✍️সুপর্ণা মজুমদার রায়
স্বাধীনতা!! কথাটি শুনে হয়তো খাঁচার পাখিটি হাসে সেই চেনা বিদ্রূপের হাসি ।
হয়তো তার ছোট্ট মনের মাঝেও জ্বলে উঠে বিদ্রোহের আগুন!!
হয়তো সে নিজের মনেই ব্যাকুল হয়ে বলে উঠে, "আমিও তো চেয়েছিলাম মুক্তির স্বাদ,
মুক্ত আকাশ, মুক্ত বাতাস, চেয়েছিলাম বন্ধনহীন মুক্ত জীবন!!
আমিও চেয়েছিলাম, মেঘ যেমনি করে আকাশের বুকে ভেসে বেড়ায়, ঠিক তেমনি করে ভেসে বেড়াতে !!
চেয়েছিলাম তো!! হ্যাঁ, চেয়েছিলাম।
তবে কেন আমার পায়ে পরালে পরাধীনতার শৃঙ্খলের বেড়ী ? বলো-- বলো-- কেন?
সভ্য সমাজের স্বাধীন মানুষ, জবাব দাও ---,
জানি, তোমার কাছে কোন জবাব নেই ।
জান,তোমরা যখন স্বাধীন দেশের ধ্বজা উড়িয়ে স্বাধীনতার উল্লাসে মাতোয়ারা হও, আনন্দের বন্যা বইয়ে দাও চারিদিকে ----,
আমারও খুব ইচ্ছে করে খাঁচা ভেঙ্গে উড়ে গিয়ে বসি ঐ ত্রিবর্ণ পতাকার উপর, স্বাধীনতার স্বাদ খোঁজে পেতে ।
কিন্তু ---,কিন্তু পারি কই? শুধুমাত্র আমার অক্ষমতার কারণে, বন্দীজীবনে নীরব কান্না কেঁদে যাই নিরন্তর ।
সেই শব্দহীন কান্না তোমাদের কানে গিয়ে পৌঁছায় না ।
হয়তো পৌঁছালেও তোমরা এতটাই বিবেকশূন্য, সেই কান্নার শব্দ অনুভব করতে পার না ।
আমি যখন খাঁচাবন্দি হয়ে ছট্ফট্ করি,
আমার নিদারুণ যন্ত্রণাকে তোমরা তেড়ে তেড়ে উপভোগ করো, এতটাই নিষ্ঠুরতম তোমাদের হৃদয়, মানবজাতি ! অবাক হই ।
তোমরা ভুলে গেছো অতীতের ইতিহাস,
ভুলে গেছো তোমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলবদ্ধ দুর্বিষহ জীবনের কথা !!
জীবনের প্রতিটি ক্ষণে পরাধীনতার কাতর যন্ত্রণায় ডুকরে কেঁদেছ,
কখনোবা দিয়েছো শানিত হুঙ্কার ।
ভুলে গেছো সেই রক্তঝরা স্বাধীনতার রাত !!
হতে পারে ভুলে যাওনি ।
তবে কেন আমার খাঁচাবন্দি জীবনকে তোমাদের আনন্দের অংশীদার করে নাও ?
কেন তোমাদের উপভোগের বিষয় করে নাও আমার নিদারুণ কষ্টের জীবনটাকে ?
আমার মাঝে রক্ত ঝরানোর শক্তি যে নেই মানুষ ,
তাই তো আমি অবলা ।
তবুও মানবজাতি, ওহে স্বাধীন দেশের সভ্য মানুষ ----,
আমার যে বড়ো স্বাধীন হবার স্বাধ জাগে !!
খাঁচাবন্দি জীবন হতে আমায় মুক্তি দাও ।
আমি আরও তোমাদের শিখানো বুলি বলতে চাই না ।
বনের স্বাধীন পাখিদের সাথে গলা মেলাতে চাই ।
আমিও তোমাদের মতো মুক্ত কন্ঠে গাইতে চাই, "আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আকাশে । "
ফিরিয়ে দাও আমার স্বাধীনতা শৃঙ্খলবদ্ধ পরাধীন জীবনের পরিবর্তে ফিরিয়ে দাও আমার স্বাধীনতা ।
আমি স্বাধীন হতে চাই ------,
আমি মুক্তি পেতে চাই -------,
আমি স্বাধীন হতে চাই ------।।