উপত্যকায়। তাদের ছোঁয়া পেয়ে শাপমুক্ত হবে। আজ হল তার প্রায়শ্চিত। কাঙ্ক্ষিত প্রেম সিঞ্চনে সুন্দর হতে লাগল তার বিদঘুটে দেহ। প্রেমের অনুরণে বিকশিত হল স্বার্থপর হৃদয়। স্নিগ্ধ উপত্যকা, বিশুদ্ধ বাতাস আর আলো জল পেয়ে তৈরী করল আদর্শ জলবায়ু। তকতকে পলিতে ভরে উঠতে লাগল পাড়। ধীরে ধীরে সবুজে আচ্ছাদিত হল নতুন মাটি। জন্মনিল অগণিত ইতর প্রাণী। কত মাস কাল যুগ পেরিয়ে কত জল গড়াল তার বুক দিয়ে, - কে জানে!


শুরুহল মানুষের আনাগোনা। উপত্যকা দিয়ে প্রথম নাকি হালামদের যাতায়াত ছিল। পাহাড়দ্বয়ের নির্যাসিত প্রেম-সিঞ্চনকে তারা দেওপানী নামে ডাকত। এমনকি প্রায়ই মোহনায় এসে দেখে যেত 'দেও' এখন এক নারীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কী অপূর্ব সুন্দরী সে। নাম তার মনু। পিতামহ ভীষ্মর ন্যায় সেখাকার পাড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এক বপুর শিমুল। প্রাগৈতিহাসিক যুগে তার তলা নাকি কুলষিত হয়েছিল, সিলেটের গারো পাহাড় থেকে আগত একদল দৈস্যু দ্বারা। তারা পটিয়ান পূজার নামে মানুষ বলি দিত। ইতিহাস যাদেরকে  নি-র্মুন্ড জাতি হিসাবে আখ্যায়িত করেছে আজ। 


জম্পুই শাখানের অমর প্রেমগাঁথা মিলনস্থল অশুদ্ধ হয়েছে ভেবে তদানীং মহারাজ ধরম-ফা, শ্রীহট্টীয় পাঁচ বেদজ্ঞ পণ্ডিত এনে যজ্ঞ করেছিলেন মোহনার খানিকটা উজানে জয়পর্ব্বতের পাদদেশে। কেউ কেউ মনে করেন মহারাজের এই প্রাগৈতিহাসিক যজ্ঞ নাকি ত্রিপুরার রাজবংশের প্রথম হিন্দু ধর্ম গ্রহণের সোপান। কিন্তু 'রাজমালা'-য় বর্ণিত আছে ত্রিপুরার মহারাজগণ চন্দ্রবংশী। এই বিতর্কিত বিষয়ে যাচ্ছি না; ফিরছি মুল বিষয়ে।


রমণীর মৌতাতে বিলিয়ে যাওয়া 'দেও' প্রথমে - 'দেওপানী'। অনেকযুগ পরে চাকামাদের কাছে 'দেরগাঙ' হল। সর্বশেষ বিবর্তন বাংলার আগ্রাসন - 'দেওনদ' বা 'দেওনদী'।  


যাইহোক, নামে আর কি যায় আসে! 'দেও' তো দেও-ই রইল। জম্পুই-শাখানের অমর প্রেমভরা সিঞ্চনে কল্লোলিত হচ্ছে  আজও। মোহনায় কান পাতলে এখনও শোনা যায় পাঁচ বেদজ্ঞ পণ্ডিতের সুরেলা মন্ত্র উচ্চারণে চাপিয়ে যাওয়া নরবলি প্রথা।


কবি পরিচিতি : দিব্যেন্দু নাথ।

পিতা: শ্রীযুক্ত ইন্দুভূষণ নাথ।

মাতাদেবী: শ্রীমতি বীনাপাণি নাথ।


গ্রাম - শান্তিপুর, 

পো: কাঞ্চনপুর, 

জেলা: ত্রিপুরা (উঃ) কবিতা উপত্যকা; ভারত।

চলভাষ : ৯৮৬২৬০৩৬৪০

জন্ম : ৫ ই মে ১৯৭৭ ইং 

পেশা : পরামর্শদাতা (ভারতীয় জীবন বীমা নিগম)       

 নেশা : সাহিত্য চর্চা।

সম্পাদিত ম্যাগাজিন:  'দোপাতা' সাহিত্য পত্রিকা। 

প্রকাশিত উপন্যাস: - 'আইলাইনার'।

প্রকাশিত গল্প: - জমিন আসমান।

চরিত্রের অধঃপতন

 


                                       ✍️  কলমে - প্রদীপ্ত চক্রবর্তী 

                       এক নারী,মা যশোদা,
                           অন্য নারী, বোন;
                       এক নারী,শিশু সন্তান,
                 আত্মবিশ্বাস বন্ধু, নারী সর্বক্ষন।

              আপন যে, সে সর্বদাই নিজের ধন,
                 ভালোবাসায় আছে, সবার মন;
 দুঃচরিত্র কিছু নরাধমের বিশ্বাসঘাতকের দৌলতে,
পবিত্রতা হারায়, সহজসরল লোকেরা বোকামিতে।

                     কিছু পুরুষ হয়তো খারাপ, 
                   নারীরাও আছে তার মধ্যতে;
                        নিজকে বাঁচাতে গিয়ে,
                দোষ চাপায়,অবুঝের উপরেতে।
 
                কেউ বলে, চরিত্রের অধঃপতন,
                কেউ বলে,ওর স্বভাবটাই খারাপ;
                       আসল সত্য, দুরে ঠেলে,
                   নতুন তথ্য, নতুন সবার বাপ।

         কোথায় গেল? মা যশোদার ভালোবাসা,
            কোথায় গেল? ভাই - বোনের আদর;
            পরের সন্তান যেন, আবর্জনার পাত্র,
       আত্মবিশ্বাস বন্ধু, ভুলে যায়, স্মৃতির কদর।

                     নারীর আছে, অনেক রূপ,
                         শ্রদ্ধা ভক্তি ভালোবাসা;
                   সরল মনে, গড়ল না সাজিয়ে, 
   সৃষ্টি হোক শান্তি প্রেম মৈত্রী ও স্বাধীনতার আশা ।  

           আপন - পর, বুঝি না,  একটু সত্য খুঁজি,
           অগ্নি পরীক্ষা, সীতা মাতার নিতে চাই না;
          মর্যাদা পুরুষত্বম রামচন্দ্রের সীতা বিয়োগ,
                          আর ঘটাতে চাই না।

                    আমরা সবাই ভালো হয়ে বলি, 
                               এক সাথে চলি;
                              জয় শ্রী রাম বলে,
   "আমরা মানুষ", এক হয়ে, সবাই আওয়াজ তুলি।

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼


লক্ষ্য

 


✍️ সঞ্চয়িতা শর্মা

কুয়াশায় ঢাকলো শহর,

চামড়ায় নিষ্প্রাণ স্তর,

নদীর বুকেতে দেখা মিলেছে

একাধিক বালুচর।


দুপুর বেলার রোদ,

আর অর্থের অবরোধ,

কপালে শিরা ফুলে ফেঁপে উঠে,

শত চিন্তার স্রোত।


সকালটা ছিলো মিঠে,

ছিলো মুক্ত আকাশ নীল,

দুপুর হতেই মধ্য সারির

কত কথা কিলবিল!


রাতের অন্ধকারে

আলো সঞ্চয় চাই।

তিন পায়ে ভর করেও যেন

কর্মেই রয়ে যাই।

আমি ক্লান্ত

 


✍️ রিপন সিংহ 

     অঘ্রানের শেষ সন্ধ্যায়, তোমার নরম দেহের মতো কুয়াশা
     ঢেকে যায় অন্ধকারে।
     তারপর এই শহরের দক্ষিণ বুঝে, ঐ দূরে
     কুশের ঝাউয়ে শেয়ালের গান,
     অনেক ক্লান্ত, এই সন্ধ্যা ---
     তাই দু'জনের -- রাত্রির আহ্বান।

     আজ দু'জনের মিলনের রাত,
     চারিদিকে গভীর রাত, নরম কুয়াশা,
     গভীর 
              গভীরতর
     মৃত্যুর মতো যখন সন্ধ্যা আসে,
     তখন উষ্ণ ঠোঁটের উপর নরম ঠোঁট
     হৃদয়ে তার সমস্ত দেহ
     তারপর যখন আবার,
                 হৃদয়ে তার গান বাজে।

         সন্ধার সূর্যের মতো,
     পৃথিবীর সমস্ত রঙ কুশের ঝাউয়ে
     তারপর সন্ধ্যামনির মতো তুমি
                 আমার গভীরে।

            শুধু একবার
           তারপর আবার 

     যদি একুশ বছর পর দেখার ইচ্ছা হয়,
     তোমার এই গভীর মন খুঁজে পাবে না আর
     তারপর যদি আবার ইচ্ছা জাগে;
          তারপর আবার
     তখন তুমি চলে এসো
     পৃথিবীর এই শূন্যতার পথে,
     তখনও যদি খুঁজে না পাও
      তখন বুঝে নিয়ো---
             আমি অনেক ক্লান্ত।


মোহাঃ মোস্তাফিজুর রহমান

 
 
 

 ✍️ - মোহাঃ মোস্তাফিজুর রহমান

নিয়তির খেলা


মোহাঃ মোস্তাফিজুর রহমান


কোথায় উধাও


চিত্ত চাঞ্চল্য অনুভূতি




প্রগাঢ় সৌহার্দ্য সম্প্রীতি


কোথায় মানবতার মেলবন্ধন।


মিশে গেছে মিথ্যা জৌলুসে


আর অজুহাতে।




অজুহাত এখন !


ব্যস্ততার নীল দরিয়ায় ঢেউ তুলে 


আর মানবতা !


লুটতরাজ পৈশাচিকের বাম পকেটে 


বৃদ্ধি পায় মিথ্যা জৌলুস


আর চতুর্দিকে চলে


নিয়তির খেলা।