✍️ নবোন্মেষ পত্রিকা পক্ষ থেকে শীতকালীন উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়..........................................✍️
'নবোন্মেষ' পত্রিকা'তে সজ্জন-সজ্জনাদের শীতকালীন উষ্ণ শুভেচ্ছা। শীতে যে শুধু বনভোজন হয়, বড়দিন পালন হয় অথবা ইংরেজি নতুন বছরের আনন্দে উল্লাসিত হয় তেমনটা কিন্তু নয়। শীতে কবি-লেখকদের শীতকম্পিত হাতও যেন নানান সাহিত্যের মনভোজন সূচনা করে যায়। শীতকালীন বনভোজনের বিকল্প হিসাবে শীতকালীন সাহিত্য আড্ডাও করা যায়। তাতে পেট না পূর্ণ হলেও মন কিন্তু পরিপূর্ণ হতে বাধ্য। যাইহোক, এবার 'নবোন্মেষ' পত্রিকাও সজ্জন-সজ্জনাদের শীতের উষ্ণ হাতে ডিসেম্বর ই-ম্যাগাজিনটি বিশাল বড়ো অনলাইন সাহিত্য আড্ডা সৃষ্টি করেছে। সম্পাদকের হৃদয়ের শীত-ঋতুর শেষ উষ্ণবিন্দু থেকে এবং 'নবোন্মেষ' পক্ষ থেকে সকলকে প্রাণভরা শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা।
গৌরাঙ্গ সরকার
(সম্পাদক, নবোন্মেষ)
শিবশঙ্কর দেবনাথ
(সহসম্পাদক, নবোন্মেষ)
ভদ্রলোকের কবিতা
✍️নিধির রায়।
একটা দুটো শব্দ লিখে
কবিতা তোমায় শোনাবো
লিখতে লিখতে শব্দগুলো
বাঁকা পথে চালাবো
আসল কথা চাপা দিয়ে
ছেদো কথায় হাসাবো।
নিজের কাছে ফাঁকি দিয়ে
তোমায় আমি ফাঁকি দিই
মানুষের কথা বলতে গিয়ে
সমাজের চোখে ধুলো দিই।
এমন করেই কবিতা লিখে
একদিন পাবো একাডেমি
এমনি করেই চলতে থাকবে
কবিতা লেখার মুন্সীয়ানি।
বিশ্বাস যা করি আমি
তেমন সত্য লিখবো না
তেমন সত্য লিখলে পরে
হাত্তালিটা পাবো না।
আমি কাঁদি তুমি কাঁদো
কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল
এমনি করেই কাঁদতে কাঁদতে
কেটে গেলো কত কাল!
কবিতা ছিল, আছে ,থাকবে,
তোমার সামনে চিরকাল,
কবি থাকবে ,তুমিও থাকবে
থাকবে না শুধু প্রতিকার।
চলছে চলুক গড্ডলিকা
তুমি আমি ভাসবো তাতে
ভালবাসার কথা বলবো
শুনবে শুধু ভদ্রলোকে।
ভদ্রলোকের কবিতাগুলো
পুষ্পগুচ্ছে সাজিয়ে দেবো
ড্রয়িং রুমের আলমারিতে
সুখের একটু যায়গা পাবো।
সিন্দুক
✍️কাজী নিনারা বেগম
এক বুক ভালো বাসার চিন চিনে ব্যথা,,
আজও তোমায় প্রিয় অনুভব করাতে পারিনি আমি অযোগ্য তোমার ভালো বাসার।।
নীরবেই চুরি হল ভালো বাসার সিন্দুক খানি,,
রেকাবে থাকা লাল গোলাপের তোড়ায় খসে পড়া পাপড়ির ক্ষত চিহ্নের মতো নিমজ্জিত ভালবাসা।।
কতটা রঙিন স্বপ্নে বিভোর একেছি রঙিন তুলির আচড়কেটে ,,
ভালো বাসার ছবি ফুটে উঠবে শিল্পী লিওন দা ভিঞ্চির ছবিতে।।
লুকিয়ে থাকা ভালো বাসার মধূর এই কথোপকথনে,,
অধভুখন্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত ভালো বাসা।।
এগিয়ে যাওয়াই জীবন
✍️রঞ্জিত চক্রবর্তী
চাঁদেও কলঙ্ক আছে
গ্রহণে সব আলো গিলে খায়
সূর্যও অনেক সময় ডুবে যায়
মেঘের আড়ালে।
কালবৈশাখী ঝড়ও
বছরে এক-একবার আসে
সমুদ্রেও জোয়ার ভাটা হয়
নিয়মের রেখা টেনে।
আকাশের তারাও
এক-একসময় হয় স্থানচ্যুত
সময়ের কাছে সকলেই হেরে যায়
তবুও লক্ষ্য থাকে স্থির।
যে যাই বলুক
ইচ্ছে মরে গেলে জীবন থেমে থাকে
সামনে এগুলেই
দৃষ্টি খুলে যায়।
কবিতার জন্ম
✍️ দেবানন্দ দে
না, দেখিনি
কোন অশ্রু চিবুক বেয়ে ঝরে পড়তে
আমি দেখিনি।
কোনদিনও ঝরনার ধারা,
নদীর ধারা, সাগরের ধারা
তোমার দু'চোখ বেয়ে
ঝরে পড়তে দেখিনি।
শুধুমাত্র বিসর্জনের দিনে
বইতে দেখেছি আমার চোখের ধারা
তোমার নয়নে, তাই তুমি মহামায়া।
কল্পনার নারীকে ভালোবেসেছিলাম
তোমাকে নয়, কারণ তুমি কাঁদতে জাননা,
সর্বদাই হাসি মুখে বুঝিয়ে দাও
তোমার আলয় বরদ~ভূমিতে।
মাটির শরীর যেদিন হারিয়ে গেল
নোনতা চোখের জল মিস্টি লাগলো,
আকাশ আরো গাঢ় নীল হয়ে উঠলো
তারারা অনেক বেশী কাছে চলে এলো
তুমি কাঁদলে না, অশ্রু দানায়
আমায় বাঁধলে না।
শুধু বলে গেলে ~
হাসিতেও অশ্রু ঝরে
নির্বাক নয়নে বহে যায় নদীর ধারা,
তোমার সান্নিধ্যে এসেছিলাম
মাতৃত্বে জন্ম দিতে একটি কবিতা
জন্ম দিয়ে গেলাম।
যে পথ আমায় স্বপ্ন দেখায়
বর্ণমালার তরীতে আজ ভাসিয়ে দেবো মন,
শব্দতরী চলছে ভেসে, করতে আয়োজন।
সুপ্রভাতের পাখির ডাকে,রবি জাগে ধরার বুকে,
শিশির ঝরে দূর্বা ঘাসে, হাসতে মনের সুখে।
হাওয়ায় দোলে তাল পাতা,বাবুই বুনে বাসা,
সুখের নীড়ে কাটাবে দিন, মনে ভীষন আশা।
চড়ুই করে কিচিরমিচির থেকে পরের ঘরে,
সে ঘর একদিন পড়লো ভেঙে, কালবৈশাখীর ঝড়ে।
চড়ুই কাঁদে বসে বসে পথ খুঁজে না পেয়ে,
বাবুই তখন মনের সুখে উঠলো গান গেয়ে।
বুলবুলিটার ফোটলো বুলি, শব্দ করে চাষ!
ডোবার জলে মাছ খেয়ে, চড়ে পাতি হাঁস।
ঊষার আলো হাসে তখন শিশির ভেজা ধানে,
দোয়েল কোয়েল গাছে বসে ভাবে মনে মনে-
ধান খাবো আজ মজা করে ক্ষেতের কোনায় বসে,
সেথা, চুপটি করে বসে বসে শিয়াল পন্ডিত হাসে!
নেই কো জানা পাখি দুটির,ভাবলো ফাঁকা মাঠে,
খেয়ে দেয়ে চাষীর ধান তুলবে ওরা লাটে!
উরোৎ পুরোৎ উড়াল দিয়ে পড়লো গিয়ে ধানে,
শিয়াল পন্ডিত খাপটি মেরে মারলো ওদের প্রাণে।
দেখলো চড়ুই চুপিচুপি,পেলো ভীষন ভয়,
অতি লোভে দোয়েল কোয়েল গেলো যমালয়!
আমরা চড়ুই থাকি পরের ঘরে,তাই তো আজ দুঃখ ঝরে,
খাটুনি খেটে বাবুই কেমন রইলো সুখের নীড়ে?
পরের তরে থাকে যারা,হয় না কভু সুখী তারা,
সৃষ্টি সুখের এই দুনিয়ায় এই তো নিয়ম ধারা।
যে পথ আমায় স্বপ্ন দেখায়, বাঁচতে শেখায়-
ছোট্ট বাবুই মনের সুখে ভীষন আত্মহারা।
মালীর দান
✍️ মিঠু মল্লিক বৈদ্য
শখ কিংবা নেশা
সহস্র প্রতিকূলতার ছিন্নকরণ,
রাশি রাশি স্বপ্ন ডালি
একটি মলয়ের প্রণয়ন।
মঞ্জুরিত মুকুল
বাহারী প্রজাপতির বিচিত্রতা
মধুপের মৌ মৌ রব
হারায় সকলে সাজানো স্বর্গোদ্যানে।
কিন্তু মালী! ভুলে তারে সবে,
সাজানো উদ্যানের প্রতিটি গাছের দায় তার,
না বলা ভাবনা বুঝে -পূর্ণতার প্রচেষ্টায়
নিজেকে বিলোতে হয় অনায়াসে।
নিখুঁত খাটুনি,উজারিত সোহাগ
কড়া নজরদারি,সফলতার খাতিরে
উপচে ফেলা,সবটাই মালীর
দিনে দিনে শিখে নূতন কিছু।
স্বপ্নদেখে প্রাণপণে,
দিনের আলোর পথ ধরে
মাটি বুঝে করে রোপন,সেজে উঠে বাগান
এই তৃপ্তি,সুখ কেবলই মালীর দান।
প্রতিশ্রতি
✍️রথীন্দ্রনাথ রায়
ছেলেটাকে প্রায় প্রতিদিনই দেখে অরুণাভ । বয়স দশ এগারোর কোঠায় হবে। তবে বেশ সপ্রতিভ। কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। হোটেলে কোনও খদ্দের এলেই - আসুন বাবু , এদিকে চেয়ার খালি। তারপর টেবলটা ঝেড়ে মুছে বলে কি খাবেন বাবু ?খদ্দেররা খুশী হয় । শুধু খদ্দেররা নয় । হোটেলের মালিক শোভনলালওখুশী হয়। আর মাসেও শেষে যখন ওর বাবা আসে তখন তার হাতে টাকার সাথে এটাওটা তুলে দেয় । খুশী হয় ছেলেটার বাবা।
ছেলেটা মানে রতন। একদিন অরুণাভর টেবলএ খাবার দিয়ে বলল, দাদা , আপনে অনেক লিখাপড়া জানেন ?
- তোর কি মনে হয় ?
- আমার ঠিক কথাই মনে হয় ।
- তুই লেখাপড়া শিখবি ?
- না ।
- কেন ?
- তাহলে টাকা আসবে কোথা থেকে ?
- তোর বাবা ?
- ওতো আমার মজুরির টাকা নেয় আর মদ খেয়ে উড়াই দেয় ।
- তুই বারণ করতে পারিস না ?
- শুনবেই না । বরং খুব পিটবে ।
'রতন , এই রতনা , হারামজাদা ১৪ নম্বরে কে খাবার দেবে শুনি ? ' মালিক শোভনলাল হাঁক পাড়ে । রতন চলে যায় । কিন্তু ওর কথাগুলো কানের কাছে বাজতেই থাকে অরুণাভর । এরকম হাজার হাজার রতন শৈশবেই সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছে। কেউ হোটেলে, কেউ চায়ের দোকানে , কেউ বাজির কারখানায় , আবার কেউ খেতখামারে -- ছোট ছোট হাতগুলো ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে চলে। কোথাও কোথাও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই । মোড়টা ঘুরতেই শিশুশ্রম নিবারণের একটা ঢাউস বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। আর তারই নিচে রতনের মতোই আর একজন জুতো পালিশ করে চলেছে শিশুশ্রমের জীবন্ত বিজ্ঞাপন হয়ে।
এসব নিয়ে অরুণাভ আগে বেশ ভাবত । সেমিনারে শিশুশ্রম নিবারণের জন্য জ্বালাময়ী ভাষণ দিত । বড় বড় নিবন্ধ লিখত । তবে ওসব নিবন্ধগুলো কেউ কখনো পড়েছে বলে মনে হয়নি। তাই ধরেই নিয়েছে শিশুশ্রম ছিল , আছে , থাকবে । কেন ছিল, কেন আছে, কেন থাকবে ? প্রশ্নগুলো অর্থনীতির চোরাবালিতে কেমন ভাবে হারিয়ে যা । উত্তর মেলে না । আজকাল উত্তর খোঁজার চেষ্টাও করে না । এই বেশ ভালো আছি গোছের ভাব দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে শুধু সে নয়, আরও অনেকেই।
বছরখানেক কেটে গেছে। আজকাল আর ওই হোটেলে খেতে যায় না। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা এখন বাড়িতেই সারতে হয় । তাই রতনের কথা ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন দুর্গাপুর স্টেশন থেকে বেরোবার মুখেই রতনের সঙ্গে দেখা। প্রথমটায় চিনতে পারেনি। কারণ রতন একটা অদ্ভুত সাজ সেজেছে। হনুমান বা ভাল্লুক গোছের কিছু একটা। রতন কাছে এসে বলে, দাদাবাবু চিনতে পারছেন ?
- হ্যাঁ ,কিন্তু তুই এখানে ?
- ও হোটেলের কাজ ছেড়ে দিইচি । এখন টেরেনে সাজ দিখাই । পয়সা ভালোই কামাই হয় । কিন্তু সব আমার বাবার মদে চলে যায়।
- তুই দিস কেন ?
- না দিলে মারে যে ।জ্যান্তয় ধরে মড়ায় ছাড়ে । দাদাবাবু একটা কথা বলব ?
- কি কথা ?
- তুমি আমাকে ইস্কুলে ভর্তি করে দেবে ?
অরুণাভ হনুমান অথবা ভাল্লুকরূপী রতনের দিকে চেয়ে থাকে ।
- সত্যিগো দাদাবাবু , আমি পড়ালিখা করব ।আমি বড় হব, আসমান সে ভি উঁচা । হনুমানটা আকাশের থেকেও বড়ো হতে চায়। কিন্তু ওকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে একটু বেগ পেতে হল বৈ কি । রতনের বয়স প্রায় বারো । এই বয়সে প্রথম শ্রেণীতেও ভর্তি করা যায় না। আবার প্রথাগত শিক্ষার চতুর্থ শ্রেণী পাশের শংসাপত্র না থাকায় পঞ্চম শ্রেণীতেও কোনও স্কুল ওকে ভর্তি করতে চাইল না। এখন উপায় ? রতনের আসমান সে ভি উঁচা'হওয়ার বাসনা কি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে ? অরুণাভ হেরে যাবে ?
হঠাৎ মনে পড়ে গেল মহকুমা শাসকের কথা । বছরখানেক আগে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে উনি বলেছিলেন , আপনারাও আসুন । নাহলে শুধুমাত্র সরকারি প্রচেষ্টায় এটা সফল হতে পারে না । সেদিন রাত্রেই টেলিফোন করে মহকুমা শাসকের কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে নিল অরুণাভ।
পরদিন রতনকে সঙ্গে নিয়ে এস ডি ও র চেম্বারে যেতেই পিএ ভদ্রলোক বললেন , আরে অরুণাভবাবু আসুন , অনেকদিন হল এদিকে আসেননি । কি ব্যাপার বলুন তো ?
এর আগে এস ডি ও র কাছে অনেকবার এসেছে অরুণাভ । নানাজনের নানা সমস্যা সমাধানের উমেদারি করতে । তাই এই অফিসের অনেকেই তার চেনাজানা । এসডিও অরুণাভকে বললেন , আসুন আসুন , তা আপনার সেই আসমান সে ভি উঁচা ' রতন কোথায় ?
- ও বাইরে বসে আছে ।
- বাইরে কেন ?।ওকে ভিতরে নিয়ে আসুন ।
রতন এসডিও র ঘরে আসে । কোনও ভূমিকা না করেই বলে ,আপনে পারবেন , দাদাবাবু বলেচে । আমাকে কোনও ই স্কুল ভর্তি করতে চাইছে না । আমি পারব ওদের মতোই পড়ালিখা করতে পারব । আপনে দেখে নিবেন । ইস্কুলের টাকাও দিতে পারব । কারোর বাড়ির বাসন মেজে হোক , ডাবের খোলা পিটিয়ে ছোবড়া বানিয়ে হোক - ঠিক আমি ইস্কুলের টাকা মিটাই দিব ।
- ঠিক আছে ঠিক আছে, তুমি বসো ।
এসডিও র চোখের কোণগুলো বোধ হয় চিক চিক করতে শুরু করেছিল । আড়াল করে মুছে নিয়ে টেলিফোনে কাকে যেন বললেন , না না আপনাকে ব্যবস্থা করতেই হবে । আমরা তো চাই প্রতিটি শিশু শিক্ষার আঙিনায় আসুক । তাহলে আমরা রতনদের ফিরিয়ে দেব কেন ?
এসডিও রিসিভার রেখে বললেন , যান অরুণাভবাবু , টিএন স্কুলে রতনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে ।
রতনের দিকে ফিরে বললেন, তুমকো আসমান সে ভি উঁচা হোনা চাহিয়ে ।
- কৌশিস করুঙ্গা ।
এসডিওর পা ছুঁতে চাইল রতন ।
- নো মাই বয় - চেয়ার ছেড়ে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন , তোমাকে অনেক বড়ো হতে হবে।
তারপর আর তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি রতনের । না ওকে বাসন মেজে বা ডাবের খোলা পিটিয়ে পড়াশোনার খরচ যোগার করতে হয়নি। স্কুলের হোস্টেলে থেকেই পড়ার সুযোগ পেয়েছিল । জনৈক শুভানুধ্যায়ী ওর পড়ার খরচ মিটিয়ে দিত ।
এরপর প্রায় বছর দশেক কেটে গেছে । অরুণাভর পক্ষেও আর খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি কেমন আছে, কোথায় আছে রতন ? পরপর কয়েকটি বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটে যাওয়ায় নিজের মধ্যেই সিঁটিয়ে ছিল সে। সেদিন দুর্গাপুর স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসছে ঠিক এমন সময় পিছন থেকে কে যেন ডাকল । এগিয়ে এল একজন। টান টান চেহারা । চুলগুলো ছোট করে ছাঁটা । পরনে দামি স্যুট । কাছে এল সে । পা ছুঁয়ে বলল , দাদাবাবু আমাকে চিনতে পারলেন না , আমি সেই রতন । যার বড়ো হবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন আপনি । আজ আমি ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের পাইলট ।
- আসমান সে ভি উঁচা ।
কথা রেখেছে রতন ।
আনন্দে অরুণাভর চোখের কোণগুলো জলে ভরে ওঠে ।
©গ্রাম পোষ্ট গীধগ্রাম জেলা বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ
ডাকপিওন
✍️অপাংশু দেবনাথ
-------------------------
একটা বেরঙা খাম পড়ে আছে ঊষর মাটিতে,
সুদীর্ঘচিঠি লিখে রেখেছি আজ সুলেখাতে।
লাল বাক্সে গুঁজে দেবো কাল।
তোমার গলিতে কি আগের মতো ওই ডাকপিওন যায়?
বেল বাজিয়ে,ঠোঁট রি রি করা ধুলোমাখা শীতের দুপুরে!
সমাধান
✍️গোপাল দে
ক্রোশের পর ক্রোশ চলতে চলতে
এক অসম সীমারেখায়
হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় জীবন গাড়ি।
জরাজীর্ন এই পৃথিবীর পানে
উঁকি মেরে দেখে
কিছু প্রশ্ন নির্লজ্জের মতো দাঁড়িয়ে আছে
সঠিক উত্তরের আশায়।
এখানে দুর্বলের উপর অবাধে চলে
সবলের আসুরিক অত্যাচার,
কারণ কার্যের ধার না ধরে
প্রতিনিয়ত চলছে শোষণ,ধর্ষণ আর
মিথ্যাচারের গল্প।
কবির স্বপ্নে দেখা রঙিন পৃথিবী এখন
ধর্মযুদ্ধ আর ভ্রাতৃহত্যার নীরব সাক্ষী।
জীবনের জয়গানের স্বপ্ন এখানে গুমড়ে কাঁদে,
ভালোবাসার তুলিতে শেষ কালিবিন্দুটিও
অট্টহাসি দিয়ে শুকিয়ে যায় নিমেষে,
হাজার রক্তবিন্দু আজও প্রশ্ন করে,
পেতে চায় এই জীবনযুদ্ধের
নিশ্চিত সমাধান।
হবেই হবে জয়
✍️সুজন দেবনাথ
আঁকাবাকা পথে চলছে জীবন
আমি যে সরল পথের পথিক।
সম্মুখে নিত্য চলে জটঝামেলা
তাতে সদা রাস্তা খুঁজি সঠিক।।
ভালো মন্দের গোলক ধাঁধায়
নিজেকে হারিয়ে ফেলি রোজ।
প্রিয়জন তো অনেকেই আছে
কিন্তু কেউ রাখেনা তো খোঁজ।।
নিত্য চলার পথে কত যে বাঁধা
অজানা বিপত্তির আনাগোনা।
তবুও এগিয়ে চলবো বলেই তো
শত শত বিষাদের দিন গোনা।।
আঁধার যামিনী কাটবে নিশ্চয়ই
জীবন প্রভাতে হবে সূর্যোদয়।
অঙ্গ জুড়াবো সোনার আলোয়
জানি একদিন হবেই হবে জয়।।
নবান্নের আনন্দ
✍️ মায়া রানী মজুমদার
রোদে পুড়ে জলে ভিজে
কৃষক করেন চাষ,
ফলাবে সোনার ফসল
কৃষকের এই আশ।
অগ্রহায়ণে কৃষকের আঙ্গিনায়
সোনার ফসল উঠে,
গোলা ভর্তিও হয় ধানে
মুখে হাসি ফোটে।
শুভ দিন দেখে করে
নবান্নের আয়োজন,
আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সহ
করেন সবাই ভোজন।
নতুন ধানের চালের গুড়োয়
কাজু,কিচমিচ,আদা।
চিনি,নারকেল-কোড়া দিলে
হয় একদম সাদা।
অগ্রহায়ণের অগ্রদিনে
পালিত হয় নবান্ন,
ঘরে ঘরে খায় সবাই
বানিয়ে নবান্ন।
গোবিন্দ ভোগ চালের
পিঠে ও পায়েস,
নলিন গুড় দিলে আরো
খেতে লাগে বেশ।
নবান্নে নব বস্ত্র পরিধানে
হয় সবাই ব্যস্ত,
তারপর রান্নার কাজে
হয়ে যায় ন্যস্ত।
রান্নার ফাঁকে ফাঁকে
চলে নাচ গান,
আনন্দেতে মাতে সবাই
আহ্লাদে আটখান।
প্রতি বছর এমনি ভাবে
হয় নবান্নের আয়োজন,
প্রত্যাশায় গুনি দিন
বছর ঘুরবে কখন।
বিশে বিষ
✍️পান্থ দাস
২০২০ মানে,
বিশ্বের এক অন্ধকার তম অধ্যায়
২০২০ মানে,
কারোর স্বপ্ন নিয়ে গেলো
তো কারোর আপন মানুষকেই নিয়ে গেলো ৷
২০২০ মানে,
মানে আম্ফান ঝড়ে সন্তানকে নিয়ে পথে বসা
২০২০ মানে,
আমরা চা খেতে এসেছি আড্ডা দিতে নয়, চা খাওয়া হয়ে গেছে, চলে যাচ্ছি ৷
২০২০ মানে,
শুধু হারানোর গল্প লেখা
২০২০ মানে,
জীবিত রাস্তা নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া
২০২০ মানে,
মাস্ক জীবনের অঙ্গ হিসেবে পরিণত ৷
২০২০ মানে,
কারাগারের মত বন্ধ জীবন যাপন
২০২০ মানে,
মানুষের কর্মহীন রূপ দেখা
২০২০ মানে,
সম্পূর্ণ লক্ডাউন ৷
২০২০ মানে,
প্রিয় মানুষগুলো পৃথিবী থেকে
চিরতরে বিদাই নেওয়া
২০২০ মানে,
ঘরে বসে বসেই বাইরের জগৎকে চেনা ৷
২০২০ মানে,
মহালয়ার এক মাস পর দুর্গা পুজো
২০২০ মানে,
দাবানলে দগ্ধ বন্য জীবন
২০২০ মানে,
পরিবারের গুরুত্ব বোঝা ৷
২০২০ মানে,
বন্য পশুরা আনন্দে জীবন যাপন
২০২০ মানে,
পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ
২০২০ মানে,
না ভোলা ৩৬৫ দিন
২০২০ মানে,
বিশে বিষ ৷
তুষ্টি
✍️চন্দ্রিমা বণিক
না, এপথে নয় ...
এপথে আছে নরম ঘাসের গালিচা,
আছে ঘাসের মাথায় বিন্দু বিন্দু শিশির তাজ,
যার নরম শীতল স্পর্শ গা হিম করে এক রোমাঞ্চকর আবেশে।
আছে ভ্রমরের গায়ে জড়ানো মাধুরী সুবাস,
আছে পাখামেলা প্রজাপতির তৃপ্তির সন্ধান,
শৈশবের লুকুচুরি খেলার সাথে অবাক করা এক সাদৃশ্য।
কিন্তু এপথেই যে আছে চেনা অচেনার ফাঁদে এক নাটকীয় রসিকতা!
বিশ্বাসের মুণ্ডচ্ছেদ করা এক অবিশ্বাস্য বিড়ম্বনা!
আমার পথে...
অনেক চড়াই উতরাই ...
সমতলেও আছে কাঁকর নুড়ির চাদর বিছানো,
প্রতি পদক্ষেপে আছে বিদ্ধ করা কিছু অনুভূতি।
আছে বার বার হোঁচট খেয়ে আহত হওয়ার অভিজ্ঞতা,
আছে ধৈর্যকে অসীম করার অবিচল প্রয়াস,
রক্তাক্ত হৃদয়কে নিজ হাতে সারানোর পুণরাবৃত্তি।
কিন্তু সঙ্গে আছে এক স্বচ্ছ উদ্দেশ্য ...
আছে বিশ্বাসের অনড় খুঁটি,
প্রাণভরা স্নেহ ভালবাসার সরল আলিঙ্গন আর আত্মতুষ্টি।
যেতে হবে বহুদূর
✍️দিলীপ মালাকার
আমাকে যেতে হবে বহুদূর
জীবনের কড়া নিয়মে ;
জানি কষ্ট হবে!
তবে, অসম্ভব কিছুই নেই এখানে।
মাঝে মাঝে ভেঙে পড়ি, ওঠে দাঁড়ায় ;
বিশ্বাস করি একদিন সত্য হবে সবই।
বাস্তবতায় ঠিকই ফিরবে
আজ কল্পনার যত ছবি।
ব্ল্যাক আউট
✍️স্বরূপা দত্ত
ঝিম্ ধরা ধূসর বিকেল
ঘর ফেরা ক্লান্ত পাখিদের ডানা বেয়ে
নেমে আসে অন্ধকার
তারাহীন আকাশ, নিস্তব্ধ চারপাশ।
দূরে কোথাও লাইট হাউজের ক্ষীণ আলো
হিম শীতল সমুদ্রাভিযান।
দিগভ্রান্ত এক নাবিক,
হু হু বাতাস, পাঁজরে চাপা ইতিহাস।
ঝুল বারান্দার ফুরিয়ে আসছে সময়
চোখের মণি আবিষ্ট নীলাভ আলো, হ্যালুসিনেশন
তারপর? তারপর ব্ল্যাক আউট।
তস্কর রূপী সেবিকা
✍️সপ্তশ্রী কর্মকার
জোড়াতালির সংসারে জীবন হয় সঙ,
পেটের সার্কাসে ক্ষিদের ঘুরপাক খেয়ে।
মন মরুভূমিতে চোখ ধাঁধানো অসুস্থ ক্ষত
নেই উপায় সারানোর ঔষধ আঁচলে।
যখন অষ্টমঙ্গলার শাড়ি বেঁচে আনি
চার পোয়া চাল আর নুন।
অভিশপ্ত বাড়িঘরে কুয়াশার ওমে,
জ্বর আসে নিভন্ত চুলার কাঠ কয়লার ছাই হয়ে।
যেন ভালোবাসা, তস্কর রূপী সেবিকা হয়ে জানালার গা বেয়ে বেরিয়ে গেছে
ফেরিওয়ালা হয়ে।
নীরবতা
✍️সুস্মিতা মহাজন
ভরা মধুমাস চারিদিকে শুধু রঙের খেলা,
তবু আমার দরজায় কড়া নাড়ে অবহেলারা।
কত প্রেম আসে ভালোবাসার অজুহাতে,
হারিয়ে যায় কোথায় কে জানে!
সে পড়ে থাকা কুনোব্যঙ হয়ে
নিস্তব্ধতার ঝড় তোলে বাতাসে।
একে একে যুদ্ধ চলে সবেতে,
আর আমি ভাবি ছেলেখেলা!
তুফান উঠে কাঙালের ঘরে-
বুকের ভাষায় নীরবতা শুয়ে বসে কাঁদে ;
আমার দরজায় শুধু কড়া নাড়ে অবহেলা।
বড়দিন
✍️সঞ্চয়িতা শর্মা
বড়দিন কী আমি জানিনা
শুধু যেদিন গির্জাঘরে ঘন্টা বাজে জোরে,
ছোট্ট যীশু যখন আসে মায়ের ওকোল জুড়ে
বিশ্বপিতা এসছে যখন বিশ্ব আলো করে,
রইবে না আর দুঃখ কারো এই আশাতে ভরে
আসবেনা তা জেনেও সবাই স্যান্টা দাদুর তরে,
অপেক্ষাতে সুখ খুঁজে পাই বক্ষ হৃদয় জুড়ে।
গাছটি যেদিন রঙিন আলোয় সাজাই যত্ন করে,
যদি একটি ছোট্ট শিশুর মুখেও আনতে পারি হাসি
সেদিন সত্যি সত্যি বড়দিন আসে সবার জীবন জুড়ে।
পাশাপাশি
✍️মঞ্জুশ্রী শর্মা-
কাঠুরিয়া মন,
গাছ ছেঁটে বাঁচিয়ে রাখে সহজ জীবন,
বনদস্যু শূন্য করে চন্দনের বন ।
খিদে মিটে গেলে ব্যাঘ্র গায়ে রোদ মাখে
হায়না বিকট হাসে, রাবারের বনে।
বাড়ির বেড়ার পাশে মাধবীর ঝোপ,
মূল্যহীন সুগন্ধ বৈভব
দোতলা বাড়ির ছাদে অভিজাত
গোলাপ আর ডালিয়ার টব।
চিঠির শব্দেরা আজ বন্দী মুঠোফোনে,
সেলফিতে ব্যস্ত সব এখানে ওখানে।
অর্ধেক আকাশে যদি মোর অধিকার;
নীলের মেলেনা দেখা ধুলা একাকার !
রাখালিয়া মন তবু বাঁশি রাখে ঠোঁটে,
বাজাবে 'মল্লার রাগ' মরুভূমি তটে।
অসমাপ্ত প্রেম কাহিনী
✍️রাজদীপ ঘোষ
হ্যা, ঠিক! এটাই ঠিক যে
আমি প্রেমিক হতে পারি নি।
এই বেকার জীবনের সাথে
একটা সাদামাটা মেয়ের জীবন জরিয়ে,
তার সেই আলোকময় জীবন
আমি নষ্ট করতে চাই না।
কিন্তু তাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি।
নিজের জীবন থেকে ও প্রচন্ড ভালোবাসি,
তাকে চোখের সামনে দেখলেই
মন বলে তাকে বলতে
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
হতে পারে সে-ও ভালোবাসে!
কিন্তু মাঝপথে রয়েছে একটা বাধা-
আর সেটা হলো বেকারত্ব।
কোনো বাবা-মা একটা বেকার ছেলেকে
নিজের কন্যার স্বামী হিসেবে চাইবে না।
সবাই চাইবে প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে,
নিজের মেয়ের গাটছড়া বাঁধতে।
এই ভাবেই বোধ হয় অনেক সম্পর্ক
তৈরী হত্তয়ার আগেই ভেঙ্গে যায়।
বুকে এক জ্বালা, যন্ত্রনা নিয়েই
অনেক অপ্রতিষ্ঠিত প্রেমিক বেঁচে থাকে।
আর অনেকে এই জীবন নষ্ট করে ফেলে।
এটাই বোধহয় অসমাপ্ত এক প্রেমের কাহিনী।
আর কোথাও নাই
✍️ সুধীর রায়
আমার প্রাণের আলোতে
তুই স্নিগ্ধ শীতল ছায়া,
আমার উদাসী মনের ঘরে,
তুই দুরন্ত এক মায়া।
তুই আমার প্রাণের পরশ,
উথালপাথাল ডেউ,
তোর সাথে মোর কি সম্পর্ক?
বুঝবে না তা কেউ।
আমি যতই যাইরে দূরে......
মনপাখিটা ঘুরে ফিরে
তোর কাছে তেই আসে!
বলনারে তুই প্রাণের মাটি-
আমার মতো এমন করে-
তোকে কে ভালো বাসে?
মাঠ ভরা ধান, মধুর হাওয়া
চাষীর মুখে গান গাওয়া;
বকের নাচন,ডাহুকের ডাক!
খেক শিয়ালের হুক্কা হুয়া!
গাছ ভরা ফল,গাঙ ভরা জল,
মায়ায় ভরা, ছায়া শীতল!
কোথায় গেলে খুঁজে পাবো?
এমন গ্রামটি আমার!
সবুজ শ্যামল ধানের শীষে-
মনটা আমার যায় যে মিশে;
সোনার ফসল উঠলে ঘরে,
লাউ কোমরের সবজি করে-
প্রাণ ভরে ভাত খাই।
বলনারে তুই প্রাণের মাটি-
তোর মতো এতো খাঁটি!
গ্রামটি আমি কোথায় খুঁজে পাই?
শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া-
কদম ফুলের গন্ধে ভরা;
তোমার ছায়ায় খুঁজে আমি
প্রাণের পরশ পাই।
তোমার মতো এমন গ্রামটি-
আর কোথাও নাই।
বঙ্গনারী
✍️ সুশীল দাস
আকাশ হতে ধার করে এনে
সখী পড়াবো নীল শাড়ি,
সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার পর
তোমায় বানাবো নীলাম্বরী।
বনের থেকে খুঁজে নিয়ে
সোনালী বন ফুল,
দুই কানেতে পড়িয়ে দেবো
ঝুমকো কানের দুল।
কালি মায়ের রূপের মতো
কালো হবে কপলের টিপ,
কাজল কালো চোখটি তোমার
কাজলেতে হবে ঝিক ঝিক।
গোলাপের রঙ চুরি করে
রাঙিয়ে দেবো ঠোঁট,
আজকে তোমায় ছাড়ছিনা
দেবোনা একটুও ছূট।
স্বর্ণ লতিকা ছিরে
বানিয়ে দেবো চুড়ি,
সব মিলিয়ে দেখবে তুমি
হয়েছো বঙ্গনারী।
আমি বিরোধী
✑ অনুকূল দেবনাথ
হ্যাঁ আমি বিরোধী
তবে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্যায়ের বিরোধী ।
আমি বিরোধী
তবে বিবেকের সাথে ছলচাতুরীর ।
আমি বিরোধী
তবে সত্যের প্রতি মিথ্যাচারীর।
আমি বিরোধী
তবে সংস্কৃতি অবিচারের ।
আমি বিরোধী
তবে প্রত্যাশার সাথে ঠকবাজির।
আমি বিরোধী
তবে একের বিনিময়ের অন্যের।
আমি বিরোধী
তবে গাঁয়ের জোড়ের ক্ষমতার।
আমি বিরোধী
শিক্ষিত লোকের চুপ থাকার।
আমি বিরোধী
তবে নিত্যকার নিজের সুনামের।
আমি বিরোধী বিরোধী বিরোধী.....
হ্যাঁ আমি বিরোধী পরাধীনতার শিকলের।
স্বল্প সুখ
✍️টিটু বনিক
প্রবল ঝড়ের তান্ডবে ঝরে যাক
তোমার বৃক্ষের সকল শুষ্ক পত্র।
তুমি বস্ত্রহীন হও আর আমি চেয়ে থাকবো,
আমি উন্মাদ হবো,
আকাশে গিয়ে বজ্রপাত হবো।
ভগ্ন প্রাচীরের মত আমিও পৃথক হবো।
তবুও কামের আসক্তে প্রলোভিত হবো না,
তুমি জোয়ার আনলেই বা কি,
আমি ত্যাগ করেছি সেই আসক্ত দহন করে শত শত নিশিতে পাথর চাপিয়ে আমি করেছি শ্বাসরোধ ।
এখন নিঃসঙ্গ নদীর মত আমিও বইতে জানি,
আর একা একা হেঁটে যেতে পারি বহুদূর
শত দূর এক দিগন্ত পথে।
বড়দিন
✍️পৌষালী ভৌমিক
শীতের মধুর স্পর্শ শীতলতায়
বরফাবৃত শিশিরবিন্দুর শুভ্রতার সাড়ায়,
আলোকসজ্জার উৎসব, এসেছে যে বড়দিন,
সান্তা ক্লজের উপহার, যীশুর জন্মদিন।
বড়দিনের বৃক্ষের মতই উজ্জ্বলে মেতে,
বিশ্ববাসীর মন উজ্জ্বল হয় ভুল ভ্রান্তি ভুলে।
উপহারগুলো মনভোলানো, আবেগময়,
কেক-পেস্ট্রি আর কুকিসে দিনটা পুরো তৃপ্তিময়।
চারিধার উদ্ভাসিত হয় মোমের দীপ্ত আভায়,
মুছে যায় অন্ধকার, বরদিনের রূপালী আলোয়।।
Losing
✍️Ananya Ray
Losing is an art,
Lost housekeys,pins and pens says that it's fun!
But it hurts to lose a friend.
As we lose a winter,it melts into spring.
We lose a cocoon and flys a butterfly with wings.
You lose a tear to find a smile underneath.
But not every lost things can be recovered,
we lose every war we fight
For lives are priceless.
Recently, I lost a land and owned a river also a continent.
You lost a sky and earned an universe.
And someday,someone will lose us too
As 'the Artist' will accept us,
as we lose our earthly body to become a heavenly soul.
Cause as it is said before,
Losing is an art.
যদি কষ্ট হতো
✍️সম্রাট শীল
কষ্ট যদি স্বপ্ন হতো,
অনায়াসে ধরা দিতো।
ধরা দিতো ইচ্ছের শেকড়,
বেঁধে নিতো আমায় ভিড়ের মাঝে।।
কষ্ট যদি প্রেম হতো,
ইচ্ছে করেই পাশে বসতো।
আসতো কতো সুখ আহ্লাদের পাখি।
ডানার ঝাপটায় প্রেম মাখতো,
ক্লান্ত ভুলানো এক গভীর রাতের সাজে।।
কষ্ট যদি ইচ্ছে হতো,
নিমিষেই জয় করতো এক ব্যার্থ প্রেমিক,
তাঁর প্রেমিকার মন।
উদ্দীপনা জাগাতে পারতো,
প্রেমিকার মনে ফেলে আসা,
প্রেমিক পাওয়ার ব্যস্ততায়।
ঢেউয়ের মতো বারবার,
কাছে আনতে পারতো।
এক ভিক্ষুক রূপে,
নিখুঁত ভালোবাসার চাহিদায়
এইভাবে যদি কষ্টের মতো সঙ্গি হতো,
আমি ভালোবেসে,
কষ্টের প্রেমিক হতাম।
হিন্দু মুসলমান
✍️সুমিতা স্মৃতি
তুমি হিন্দু আর আমি মুসলমান,
আমি ভাই আল্লায় বিশ্বাসী আর তুমি ভগবান।
তুমি ভাই গীতা পাঠ কর আর আমি কোর-আন,
কারণ একটাই তুমি হিন্দু আর আমি মুসলমান।
তোমাদের ভাই লক্ষ কোটি দেবতা আর আমার একজন,
হিন্দু মুসলিমের ভেদাভেদ ভুলে কি আমরা হতে পারি না আপন?
আমাদের মাঝে কেন এত তফাৎ, এত ভেদাভেদ,
একই রক্তমাংসে গড়া দুজন তবুও কেন বিভেদ?
তুমি হিন্দু ব্রাহ্মণবংশের বলে উচ্চবিত্ত শ্রেণী,
আর আমি মুসলমান বলে অচ্ছুত, অস্পৃশ্য শ্রেণী?
তুমি ভাই হিন্দু বলে পছন্দ করো না সাধারণ মুসলমান,
আবার তোমার'ই প্রিয় অভিনেতাদের তালিকায় থাকে শাহরুখ- সালমান খান।
বুঝি না এ কেমন সমাজ, কেমন এর রীতি?
ধর্ম নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করাই কি মানুষের প্রকৃতি?
রুঢ়
✍️অসীম দেববর্মা
আতপের মুখোমুখি হতেই
আতরের গন্ধ গন্ধহীন,
মাঠের সোনালী আবরণ
হাট মুখী হতেই বর্ণহীন!
জোগানের দুটো হাত
জোগান শেষে প্রত্যাশীদের
দলে ভিড় জমায়,
রুগ্ন দেহ, ঝলসানো স্বপ্নের
পরতা দিনান্তে অপ্রাপ্তির
চাদরে জড়ায়!
জীবনমঞ্চ
✍️শাশ্বতী দেব
জীবনে আসুক যতই বাধা,
পেড়িয়ে যেতে হবে হাসি মুখে তোমাকেই।
জীবন তোমার নিজস্ব সম্পদ,
নিজের সঙ্গে সবাইকে নতুন করে বাঁচার আশ্বাস তুমি ;
তোমায় ভরসা করে একদিন সবাই
বাঁচতে শিখবে ।
স্বপ্নে কতবার
স্বপ্নে কতবার অবয়ব গড়েছি
কিন্তু রঙ দেওয়া আজও হলোনা।
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটির হেমন্ত বিকেল
হৃদয়ের গোপন দুর্গে এঁকে দিত জীবন্তিকা নদী।
সামনে যতটা এগোই,তারও বেশি পিছিয়ে পড়ি।
কারন, নিস্পন্দ চোখে ছুঁয়ে দেখা বারণ।
এখনো সবুজ প্রান্তর জুড়ে স্বপ্নরা জলছবি আঁকে।
অনিদ্রা যামিনীর শেষে ক্লান্ত চোখে মিলিয়ে যায়।
আবার একবুক স্বপ নিয়ে নতুন করে শুরু হয় কানামাছি খেলা।
শীতকালীন অঘ্রায়নী বৃষ্টি
✍️সুস্মিতা পাল
কৃষক ঘরে জন্ম আমার,
নাম যে আমার কৃষ।
জন্মের পরেই যখন বুঝতে শিখেছি,
বলতো সবাই ক্ষেত গৃহস্তই যে মোদের জীবন।
কর্ম করলেই দু বেলা মিলবে অন্ন,
আর মিলবে নানা শাক সবজি।
তাইতো সবাই বলতো আমায়
কর্মই মোদের আজীবন।
কর্ম করিলে নাকি মিলবে কর্ম ফল,
বিধাতা দেবে যে তার ই ফল।
তাইতো সকল কৃষক করেছে অক্লান্ত পরিশ্রম।
রুয়া দিয়েছে ধান্য ক্ষেত্রে।
বীজ লাগিয়েছে ক্ষেতে।
অঘ্রায়ণ মাসের পূর্ণ লগনে,
কাটবে ধান্য গুছা আর সবজি তুলবে টুকড়িতে।
কিন্তু হঠাৎ যেনো পাঁকা ধানে মই পড়িল
আসলো ধেয়ে শীতকালীন অঘ্রায়নী বৃষ্টি।
আর,সকল ক্ষেত খামার হলো জলমগ্ন।
ধান্য গুছা ভাসছে জলের স্রোতে,
শাক সবজি গাছ ডুবেছে যে জল তলে।
তবে,এই কি ছিলো সকল কৃষকের কর্ম ফল!
শুধু নিজের নয় সবার মুখে খাওয়ার জুটাতে,
কৃষকেরা করল যে অক্লান্ত পরিশ্রম,
অকাল শীতকালীন অঘ্রায়নী বর্ষণে,
বিধাতা দিলো কৃষক কোলকে তারই বিশেষ ফল!
ঘ্রাণ
ভালোবাসা থেকে দূরে থাকবো
এই বোধোদয় হওয়া মাত্রই দূরে থাকা স্টার্ট --
চোখ তো বাঁধাই ছিল, ঠুসে বসেছিলাম কানও
জাকিয়ে পড়া শীতের মত জাপটে ধরেছিলাম নিজেকে
শুধু বরাবরের মতই খেয়াল ছিল না নাকের কথা !
নদী
✍️অঙ্কিতা বর্ধন
চঞ্চলিত উচ্ছাসিত জল
চলে শুধু অবিরাম ।
স্থায়ী হয় কত জীব
হয় মাছেদের গ্ৰাম।
কৃষকেরা কৃষি করে
ফলায় কত ধান।
খরার তাপে সেই জলে
সিক্ত হয় জমির প্রান।
বন্যায় হয় বাঁধন হারা
জলমগ্ন দু-কুল ।
মানে না কোনো বাঁধা
ধলে পড়ে সর্বনাশে জীবকুল।
কত জাহাজ কত নৌকা
বয়ে যায় সহজে ।
সূর্যাস্তে অন্ত হয় সব
তখন ও বয়ে চলি আমি,
অবিরাম বীনা গরজে ।
ভীড়ের শহর
✍️কৃষ্ণ ধন শীল
ভীড়ের শহর,
কৃত্রিম আলোয় উষ্ণ প্রবাহমান বায়ু,
ভেদাভেদের দেয়াল গুলি সদর্পে খাড়া,
আর কয়েকটি জীর্ণ নতজানু!
কোলাহল দিনভর,
নিশীথের আঁধারে মাঝে মাঝে,
অলক্ষ্মী প্যাঁচার ভয়ার্ত ডাক ওঠে,
ব্যাধ আসে, বাদ্যি বাজে!
শ্রেষ্ঠ ঢংবহর,
ক্ষুধার্ত হায়না-শৃগাল স্পষ্ট দিবালোকে,
রঙ মেখে সঙ সেজে ফন্দি আঁটে,
নিঃস্ব কাক-চিল ব্যর্থ তাকে!
তাপ প্রখর,
তবু ভীড় জমে,অদৃশ্য হাহাকারের স্রোতে,
লোভ-লালসা পূর্ণ চোখ,জিভে জল,
ঈগল-বাজদের প্রতি প্রভাতে!
বোঝা দায়
✍️শতাব্দী দেবনাথ
যে ফুলের গন্ধে তরুণ
প্রেমি শীতের চাঁদরে
জোৎস্না ভরা রাতে
ঝরাপাতাদের গান শোনায়,
অবসান ধূলিকণা যার
অন্তহীন কবিতা,
চিত্র যুক্ত রং যার
তুলির টানে ছবিটা।
যে ফুল গন্ধ বিহীন
ঝরে যাওয়া ফুলকে
নিয়ে ভাবাটা ও আকাশ ছোঁয়া।
যেখানে পুরাতন প্রেমে নতুন
হয়ে হাঁটা যায় না
যে খানে মন বাঁধা যায় না,
শোনাযায় দূর হতে
ছন্দ ছাড়া নুপুরের কলতান !
তখন হাড়ের শরীরে
ওই যে হৃদপিন্ডটা ও
যেন অচেনা, অজানা।।
ঝরা বল্ক
✍️মিঠুন দেবনাথ
হে বসন্ত,তুমি আসো বারবার
প্রকৃতির রঙিন ঝলক হয়ে ,
তবুও তোমায় রাখা হয়েছে শেষ ঋতুতে l
তুমি আসবে বলেই ..
অর্জুন গাছ আজ বল্ক ছাড়তে শুরু করে,
উদিত সূর্যে ও অস্ত বেলার মধ্যে দিয়ে l
একটু একটু করে ঝলসে যাওয়া পাতাগুলোর
পুনরাবৃত্তি ঘটছে গাছের ডগায়,
তাই আজ নিস্তব্ধ l
তুমি জান?তোমার আগমনে ,
সমস্ত সাপেরা নতুন দিনের জন্য খোলক ছাড়ে
বর্জিত পুরোনো দিনের স্মৃতি ভুলতে l
হাজারো সুপারী গাছের ডগা থেকে
খসে পড়ে যায় সুপারী গাছের পাতা ,
খরা দিনে সমস্ত দুর্বৃত্তদের এই অবস্থা l
অনেক গ্রামের নদী ছড়া হারিয়ে ফেলে
তাদের অতীতের প্রবাহিত পথ ,
কারণ তাদের বুকে শূন্যতায় পূর্ণ l
শত গাছ তাদের সন্তানের জন্ম দিয়ে
লালন পালন করে যেতে অক্ষম ,
কারণ তারা মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে দিন দিনl
লক্ষ কাঙাল ভাইয়েরা খসে পড়ছে রাস্তায় ,
চারদিকে দুমুঠো খাওয়ার জন্য হাহাকার ,
যুবক ভাইদের উন্মাদনায় বন্ধ হবেই শেষবার l
যুবসমাজ
✍️ অংকিতা বর্মণ ঘোষ
আজ প্রকৃতি কান্দে
যুবসমাজের মোবাইলের আনন্দে।
"ভোর হলো,দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে,
ঐ ডাকে জুঁই শাখে
ফুল খুকি ছুটরে।"
এই ছড়া আজ অধরা!
পাখির কলরব আচ্ছন্ন করল
যুবসমাজের মোবাইলের সরব।
বিজ্ঞানের সৃষ্টি মোবাইলের বৃষ্টি,
বিজ্ঞান ও প্রকৃতি
মোদের জীবনের সঙ্গ,
সুখময় জন্মের এ দুটো অঙ্গ।
জীবনের শিক্ষা অক্সিজেন
বিনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ঋণে
তাই হৃদয়ের রেখায়
দুটিকেই যেন দেখা যায়।
প্রকৃতির ক্রন্দন দুঃখের বন্ধন
এই লাইন হৃদয়ে কর গান।
শৈশব
✍️মন্দিরা ভারতী
রাএি শেষে ভোরের আকাশ হতে
সবুজ ঘাসের গায়ে
ঝরে পড়া শিশিরের প্রতিটি ফোঁটা,
মনে করিয়ে যায়
কেটে যাওয়া শৈশবের অল্প আনন্দে মেতে ওঠা।
সবুজ খেয়ার সরু আলপথে
গুটি গুটি পায়ে হাঁটা,
মায়ের নজর এড়িয়ে
দুপুর ধরে কত অলিগলি ছোটা।
বনের পাখিদের সাথে কাটানো সকাল
কুলের বাগানে কেটেছে কত দুপুর,
কেটেছে বিকাল ধানের শিশে হাত বুলিয়ে
সত্যি, শৈশব জীবন ছিল আনন্দে ভরপুর।
---------------
বিপদ
| ✍️ - সায়ন মজুমদার |
বিপদ তুই আমার কাছে খুব প্রিয় তুই(বিপদ) আসলে চেনা যায় কে আসল বন্ধু। আর কে শত্রু বিপদ তুই আমার কাছে খুব প্রিয় তুই(বিপদ) আসলে সেই মানুষের ডাক পাই আমি, যে আমাকে মুশকিল সময়ে আমার সাথে মিষ্টি ভরা কথা বলে, আমার সাহায্য নেই এবং এই বিপদ থেকে উদ্ধার হয়। তাই বলি বিপদ তুই আমার কাছে খুব প্রিয়। তুই(বিপদ) না থাকলে চিনতাম না আমি কে বন্ধু আর কে পর। তুই না থাকলে চিনতাম না কত মানুষ প্রয়োজনে ডাকে, আর প্রয়োজন শেষ হলে টিস্যু পেপারের মতন ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। সেজন্যেই বিপদ তুই আমার কাছে খুব প্রিয়। |
গরীবের শীত-বৃষ্টি
🖋শ্রী রঞ্জিৎ বিশ্বাস
শীত হােক আর বৃষ্টি সবকিছুতেই গরীবের শরীর কাঁপে ও বুক ভাসে।
গরীরকে কি সবাই মারতে ভালােবাসে?
কখনাে রাজনীতি কখনাে ধর্মান্ধ রীতি কখনাে বা প্রকৃতির নির্দয়তা,
গরীরকে যদি এত ভাবেই মরতে হয় জন্ম দিয়েছাে কেন সৃষ্টিকর্তা ?
সৃষ্টি করতে শুধুই ধনীদের সব উজাড় করে দিতে তাদের,
সবাই তখন আড়ম্বর করে বলতাে এই সৃষ্টিকর্তা কেবলই ধনীদের !
সৃষ্টিকর্তা, তুমি যদি গরীবদের সত্যি বাঁচার মতাে বাঁচাতে চাও,
যারা গরীবদের রক্তচুষে জীবনকে পিষে তাদের শাস্তি দাও।
অনাথের যে নাথ তুমি দানবদের তা বুঝিয়ে দাও।
অজানা পথ
🖋সুবর্ণা চক্রবর্তী
দূরত্ব বেড়েছে জানি
তাই আর ও পথে যাইনি।
তবুও এ মন বড্ড অভিমানী
স্মৃতির পাতায় অহেতুক শব্দ শুনি।
টুকরো কিছু মুহূর্তের অভ্যাস
তারচেয়ে একা থাকাই বেশ।
কিছু পরিচিত রাস্তার মোড়ে
যেনো ডেকে যায় আমার চেনা নাম ধরে।
অলীক সুখের মায়াজালে আর পরশে
হয়তো কিছু চাওয়া পাওয়ার ভাগশেষ রয়ে যায় অবশেষে।
*****
জীবনের গান
🖋প্রতীক হালদার
কখনও একা , কখনও সবাই
জীবন চলে বয়ে,
দুঃখ-ব্যথা-হাসি-খুশি
সব কিছুকেই সয়ে ।
জীবন কখনও থমকে দাঁড়ায়
হাজার অভিমানে,
কখনও আবার সচল থাকে
জীবনের জয়গানে ।
সুখের জোয়ার কখন আসে
ভরিয়ে যে দেয় প্রাণ,
দুঃখের ভাঁটা কখন আবার
দেয় শত অপমান ।
জীবন মানেই চলতে হবে
পেরিয়ে সকল বাঁধা,
জীবন এত নয় তো সহজ
সত্যি গোলক-ধাঁধা।
শক্ত হাতেই হালটা ধরে
করতে হবে জয়,
জীবনের গতি সঠিক রাখতে
সরাতে হবে ভয় ।
এগিয়ে যাব, থামবো নাকো
রাখবো মনে জোর,
আঁধার ভেঙে জীবন জুড়ে
আসবে নতুন ভোর ।
তারাদের দেশে
🖋অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
রাতের আকাশে চাঁদের দেশেতে তারাদের লেগেছে ভীড় ।
অবুঝ মন আজ আনন্দের ঝর্ণায় হয়েছে অস্থির ।।
সীমাহীন মহাকাশ জুড়ে লেগেছে চাঁদের হাট ।
দিশাহীন মাতোয়ারা মন ভুলেছে পথ ঘাট ।।
অন্ধকারের সমুদ্রলোকে জোনাকি আলো জ্বলে ।
মন হারানোর দেশে আজি রয়েছি আপন ভুলে ।।
দিনের শেষে আধাঁর দেশে দেখি কত রূপ ।
কত কথা আসে ভেসে তুবও থাকি নিশ্চুপ ।।
মেঘের ভেলা গিয়েছে আজি কোথাও হারিয়ে ।
মাথার উপর একলা আকাশ আমায় জড়িয়ে।।
কত আপন জন ছেড়ে গেছে আমায় হয়েছে রাতের তারা ।
আমি একা রয়েছি পড়ে হয়ে বাঁধন ছাড়া ।।
মনের কোণে ছিল কত লুকানো গোপন কথা।
পারিনি আমি বলতে তোমায় তাইতো এত ব্যাথা ।।
স্বপ্ন গুলো পুষে রাখা মনের গোপন ঘরে।
হয়তো একদিন হারিয়ে যাবো ওই তারাদের ভীড়ে ।।
তখন আমায় খোঁজবে সবাই জ্বালিয়ে রঙ মশাল।
দেখবে আমায় আকাশ পাড়ে পাবে না নাগাল।।
ইচ্ছে গুলো শুকিয়ে যাবে মনের মণিকোঠায় ।
দূর গগনে দেবো পাড়ি মৃত্যুর আঙ্গিনায়।।
নারী—পুরুষ
🖋অঙ্কিতা বর্মণ ঘোষ
পুত্র শিশু কান্না নয়,
কঠোরতা তোদের শ্রেষ্ঠ সই।
কন্যা শিশু তর্ক নয়,
কোমলতা তোদের জীবন সই।
পুত্র তুই কৈশোরে পক্ক,
শক্ত কিন্তু নিবি বড্ড।
কন্যা তুই কৈশোরে পক্ক,
বাহিরের জগৎ বড্ড শক্ত।
পুত্র তুই যৌবনে এলি,
কর্ম তোর জীবন সঙ্গী।
কন্যা তুই যৌবনে এলি,
পরকে আপন করবি বুঝি।
মাতৃযন্ত্রণা অগ্নিদগ্ধসম কন্ঠে বাঁধে
পিতৃযন্ত্রণা নারিকেলসম বাহ্যিক কষ্টে আঁকে।
বাবা..খাতা– কলম, পোষাক—পরিচ্ছদ কই?
মা রান্না- বান্না সেবা যত্ন পাই!
বার্ধক্যে মাতা— পিতা হীন
পুরুষ জীবনে ছত্র ঋণ।
বাহ্যিক যন্ত্রণা একাই বাঁধেন!
বার্ধক্যে মাতা—পিতা হীন,
নারী জীবনে ছত্র ঠিক।
স্বামী বাহ্যিক যন্ত্রণা শব্দে বন্ধে!
অন্তিমকালে ঘরে সাঁঝে বৃদ্ধ জীবন
অন্তিমকালে ঘর বন্ধে বৃদ্ধা জীবন ।
পুত্র বধূদের সংসার যন্ত্রণা
বৃদ্ধা কেবল সহ্য করে একা
বৃদ্ধ তা বোঝে না পাঁকা।
কারো মনে ব্যতিক্রমী প্রশ্ন আঁকে
জীবনসজ্জা ওল্টেও কিন্তু সাঁঝে।
তবে, আমার মনে প্রশ্ন বন্ধে
এক কে'জি তে একটি নষ্ট পঁচা
পাড়ে কিন্তু নজর একা!
নারী আর পুরুষ বল,
জীবন যাত্রায় কষ্ট বড়!
ধনবান
🖋চন্দন পাল
তুমিও গরীব, আমিও গরীব, গরীব নেতা আর বেনিয়া!
সবারই তো আরও চাই, পাওয়ার মোহ ভীষণ মায়া।
অবাক গরীব দেশে দিশে, ধনী আমরা কয় জনা!
ভাত পেলেও চাই বিরানি , তামা ফেলে চাই সোনা।
বিনাশ্রম সরকারি দান অপচয় ভাষা ত্রাস নেশা কারবার,
সত্যমিথ্যায় গরীব সবে দুষি বৃথা ইষ্ট আর সরকার।
শ্রমিক সৃজক আসল ধনী বিত্ত নয় কর্ম ধনে,
চাওয়া পাওয়ার সংযমই ধন জানে ক্ষণনিষ্ঠ মিত জনে।
শৈশব
🖋মনচলি চক্রবর্তী
হাসি আনন্দের মাঝে কেটে যেতো বেলা
ছিল একসাথে মিলে মিশে খেলা।
আজ আর ফিরে আসবেনা সেই সুন্দর শৈশব
কিভাবে কেটেগেল যেন দিন সেইসব।
মা বাবা কাকা দাদু পিসিদের সাথে ঘুরাঘুরি করা
জানলায় উকিমেরে লোকেদের ডাকাডাকি করা।
পড়া আর ব্যাস্ত জীবন থেকে আজ নিতে চাই আমি ছুটি
ফিরেযেতে চাই সেই শৈশবে আরেকটি বার পায়ে গুটিগুটি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)
