অনুভবের বেদনা

✒️জয়ন্তী কর্মকার

দু সংখ্যার বয়সটা বেড়ে চলেছে মনের অজান্তেই।
ফেলে আসা অপূর্ণ মুহূর্ত গুলো মনে করিয়ে দেয় অনুভবের বেদনা।

মোহভঙ্গ হৃদয়ে 
সময়ের কাল যাপনে
সত্যি মিথ্যে আশা ভরসার মাপকাঠিতে সমাজের চালচিত্রে সময় যাপন।

আলোচনা - হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সমালোচনায়-- এগিয়ে যাওয়া পথে মুখগুলো ভেসে ওঠে।

ইচ্ছে শক্তির প্রেরণায় মনের বয়সটাকে সতেজ করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

দু সংখ্যার বয়সটা আভা ছড়িয়ে
পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্তের মত ঢলে পড়তে দাও--
মনের বয়সটা যেন নতুন সূর্যের আলোক বিকিরণে ছড়িয়ে পড়ে।

সম্পদ

 ✒️ভবানী বিশ্বাস 

আগুন জ্বলছে, 
ছাই আছে শুধু। 
বুকজুরে কান্না 
পাথরচাপা– 

সূর্যের আলোয় 
ছেয়ে গেছে সব
অন্ধকার নেই
যেখানে লুকাব ! 

আমি আছি, থাকব
থেকে যাবে স্মৃতি– 
সম্পদ থাকবে
শুধু এ বিরহ…

প্রভাত ফেরী

✒️ড. অপর্ণা গাঙ্গুলী

ভোরের আলো উঠবে
গেয়ে কবিগুরুর সুরে
নৃত্যের তালে তালে
 আকাশ যাবে ভরে।। 
আবৃত্তির ছন্দে ছন্দে 
দুলে উঠবে চারিধার
নানা সাজে এগিয়ে যাবে
প্রভাত ফেরীর বাহার।। 
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত
 হবে রবিঠাকুরের নাম
তোমার জন্ম দিনে জানাই
তোমায় শতকোটি প্রণাম।।

বেচু

✒️অনুরাগ ভৌমিক 

অন্যান্য শুক্রবারের মতো আজও বেচু বেরিয়ে পড়লো বোতল কুড়াতে। সঙ্গে তার মা। "আজ কই যাইবা মা?"
"চল ঐ ব্রীজটার কাছে। ঐখানে অনেক দিন হইলো যাইনা।নে এই বস্তাটা ল।"

শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ।বাকি ছয় দিন ফুটপাতে,দোকানে দোকানে এটা সেটা কাজ করে, মাঝে মধ্যে চেয়ে টেয়ে কিছু পায়।যা পায় তাই নিয়ে সন্ধ্যার পর চলে আসে শিশুপার্কের উল্টোদিকে যে শপিং মল তার খোলা করিডোরে। অনেক রোদ বৃষ্টি কষ্ট সয়ে শেষ পর্যন্ত এখানে এসে ওরা থাকছে। মোটামুটি স্থায়ী ঠিকানা।

চাইলেও সবাই দিতে চায়না।শহরের দোকানদার এই যে দুই এক টাকা দেয় তা এবেলা না হলেও ওবেলা কাজ করিয়ে পুষিয়ে নেয়।তবে বিকেলের দিকে গ্রাম থেকে যারা শহরে আসে ওরা ফিরে যেতে কিছু দেয় বিশেষ করে মহিলারা।ওরা ভালো মানুষ। ওদের অনেক কে দেখে দেখে মুখগুলো চেনা হয়ে গেছে বেচুর।

দুপুর বেলা অনেকদিন মহাদেববাড়ি বা আরও দু তিনটা আশ্রম, মন্দির অথবা জগন্নাথ বাড়িতে প্রসাদ পেয়ে যায়। মাঝে মাঝে সুপার মার্কেটের পেছনে যে সস্তা হোটেল আছে সেখানে খেয়ে নেয়।মালিক ভালো অনেক সময় টাকা রাখেন অনেক সময় রাখেন না। সন্ধ্যার দিকে পথের ধারে যে ফাস্টফুডের দোকান বসে সেখান থেকে চেয়ে রুটি সবজি খায়, সঙ্গে বেশি খায় বাপান্ত গালি। ওদের জল এনে দেয়।জায়গাটা পরিষ্কার করে দেয়।আবার কখনো কখনো টাকা বেশি উপার্জন হলে কিনে খায়।

ফুটপাতে বসে একটা কোণায় ছোট্ট একটা ছেলে বাদাম বিক্রি করে। মাঝে মাঝে ওর বড় ভাই এসে কিছুক্ষণ থাকে । আবার শহরের অন্য কোথাও এমন বাদাম দোকানে চলে যায়।এই ছোট্ট ছেলেটির নাম বিশু।বিশুর সাথে বেচুর খুব ভাব। মাঝে মাঝে এখানে এসে বসে থাকে সে।দুজনে অনেক কথা বলে।বিশুকে অনেক কাজে সাহায্য করে।বিশু ও বেচু কে বাদাম খেতে দেয়।অনেক সময় বেচু খায় না, মায়ের জন্য নিয়ে যায়।বিশুই বেচুকে খবর দেয় রাতে কার বাড়িতে ঠাকুরের অনুষ্ঠান আছে, খিচুড়ি প্রসাদ আছে।বেচু যায় অনেক অবহেলা পেয়েও প্রসাদ খায়।


ফুটপাতে দোকান সঞ্জুর।কালো ছিপছিপে সবসময় হাসিখুশি চেহারা।একটা ঠেলায় পুরো দোকান।চপ ডালের বড়া,চানা পাপড়,রুটি ঘুগনি, মাংস বিড়িয়ানি ইত্যাদি বিক্রি করে । তার হিসেবে ভালো বিক্রি এবং উপার্জন।এই সঞ্জু ও একসময় ভিক্ষা করতো ,চেয়ে চিন্তে খেতে পেতো।এই শহর সম্পর্কে সে জানে। তখন বেচুর মতো বয়স। বাংলাদেশ থেকে সোজা ত্রিপুরার এই শহরে এসেছে।সে দেশে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এই সঞ্জুদের মতো অসহায় অনেক লোক এসেছে এবং এখনো আসছে।এইসব ঘটনা খুব করুণ।ভাবলে সঞ্জুর এখন ও কান্না পায়।সঞ্জুর সাথে বেচুদের চেনা জানা।বেচু মঞ্জুকে সঞ্জু মামা বলে ডাকে।সঞ্জু ও আপন মামার মতো খবর নেয় তাদের। মাঝে মাঝে কিছু সাহায্য ও করে।জগতে বেচুর মা ছাড়া আপন এই সঞ্জু মামাই আছে। সঞ্জুর আপন বলতে বৌ আছে, আর একটা মেয়ে, ক্লাস সিক্সে পড়ে।

সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। বিশেষ করে প্রচন্ড বৃষ্টির দিনে ভিক্ষা পায় না,পেলেও নেহাত অল্প। ফুটপাতের দোকানেও বিক্রি কম হয়।তাই ওরাও টিফিন দিতে চায় না। ঐ দিনগুলোতে বাঁচতেই কষ্ট হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে একবেলা খেয়ে একবেলা না খেয়ে চলে যায় কোনো প্রকারে। তবু এমন কোনো হাহুতাশ নেই বেচুর। সঞ্জু মামা তাকে মাঝে মাঝে ভরসা দিয়ে বলে,"মামা আর একটু বড় হইয়া যা, তইলে  তোরে ঐ বড় মিষ্টির দোকানটাতে একটা কাজ পাওয়াইয়া দেমু।" বেচু খুশি হয়। কিন্তু বড় কীভাবে হয়ে যাবে তাই বুঝতে পারেনা।কখনো একা থাকলে বেচু স্বপ্ন দেখে একটা ঘর ভাড়া নেবে মায়ের জন্য।সে ভিক্ষা করবে না আর,কাজ করে টাকা রোজগার করবে। অনেক টাকা জমাবে। প্রচন্ড কষ্ট পেলে একা একা বেচু কান্না করে। আবার চোখ মুছে ফেলে।স্কুলে যাওয়া ছেলে মেয়েদের দেখলেই ইচ্ছে জাগে সে ও যদি স্কুলে পড়তে পাড়াতো খুব ভালো হতো।

আজ শুক্রবার। সকাল থেকে একটু একটু বৃষ্টি।এক পসলা পড়ে তো আবার চুপচাপ।বেচু একাই যাবে বোতল কুড়াতে।মনটাও ভালো নেই। কিছু টাকারও দরকার।গতকাল দুপুর হতেই চম্পার জ্বর জ্বর ভাব।রাতে কিছুই খায়নি।বেচু মাকে অনেক করে বলেছে। কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি।মার শরীর ভালো না থাকলে বেচুর কিচ্ছু ভালো লাগেনা।মনটা কেমন কাতর অস্থির হয়ে ওঠে। শুধু কাঁদতে ইচ্ছে করে।সঞ্জু মামা তখন দোকান গুটিয়ে বাড়ি গেছে ।এমন সময় বেচু কী করবে ভেবে পায়নি।

যাক রাতটা ধীরে ধীরে সকাল হয়ে গেলো। সকাল বেলা মামা দোকান খুললে বেচু মামাকে কাতর হয়ে বলে। মামা কাছের ঔষধের দোকান থেকে দুটো পেরাসিটামল কিনে দেয়।"বেশি জ্বর হইলে ছয় ঘন্টা বাদে বাদে খাওয়াইয়া দিবি।"
"আইচ্ছা মামা।"
"এই নে এইটা আগে খাওয়াই বি।"এই বলে একটা ব্রিটানিয়া থিন বিস্কুটের প্যাকেট বেচুর হাতে দেয়।
বেচু চলে যাচ্ছে এমন সময় সঞ্জু আবার বলে ,"চিন্তা করিস না,মামা একটু পড়ে চাইয়া আমু।"
বেচু মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মায়ের কাছে চলে যায়। 
সকাল বেলা সবাই দোকান খোলার আগেই মাকে নিয়ে চলে যায় পেছনের সুলভ  শৌচাগারের একটু আগে , এখানে অনেকটা খালি জায়গা। সন্ধ্যার পর মার শরীর ভালো হলে আবার সামনের কড়িডরে চলে আসবে এই ইচ্ছায়।

নাহ আজ এমন কিছু পেলোনা খুঁজে।হতে পারে বেচুর আগেই কেউ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগছে বেচুর। মাঝে মাঝে এমন হয় তবে খুবই কম।এমন হলে তার মা অন্য যায়গায় কুড়াতে যায়।বেচুর মার জায়গা গুলো চেনা আছে।বেচু এই একটা জায়গাই চেনে।জায়গাটা ব্রীজের দিকে।খালি বস্তাটা হাতে মুখে একটা কষ্টের ছাপ নিয়ে ফিরে এলো।মার জ্বরটা অনেকটা সেরে গেছে।মা তারে ডেকে বলে,"বেচু এই নে ইহানে কুড়িটা টাকা আছে।একটু চা রুটি নিয়া আয়।"

দুপুরের দিকে বেচু চলে আসে জগন্নাথ মন্দিরে।আজ ও এক শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের প্রসাদ খাওয়ানো হচ্ছে।বেচু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। একজন বলল "আরোও কিছুক্ষণ দাঁড়া,খাওন ওপুরলে পাবি।"
বেচু বলল"আইচ্ছা,আমি দাঁড়াচ্ছি।"
বিকেল প্রায় সাড়ে তিনটায় বেচু একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে ভাত ভাল তরকারি একসাথে নিয়ে চলল তার মায়ের কাছে। এদিকে খুব ক্ষিধে পেয়েছে বেচুর।কোন সকালে অল্প বানরুটি খেয়েছে আর এখন প্রায় বিকেল।

বিকেল চারটা পার করে বেচু এসে পৌঁছায় শিশু পার্কের সামনে।হাতে সেই ভাতের প্যাকেটটা ঝুলছে।বেচু হঠাৎ দেখে লোকটি একটা ছোট্ট মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে তার রুটি সবজি চপ চানা ডালের বড়া সাজানো ঠেলা গাড়িটির সামনে থেকে।
আর বলছে,"যা কইতাছি ইখান থাইকা। অহন কিছুই পাইনি না।যা যা কইছি মাথাটা গরম করিছ না।"মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে একটু দূরে সরে গিয়ে তাকিয়ে আছে খাবার গুলোর দিকে। বেচু ঘটনাটা ভালো করে দেখে বুঝে ফেলে ব্যাপার টা কী হতে পারে।
বেচু মেয়েটার কাছে যায়। মেয়েটার ময়লা ও ছেঁড়া জামা,জট বাঁধা চুল,চোখ মুখ শুকনো। দুর্বল।
বেচু জিঞ্জেস করে,"কীরে খাইবি কিছু, ক্ষুধা লাগছে?" মেয়েটির চোখে তখন ও জল।বলে,"হ খামু। কালকের থাইকা কিচ্ছু খাইছিনা।মাও কিচ্ছু চাইছেনা।"
"কই থাইকা আইছত ইহানো?আগে দ দেখছি না।"
"আমরা কাইলকা আইছি ইহানো। বাংলার থাইকা। কয়দিন আগে।পথমে আরেকখানো থাকতাম।মা কইতা পারবো।
" কান্দিছ না।"বলতে বলতে বেচুর ও কান্না পেয়ে গেলো। খুব কষ্টে সংবরণ করে বলে,"এই নে,ইহানো অনেক ভাত আছে।নে ল ইয়া যা।রাত্রে বা কাইলকা সহালে গড়ানো আইচ। আমার মাও থাকবো। আমার সঞ্জু মামা ও আছে।দেখবি খুব যদি হইবো।
মেয়েটা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে আনন্দে ছুটতে ছুটতে অদৃশ্য হয়ে যায়।বেচুও তার নিজের ক্ষুধার কথা ভুলে গেছে। অনেক শান্তি পেলো বেচু কেন সে জানে না, ধীরে ধীরে পিঁপড়ের মতো শহরের ভীড়ের দিকে মিশে গেলো।

হাতে একটা কলম ধরিয়ে দিও

✒️সুপর্ণা মজুমদার রায়

শহরের গালিচা বিছানো মরচে পরা উঁচু সিড়িতে উঠার সাধ নেই। 
শুধু  হাতে একটা কলম ধরিয়ে দিও,
যাকে ভর করে উঠে আসবে তোমার শহরের মারণ অসুখের কদর্য চেহারা। 
যাকে ভর করে উঠে আসবে তোমার শহরের সর্বহারা গরীবি শোষননীতি।
উঠে আসবে তোমার শহরের অন্ধকার গলিতে সেই মেধাবী মেয়েটার ধর্ষণের চিত্র। 
মেরুদণ্ডহীন বেকার যুবককে বেলেল্লাপনায় বুঁদ করে রাখার চিত্র, 
সাথে কর্পোরেট বুটের হুঙ্কারধ্বনি।
আমি যশ চাই না ----।
শুধু একটা কলম ধরিয়ে দিও,
যাকে ভর করে উঠে আসবে 
তোমার শহরের 
নেশা কারবারিদের রমরমা পাচারের গল্প। 
রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া ছাত্রের মুঠোফোনে আসক্তি, 
মাঝ বয়সীদের লেপটপে পর্নোগ্রাফিতে ডুবে যাওয়া অবসাদগ্রস্ত জীবন কাহীনি।
আর?????
আর থাকবে সত্যকে দাফন  করার একমাত্র সাক্ষী অসহায় মায়ের বুক ফাঁটা কান্না। 
আমি সুখ্যাতি চাই না। 
শুধু একটা কলম ধরিয়ে দিও। 
যাকে ভর করে তোমার রূগ্ন শহর 
খুঁজে পাবে আরোগ্যের সুদীর্ঘ পথ।

মাতৃভাষার মুখ

✒️আলমগীর কবীর

আমার জিভে যে শব্দেরা খেলে,
তা মা’র কোলের গন্ধ মেখে আসে।
শব্দ নয়, ওরা কানে আসা দুধের ঢেউ—
জন্মভূমির মুখের রেখা টেনে দেয়।

মাতৃভাষা—
তাকে বইয়ের পাতায় খুঁজে পাই না,
সে তো রান্নাঘরের হাঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে
নুন-হলুদের মতো ঝাঁঝ মেশায় কথায় কথায়।

সে চুল বাঁধে সকালে,
দুপুরে ধান শুকায় উঠোনে,
রাতে কুসুম গন্ধে গল্প শোনায়—
“এক দেশে ছিল এক রাজা...”

আমি সেই ভাষায় কাঁদি,
সেই ভাষায় হাসি,
যে ভাষা বুকে দুধের দাগ রেখে যায়—
সে ভাষা শুধু ‘ভাষা’ নয়,
সে আমার ঘরের ছায়া,
আমার চোখে জল হয়ে ঝরে,
আর গোপনে বুকের ভেতর
আকুলতা হয়ে বাজে।

আমার মাতৃভাষা—
তাকে নিয়ে কবিতা লিখি মানে
মায়ের কপালে চুমু খাওয়া,
একটা হারানো শৈশবকে বুকে টেনে ধরা।

তাই বলি,
যারা মাতৃভাষার দুধ ফেলে দেয় মুখের কোণে,
তারা আসলে নিজের মায়ের মুখ চেনে না।

উনিশে মে-ভাষার রক্ত ঝরা দিন

✒️বিশাল দাস

শহীদের রক্তে লেখা ইতিহাস,
পৃথিবীর বাতাসে আজও দোলে,
উনিশে মে’র সেই সকাল, জ্বলন্ত অগ্নিশোলে।
বাংলা ভাষার দাবিতে, উঠেছিল যে কণ্ঠ,
সেই কণ্ঠে লেগে ছিল সাহস, আর অন্তহীন বঞ্চ।

শিলচরের স্টেশনে, মায়ের ভাষা রক্ষায়,
শহীদ হলেন তমাল, কমলা — নাম লেখা প্রাণপণে।
কত প্রাণ নিঃশেষ হলো, বুলেটের ঝড়ে,
তবু বাংলা থামেনি, বুক ছিঁড়ে গিয়েছে ঘরে ঘরে।

সেই অক্ষরে গড়া পথ, এখনো আলো দেয়,
ভাষার অধিকারের শিখা, এখনো দীপ্ত হয়ে বয়।
ভাষা শুধু কথা নয়, আত্মার অভিব্যক্তি,
উনিশে মে তাই আজও, আমাদের চেতনার শক্তি।

উনিশে মে প্রতিটি বাঙালির অহংকার,
শহীদ ভাইদের প্রতি প্রণাম কোটি বার।

অচল প্রেমের পদ্য

✒️পূজা মজুমদার 

এক জীবনের সব হাহাকার বুকে নিয়ে
অভিশাপ তোমাকে দিলাম
তুমি সুখি হবে, খুব সুখি হবে ।
বেদনা আমাকে নিয়ে আশৈশব খেলেছে তুমুল
আর তিলে তিলে শিখিয়েছে সহনশীলতা,
নিলাজ নখের মতো দুঃখ কেটে কেটে আমি
আজকাল অর্জন করেছি ঠিক উদ্ভিদের
অদ্ভুত মৌনতা, ওলো উল্লাসিনী
না জেনে শুনেই কেন দিতে গেলে টোকা ?
তুমি আর কি বেদনা দেবে, কতোটা নাড়াবে ?
বালখিল্য এ খেলায় আমার
চেয়ে বেশি তুমিই হারাবে ।
এক জীবনের সব হাহাকার বুকে নিয়ে
অভিশাপ তোমাকে দিলাম,
ব্রহ্মপুত্রের ছেলে দেখে নিয়ো,
খুব সুখি হবে ।

বিপ্লবী

✒️দিয়া সরকার

ভুলব না কোনোদিন তাদের কথা যারা দিল প্রাণ,
তারাই ছিলেন ভারতের বীর সন্তান। 

তারা রাখতে গিয়ে দেশের মান,
দেশের জন্য দিয়েছে প্রাণ। 

করলো তারা দেশ স্বাধীন,
পরাধীনতার শেকল বিহীন। 

কত জীবন কেড়ে নিল দুষ্কৃতীর গুলি,
সন্তান হারা মায়ের কোল করলো খালি। 

রক্তে লেখা থাকবে তাঁরা ইতিহাসে,
অকালে কত জীবন গেলো ভেসে। 

বুক ফুলিয়ে করলো লড়াই বীর সেনা সব,
দেশ স্বাধীন করে তাঁরা বাঁচিয়েছে কত প্রাণ। 
শহীদদের প্রতি রইলো আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

উনিশে মে

✒️উপলব্দা দাস

মে মাসের এই দিনে, স্মরণ করি ভাষা শহীদগণে,
বাংলা ভাষার তরে, জীবন দিল যারা স্টেশনে। 

বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়, এই মহান দিন,
মাতৃভাষার মান, অক্ষত থাকবে চিরদিন। 

বর্ণমালা গাঁথা, হৃদয়ে শ্রদ্ধা অপার,
ভাষার অধিকার চেয়েছিল বার বার। 

উনিশে চেতনা জাগে, নব উন্মাদনা,
ভাষা মোদের গর্ব, মোদের ঠিকানা। 

শহীদদের রক্তে লেখা হল ইতিহাস,
ভাষা আন্দোলনের বিজয়, ঘুচে গেল সব ত্রাস। 

উনিশে মে'র শপথ, রাখবো হৃদয় জুড়ে,
ভাষার মান রক্ষায়, আমরা থাকবো না দূরে।

নারী তুমি শক্তি

✒️পাপিয়া দাস

নারী তুমি শক্তিস্বরূপা 
তুমি দশভূজার প্রতিরূপ,
তোমায় ছাড়া এই জগৎ
রবে একেবারে নিঃশ্চুপ।
তুমি আজ মহাকাশে রেখেছ পা
দিয়েছ সপ্তসাগর পাড়ি।
তোমার হাত রেখেছো বিমান ,জাহাজে
চালাচ্ছো স্কুটার ,মোটরগাড়ি।
তোমার হাতে গড়েছো শিল্পকলা
প্রতিভা তোমার কবিতা ,গানে।
অসীম সাহস নিয়ে এগিয়ে পড়েছে
সামাজিক উন্নয়ন করতে হবে এখন এ পণ নিয়েছো প্রানে।
তুমি দূর্বল ন‌ও,ন‌ও তুমি অবলা,
ঘর সামলিয়ে, বাহির সামলাতেও তুমি হয়েছ উদ্যত,
হবে আর কতো নির্যাতিত,হবে আর কতো ধর্ষিতা,
দৃঢ় সংকল্পে এগিয়ে চলো জয়ধ্বনি দেবে এ বিশ্ব ত।

ভেজা

✒️সীমা দাস

ভেজা দিন,
      ভেজা আকাশ,
ভেজা ছিলো যে তোমার আওয়াজ। 

ভেজা রাত,
       ভেজা চাঁদ,
ভেজা ছিলো যে তোমার হাত। 

ভেজা বৃষ্টি,
        ভেজা সৃষ্টি,
ভেজা ছিলো যে, তোমার দৃষ্টি। 

ভেজা মন,
        ভেজা রাগ,
তোমাতে ভেসে যাব আজীবন। 

ভেজা সাজ,
        ভেজা আশা,
ভেজা তোমার এই ভালবাসা।

পড়াশোনা

✒️পারমিতা সিং

সারাদিন এক কাজ, ভালো তো লাগে না,
নিত্যদিন করি যাহা, তা হল পড়াশোনা। 

সকাল সাঁঝে রাত, বিকেলের মাঝে,
একটাই কাজ, তা হল পড়াশোনা। 

লেখাপড়া করে, যাই অবিরাম,
নেই কোনো ছুটি, নেই যে বিশ্রাম। 

ছোট্ট থেকে শিখে আসা, অ, আ, ক, খ;
বড় হয়ে ভুলে যাই, এটাই দুঃখ। 

মাঝখান থেকে কেউ, যদি করে প্রশ্ন,
সবকিছু ভুলে যাই, মন হয় বিষন্ন। 

C.G.P.A এই চারটি শব্দ,
কম পেলেই নাকি, জীবন হয় নিস্তব্ধ। 

শিক্ষা মানেই নয়, C.G.P.A বৃত্ত, 
আচার ব্যবহারই, মানুষের জীবনের অর্থ। 

ইচ্ছা আমার, বড় হয়ে করবো সবার সেবা, 
করব সেবা দেশ জাতির, মা এবং বাবার। 

হবো না কোন অহংকারী, অসৎ ও মিথ্যাবাদী, 
হবো সবার বন্ধু আমি, সৎ ও সত্যবাদী।

ছায়াতরু

✒️দীপ্তি চক্রবর্তী

জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া - 
আমি দিগন্ত পথযাত্রী।
আমি এক কুহকের কুহুতান, 
হৃদয়ের সুতো দিয়ে মালা গাঁথি
হৃদয়ে-হৃদয়ে।
পথ-প্রান্তরে দলে যাই আমি-
অনাহূত অভিমান।
আমি আকাশের টানে- 
নীল সাগরের বুকে আনি বান।
আমি নিঃশব্দে ডানা মেলি,                    
বিধ্বস্ত বিহঙ্গের মতো,
মুক্তির স্বাদ কেড়ে নিতে। 
আমি বৈশাখী ঝড় হয়ে 
তান্ডবে মাতি।
গ্লানি মাখা পরাজয় হতে- 
তমস-রাক্ষস রূপ ক্লেশ নিবারিতে।
মমতার সুধা মাখা, 
অসীম সৌন্দর্যে ঢাকা 
জীবন পথে,
আজও চেয়ে দেখি-
বিশ্ব চরাচরে,
জেগে আছে সেই চির দিবসের 
নির্লিপ্ত, নিরাসক্ত অভিমানী চোখ।
দুই ফোঁটা অশ্রু মুছে,
শান্ত নদীর মতো ফিরে যাই, 
দু-বাহু বাড়িয়ে থাকা, 
তৃষিত বক্ষের তলে, 
আজন্ম ব্যাকুলিত, 
স্নেহ-সুধা বিগলিত মাতৃক্রোড়ে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

✒️প্রতিমা দেববর্মা
 
উদ্ভিদ,জীবজন্তু ও মানুষের সম্মিলিত পরিবেশে 
জীবগোষ্ঠীর সার্বিক মঙ্গল সৃষ্টি অনায়াসে l
বহু প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রানীতে মানুষ উন্নত প্রাণী 
বাঘ,সিংহ, হরিণ, হাতি বনাঞ্চলে পাচ্ছে গ্লানি l
চোরা শিকারি অর্থের লোভে শিং,চামড়া, দাঁতের শিকার করে 
বহু প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত আজ ওদের কবলে পড়ে।
জলবায়ু,মাটি,বনে মিলে জীবের অস্তিত্ব 
পরিচর্যা,রক্ষণাবেক্ষণ,পুনরুদ্ধারেই জীবজগৎ সংরক্ষিত।
নির্বিচারে বন্যপ্রাণী ধরা,গাছ কাটায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট 
বন ধ্বংস ও বন্য প্রাণী লুপ্ত হয়ে ফাঁকা জায়গা দৃষ্ট।
বন্য প্রাণীর আবাসস্থল বনভূমি,

সবাই মোরা জানি 
অর্থনীতি নির্ভর বনজ সম্পদ,বনে নির্ভর বন্যপ্রাণী।
লুপ্তপ্রায় হায়না, সজারু আরো চশমা বানর 
ভালোবাসার পরিবর্তে ওদের কপালে জুটে ছিল অনাদর 
বন সৃজন প্রকল্প করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষা করব 
সেথায় পশু,পাখির অত্যাচার নিষিদ্ধের জন্য লড়াই করব।
সারা বিশ্বে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল 
বিশ্বব্যাপী সাড়ে আট শ প্রাণি সংরক্ষণের শামিল।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বনাঞ্চল রক্ষা করব 
বন্যপ্রাণী রক্ষার প্রয়াসে ব্রতী হয়ে সেখানেই বনভোজন করব।