বৃহন্নলা


🖋কাজী নিনারা বেগম

আজ কোথায় আলোর মিছিলের সমাবেশের  কারিগররা,,
তোমরা কি  বৃহন্নলা নাকি কিন্নর? 
তোমরা রোদালি দিয়ে  কান্না করা্চ্ছ।
পাড়ায় পাড়ায় জল্লাদের আস্ফালনে সমাজের কলূষিত মানুষ বিভ্রান্ত,,
নরপিশাচের রক্তমাখা থাবায় খসে্ খসে পড়ছে সেই মানবতার চাদর ট্রেক।। 
দুর্যোধনের চতূর পাশা খেলায় সমাজের মানুষ নাকি গণতন্ত্র দূর্নীতির ঘেরা কলে ফেসে গেছে,,
অসহায়ত্বের যন্ত্রনায় মানুষ দুঃশাসনের অশ্লীলতার ধ্রুপদী বস্ত্র পরিধান কেড়ে নিতে চায় মানবিক মুল্যবোধ। 
মানুষ অপেক্ষায় কবে সেই শমী বৃক্ষের মন্ত্র পড়া অস্ত্র গুলো নিশ্চিতভাবে আছে নাকি? 
হয়তো একদিন দ্বারকানাথ একবার মন্ত্র পড়া অস্ত্র গুলো জাদুর কাঠি দিয়ে আবৃত করবে,,
সমাজের সকল স্তরের মানুষদের  দুঃখের সহবাস থেকে  কাটিয়ে উঠতে সচল ও সুগম করবে,,
ঐদিন হবে মানবতার উপন্যাসের একটি নতুন অধ্যয়নের দিন।

বৈশাখী গান

🖋গৌর গোপাল পাল

চৈত্র গিয়ে বোশেখ এলো
নতুন খাতার গান!
বাংলা নতুন বছর পেলো
পেল নতুন প্রাণ!!

পয়লা বোশেখ নতুন খাতা
গণেশ পুজোর ধুম!
সব পথিকের মাথায় ছাতা
গরমে নাই ঘুম!!

বোশেখে হয় নতুন করে
পথটি চলা শুরু !
বোশেখে মানে সবার ঘরে
এখন কবিগুরু!!

প্রতি বছর বোশেখ মাসে
দেখি বিকাল বেলা!
কাল বোশেখী নিয়ে আসে
ঝড় বৃষ্টির খেলা!!

বাঁধবো কুঁড়েঘর

🖋অভিজিৎ দাস

তোমার বুকে ওই যে নদীর চর-
দাওগো জায়গা বাঁধবো কুঁড়েঘর।
এই শহরে দগ্ধ আমি আজ,
স্পর্শে তোমার উঠুক জলোচ্ছ্বাস।
ভাসিয়ে দেবো মনকেমনের তরী,
হারিয়ে যাবো আজকে বহুদূর।
অঙ্গে তোমার ওই যে কাঁকন চুড়ি- 
বাজুক তাতে একটু প্রেমের সুর।
জ‍্যোৎস্না রাতে পাখি ডাকবে যখন,
আমি তখন হারিয়ে যাবো সুখে।
তপ্ত দুপুর পুড়াবে আমায় যখন-
তুমি তখন জড়িয়ে নিয়ো বুকে।
হাত ছুঁয়াবো তোমার অধর মাঝে,
বাঁধবো প্রেমে তোমার আঁখিডোর।
একটু জায়গা তোমার বুকের পাশে-
দাওগো আমায় বাঁধবো কুঁড়েঘর।

বৈশাখী রবির কাব্য

🖋পৌষালী ভৌমিক

রবি তোমার উদয় পূব গগনে,
প্রথমা ঋতুর উষ্ণ নবীনের কোলে।
নববর্ষের হালখাতার হর্ষ তখনও উড়ন্ত,
বৈশাখের পঁচিশ অঙ্কটি রেখে গেলে জীবন্ত।
রবি তোমার কলমে বৈশাখ আজ রবিমাস,
তুমি মানেই তো নতুন, ঠিক যেন মধুমাস।
বিধাতা তোমায় কলম দিলেন,সৃষ্টির বরদান,
বিধাতার ন্যায় রাখলে তাই অদ্বিতীয় সৃষ্টির মান।
রবি তোমার সৃষ্টি সজীব,অক্ষরে প্রাণ আঁকা,
দুঃখে হাসে নয়নবারি,সুখের কবিতায় আবেগ ঢাকা।
তোমার কাহিনীতে উপন্যাস রচায় হৃদয় বারম্বার,
ওহে, কোন অমৃত রেখে গেলে কাব্যতে তোমার!
রবি তুমি ভুবন খ্যাত,কবির কাব্যের গুরু কবিগুরু,
তোমার কাব্যের ঔজ্জ্বল্যে সাহিত্যের নবশিখার শুরু।
রবি তুমি এখন অমরত্বের কল্পনারাজ্যে বিরাজমান,
মোর হৃদয়ের প্রাঙ্গণে আলেখ্য তোমার নাম,
হে বিশ্বকবি,মধ্যগগনের অমর রবি,লহ মোর প্রণাম।

দমকা হাওয়া

🖋পান্থ দাস

কথাটা সেই বিকেলের, যখন মৃদু হাওয়ায় মনটা ডানা মেলতো ৷ যখন শান্ত মেঘে মনটা, কানে আলতো ভাবে গান গেয়ে যেতো ৷ বৈশাখী হাওয়ার ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ যেন নরম গালে চুমো দিয়ে যেতো ৷ ঠিক সেই বিকেলের কথা ৷ 

ভাসতে খুব ইচ্ছে হয় ভাঙা নদীর সেই স্রোতে, কলকলে স্রোতের শব্দে নিজেকে স্বপে দিতে মন যেন চায় ৷ কিন্তু যখনই আগমন হয় সেই দৈত্য রূপি কালবৈশাখীর, তছনছ করে যায় মনের সকল আকাঙ্খাকে ৷ গুড়িয়ে দিয়ে যায় যে সকল ভাবনাকে ৷ ক্ষণিকের মধ্যে সব ইচ্ছের পতন ঘটে, রক্তিম প্রহরে একাকীই ভেসে বেড়াই নতুন দিগন্তে ৷

বসন্তের সুখ

🖋সুস্মিতা দেবনাথ

মন নাচে আজ আনন্দে বেশ,
 চারিদিকে বসন্তের আমেজ।
 শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া খেলছে আপন ডালে।
এ যেন এক পরম তৃপ্তি মন মাঝারে।।
কোকিল গাইছে আপন সুখে ,
আহা,,, কী মধুর সুরে।।
ঝড়াপাতা ভাসছে কেমন দক্ষিনা হাওয়াতে।
মনে হচ্ছে অনেক দিনের তপস্যা হয়তে আজ তারা মুক্তি পেয়েছে।।
দক্ষিনা হাওয়ার শুরশুরে আওয়াজ,
 নতুন করে বলে দেয় যেন বসন্ত এসে গেছে।।
দোল পূর্ণিমার দোল উৎসবে,
 সকলেই আপন মনে আবিরের রঙ্গে সেজে উঠেছে।
মনে হয় হিংসা-বিদ্বেষ দেশ ছেড়েছে।।
বাউলের গানে মন মেতেছে,
বসন্ত এসে গেছে।।
আয়রে সবাই বাইরে আয়,
মনের যত কালিমা মুছে দিয়ে আয়।
বসন্তের আমেজ গায়ে মেখে আয় স্বপ্ন পুড়ে যায়।।

ফিরে এসো অনির্বাণ

🖋মায়া রানী মজুমদার 

সদ্য স্নাতক ছাত্রটি রেখে গেছে নানা অবদান,
প্রদীপ্ত অগ্নিশিখাসম ছিল মোদের এই অনির্বাণ।
রেখে গেছে স্তরে স্তরে বন্ধুবান্ধব পরিজন, 
শোকার্ত সবাই, মা বাবা আত্মীয় স্বজন পরিজন।
জীবনের মাত্র বাইশ বৎসরে দিয়েছিলে পা, 
নিমেষেই ফেলেছি হারিয়ে আর কি পাব না ? 
যতই করি না কেন সাধন পূজন ভজন, 
শত আরাধনায়ও পাব না মোদের অমূল্য রতন।
তার স্মৃতি স্মরণে মোদের ফেটে যায় বুক, 
কিছুতেই পারছি না ভুলতে মনের দুঃখ। 
এই অসহ্য মনোব্যথায় অন্তরেই হচ্ছে যুদ্ধ, 
নিদারুণ কষ্টে মোদের হয়ে গেছে বাকরুদ্ধ।
স্বজন পরিজনও পারছেন না ভুলতে স্মৃতি,
পাঠরত সময়েও নানা কর্মমাঝে রেখে গেছে বহুস্মৃতি। 
ভুলতে চাই ব্যথা, হারানো মানিক চাই পেতে, 
ফিরে এসো মায়ের কোলে, আদর চুমু খেতে।
বাবা আছেন বসে, ছেলে আসার অপেক্ষায়,
কখন আসবে ফিরে, আছেন সেই প্রতিক্ষায়।
পূর্ণ কর মনোবাসনা ফিরে এসো কোলে, 
তোমায় পেয়ে যেন মা বাবা পূর্বস্মৃতি ভুলে।

আলোর অপেক্ষায়

 
🖋ইমরান খান রাজ 

আজ আকাশে চাঁদ নেই, 
নেই কোন আলো। 
তারাগুলো যেনো অভিমান করেছে, 
আকাশের সাথে ! 
তাইতো আকাশটা আজ স্তব্ধ, 
শান্ত হয়ে চুপটি মেরে বসে আছে সে ! 
মনে মনে একজনের অপেক্ষা করছে, 
গভীর বিশ্বাসে আলোর দিকে চেয়ে আছে সে। 
হয়তো আলো খুব শীঘ্রই আসবে, 
তার বুকের ভেতরটা আলোকিত করতে। 

স্বপ্ন


🖋অজয় দত্ত

 শেষরাতের একটি স্বপ্ন আমার ভোরকে তোলপার করেছিল ।

একদম নগ্ন একটি স্বপ্ন !
ঠিক মৃত্যুর আগে বয়স্ক চিল যে স্বপ্ন দেখে , সেই অহংকার ।

আমরা ভুল শুধরাতে চাই !

তুমি হইও আমার কৃষ্ণ

🖋সুজন দেবনাথ

তুমি হইও আমার কৃষ্ণ বন্ধু 
আমি তোমার সুদাম সখা,
এ প্রেম যেন রহে চিরদিন 
চির অমর কাব্যে মাখা।

আসুক যতো ঝড়ের তান্ডব 
কালবৈশাখীর খেলা,
বন্ধু তুমি অন্তরেই থেকো 
ফুরাবে না প্রেম লীলা।

সুখেতে তুমি যেওনা ভুলে 
আমার দুঃখের গান,
পাশে থেকো তুমি ওগো প্রিয় 
আমার হৃদয় অন্তঃপ্রাণ।
 
এতো ভালোবাসিনি কাউকে 
কারো হইনি এতো প্রিয়,
আজ যেন তুমি আমার কাছে 
বড্ড বেশি অতুলনীয়।

পেয়েছি যখন হারাতে চাইনা
হতে চাই প্রেমে অমর,
ছেড়োনা বন্ধু এই দুটি হাত
আসুক না যতো ঝড়।

প্রিয় বন্ধু মানে কী শুধুই জীবনসঙ্গী ?

🖋পার্থজিৎ  ভৌমিক

কে বলেছে?
প্রিয় বন্ধু মানে জীবনসঙ্গীই হবে..
বন্ধু মানে আত্মার বন্ধন তৈরি হবে যবে।
দিনের শেষে একটা ফোন যাবেই বন্ধুর তরে,
কিরে তুই খেয়েছিস তো, ফিরেছিস্ তো ঘরে?

কে বলেছে ?
প্রিয় বন্ধু মানে জীবনসঙ্গীই হবে..
জীবনসঙ্গী ছাড়াও বন্ধু তখনই রবে।
স্বার্থ ছাড়া তোমার জন‍্য অধিকার দেখাবে যে,
বোঝবে তুমি ভিড়ের  মাঝেও বন্ধু তোমার সে।

কে বলেছে ?
প্রিয় বন্ধু মানে শুধুই জীবনসঙ্গী 
বন্ধু হবে সেই, যার থাকবে না মিথ্যে ভঙ্গি।
রাগ অভিমান বাড়বে যতো সম্পর্ক দৃঢ় হবে ততো।

কে বলেছে ?
প্রিয় বন্ধু শুধু জীবনসঙ্গীই হয়..
বন্ধুত্ব আর অর্ধাঙ্গীনীর তফাৎ বোঝতে হয়।
জীবনসঙ্গীর সাথে একটা প্রিয় বন্ধু থাকা চাই,
যার সাথে অল্প খাবার ভাগাভাগি করে খাই।

কালবৈশাখী

🖋রেহানা বেগম হেনা

কালবৈশাখী তুমি এসো ভয়ঙ্কর ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করে,
তুমি এসো ,আমফান ,যশ এর গতিকেও পেছনে ফেলে, প্রলয়ঙ্করী, বিনাশকারী হয়ে।
তুমি সব কিছু ভেঙ্গে তছনছ করে দাও-
আমার দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম।
গুড়িয়ে দাও, চূর্ণবিচূর্ণ করে দাও, ভাসিয়ে নিয়ে যাও-
দেশের যতো নোংরা ধর্মের ভেদাভেদ, হিংসা, ঘৃণা, বিদ্বেষ।
ধূলিসাৎ করে দাও মৌলবাদের ভিত, দেশের যতো ভ্রষ্টাচার , দুর্নীতি,অন্যায় অবিচার।
ভাসিয়ে নিয়ে যাও- নারী বিদ্বেষ, মানুষ রূপী ধর্ষক।
ঝড়ের বেগে বয়ে এনো পুরুষে নারীতে সমতা, সমানাধিকার, মানবতা, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বোধ।
তোমার ঝড়ের তাণ্ডবের ছোঁয়া যেন লাগে সব মানুষের গায়।
স্কুল কলেজ থেকে অফিস আদালত,
শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত, ধনী গরীব, কৃষক শ্রমিক, মেহনতি দিনমজুরের মস্তিষ্ক ছোঁয়ে যাক তোমার পরশ।
কালবৈশাখী তোমার ঝড়ের প্রথম তাণ্ডবে, প্রথম বিদ্যুৎ চমকে, বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় যেন এদেশের মানুষের মস্তিষ্কে নতুন চেতনার কুঁড়ি ফোটে।
সমস্ত কুসংস্কার তুমি ধোয়ে মুছে পরিষ্কার করে দাও।
বিজ্ঞান মনষ্ক হয়ে উঠুক তোমার শীতল হাওয়ার দোলায়।
ক্ষতি করো না তুমি কৃষকের ফসলের মাঠ, 
কেড়ে নিও না স্বজন, 
ভেঙ্গে দিও না গরীব, মেহনতি, বস্তিবাসীদের সুখের গৃহখানি ।
অক্ষত রেখো আমার দেশের সকল মানুষের সুন্দর হৃদয়খানি।

আমি একটি মেয়ে


🖋রাজেশ ঘোষ

আমি জননী, আমি ভগিনী 
আমি একটি মেয়ে 
তোমার সৃষ্টি আমার থেকে 
দেখো পিছন ফিরে চেয়ে, 

আমি নই কোনো ভোগ্য বস্তু 
আমি একটি সজীব প্রাণ
আমারও আছে অনুভূতি
আছে মান-সম্মান 

তোমার সঞ্জীবনী হয়েছে পূরণ 
স্তন্য পান করে
পথচলা শিখেছো তুমি 
নারীর হাত ধরে

আমি কখনো দূর্গা, কখনো চন্ডি 
সংসার-কর্তব্য-সন্তান, 
এই তিন নিয়ে পার হয়
জীবনের গন্ডি

কখনো কি জানতে চেয়েছো ?
আমার মনের কথা 
কখনো কি লেখা হয়েছে ?
আমার জীবন-গাঁথা 
কত কথা রয়ে যায় অব্যক্ত
আসলে আমি চিরকালই ব্রাত্য

ভ্রম

🖋 টিটু বনিক

কি সুখ পেলে জীবনে ভালোবেসে,
পেরেছো সব বিষাদ থেকে মুক্ত হতে,
সন্ন‍্যাশির সদৃশ‍্য সবকিছু ত‍্যাগ করতে পারলে,
গোলাপের মত ফুটতে পেরেছো,
সূর্যের মত আঁধার কাটিয়ে দিতে পারো,
নিশিতে চাঁদের মত জ‍্যোৎস্না হয়ে উদয় হতে পারো,
পাখিদের সদৃশ‍্য উড়েছ কোনোদিন,
শিশুসুলভ আবার হতে পারলে, 
তুমি পারোনি।
তুমি শুধু পেরেছো প্রাচীরে দাগ কাটতে,
আর খরা হয়ে সবুজকে ছিনিয়ে নিতে।

কল্পনায় খোঁজে ছিলাম তোমায়

🖋মিঠু মল্লিক বৈদ‍‍্য

সেদিন প্রথম 
দেখেছিলাম তোমার 
মায়া ভরা হাসির ঝলক।
স্নেহার্দ্র চোখে অসীম অনুভূতি
ক্ষণিকেই  হারিয়ে ছিলাম
ভালোবাসার সিন্ধু মাঝে।

তুমি আমার কল্পনার সেই দীক্ষক
যাঁর মিষ্টি হাসি,তৃপ্ত চাহনী,
সুললিত বলনে অমোঘ নেশা।
শান্ত কথামালায় তেজোদীপ্ত বিশ্লেষন
প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরেছিলাম তোমার,
এই প্রেম গুরু আর অধ‍্যেতার।

ইচ্ছে ছিল জড়িয়ে ধরি,
তোমার সুবিশাল আঁচলা তলে
আঁকড়ে রাখি নিজেরে।
পৃথিবীর যত নৈরাশ‍্যতা 
ভুলে যাই  মায়াবী ছায়াতলে।

চরণতলে ঠেকাই মাথা
তোমার উজারিত ভালোবাসায়
নিখাদ আশীর্বাদে সুগম করি পথচলা।
যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তোমায়
সেদিন থেকেই প্রেমে পরেছিলাম তোমার।

নিষাদ রাত্রি কথা

🖋অপাংশু দেবনাথ

প্রতিটা দিন এক একটা উড়ান হয়ে আসে মানুষের কাছে
প্রতিটা উড়ানেই হারিয়ে যেতে থাকে এক একটা স্বরলিপি
মানুষ তো হারাবার কোন বস্তু নয়, এই যে উড়ানের কথা বললাম,
একদিন সকলকেই এভাবে একেকটা উড়ান শেষে,শেষ উড়ানের দিকে যেতে হয়
স্মৃতি আলমারি জুড়ে জমে থাকে কিছু পুরনো জামা,বই,
শীত বিকেলের নীল সোয়েটার।
অসমাপ্ত ডায়েরি, যাতে লিখে ফেলবার কথা ছিল মহাকাব্য,
উড়ান পাখির পালকেরা লিখে দিয়ে যায় হাজারও উপন্যাস ।
তোমাকে বলার ছিল এত দুঃখ নিয়েও মানুষ প্রতিদিন উড়ান ভরে
মনোডানায় তুলে রাখে অন্তিম উড়ানের নিষাদরাত্রিকথা।

আমার সৌভাগ্য

🖋 ঈশানী ভট্টাচার্য

ভাগ্যিস "ব্যথা" বলে একটি শব্দ,
সৃষ্টি হয়েছিল!
তাই তো আমার জীবনটা
এতো মধুর হয়ে উঠেছে,
শুধু "ব্যথার"স্পর্শে।
সে "ব্যথা" কখনো মনের,
কখনো শরীরের,
কখনো হৃদয়ের অন্তরালের
কোন এক গোপন জায়গায়।
ব্যথার স্পর্শে জীবন আমার ধন্য।
সে আমাকে জীবনের 
কঠিনতম বাস্তব জ্ঞান দিয়েছে।
আপনজনের কাছ থেকে যে
সবচেয়ে বেশি "ব্যথা" ডাক আশে,
সেটাই আশ্চর্য,অথচ সেটাই সত্য।
বলছি শোন তুমিই আমার 
জীবনের প্রেম,প্রিয়তম,ও
কাছের কেউ হয়ে থেকো।
তুমি আছো বলেই না
আমার চোখের জলগুলোও
মরে গিয়েও বেঁচে আছে!

আমি খাঁচার পাখি

🖋অঙ্কিতা বর্ধন

স্বপ্নেরা আমার ডানা মেলে.. মেঘের দেশে উড়ে যাবে। পুরো আকাশকে নিজের দেশ বানাবে.. সারাটা দিন জুড়ে গান গেয়ে বেড়াবে... এদেশ থেকে পাড়ি দিবে ওদেশে.. আমি উড়ে যাবো অসীম আকাশে.. আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াবো আমি... তখনি আমি ডানা ভেঙ্গে পড়ে যায়..হে আমি খাঁচায় বন্দী পাখি।
আমার যে কোনো স্বাধীনতা নেই,নেই পাখা মেলে আকাশে উড়ার কোনো অধিকার। আমার যে অনেক কষ্ট হয় বুক ফেটে কান্না আসে, একটু যদি উড়তে পারতাম।
আমি দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকি - দুচোখ দিয়ে আকাশপানে চেয়ে থাকি আর ভাবি আমিও ছুবো তোমায় একদিন।
আমি সারাদিন চেঁচামেচি করি- আমাকে ছেড়ে দাও আমাকে ছেড়ে দাও।
আমার বুবা কান্না কেউ শোনে না ,কেউ বুঝে না।
আমি বড়োলোকের বাসায় লোহার খাঁচায়  থাকি।ওরা আমায় নিয়ে হাসিঠাট্টায় মজে থাকে, আমার সঙ্গে কথা বলে।আর আমি .. আমি ওদের হাজার বার বলে যায় ... আমাকে ছেড়ে দাও... খোলা আকাশে উরতে দাও। আমি যে পারছি না আর এই লোহার খাঁচায়... আমার ডানা গুলো আর পারছে না... ওরা শুধু একটু উরতে চাইছে কিন্তু তারা তো আমার কথা বুঝে না... আমি ব্যর্থ হয়ে পরে থাকি লোহার খাঁচায়।
আমার আয়ু শেষ হয়ে যায় তবুও আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না, আমার স্বপ্নেরা হার মানে না।
হে , আমি খাঁচায় বন্দী পাখি।
আমি আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখি দিবারাত্রি।

অমানুষ

🖋 বিজয়া শর্মা

দেখতে মানুষ হলেও, 
ভেতরটা পশুর থেকেও জঘন্য।
সমাজের সঙ্গে চললেও,
মনটা সম্পূর্ণই অরন্য।
লোকের ভালো শুনতে পারে না,
পরনিন্দা না করে চলতে পারে না।
দেখতে মানুষ হলেও আসলে সে অমানুষ,
চরিত্রের কারনে হতে পারেনি ভালো মানুষ।
আজ এ  ভালো তো কাল ও ভালো,
সবকিছুতেই কেবল খোঁজে নিজের ভালো।
আজও শিক্ষিত সমাজে রয়েছে বহু অশিক্ষিত,
এদের ফাঁদে পড়ে শিক্ষিতরাও হচ্ছে অশিক্ষিত।
সকলেই নিজের ভালো বুঝে,
অমানুষরাই কেবল অন্যের দোষ খুঁজে।

বেকারদের প্রেম করা অপরাধ !

🖋শ্রী রঞ্জিৎ বিশ্বাস

সেদিন বন্ধু বললো, 'কিরে সারা জীবন কি সিঙ্গেলই থেকে যাবি নাকি? এভাবে তো ওভার এইজ হয়ে যাবি।' কথাগুলো শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ঠিক বলেছিস আমি সারা জীবন সিঙ্গেলই থেকে যাবো আর এভাবেই ধীরে ধীরে ওভার এইজ হয়ে একটা জীবন্ত লাশ মতো ঘরের এক কোণে বসে থাকবো! কারণ কেন জানিস? কারণ, আমি বেকার। শিক্ষিত বেকার। আমার মত যারা বেকার আছে তাদের সিঙ্গেল থাকা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই যে! কেননা যার প্রায় অন্ধ হয়ে যাওয়া জন্মদাত্রী মায়ের চোখের অপারেশন করার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই, ষাটোর্ধ্ব দিনমজুর বাবার রক্ত ঝড়া পায়ের চিকিৎসা করাতে পারে না, বোনের পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই অর্থাৎ মা-বাবা-বোনের এই ছোট পরিবারটাকেই সাধারণ ভাবে বাঁচিয়ে রাখার মতো আর্থিক ক্ষমতা যার নেই সেই বেকার মানুষটিকে সিঙ্গেল থাকাটাই যে সবার সুখের একটা অজুহাত । এমন বেকার মানুষদের মনে কাউকে মনের মানুষ বা জীবনসঙ্গী করার বাসনা থাকতে নেই! কেননা যাকে সে হৃদয় থেকে অকৃত্রিম ভাবে ভালোবাসবে তাকে জীবনসঙ্গী করে ঘরে এনে আর্থিক ভাবে কখনোই কষ্ট দিতে পারবে না। যে হৃদয়ের মানুষটির হাতের আঙ্গুল লাল নেইল পলিশে, যার পায়ের রূপার নূপুরে,যার কপালের একটা রঙিন টিপ ও একটা রঙিন শাড়ীতে একখানা মাটির চাঁদের মতো দেখায় তাকে জীবনসঙ্গী করে ঘরে এনে এসব নূন্যতম চাহিদা থেকে বঞ্চিত হওয়াটা মেনে নিতে পারবে না। যে হৃদয়ের মানুষটি নিজের বাবা মায়ের কাছে একটা রাজকন্যার মতো যত্নে থাকে সেই রাজকন্যাকে আর্থিক অনটনে কষ্ট দিতে পারবে না । সেই গানটা মনে আছে ? "প্রেমে পড়া বারণ কারণে অকারণ..." আসলে অকারণে নয় কারণেই বেকারদের প্রেমে পড়া বারণ । কারণটা হলো-- বেকারত্ব । মনে রাখিস, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে বেকারত্ব! এই বেকারত্ব বহু বেকারদের পবিত্র প্রেম-ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা বা আগুন লাগিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে তিলে তিলে। এত চাপা যন্ত্রণার পরেও বেকাররা সবার সামনে কাঁদে না কেন জানিস? কারণ, বেকাররা কাঁদলে চোখ দিয়ে জল নয় রক্ত বের হবে! যদি শোনার মতো ধৈর্য্য শক্তি থাকে তাহলে বেকারদের বুকে কান পাতলেই শোনা যাবে আকাশ ভাঙ্গা ভয়াবহ চিৎকার। আসলে ক্ষুধা জিনিসটা যে কেমন তা একমাত্র একটা ক্ষুধার্ত মানুষই বুঝতে পারে ঠিক তেমনি বেকারত্বের জ্বালা যে কি অসহনীয় তা একমাত্র একটা সত্যিকারের বেকারই বুঝে। পাশাপাশি একটা কথা না বললে অবিচার করা হবে; সেটা হল বেকারের নির্দিষ্ট কোন লিঙ্গ হয় না। বেকারত্বের জ্বালা ছেলে-মেয়ে উভয়কেই ভোগ করতে হচ্ছে। আর এই জ্বালাই বেকারদের মনে এই প্রবণতা জাগিয়েছে যে-- বেকারদের প্রেম করা অপরাধ ! কিন্তু এই অপরাধ প্রবণতা থেকে কি বেকারদের কেউ মুক্তি দিতে পারে না? অবশ্যই পারে । আর যারা পারে তারা হলো একটা রাজ্যের ও দেশের নির্বাচিত সরকার। এর জন্য শুধু চাই সরকারের সৎ স্বচ্ছ পদক্ষেপ। বেকাররা যেদিন একটা যোগ্য স্থায়ী কর্মসংস্থান হাতে পাবে সেদিনই হয়তো বেকাররা তাদের হৃদয়ে চাপা প্রেম-ভালোবাসাকে বুকে জড়িয়ে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে তার মনের মানুষটিকে বলতে পারবে-- হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভালোবাসি । আমি আমার পরিবারকে, তোমাকে ও সমাজটাকে ভালোবেসেই ভালো তথা সুস্থ রাখতে চাই। বেকাররা এভাবে ভালোবাসার সাহস পাবে তো? সেই আশায় ভরসায় বুক বেঁধে শত শত বেকার প্রেমিক-প্রেমিকা...

পাষাণ

🖋কৃষ্ণ ধন শীল 

পাষাণ,নামেই সে পাষাণ-
যার লোনাশ্রু ঝরে ঝর্ণা হাসে, 
ঝলমলে উপল দল ভাসে, 
ধ্বনিতে শকুন্ত দল গায় গান।

হ্যাঁ, সে তো সত্যিই পাষাণ-
ধরনী যার শোভে কাঁধে,
বারি ধারা যে পলকে বাঁধে,
শাখিতে পতত্রী দল ধরে তান। 

ভাগ্য দোষে চূর্ণ-বিচূর্ণ সে,
তবু গড়ে তুলে বালি-মাটি,
ফাঁপা নয় যেন সোনা খাঁটি,
নিষ্প্রাণ উদাহরণ হয় নিমেষে। 

মূর্তি গড়ে তুলে কষ্টি পাথরে,
দেব-দেবী কিংবা স্মৃতির,
ঘর-বাড়ি অট্টালিকা সমৃদ্ধির,
বিলিয়ে নিজেকে অকাতরে।

পরিবর্তিত হয়ে আবহবিকারে, 
করে সর্ব কল্যাণ, 
যদিও নিথর নিষ্প্রাণ, 
অবনীর তিন তল গড়ে। 

তাই তো সে পাষাণ, 
তাকে আঘাত করে মুনাফা লুটে, 
সর্ব শ্রমিক-মালিক জুটে, 
অসহ্য যে তার বড়ো বেমানান। 

যখন হবে শেষ

 🖋সীমা দাস

আজও সে উপরে পৌঁছানোর, 
সেই সিঁড়িটিতে দাঁড়িয়ে।
প্রচণ্ড ভিড়ের উঠানামা ,
কিন্তু সে সটান দাঁড়িয়ে। 
একটুখানি হালকা বাতাস, 
তাকে প্রতিবার ধাক্কা দিয়ে যায়।
আজও সে ,
সটান দাঁড়িয়ে।
আবার একটু একটু করে,
সে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়।
হঠাৎ করে তার পায়ের পাতায়,
একটা সূক্ষ্ম কাঁটা ফোঁটে।
ওইটুকু সময়ের অনুভূতিতে, 
সে তখন থরথর করে কাঁপে।
সিঁড়টিও ধর ধর করে নড়ে ওঠে,
ছিটকানো রক্তে গা ভাসায়।
মুহূর্ত কয়েক পরেই তার মনে হলো,
সর্বশেষ সিঁড়িটি শুধুমাত্র তার অপেক্ষায়।
সেই ভাবনায় স্থির হয়ে,
তার আবার উপরে উঠতে থাকা।

স্বার্থের লড়াই

 🖋জগন্নাথ বনিক 

কঠিন সময়ের মুখোমুখি আজও,
বসে ভাবছি মনে মনে।
আপন কাউকেই খুঁজে পেলাম না,
এই সমাজের মোদের বিপদের দিনে।।

সু-সময়ে সবাই আপন,
সবাই থাকে পাশে পাশে।
দুঃসময়ে আপন গুলো,
পর হয় সবার আগে।

ভাবতে বড়ই অবাক লাগে,
মোদের সমাজটাকে দেখে।
স্বার্থ নিয়ে বাড়াবাড়ি,
মানুষে মানুষে বিবাদ করে।।

সমাজ বলো আর পরিবার বলো,
সবার লড়াই স্বার্থের জন্য।
স্বার্থ নিয়েই আবার সমালোচনা,
বিশেষ কারোর জন্য।।

জ্বালা

🖋 চন্দ্রিমা বণিক 

এইতো সেদিন, কর্তা আমার আনল শিঙি জ্যান্ত,
ঘরে এসেই হাঁকাহাঁকি খুশির যে নেই অন্ত! 
"গিন্নি দেখো তাজা শিঙি নাচছিল গামলাতে, 
দেখে গিন্নি লোভ যে আমার পারিনা সামলাতে!
কষ্ট হলেও প্রিয় আমার রেঁধোগো রাগটি ভুলে, 
হারানো স্বাদ ফিরে পাবো যদি খাই ঝালে ঝোলে।"
ছেড়েদে মা কেঁদে বাঁচি... পুরোনো সেই  আপদে, 
উড়ে এসে বসল জুড়ে সারাদিনটাই আদতে!
মনে পড়ল গত বছর ঠিক এমনি দিনে,
কর্তা আমার এনেছিল একই জিনিস চিনে,
দেখে আমার মাথাটা কেমন গোল গোল ঘুরছিল, 
পরে জানলাম রক্তের চাপটা হঠাৎই বেড়েছিল। 
শিঙি লাফাতে পালাই আমি সকাল গড়িয়ে দুপুর, 
শেষ অবধি শেফালীর মা কষ্টটা করল দূর। 
ভদ্রতার খাতিরে অর্ধেক  মাছ দিলাম শেফালীর মাকে,
আজ আর তাই ডাকছিনা বাপু যতনা পড়ি বিপাকে। 
লাঠি বটি নুনের বাটি সব নিয়ে তাই বসেছি, 
যেভাবেই হোক এই জ্বালা আজ আমিই  শেষ করছি।

ভয়ার্ত জীবন

🖋মৌসুমী গোয়ালা

জীবনের স্রোত বয়ে চলে নগর সভ্যতায়,
অন্ধকার করে তোলে ভয়ার্ত,
হায়নার মত হেঁটে আসে মৃত্যু,
নাগরিক, রাত্রির বুকে দাঁড়িয়ে।

প্রতিদিনের নিয়ন বাতি জ্বলে ওঠে,
গোধূলি হারিয়ে যায় তমসায়,
অলি-গলি সড়ক বিবর্ণ নিশ্চুপ,
বোবা যন্ত্রনায় গুমরায় তারারা।

জীবিকার দুঃসহ পৌনঃপুনিকতায় ঘেরা প্রান,
এক প্রহেলিকাময় ধাঁধার মত,
দূরারোগ্য ব্যাধির চলমান মৃত্যুর স্রোতে,
অনুষঙ্গী হয়ে বাঁচে জীবন ৷

ছায়া

🖋মিঠুন দেবনাথ


পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছায়া হল মায়ের কোল।
যেটা সূর্যের কঠিন তাপ থেকে রক্ষা করে,
সমাজে নানা বিপদে রক্ষা করে।
যে ছায়াতে গেলে মনের শান্তি বাড়ে,
অতৃপ্ত মনের তৃপ্তি হয়,
অশান্ত মন শান্ত হয়,মাতৃ ছায়ায় এলে।

হস্তান্তর

 🖋 নিধির রায়

ধূসর মাটির কাছে যে শপথ রেখেছো তুমি

ধান ফলানোর কথা,বীজধানের কথা

পাকা গোধূম ফলানোর শপথ,

সেসব কথা ভুলে গেলে তুমিও

একদিন ভেসে যাবে বেনোজলে।

পাখিদের রংঙিন পাখার স্বপ্ন তুমি

কচি শাবকের চোখে দিয়ে যাবে বলে

শপথ করেছিলে,

এতোদিন তুলেছো ফুল,কুরিয়েছো খড়কুটো কত!

বাসা বানিয়েছো  নদীর ধারে

ভাঙা পাড়ে ভাঙন,

তবুও

দখিনা বাতাসে উড়িয়েছো পাল

বেয়ে যাবে উত্তাল নদী,

তোমার স্বপ্নীল চোখ

ধ্রুব তারার দিকে হেঁটে যায়

শপথের  কথা ভুলিও না তুমি,

ভুলিলেও সন্তানের কানে কানে বলে যেও

তোমার মন্ত্রগুপ্তি

বৈঠাটা দিয়ে যেয়ো তার হাতে।

বিশ্ব প্রবীণ-দিবস


🖋মাথুর দাস


বিশ্ব দিবসে নিঃস্ব প্রবীণ

ও বীণ বাজে সুরে করুণ,

সুদ কমে আর ওষুধ বাড়ে

স্তিমিত-প্রায় দূরে অরুণ ।



ডালপালাগুলি দূরে দূরে

আর ঝালপালা হয় কান,

দৃষ্টি শ্রবণ বিকল-প্রবণ

হয় শ্বাসবায়ু আনচান ।



দিনগুলি যায় কালক্ষেপে

মেপে মেপে তার ক্ষীণ পায়,

ইতি হয়ে সব স্মৃতিগুলিও

বিশ্ব দিবসে নিঃস্ব যে হায় !



নিঃস্ব কি সে সর্ব দিকে,

খর্ব কি হয় সব স্মৃতি ?

খানিকটুকু হলেও ফিকে

মনের মধ্যে জেগে প্রীতি ।

কিছু প্রশ্ন

🖋 সুশীল দাস

মাঝে মাঝেই রাতদুপুরে
ঘড়িতে যখন বারোটা
কারণে অকারণেই 
ঘুমের সেইদিন বারোটা।
প্রকৃতি জাত শুক্রাণু-ডিম্বানুর
ভিড়াভিড়িতে যখন শরীরে
উন্মাদনার সৃষ্টি হয়
তখন তুমি কি করো?
চোখ বুঝলেই ঘুম নয়
স্বপ্ন যখন তারা করে তখন...
প্রিয় জনের স্মৃতি তরঙ্গ
মনের সৈকতে যখন
জোয়ার ভাটা সঞ্চার করে
তখন কি করো তুমি?
অসুস্থতায় কিংবা দুঃশ্চিন্তায়
যখন রাত কাটে না
তখন তুমি কি করো?
শারীরিক পরিবর্তন-এ
কাউকে কিছু কি বলো লাজে?
মনে যখন আগুন লাগে
জল কি লাগে তব কাজে?

ফুল বাগিচা

🖋অন্তরা ভট্ট

তুমি সেই দূরন্ত কাল বৈশাখী ঝড়ের পাতা
গতি হীন দিক বেদিক বেড়াও উড়িয়া।
চাই যে আমার ঝুল বারান্দায় ঝোলানো সেই লতা
পরবে আমার মুখের পরে আলতো ছোঁবে তথা।
ঝুলবে যখন হালকা হাওয়ায়,দেখবে তবে চেয়ে।
মৃদু হাসি দিচ্ছে যেন শিশু ভালোবেসে।
আহ্লাদী মনে যে আমার করছে উচাটন
কেমন করে রাখবো ধরে কাছে সারাক্ষণ।

নির্যাতিতা

🖋মিতা বন্দোপাধ্যায়

সস্তার প্রেম বুকে,নির্বাক হাঁ করা চোখ ,
চোরা স্রোতে ঘুটঘুটে অন্ধকার ।
অন্তিম প্রশ্রয়ে ভূবন, সময়ের স্বরলিপি ;
বারাঙ্গনা ,মজারুল অহল্যার মুক্তি।।
সেজন্য দিয়ে সাজাতে ব্যস্ত  অবয়ব,
ডাষ্টবিনের পাশে নেশারু ফাঁদ ।
বর্ষার মেঘ আঁধার কিনে নেয়;
কষ্টগুলো মনের কোনটাই চাপা থাকে।।
দোষারোপে অভাবে স্বভাবে চুমুক দিয়ে থাকি ,
ছারখার হয়ে যায় কান্নায় গভীর রাতে ।
কালো আবরণে ঢাকা দেয় সান্তনা;
তৃষ্ণায় অমানিশা হয়ে থাকে পরম্পরা ।।
বকুল সজ্জিত মালায় সুন্দর সাজ দিলে,
দৃপ্ত যুদ্ধের বিলাল রাঙা অভিশাপ ।
নিদ্রাহীন কায়া এক জীবনে নয় শেষ ;
গোপনে সাজিয়ে রাখা লুকানো ধোঁয়াশা ।।

আলো নাকি আলেয়া

🖋গোপাল দে

সুদীর্ঘ বৎসর যাবৎ হেঁটে চলেছি 
মায়াবী এক আলোর পেছনে,
আকৃষ্ট করে তুলেছিল আমায়
কোনো এক কুহকীনি যাদুতে।
ছুটতে ছুটতে হঠাৎ দেখি
এ আলো নয়,আলেয়া মাত্র।
জীবন সায়াহ্নে এসে আজ বোধোদয় হল,
বুঝলাম মিথ‍্যে ছিল সাজানো যত প্রতিশ্রুতি।

এ এক মস্ত বড় ভ্রম!
মিছে মায়ার পেছনে ঘুরে ঘুরে
পা দুটো আজ অবসন্ন,ক্লান্ত।
তৃপ্তির নিঃশ্বাস  হারিয়ে গেছে অনেক আগে।
বাঁচার জন‍্য হয়তো বাঁচতে হবে
নয়তো কবেই.....

শেষ চিঠি

🖋 সুজাতা পাল

তোমায় বিশ্বাস করে
ওদের ভুল প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলাম,
 যে তুমি আমায় তোমার জগতে টেনেছিলে
আমার সাদামাটা জীবন শৈলী, জাগতিক লিপ্সায় অনীহা
এইসবের ভিত্তিতে, আর আমি ও আমার সবটা
সত্তা দিয়ে তোমাতে সমর্পণ করেছিলাম নিজেকে। 
কিন্তু তুমি তো আর দেবতা নও
তুমি যে রক্ত মাংসের গড়া একজন মানুষ
যে যে কোন মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে
তা ছিল আমার ধারণাতীত।
তবে এই শেষ চিঠিতে জানিয়ে রাখি তোমায়
পূর্ণিমার চাঁদ, দখিনা বাতাস আর ভ্রমরের গুঞ্জনকে সাক্ষী রেখে
যে একদিন তুমি আমার কাছেই আসবে ফিরে
হয়তো চলে যাবো আমি অনেকটা দূরে।
তবু তুমি থেকো ভালো
বেলা শেষে যদি আসো
শূন্য হাতে ফিরতে পারো
কিন্তু অনুতাপের দহনে দগ্ধ হবে হৃদয় যে একটি বার হলেও।