সম্পাদকীয়

    সম্পাদকীয়.....................................✍️
  সকল কবি, লেখক, গল্পকার এবং সাহিত্যিকদের জানাই শুভ নববর্ষের অগ্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। ৩১ ডিসেম্বর এবং ১লা জানুয়ারী হল আমাদের কাছে কিছু ত্যাগ করা আবার নতুন কিছু গ্রহণ করার মতো। নতুন আশা, নতুন চাওয়া এবং জীবনের নতুন কিছু হওয়া। পুরোনো বছরের মতো আমাদের পুরোনো জড়তা, পুরোনো অব্যক্ত কথা, পুরোনো ব্যথা, যন্ত্রণা, কিছু যন্ত্রণাকর স্মৃতি ইত্যাদি পুরোনো খারাপ কিছুকে আমাদের বর্জন করতে হবে৷ বর্জন করে জীবনে কিছু নতুন ব্যথা, ভালোবাসা, সুখদুঃখ দিয়ে শুরু করতে হবে৷ তাহলে আমাদের জীবন আপডেট হবে। যাইহোক, নতুন কিছু দিয়ে আপনাদের জীবন সুন্দর হোক এই কামনা করি৷ এই সংখ্যাতে নতুন নতুন লেখা, নতুন নতুন ভালোবাসা, নতুন নতুন কষ্ট দিয়ে সাজানো হয়েছে। এই সংখ্যাতে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন কবি পান্থ দাস। 
শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদান্তে
গৌরাঙ্গ সরকার 
সম্পাদক, নবোন্মেষ পত্রিকা
শিবশংকর দেবনাথ
সহসম্পাদক, নবোন্মেষ পত্রিকা

অন্য রকম গল্প

                    নিবারণ নাথ ✍️

    অন্যরকম গল্পে ডুবে গিয়ে দেখি
     অনাথ শরীর
     তার বাড়ি নেই, ঘর নেই
     চর্তুদিকে দরোজা 

     মা খালাস করেই চম্পট 
     বাবা হয়তো বা কেউ

    অনাথকে ঘিরে কৌতুহলের শেষ নেই
    মা কে?
    বাবা?
    নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?
    ভাবতে ভাবতে চাইল্ড লাইনের
    লোকেরা এসে
    শিশুটাকে নিয়ে গেলো।

   কেউ বলে অবৈধ 
    কেউ  বলে অভাব তাড়নার শিকার
    প্রশ্ন উঠে অমানবিকতার।

    *******
    
  

জন্মভূমি


 দীপক রঞ্জন কর ✍️

ভারত ভূমিতে জন্ম আমার
 গৌরব করে বলতে চাই,
এ দেশের আলো বাতাস
 এমন আর কোথায় পাই।

এই মাটিতে নতমস্তকে
পূর্বপুরুষদের স্পর্শ পাই,
এদেশের সুনাম শুনলে
 তৃষ্ণা খিদে ভুলে যাই। 

শস্য শ্যামলা জন্মভূমি
দেশকে ভালোবেসে যাই,
এ দেশেতে জন্ম আমার
এই দেশেতে হোক ঠাই।

জন্মভূমি মায়ের মত 
মায়ের কোলে বসত তাই
মায়ের স্নেহে মায়ের আদরে
দেশের তরে বাঁচতে চাই।

ধন-সম্পদ প্রাচর্যে ভরা
 আমাদের এই জন্মভূমি,
বীর শহীদের বলিদানে
ভারত মাতা স্বাধীন তুমি।

বড়মুড়া ইকোপার্ক, চাঁদ মুখ, ডেমছড়া

গোবিন্দ ধর ✍️

চাঁদ মুখের মুখোমুখি হলে

যদি চন্দ্রপুকুর নদীর তীরে একটু আড্ডা হয়

তবে বসবে চল? 


পাশাপাশি বসি চাঁদ মুখ থেকে 

আলো শুষে নেবো,চুমু খাবো

বিশ্রাম নেবো চন্দ্রপুকুর নদীর তীরে। 


তুমি চাঁদমুখ,তুমি রূপকথা

বুকের মাঝে লাফিয়ে ওঠা গোপন লাব ডুব। 
__________
চারদিকে সবুজ আর সবুজ

মাঝে একটি কাঠের ঘর

চলো বহুক্ষণ তাকিয়ে দেখি প্রকৃতি।


নিচে জলপ্রপাত। প্রবাহিত।পাখির কলকাকলি 

আর একটু ফিরে দেখার অবসর।


আমাদের দুপুর গিলে খাওয়া মোবাইল 

আর দিনরাত এক করার সিঁড়ি বেয়ে 

উঠছে নামছে মধ্যবিত্ত জীবন।


নিঝুম সন্ধ্যায়, একটু তো নিকটে আসি

চলো তুমি বাজাও হাওয়াইন গিটার। 
__________
আরোগ্য যোজনা প্রকল্প এবং 

খুব নির্ভরতায় আঘাত এলে চৌচির হয়ে যায় বিশ্বাস। 

বিশ্বাস অর্জনের সীমা সীমানা নেই। 

একে অপরের নিকট সমর্পনের পাশাপাশি 

সিংহ দরজার গোপন চাবি কোথায় লটকে আছে 

পরস্পর চোখ মুদে হাত যখন ঠিকঠাক জায়গায় যায়


বিশ্বাস পেকেছে বুঝুন লাভ ডুব সই।


একান্তে একটি রুটি ছুড়ে বললে ভালোবাসি? 

এরও অধিক গোপন জেবলাইনে 

কুশলেই তো আছে-দিকবিদিক।


সমস্ত ওম ও ওংকার মিশিয়ে বুকের ভেতর

একটি পায়রা পুষেছিলাম।

তারও চাই আরো আরো আরোগ্য যোজনা প্রকল্প!


আরোগ্যেরও আরো আরোগ্যের দরকার

তিনিও তেমন হাসপাতাল থেকে আরো এক

আরোগ্য নিকেতনেই শুয়ে আছেন।


আরোগ্য যোজনা প্রকল্পের শেষ নেই 

কারণ আরোগ্যেরও আরোগ্য চাই

যার প্রকৃত অসুখ -তারও চাই সুস্থতা অহর্নিশ।

বসূধা


প্রবীর পাঁন্ডে ✍️

 হে দেবী প্রশান্ত ময়ী  মধুরে সুন্দরে,-
বাড়ায়ে দক্ষিণ কর আজ চিরতরে
বিরহ প্রবাস হতে নিয়ে চলো মোরে, 
তোমার আলোর দেশে,সৌন্দর্য নগরে;
মল্লিকার বেড়া ঘেরা শেফালির বনে, 
বিটপি লতার কুঞ্জে,কুসুম ভবনে। 
দিয়ো পেতে একখানা কৃষ্ণ কুশাসন, 
তোমার চরণ তলে করি গো শয়ন। 
লভিব অন্তর মাঝে আমি সর্বক্ষণ
মৃন্ময়ী প্রকৃতির শুভ্র আলিঙ্গন। 
আনিবে বহন করে বসন্ত বাতাস
মলয় চন্দন গন্ধ,জ্যোৎস্না প্রকাশ
অঙ্গে অঙ্গে ঢেলে দিয়ে পরিমল সূধা
চুম্বন করিবে শিরে আমর্ত্য বসূধা। 
ঝরনার কলস্রোত কল কল সুরে
বাজিবে কানের পাশে সারাক্ষণ ধরে, 
বনানীর নির্জনতা দুবাহু বাড়ায়ে
সর্বদা বক্ষের'পরে রহিবে জড়ায়ে। 
প্রভাত পাখির গান, রবির কিরণ
আমার নয়ন-মন করিবে হরণ। 
দেখিব নয়ন মেলে হইয়া বিভোর
অনিন্দ্য সুন্দর রূপ, মূর্তি মনোহর।

খোকা ও মোবাইল

বিপ্লব গোস্বামী ✍️

খেলনা পুতুল গাড়ি পেয়েও
ভরেনি খোকার মন,
বাবার কাছে বায়না ধরেছে
চায় সে মোবাইল ফোন।

মোবাইলেতে কার্টুন দেখে
আনন্দে আত্মহারা,
ইউটিউবেতে ছড়া দেখে
কাটে তার বেলা।

খেতে শুতে লেখতে পড়তে
সব কিছুতে মোবাইল চাই,
মোবাইল দিলে অতি আপন 
মোবাইল ছাড়া টা টা বাই বাই।

নববসন্ত


সোমা নস্কর ✍️

রূপ সৌন্দর্যের প্রকৃতির কি বাহার 
ভালোবেসে চোখ জুড়ায় অনাবিল সমাহার
বসন্ত এসে গেছে,কোকিলের কুহু তান
উৎসবের রঙ মেখে গাইছে ভোরের গান,
প্রজাপতি পাখা মেলে রৌদ্রের উস্কানি 
অনুভূতি রঙ ভরে সৃষ্টির নব বাণী।

সবুজে ভরে ওঠে জীবনের জয় গান
বসন্ত এসে গেছে,প্রকৃতি দিয়েছে প্রাণ,
বৈচিত্র্যময় ঋতু আসে নিয়ে পরিবর্তন 
আনন্দে মেলে পাখা আনে যে বিবর্তন।

রূপায়ণ


চন্দ্রিমা বণিক ✍️

সভ্যতার ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে   
এক রত্তি প্রাণ যখন জয় করে নিল হৃদয়ের মণিকোঠা,
আলোর রোশনাই তখনও দেওয়াল বেয়ে ক্রমশই ঝরে পড়ছে।
নিষ্পাপ ঠোঁটের কোণে দেখা গেল এক ঝলক বক্রতা।
চোখ দুটি তখনও নিষ্পলক। 
কল্পনার গন্ডি এড়িয়ে বাস্তবতা ধরা দিল মুহূর্তে,
শীতল শিরা উপশিরা ক্রমশই উষ্ণতার আবেশে মিলেমিশে হয়ে গেল একাকার। 
খুশির প্লাবন বইতে লাগলো করতালি আর আতশের হাত ধরে। 
            
           

দ্বিতীয়া

 
 
 শ্যাম মালাকার ✍️

পত্রের প্রথমে জানাই- 
    রাজমাতা ভোজবালা কুন্তীর চরণে 
      আমার বিনম্র প্রনাম ।
আমার পরিচয় আপনার চোখে - 
   হস্তিনাপুরের বুকে কালো ছায়া। 
হে মাতা আপনার দ্বিতীয় পুত্রের স্ত্রী সত্য - 
    প্রথম হয়েও আমি আজ  দ্বিতীয়া ।
আমি রাক্ষস কূলের রাজকন্যা ,
   হিড়িম্ব ভগীনি হিড়িম্বা ।
সেদিন ভ্রাতা হিড়িম্বর ক্ষুধার তরে
  ঐ গহীন অরণ্যে জননী আপনাদের কাছে 
     আমার সেদিন ছুটে আসা - 
কিন্তু আর্যের সিংহের মতো দৃপ্ত পৌরুষ, 
 -কঠিন চেহারার দ্যুতিময়তা
  দেখে তাসব  ভুলে - 
    প্রথম দর্শনেই আমি 
 আর্যের প্রেমে হয়েছি মত্ত ।
আপনার পুত্রের মন হরণের তরে- 
 আর্যবর্তের রমণীর বেশবাস ছেড়ে - 
তখন রাক্ষুসী এই অরণ্যবালিকা  
     দিব্যবস্ত্রে সজ্জিতা । 
কিন্তু সে তো বাইরের রূপ।
   অন্তরে তখনও আমি অরণ্যবালিকা। 
আমার মোহিনী রুপের মুগ্ধতায় 
  চোখের চোরাস্রোতে বীর বিকোদর - 
কামিনীকাঞ্চনের নেশায় পড়েছিল । 
মোর  বুনো রূপ তখন  প্রেম কামনায় ছিল মত্ত , 
 আর তাইতো আমার চোখের চোরাটান সেদিন 
  ভাসিয়া ছিল আপনার পুত্র 
 ভারতশ্রেষ্ঠ পাচক বীর বল্লভ  ।।
আমি যত  এগিয়ে গিয়েছিলাম তার কাছে - 
    আমার চলার ছন্দে,
  আর অপ্সরাসম শরীরী লাস্যে - 
আপনার দেবোপম পুত্র হয়েছিল মত্ত । 
প্রিয়কে সামনে পেয়ে, 
  প্রেমিকার চোখে-মুখে যে লজ্জা ফুটে ওঠে,
মাতা আর্য কে দেখে - 
 এই অরণ্যনন্দিনী হিড়িম্বার
  চোখে মুখে সেদিন ফুটেছিল
  কামেশ্বরের কামিনীকাঞ্চন । 
আমাকে দেখে বুক তাঁর হয়েছিল  উথাল-পাথাল। 
  এ প্রেমাবেগ শুধু একান্ত আর্যের বলা ভুল ।
আপনার কূলের বধু রুপে আমি প্রথমা। 
    কিন্ত আপনার শর্তের কারণে 
আজ আমি কূলবধু রুপে দ্বিতীয়া ।
 যেদিন ভ্রাতা হিড়ম্ব কে পরাজিত করে 
রাক্ষস কূলের নিয়ম মেনে 
    আর্য  হয়েছিল রাক্ষস কূলের অধিপতি।  
সেদিন নিয়মের বাঁধনে যখন 
আপনার পুত্রকে  দিতে হবে - 
   রাক্ষস রাজকন্যার গলায়  
    বিবাহের জয়মালা ।
তখন বিবাহের জন্য এলো - 
   শর্তের অমোঘ নিয়মের পালা ।
হে মাতা আপনি দিলেন  প্রথম শর্ত এই বলিয়া - 
 "হে অরণ্যবালিকা  পারিবেনা তুমি  
 কখনো কূলবধুর অধিকার নিয়ে - 
করিতে হস্তিনাপুরে প্রবেশ ।
কারণ রাক্ষস কূলের কন্যা 
হতে পারে না আর্যবর্তের রাজঘরনী ।"
এর পর দ্বিতীয়  শর্ত রাখিল 
   জ্যেষ্ঠ ভ্রাতৃতুল্য ভাসুর ।
 তথা আপনার প্রথম পুত্র -
    ধর্মরাজ জুধিষ্ঠীর ।
আমারে কহিলেন ধর্মরাজ - 
হে রাক্ষস কূলের রাজকন্যা - 
" তোমার কূলের আরাধ্যকে সাক্ষী রেখে 
   বচন দাও মোরে ,
 বিবাহের পর তোমার গর্ভে যে জন্মিবে - 
সে সন্তান দাবি রাখবেনা- 
    হস্তিনাপুরের সিংহাসনে । 
কারণ সে সন্তানের ধমণীতে - 
 আর্যবর্তের রুধি প্রবাহিত হলেও , 
নাড়ির বাঁধন থাকবে রাক্ষস কূলজাত। " 
  মেনে নিলাম এ দুই শর্ত- 
এরপর তৃতীয়ে শর্ত দিলেন স্বয়ং- 
    পবন পুত্র বীর বিকোদর ভীম । 
আর্য আমার শর্ত দিলো , বলিলেন - 
 "হে লস্যাময়ী অরণ্যবালিকা- 
    বিবাহের এক বৎসর পর 
মোদের সন্তান জন্ম নিলে ,
 এই রাক্ষস কূলের সিংহাসন 
 আর রাজকন্যা সহ তার পুত্রকে
আমি ত্যাগ করিব ।"
ভ্রাতা হিড়িম্বর মৃত্যুর পর -
  রাক্ষস কূলের মান-সম্মান ,
 আর  সিংহাসনের নিয়ম রক্ষার্থে - 
মেনে নিলাম এই শর্তও নিঃশর্তে- । 
রাক্ষসযোনিতে আমি রাজকন্যা জেনেও 
    কুলবতী কন্যাদের মতো - 
আপনার পুত্র  বলেছিলো মোরে 
   ওহে প্রিয় ‘ভদ্রে' তুমি মৃগ নয়না। 
সিংহের মতো তুমি  ‘তন্বঙ্গী’ ।
আমার মধ্যদেশ মত্ত হয়ে - 
 মোর স্বামী  বলেছিল "সুমধ্যমা' মোরে ।
হে রাজমাতা আপনারই কূলবধু আমি , 
কলাবতী আর্যরমণীদের সঙ্গে -
   আপনার দৃষ্টিতে আমার তফাৎ অনেক। 
আমি রাক্ষস কূলের রাজকন্যা ,
   হিড়িম্ব ভগীনি হিড়িম্বা ।
আমার পরিচয় আপনার চোখে - 
   হস্তিনাপুরের বুকে কালো ছায়া । 
  হে মাতা  শিশু কালে শুনেছিনু - 
জন্মের পর ললাট লেখন 
সৌভাগ্যের ঐ ত্রিদেবীদ্বয় - 
দেবী ধাতা -বিধাতা ও নিয়তি ।
হে রাজমাতা , দেবী ধাতার কৃপাবলে -
   রাক্ষস কূলের রাজকন্যা হয়েও 
 আজ আপনারই কূলের বধু আমি ,
জননী বিধাতার কৃপাবলে আমি আজ 
আপনার সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্ঞী সত্য,  
 কিন্ত আপনার দ্বিতীয় পুত্রের স্ত্রী রুপে 
        আমি দ্বিতীয়া ।
জননী বিধাতার কৃপাবলে আমি আজ 
    এই হস্তিনাপুরের রাজনন্দিনী ।
 কিন্তু  দেবী নিয়তির খেলাঘরে আমি আজ - 
       কূল ও কোল শূন্য অভাগীনি । 
আমার পুত্রের অধিকার ছিল - 
    এই হস্তিনাপুরের সিংহাসনে । 
তা তো ধর্মপুত্র কেড়ে নিয়েছিল , 
 তাহলে কেনো ঐ 
ছলনাময়ীর কৃষ্ণের ছলনায় - 
   আপনার গান্ডিবধারী পুত্র কে রক্ষার্থে- 
আমার মতো নীচ কূলের জননীর 
   কোল শূন্য হতে হলো ? 
এই হস্তিনাপুরের সিংহাসনে -
আমার পুত্রের অধিকার ছিল ।
    কিন্ত সিংহাসনের বদলে সে 
    বীরগতি পেলো।  
আপনিতো কখনই আমাকে বলেননি 
    আপনার সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্ঞী ।। 
দেননি কখনো আপনার 
   কূলের কূলবধু মান সম্মান। 
তবে কেনো আপনার দৈবস্বত্ব কোল ও কূল বাঁচাতে - 
 আমার কূলের শ্রেষ্ঠ প্রদ্বীপ
 বারবরিক কে দিতে হলো আত্মবলিদান ? 
হিমালয়ের পাদদেশে, দেবদারু ঘেরা 
ঐ অরণ্যের নন্দিনী আমি । 
  আপনি গভীর তপস্যায় মগ্ন হয়ে 
মন্ত্রবলে আবারও স্বামী ছাড়া
  দেব ঔরসে সন্তান জন্ম দিতে পারেন ।
মাতৃত্বের সুখ নেওয়ার পর - 
সমাজের লোক লজ্জার ভয়ে -
    তটিনী তরঙ্গে তাকে
  উজার করে দিতে পারেন ।
কিন্ত আমি তা পারি না ।
  কারণ বন্য হলেও আমি কূলটা নই। 
হে রাজমাতা আমি আপনার মতো 
    উচ্চ কূলজাত ভোজবালা না হলেও ,
নিজের সতীত্বকে আমি -
স্বামী ছাড়া কোনো দৈব্য পুরুষের কাছে 
         সমর্পণ করি নাই । 
আমি রাক্ষস কূলের রাজকন্যা হলেও 
      পুত্রের কামানায় স্বামী ছাড়া - 
পর পুরুষের পরশ গ্রহণ করি নাই । 
   বন্য হয়েও আজ নিজেকে 
আমি ধন্য মনে করি । 
   কারণ আপনার সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্ঞী ,
ঐ পাঞ্চাল কন্যা পাঞ্চালীর 
   মান আবরু হরণের প্রতিশোধ যজ্ঞে - 
আমার কোল আর কূল - 
   আজ দুটোই শূন্য । 
আপনি তো পাঁচ মানিকের  মাতা ,
আমার কোলেতো  ছিল একটিই মানিক । 
  সেও আপনার পাঁচ মানিকের মধ্যণি -
ইন্দ্রপুত্র অর্জুন কে বাঁচাতে -
  সূর্য পুত্রের দ্বারা প্রেরিত 
 দেবরাজ ইন্দ্রের একাঘ্নীতে 
যমের চরণে নিজকে দিয়েছে অঞ্জলিতে ।
   আমার পুত্রবধু  অহিল্বতি 
    আপনার আর্যাবর্তের সাম্রাজ্ঞী - 
ধ্রুপদ দুহিতা দ্রৌপদীর থেকেও অভাগিনী ।
      সে তার স্বামীকে দিয়েছে 
  ধর্ম পুত্র যমের দুয়ারে বিসর্জন, 
বাঁচাতে আপনার যোগ্য পুত্রবধুর 
 সিঁথির গৌরব ও মান ।
    আমার কূলের তিন প্রদ্বীপ 
আমার পুত্র বধুর বুকের ধন ,
   আমার চোখের চাঁদ মানিক 
পৌত্র আমার অঞ্জনপর্বন - 
    মেঘবর্ণ আর বারবরিক ।
আপনার কূল বাঁচাতে তারা হয়েছে- 
  নিজ মাতা অহিল্বতি  কোল শূন্য  ।
ব্রজধামের ঐ নন্দের দুলাল ,
 যশোদার বুকের ধন - 
  বাঁকা কৃষ্ণ কানাই এর কালা যাদুতে 
   যুদ্ধ শেষে আপনার 
কূলের দীপক ছিল বেঁচে - 
  বিরাট কন্য উত্তরার উদরে।  
আমার কূলের দীপক তখন 
   ঐ বসু নন্দন বাসুদেবের বাঁশির বশে- 
মৃত্যুপুরী যমের দুয়ারে ছিল বসে । 
শত আত্মত্যাগের পরেও - 
 আমি, আমার কূল আজও 
  আপনার কারণে - 
সমাজের কাছে বন্য । 
 হে রাজমাতা ভোজবালা কুন্তি - 
আপনি আর আপনার কূলের শ্রী ধন্য ।
 পত্রের শেষে আবারও জানাই- 
    রাজমাতা ভোজবালা কুন্তীর চরণে 
রাক্ষস কূলের রাজকন্যা ,
  হিড়িম্ব ভগীনি হিড়িম্বার বিনম্র প্রনাম ।
আমার পরিচয় আপনার চোখে - 
   হস্তিনাপুরের বুকে কালো ছায়া । 
হে মাতা আপনার দ্বিতীয় পুত্রের স্ত্রী সত্য - 
   প্রথম হয়েও আমি আজ -
          " দ্বিতীয়া ।"

নিস্তব্ধ রাত


রূপঙ্কর পাল ✍️

হেঁটেছি একসাথে, বহু স্বপ্ন পার
তারার আলোর সাথে গল্প হাজার;
রাতের পর রাত, মুঠোফোনে জীবন
ভোরের আলোতে ঘুমের ছাপ,
এইতো যেনো সেদিন...

অমানিশার কালো ছায়া ঝাঁপটে ধরে,
আলো নিভে, হাতড়ে বেড়ানো সুখ―
প্রতি রাত নিস্তব্ধ, চারদিক শূণ্য
অন্য পথে তার হাঁটার শব্দ কানে
ভালোবাসার গলা টিপে হত্যা;

যোগ্যতার মাপকাঠিতে, 
হেরে যাওয়া সব, হিসাব নিকাশে
পরিণত শবে।

একটি সকাল


দিব্যেন্দু নাথ ✍️

যে ক'টা রাত 
শিশির ঝরে আকাশ হাল্কা হয় 
সে-ই তো শীতকাল 

তোমার শুষ্ক ঠোঁট 
প্রেমরঙা আলিঙ্গনে
সতেজ হয়ে উঠে লতা ভেজানো কুয়াশায়

আমি শুধু চেয়ে রই ধানভাঙা
নীল হারানো ধুয়াশাভরা মাঠে

টুস্-টাস্-হুস্ শব্দে 
শিশির বিন্দু ভেঙে 
বেজে উঠে পাতায় পাতায়
বিষাদের গান নাকি - মনভোলানো তান ওঠে
বুঝা মুশকিল !

প্রভাতী আর আজানের সুরে 
সূর্যটা-ও কেমন ভয়ে ভয়ে জাগে

তবুও 
গানে গানে মুগ্ধতা ছড়িয়ে 
পাখিরা-ভরবী গায় 

নৃত্যালাপে অলির সঙ্গে বিহঙ্গও সাজে
শিশির কণার নূপুর পায়ে

আমি শুধু চেয়ে থাকি
যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে
তোমার নীল হারানো ধূসর রঙা আঁচলে।

ট্রেন সফর


  সংগীত শীল ✍️

সকাল আটটায় সাব্রুম থেকে আগতলার ট্রেন। প্রত্যেকবারের মত আজও বাবু বাইকে করে স্টেশনে নামিয়ে দিল। টিকেটের লাইনে দাঁড়িয়েছি। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা সারি। আমি বরাবর পুরুষ সারিতে দাঁড়াতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যদিও মেয়েলোকের তুলনায় পুরুষের লাইনে অনেকটা ভিড়াভিড়ি থাকে। তবুও...

মনে আছে এখনো, বাড়ি ফিরবো; ট্রাফিক জ্যামে দেরি হয়ে গিয়েছিল। টিকেটের লম্বা লাইন থেকে বাঁচতে আর একটু কৌতূহলবশত মহিলাদের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ি। চারদিকে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল আমাকে নিয়ে। অবশ্য মহিলাদের তর্কে হারানোর সাধ্য খানিকটা কম। আমি চুপ থাকি। অবুঝদের আত্মপরিচয় দিয়ে সময় নষ্ট করতে ভালো লাগে না। দুয়েকজন বলছিল - "আফনে চোখে দেখেন না? পুরুষ মহিলার আলাদা লাইন"। 
আমি চশমা পড়েছিলাম, খুলে নিই। খানিকক্ষণ পর আরেকজন বলে উঠলেন- " আন্নের লাইন ত হিয়ানদি বেডিয়েতের লাইনে থিয়াইছেন কিল্লাই?" 

স্টেশনে পুলিশদের হাতে বেশ বড় লাঠি থাকে। টিকেট না কেটে ট্রেনভ্রমণ করা উচিত নয়। কেউ কেউ টিকেট কাটে না। অবশ্য পরিস্থিতির শিকার হলে আলাদা ব্যাপার। ধরা পড়লে শেয়াল বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। হাহাহা!
এদিকে শোরগোল বেশী দেখা দিতেই একজন মহিলা পুলিশ আমাকে বললো -"ওই লাইনে যাও"। 
আমার পিঠে ব্যাগ। এন.সি.সি জ্যাকেট পড়েছিলাম। আমি স্টুডেন্ট। ইংরেজি খুব বেশী না বললেও চলে যাওয়ার মত টুকটাক হয়ে যায়। Male, Female  এর পাশে পুরুষ ও নারী লেখাটা আমি দেখেছি।
মাস্কটা খুলে বললাম- আমি চশমা পড়ে দেখি, না পড়েও দেখি। কেউ আর কোনো কথা বললো না। সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিলো। কৌতুহল যেন উনাদের ভর করেছে।
এইসবের মধ্যে টিকেট কাউন্টরের সামনে চলে গেলাম। টিকেটটা নিয়ে খুব যে স্বস্তি পেয়েছি তা নয়। বরং একঝাঁক প্রশ্নের সন্মূখীন আর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল।

কাউকে বলিনা সেসব কথা। রোজদিনের কত ঘটনা! এগুলি আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। ভাবতে ভাবতে উদয়পুর এসে পৌঁছালাম। স্টেশন থেকে মায়ের মন্দির চূড়া দেখা যাচ্ছে। প্রার্থনা করলাম- "হে মা ত্রিপুরেশ্বরী  তোমার সন্তানদের একটুখানি  মানবিকতা আর বিচারবুদ্ধি দিও"।
এগুলির জন্য টাকা পয়সা কিংবা শিক্ষাদীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। অবশ্য কত শিক্ষিত মানুষরাই নির্বোধের পরিচয় দেয়, বলাবাহুল্য নয়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই দেখি সামনে কালো চশমা পড়া এক ভদ্রলোক বসে আছে। উনার চশমায় আমাকে দেখা যাচ্ছে। আমি চুলটা ঠিক করে নিলাম। 

 গতরাতে নিমন্ত্রণ খেয়ে শরীরে তাল পাচ্ছি না। না খেয়েই সফর। এই সফরে ঝাল মুড়ি, বাদাম চিড়া গ্রিন মটর, বয়েল চানা, চা, কফি, জল পাওয়া যাবেই যাবে। আজ কিছু মেলেনি। আমি আমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম। 

দূর্ভাগ্য! কি জানি মায়ের কাছে খুব বেশী চেয়ে ফেললাম নাকি!

প্রেম হয়েছে


    কৃষ্ণকুসুম পাল ✍️

কলম আমার হাতেই ছিল-
শুধু লেখালেখি ছিল না,
হঠাৎ পেলাম তোমার দেখা-
কলম খুলে লিখতে বসি,
কি যে হলো জানি না।
সে'ই যে লেখা শুরু হলো-
লেখা আর থামে না।
                #
আকাশ,বাতাস,পাখি নিয়ে লিখছে কত কবি,
আমার লেখা তোমায় নিয়ে ,
মনে তোমার ছবি।
বন্ধুরা বলে 'প্রেম হয়েছে', 
কি যে হলো জানি না,
তুমি আমায় বুঝিয়ে বলো,
রাতে ঘুম আসে না।
এখন আমার অল্প বয়স,
তোমারও তো অল্প,
কতজন প্রেম করছে-
শুনি তাদের গল্প।
কে কা'কে ল্যাং মেরেছে,
কে কা'র ঠ্যাং ভেঙেছে,
এখন ভীষণ একা লাগে,
আপন সব পর হয়েছে।
একা ছিলাম-ভালো ছিলাম,
পেতাম সবার ভালোবাসা,
এখন আমি কি যে করি,
এসো দু'জনে পালিয়ে বাঁধি
বাসা।
--------***********----------

শীতের মজা

 
 অমৃকা মজুমদার ✍️

ডিসেম্বরে শীতের বুড়ি 
ঠান্ডা আনে ঝুড়ি ঝুড়ি,
জাঁকিয়ে শীত পড়লে তবে
 চড়ুইভাতি হবেই হবে।
নদীর পাড়ে বনের ধারে 
শনি কিংবা রবি বারে,,
বই খাতা সব শিকিয়ে তুলে
 মাস্টার বাবুর শাসন ভুলে,
সবাই মিলে গাড়ী চড়ে
 ডিজে'র তালে হেলে পড়ে।
দিই ছুট সকলে মিলে 
শীতের এই সাত সকালে।
ভোজে বসি কলা পাতায় 
ডাল লেগে যায় জামার হাতায়।
উনুনেতে গরম করে
 ঠাম্মা দাদু হাতটি পরে।
হাড় কাঁপুনি ঠান্ডায় কাঁপে
 দুষ্ট টনি ওজন মাপে।
দিনের শেষে ফিরে আসি
 ছুটির মজায় শুধুই হাসি।

লিফট


        মাধুরী লোধ ✍️

ছুটতে ছুটতে লিফট এ দাড়ালো শমিতা ।সুইচ টিপলো তিন তলার ।দড়জা ধা করে বন্ধ হবার আগেই বাইরে সুইচ এ হাত রাখলো জয় । থেমে গেল লিফট , ঘামতে ঘামতে বললো  জয় সরি । আপনাকে আটকে দিলাম ।
মুচকি হাসি হেসে শমিতা বলে সিরিয়াসলি কিছু নেই । ওপরে যাচ্ছি আডডা দিতে । এখন লাঞ্চ ব্রেক ।
হাসলো জয় শমিতা । দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস আটকে যাচ্ছে দুজনের নাকে । 
শুরু হলো জানাচেনা , পরিচয় পরিচিতি ।জয় কাজ করে নিচের তলায় কম্পিউটার সেকশনের বড়বাবু । শমিতা ক্যাশ দেখছে  দোতলায় ।উপর তলায় বসেন   অডিটর যিনি ইনকাম ট্যাক্স এর কাজ দেখেন ।
এভাবেই অনেক দিন দেখা হয়েছে কথা হয়েছে ,হাসি মস্করা হয়েছে লিফট চড়ে তিনতলায় উঠতে গিয়ে । কাজে অকাজে বা আডডা দিতে গিয়ে ।
একদিন প্রেম নিবেদন করে জয় শমিতা কে । 
শমিতা বলে সম্ভব নয় । আমি প্রেম বিয়ে কিছুই করবো না । চাকুরী করছি অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাকে ।
জয় বলে দায়িত্ব পালন এর সাথে বিয়ে করবো না বিষয়টি মানায় না । বিয়ে একপ্রকার দায়িত্ব কর্তব্য । আমি ও চাকুরী করছি অনেক দায়িত্ব পালন করছি । দায়িত্ব কর্তব্য সমষ্টি গত । বিয়ে নিজস্ব বিষয় ।স্্সার সন্তান উত্তরাধিকারীদের পৃথিবীতে আনা যারা বৃদ্ধ বয়সে অন্ধের যষঠী হবে । শেষ বয়সে ঔষধি পথ্য বা সন্তান দের কাঁধে চড়ে শশান যাত্রার আশায় ।
লিফট এসে থামে নিচের তলায় । শমিতা চলে যায় চলন্ত অটো রিক্সায় ।
জয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তার মোটরসাইকেল এর সামনে । ছুটির ঘন্টা বেজেছে ।সবাই চলছে যে যার ঠিকানায় ।
পরদিন শমিতা আর জয় ,মুখোমুখি হয় লিফট এ ।হাসে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে ।
জয় বলে আমি কি তোমার যোগ্য ন ই  ,
শমিতা জয় এর হাত চেপে ধরে বলে ।যোগ্য , যথেষ্ট যোগ্য , একশো শতাংশ যোগ্য ।
লিফট ধা আ  করে তিন তলায় উঠে ।জয় আর শমিতার শ্বাসপ্রশ্বাস আর দু'জনের গায়ের দামী সেন্ট এর সুগন্ধি মৌ মৌ করে লিফট এর ধাতব খাপ খোপে । ।
প্রেম এদের দুজনের কোন  খোপে বাসা বেঁধেছে ,আকার আয়তন কি জানে না বুঝে না লিফট ।

আঙ্কেল

 

-জহরলাল দাস ✍️

গত তিনদিন ধরে পাশ্ববর্তী বাজারের হরিনাম সংকীর্তন উৎসবের জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে নিমাই।উৎসব কমিটির  সভাপতি, সম্পাদক ভজন, হারাধন, গোপাল সহ সবাই মিলে নিমাইকে বলে গেছে--" নিমাই তুই তো চাঁদা দিতে পারবি না। তাহলে তুই এক কাজ কর, চাঁদার বদলে উৎসবে তিন চারদিন কাজ করে দে। যে তিন চারদিন ওখানে কাজ করবি ওখানেই দু' বেলা খাওয়া দাওয়া করবি।উৎসব কমিটির দাদাদের সাথে আর বেশি বাক্যব্যয় না করে নিমাই ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে দেয়। 
দাদারা যাওয়ার পর নিমাই তার বউকে জিজ্ঞেস করে-- " কিগো টুটনের মা, তারা যে কইলো উৎসবের  চাঁদার বদলে তিন চারদিন কাম কইরা দিতাম। তুমি কিতা কও? আমি তো হেরার সামনে তোমারে কিছু জিগাইতাম পারছি না। কইয়া দিলাম- "করমু।"
 প্রশ্নের উত্তরে নিমাই- এর বউ বলল---" ভালই তো ।যাও না। চাঁদার বদলে তিন চারদিন কাম কইরা দিবা।আবার ঐখানে বলে তারা দুইবার কইরা খাওয়ন ও দিব। খারাপ কিতা।"
বউ-এর নিশ্চিত সমর্থন পেয়ে নিমাই পরদিন থেকেই উৎসবের কাজে যেতে থাকে।
এই শীত মরশুমে এই এলাকায় হরিনাম সংকীর্তনের সবচেয়ে বড় উৎসব। উৎসব শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই সাজো সাজো রব। পাশ্ববর্তী তিন চার গ্রাম থেকে লোক ভেঙে পড়ে উৎসবে। টানা সাতদিন উদয়াস্ত হরিনাম সংকীর্তনের আসর চলে। 
কত কাজ ওখানে। প্যান্ডেল বাঁধা। তাঁবু খাটানো। মানুষের বসার জন্য শুকনো খড় সংগ্রহ করা, বাঁশ,গাছ যোগাড় করা। মহাপ্রসাদ বিতরনের জন্য লাকড়ি, জল, পাতা ইত্যাদি কত কিছু সংগ্রহ করা।  
নিমাই আবার এসব গ্রাহস্থ কাজকর্ম ভালোই পারে। 
নিমাই পরদিন থেকেই উৎসবের কাজে প্রতিদিন নিয়ম করে চলে যায়। স্নান, খাওয়া সব ওখানেই চলে নিমাই- এর।
সকালে গিয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফেরে ।
বাড়ীতে শুধু তার একমাত্র বছর পাঁচেকের ছোট ছেলে আর বউ। এই তিনজন নিয়েই তাদের সংসার। গত বছর তার বৃদ্ধ মা মারা গেছে। 
এক পুত্র সন্তানের মা হলেও নিমাই- এর বউ এখনো ভর যুবতী।  শরীরের গঠন ও চেহারা-ছবি বেশ নজর কাড়া।
নিমাই একটু সোজা সরল মানুষ। 
সাত পাঁচে নেই। কাজ করে খায়। 
সাংসারিক কিছু টানাপোড়েন থাকলেও চলে যাচ্ছিল।
এ নিয়ে অবশ্য তাদের সংসারে কোন অশান্তি বা অসুখী দেখা যায় নি।
টানা চারদিন উৎসবের কাজ করে পরের দিন নিমাই একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে । 
বাড়ী ফিরে উঠোনে আসতেই দেখলো তার ছেলেটি ঘরের দাওয়ায় বসে একটি বাটিতে বড় বড় দুটো রসগোল্লা আর একটি সিঙ্গারা খাচ্ছিল। ছেলেকে এগুলো খেতে দেখেই একটু অবাক বিস্ময়ে নিমাই  জিজ্ঞেস করে---" কিরে বাবু এগুলো কোথায় পেলি? কে এনেছে?"
ছেলেটি খেতে খেতে তার বাবাকে বলছে--- " আন্কেল দিয়েছে, বাবা আন্কেল--- একটা আন্কেল!"
তুমি যখন বাড়ী থাক না তখন একটা আংকেল আমাকে আর মা-কে কতকিছু দিয়ে যায়। আমাকে আর মা- কে খুব আদর করে। "
এদিকে নিমাই-এর বউ ঘরের ভিতর থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে ছেলেকে টেনে ঘরে নিয়ে যায়। 
নিমাই তখনো ঘরের দাওয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবতে থাকে।ভাবতেই থাকে।

জীবন পথে


                       সুধীর রায় ✍️

নিয়েছি জনম আমি ধরার বুকে,
সময় বয়ে যায় সুখে দুখে;
উত্থান পতনের অবিরত খেলা!
প্রতি মুহূর্ত আসছে কাছে 
জীবনের সন্ধ্যা বেলা!

বুকের ভেতরে জমানো ব্যথা গুলো
পাথর চাপা দিয়ে-
চলেছি জীবন পথে......
কোনো এক অন্তিম মুহূর্তের অপেক্ষায়।

কেউ জানে না সে দিন আসবে কবে?
অথবা কখন?
কিছু স্মৃতি রেখে যেতে চাই, মানুষের তরে;
যেন ভেসে উঠে, আমি রইবো না যখন।

হাজারো কষ্ট বুকে, পাহাড় সম ব্যথা;
তবুও হাসি মুখে থাকি,কবর দিয়ে দুঃখ-ব্যথা!
অথচ কষ্ট গুলো জীবনের সাথে ছুটে!
কষ্টের এলোমেলো শব্দ গুলো কখনো বা কবিতা হয়ে ফোটে!!

একটু স্বাধিকার


  জনার্দন ✍️

তুমি যা' খুশি বলতে পারো;
আজ একা হাঁটতে মন্দ লাগছে না।

আমার একটু খোলা বাতাস চাই;
কোনো কথাই আজ শুনতে ইচ্ছে করছে না।

মেঘ ডাকছে একনাগাড়ে;
মনটা আজ বৃষ্টিতে নাচতে চাইছে।

মেঘলা বিকেলে আজ দু-চোখ আন্তরিক ;
একরাশ ঝড়কে যেন আটকে রেখেছে।

বাতাসের আছে স্বাধিকার, বইছে জোরে জোরে;
পথচারী ছুট লাগিয়েছে,যেন কতদিনের চেনা।

পাতাগুলি সব নেচে বেড়ায় , বৃষ্টি নামার আগে;
মেঘ জমেছে ঘন,যেন সাঁঝ বিকেলের আলপনা।

হাট

রেহানা বেগম হেনা ✍️

বেশ জমে উঠেছে হাট
ভিড় ঠাসাঠাসি, হাঁকডাক,
চলছে দাপাদাপি,
জাঁকজমক, জমজমাট।
পদযুগল ফেলা বড় দায়,
অনেকে বাইরে ঠায় অপেক্ষায়।

যে যার মতো সাজিয়েছে পসরা
দর কষাকষি, কোলাহলে মুখরিতেরা।
কেউবা হাঁকে চড়া দাম,
কেউবা নীরব – মূল্য কম
নীতি, নিয়ন্ত্রণ উঠেছে শিকেয়
অবাধে জিনিস মানুষ বিকয়।

দু' চারজন অবশ্য এখনও আছে স্থির
         ন্যায় নীতি বোধ আঁকড়ে স্থবির।
 বিকায়নি মেরুদন্ডহীনের ভিড়ে,
         প্রলোভন সাগর গভীরে।

যাক না সময় গড়িয়ে আরও কিছু,
       ওরা বদ্ধ পরিকর,
        নিজেদের বিবেকের প্রতি নিচু,
  নিয়েছে কঠোর ব্রত —
সময় বদলের অপেক্ষায়
    আজও আছে ওরা সদা জাগ্রত।

সাহিত্য প্রতিভার ভাবনায়

         চন্দন পাল ✍️

ত্রিপুরার সাহিত্য জগতে বাংলা ভাষায় কৃতিত্বের দৃষ্টান্ত রেখেছে বাইখোরার সুমন পাটারী। ২০২২ যুব পুরুস্কার, যা বিভিন্ন রাজ্যের নজর ও গুরুত্ব কেড়েছে।
  আরও কত কৃতি,  যুব থেকে বয়স্ক হয়ে গেছেন, আবার ভবিষ্যতে হয়ে যাবেন সঠিক সন্ধান ও বাছাইয়ের অপূর্নতায়। এই বাঁছাই  ত্রিপুরা তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের একটি উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব বলে মনে করি। আমরা জানি সাহিত্যপ্রেমী সুসমাজের সুসৈনিক। তারা সংখ্যায় যত বাড়বে ততই সমাজ দূষণমুক্ত হবে। শালিনতায় গতিমান হয়ে অন্যদেশের সাথে স্পর্ধাতুল্য চমক হবে। তাদের লালন সরকারের পিতৃতুল্য ভূমিকা বলে মনে করি দেশের স্বার্থে । এ ভূমিকা শুধু সাহিত্যে নয় সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে,, যেমনঃ নাচ গান খেলা কলা সেবা ইত্যাদি ইত্যাদি। 
  অবশ্যই স্থানীয় বোদ্ধা মহলের সহযোগিতা ছাড়া এ বাছাই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রতি জেলা বা মহকুমা থেকে তিনজন প্রথম সারির বা দ্বীতিয় সারির প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব এগিয়ে আসতে হবে যাঁরা গড়িষ্ঠমান্য ও অধিকতর নিরপেক্ষ। একটি লেখা তিনজনের কেউ একজন,,,  বুঝতে পারেনি! তা হতেই পারে না। বোদ্ধারা সাহিত্যপ্রেমী, পাঠক, প্রকাশক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, তথ্যআধিকারীকও হতে পারেন, এবং তাঁদের মান্য প্রচারও থাকবে। 
নির্বাচিত বোদ্ধাদের পরিচয় গোপন রাখা এবং তাঁদের  মাসিক বা বাৎসরিক সাম্মানিক দেওয়া আবশ্যক মনে করি, কারণ কাজটিতে মানসিক চাপ আছে। 
  কাজটির বিভিন্ন শাখা থাকবে ও প্রতি শাখায় নম্বর পদ্ধতি দেওয়া থাকবে। তিনজনের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে যে বেশি হবে সে বছরের সেরা ক্রমিক  হিসাবে গন্য হবেন। তাদেরও বাৎসরিক সাম্মানিকের ব্যবস্থা প্রয়োজন, উৎসাহের লক্ষ্যে। এখানে বিচারকও সাহিত্য রচনার দলে থাকতে পারবেন। আর যদি বিচারক সেরা নির্বাচিত হন সেক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত সাম্মানিক অর্ধেক হলেই ভাল হবে কারণ তাঁর একটি বাঁধা সাম্মানিক রয়েছে।

যে শাখাগুলি বিচার করতে হবে,,, (১০ নম্বরের মধ্যে) 
 সেগুলি হতে পারে,,৷ ১)লেখা ও আচরণের মিল, ২)নিয়মিত কিনা, ৩)বিষয়বার্তার গুরুত্ব, ৪)শিল্পেররূপ, ৫)গঠনপ্রয়োগ, ৬)ভাষা'র সেবা, ৭)শুদ্ধ ও সচেতন সাহিত্যের মাত্রা,,, ইত্যাদি ।
গল্প প্রবন্ধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাময়িকী পত্রিকা বই ও মুঠোফোনে সক্রিয়তার পাশাপাশি উপরোক্ত শাখাগুলির  অর্জন দেখা যেতে পারে ।

নতুন শুরু

জয়জীৎ সুর ✍️

সব দুঃখ কে ভুলে গিয়ে, 
সব কষ্ট কে পিছনে ফেলে, 
চলো আমরা সবাই মিলে, 
করি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। 

যেখানে থাকবে না কোনো, 
শোক, কান্না কিংবা হাহাকার। 
থাকবে শুধুই মানুষের মুখে, 
একটি ঝলমলে হাসির টান। 

থাকবে না আর কেউ ক্ষুদার্ত, 
মিটে যাবে সবার খিদের জ্বালা, 
আবার ধন-ধন্যে ভরে ওঠবে 
আমাদের এই বসুন্ধরা। 

আবার আমরা সবাই মিলে, 
আনন্দে কাটাবো নতুন দিনগুলো, 
আবার আমরা একত্রে মাতবো উল্লাসে, 
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে। 
                    

ত্রিনাথের নাথ

 মায়া রানী মজুমদার ✍️
     
সজ্জিত হয়ে লজ্জিত হই 
                    এসে তব ভুবনে, 
তব বদন পানে দেখতে নারি
                   শঙ্কিত দুই নয়নে।
কৃষ্ণ-বর্ণ কৃষ্ণ তুমি
                   ত্রি-জগতের পতি, 
তোমারে পূজিতে তাই 
                       সবাই হয় ব্রতী।
সকল দুঃখ নাশিতে
                  অসীম তব ক্ষমতা, 
দুঃখের কথা বলতে
                  মুখে আসে জড়তা।
মোচন করো দুঃখ সবার
                  তুমি ত্রিনাথের নাথ, 
সুস্থ থেকে ধরবো মোরা 
                      সবাই হাতে হাত।
পুষ্প চন্দন তাই তো 
                   তোমায় দিয়ে যাই, 
রেখো মোদের কুশলে 
                   এই তো মোরা চাই।
চতুর্ভূজ তুমি হরি 
               হরেক রকম নাম তব, 
তোমারে পূজিতে তাই 
                   আসে মনুষ্যরা সব।
আশির্বাদ দাও সবারে
                   প্রভু ত্রিনাথের নাথ, 
তুমি সৃষ্টিকর্তা, তুমিই ধ্বংসকারী
                 তুমিই স্বয়ং জগন্নাথ।

মা

অংকিতা বর্মণ ঘোষ ✍️

মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি;
হাসিতে খুশিতে স্বর্গসুখে পাগলী।
যে-ই মেয়ে কোন একদিন;
হাসপাতাল,ঔষধ, বড়ি,ইনজেকশন;
নামেতেই হত অতি নারাজ ।
আজকাল এতো প্রতিদিনের কাজ।
তবুও খুশিতে পাগলী ভাব।
আজকাল বমি যখন তখন;
এটা খাবিনা ওটা খাবিনা;
এখানে সেখানে যখন তখন;
আসা যাওয়া আর হবেনা।
সব মানে আনন্দে উৎফুল্লে।
নারী বলতেই কেশকে ভালোবাসে;
মা হতে হলে কেশও ঝরে।
জ্বর,সর্দি,কাশি যাইহোক;
ঔষধ নিলে শিশুর আঘাত হবে;
এই ভয়টি সকলের থাকে।
শত ব্যাথা শত যন্ত্রণা;
কখন আসে কখন যায়;
মায়ের মমতায় বলতে পারেনা।
সবচেয়ে বড়ো যন্ত্রণা তখন;
সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে যখন।
৪৫-৪৭ ইউনিটের অধিক ব্যথায়;
মনবজাতিকে প্রাণহীন বানায়।
তবে সন্তান ভূমিষ্ঠের ক্ষণে;
৫৫-৫৭ ইউনিট পর্যন্ত ব্যাথা;
কুড়ি'টি হাড় ভাঙার যন্ত্রণা;
মায়েরাই কেবল সহ্য করে;
সন্তান সুখ দেয় ঘরে ঘরে।
তবুও বড় হয়ে মাকে বলে;
তুমি কি দিয়েছ?তুমি কি করেছ?
আরে বোকা, তোদের প্রাণ দিয়েছে!
তাইতো বলে মায়ের চরণে স্বর্গসুখ রহে।
মা রূপেই ভগবান ধরিত্রীর বুকে।

করিমগঞ্জের শতাব্দী প্রাচীন জয়কালী মন্দির

বিপ্লব গোস্বামী ✍️

করিমগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক রণভূমি মেলেগড়  যাওয়ার পথে লাতু বাজারের কাছেই রাস্তার ধারে আছে শতাব্দী প্রাচীন একটি কালী মন্দির।মন্দিরের নাম হলো জয়কালী মন্দির।অনেক আকর্ষণীয় মন্দিরটি।মালেগড় যাওয়ার পথে দূর থেকে মন্দিরের চূঁড়া দেখতে পাওয়া যায়।আমি মালেগড় ভ্রমণ শেষে ফিরে আসার সময় এই মন্দিরে গিয়ে মা কালীকে প্রণাম করে আসি।মন্দিরে প্রবেশের পথে মোট তিনটি গেট আছে।রাস্তার পাশেই রয়েছে মন্দিরের প্রথম গেট।সেই গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।তারপর পাওয়া যায় দ্বিতীয় গেট।এই গেটের উপরে রয়েছে দুইটি ময়ূরের মূর্তি ।এই গেট পাড়ি দিয়ে মূল মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হয়।মন্দিরের সম্মুখেই রয়েছে একটা পুকুর।মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় সিংহদ্বার পাড়ি দিয়ে।ভেতরে রয়েছে মা কালীর পাথরের মূর্তি।দেবী মা এখানে দক্ষিণা কালী রূপে পূজীতা হন।প্রতিদিন মায়ের নিত‍্য পূজা দেওয়া হয়।আমার ভাগ‍্য ভালো মায়ের নিত‍্য পূজার আগেই মন্দিরে পৌঁঁছে যাই।আমি পুরোহিত মশাইয়ের কাছ থেকে প্রসাদী ফুল আর আশীর্বাদ চেয়ে নিলাম।
          মন্দিরের বর্তমান পূজারী অন্তু রঞ্জন ভট্টাচার্য্য।তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে  মায়ের সেবা পূজায় ব্রতী।উনার কাছ থেকে জানতে পারি এই মন্দিরটি প্রায় আড়াইশো বছর আগের প্রতিষ্ঠিত।আড়াইশো বছর আগে মা কালী তাঁর এক ভক্তকে স্বপ্নাদেশে তাঁর পাথরের বিগ্ৰহ যোগছড়ার কাছে বট গাছের নিচে প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দেন।দেবী মায়ের আদেশ মতো সেই ভক্ত এখানেই যোগছড়ার পাড়ে বট গাছের নীচে ( বর্তমান যেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত) দেবীকে প্রতিষ্ঠিতা করেন।সেই থেকেই মা কালি এখানে দক্ষিণা কালি রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন।বর্তমানে যে মন্দির আছে তা ১৪০৫ বাংলায় নির্মাণ করা হয়। 
       মূল মন্দিরের আছে পাঁচটি চূঁড়া।মন্দিরে প্রাঙ্গণের ভিতরে দেবী মায়ের মন্দির ছাড়াও আছে আরো দুইটি মন্দির।একটি হনুমান মন্দির ও অন‍্যটি শনিদেবের মন্দির।মূল মন্দিরের দেয়ালে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য।উচুঁ বেদির উপর বিন্দাদেবী স্থাপিত।গর্ভগৃহে রয়েছে দেবী মায়ের পাথরের মূর্তি।পুরোহিত মশাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারি প্রথম অবস্থায় মায়ের মূর্তির আকার ছোট ছিল।পরে মা কালীর আশীর্বাদে তিলে তিলে মূর্তি বড় হতে থাকে।মা কালী এখানে খুব জাগ্ৰত।ভক্তদের বিশ্বাস দেবী মায়ের কাছে  মানত করলে ফল পাওয়া যায়।তাই এখানে দূর থেকে ভক্তদের আগমণ হয়।লাতু বাজার থেকে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া যাওয়া  জয়কালী মন্দিরটি।

ভালো লাগা না লাগা

অপর্ণা সিনহা ✍️

আকাশ জানে রঙ নেই তার
কুচকুচে সে কালো
সবাই বলে নীল রঙা সে
ভাবতে লাগে ভালো।

চাঁদের যত রূপ আছে আর
তেমনই তার দাগ
ভাল্লাগেনা দিনের শেষে
করিস যখন রাগ!

স্বপ্ন আমার বাগান জুড়ে
ফুটছে রঙিন ফুল
চোখ খুলতেই কাঁটার ক্ষত
জীবন জুড়ে ভুল!

তোমার ডানা ঋণ করেছি
একটু দেখি উড়ে
সোনার কাঠি ছুঁয়ে দিলেই
ঘুম আসে যে ভোরে।

বনের পাখি বন্দী হলে
কষ্টে কাঁদে খাঁচা, 
শিকার যেন দু'হাত তুলে
বলে বাঁচাও বাঁচা!
                      

অতীত জীবন

 চিন্ময় রায় ✍️

 ছোট থেকেই শুনি যে মুই,
 মানব জীবন সুখের হয়।
 ছোটবেলায় ভয়ের জিনিস!
 ভয়-ও পেতাম মনে হয়।
 কারো কাছে অতীত হয়তো বেঁচে থেকে অর্তনাদ,
 কারো কাছে বর্তমান আজ,
 সূর্যালো ও সুপ্রভাত।
 অতীতে বড়ই কষ্টদায়ক,
 অতীত আবার হাহাকার।
 কষ্টদায়ক জীবন পেরিয়ে,
 বর্তমানের সুখ সংসার।
 অতীতে যিনি রাজা ছিলেন, বর্তমানে ভিখেরি!
 অতীত বড়ই কষ্টদায়ক,
 চোখে জল আসে ভারী।
 অতীত মোদের বাঁচতে শেখায়,
 অতীত সঠিক রাস্তা দেখায়।
 তাইতো বলি অতীতে থেকে শিক্ষা নিও ভাই,
 বর্তমানে চলতে গেলে,
 অতীতে ছাড়া গতি নাই।

Golden Letter

 
Raja Debroy ✍️


Dear Santa,
 
Next time you give me new life. 
Give me the wisdom to think. 
Give the ability to think logically. 
Give me the ability to create. 
This is what I want from you next time. 
Will you give me Santa? 
Stay well, stay healthy.

Your loving guy 
Raja Debroy

হারিয়ে যাওয়া মানুষটা

সুমিতা বর্ধন ✍️

ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির জল জমিয়ে
মনের ভেতর বানিয়েছিলাম
মস্ত এক পুকুর,
সেই পুকুরের স্বচ্ছ জলে
ডুব দিয়েছিলাম  কবেই,
পানকৌড়িদের সাথে জলকেলিতে
মেতে উঠেছিলাম ,
ভীষন সখ্যতা সেই পানকৌড়িদের সাথে
কিন্তু হঠাৎ সেই জলে ডুব সাঁতারে
হারিয়ে গেলো  ভালবাসার  পানকৌড়িটা,
বুকের ভেতরের  পুকুরটা কেমন শুকিয়ে গেলো,
মরুভূমির চরে হাঁটতে হাঁটতে
মরীচিকার তীব্র আলো তে 
হঠাৎ ই অনুভব করি
আমিই   হারিয়ে  যাওয়া সেই মানুষটা।

এখনও এমন হয়

 কল্যানী ভট্টাচার্য্য ✍️

আমাদের কমপ্লেক্সে নানা ধর্মের লোক আছে। তাই প্রতি বছর দুর্গোপূজো,ঈদ,বড়দিন সবাই মিলে পালন করি। এরই মধ্যে আমাদের কমপ্লেক্সে এক নতুন দম্পতি এল ট্রান্সফার হয়ে। দুই বছর হল তাদের বিয়ে হয়েছে। এখন এডভান্স স্টেজ। আবাসনের মাঝখানে একটি ছোট পার্ক আছে। সেখানে বিকেল হলে ছোটরা সবাই মিলে হৈচৈ করে খেলাধুলা করে। ইন্দ্রাণীর (নতুন দম্পতি) বেশ ভালই লাগে এইসব। একদিন হয়েছে কি পার্কে যখন বাচ্চারা খেলা করছে তখন ইন্দ্রাণী দেখতে পেল পার্কের এক কোনায় একটি বাচ্চা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সে আস্তে আস্তে বাচ্চাটির কাছে গেল। গিয়ে তার কান্নার কারণ জানতে চাইলে বাচ্চাটি বলল ওর নাম যীশান। কিছুদিন আগে তার মা মারা যায়। বাবা ওকে ক্রেশে রেখে অফিস করে। তাই তার জন্মদিন আর কেউ পালন করে না। ইন্দ্রাণী বলল তোমার জন্মদিন কবে। সে বলল আগামী ২৫শে ডিসেম্বর। ইন্দ্রাণী বলল আমি তোমার জন্মদিন পালন করব। তুমি একদম কাঁদবে না। ইন্দ্রাণী ঘরে ফিরে সকলের সামনে কথাটি বলল। শুনে সকলে খুব খুশি হল। যীশানের বাবাকে খবর দেওয়া হল। তিনি এসে সবকিছু জেনে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কাঁদছেন। ঠিক হলো ২৫শে ডিসেম্বর এই পার্কেই যীশানের জন্মদিন পালন করা হবে। ইন্দ্রাণী নিজের হাতে পায়েস রান্না করেছে এবং একটি বড় কেক বানিয়েছে। আবাসনের সব বাচ্চাদের নিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় পার্কে ইন্দ্রাণীর পরিবার উপস্থিত হল। ঠিক সময়ে যীশান কে নিয়ে তার বাবা হাজির হয়। যীশান কে খুব সুন্দর জামা পড়িয়ে মাথায় সান্তা ক্লজ টুপি পড়িয়ে দিল ইন্দ্রাণী। রং
বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয় পার্ক। ইন্দ্রাণীর ঘর ও সাজানো হলো নানা রঙের বেলুন দিয়ে। সবার সামনে কেক ও পায়েস নিয়ে হাজির হল ইন্দ্রাণী। যীশান কেক কাটার সাথে সাথে বাচ্চারা গান ধরল Happy birthday to you.যীশান কে কেক এবং পায়েস খাওয়ানো হল। সেখানে ইন্দ্রাণী সকলের সামনে বলল এখন থেকে যীশানের আরেক মা ইন্দ্রাণী। সেদিন সবাই খুব খুশি হল এবং সকলে মিলে খুব আনন্দ করল। তারপর যে যার ঘরে ফিরে গেল। রাত ঠিক বারোটায় ইন্দ্রাণীর প্রসব বেদনা উঠে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ইন্দ্রাণী এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। সকলে খুব খুশি। যীশান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন তার ছোট মা ভাই টাকে নিয়ে আসবে। ইন্দ্রাণী যখন বাড়ি আসল তখন যীশানের আনন্দ কে দেখে। যীশান তার ভাইয়ের নাম দিল কীষান। তখন থেকে যীশান কীষান একসাথেই থাকে। ইন্দ্রাণী মনে মনে বিড়বিড় করে বলে এখনও এমন হয় বুঝি।

শেষ দেখা, শেষ স্মৃতি

ভোলা(সুশীল দাস) ✍️

       স্মৃতিগুলি যখন মনে পড়ে আবেগকে আরেকটু খোঁচা দিতে ইচ্ছা করে, যতটুকু না হয়েছে 
তার থেকে একটু বাড়িয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে।
মহাসাগতিক বস্তুগুলি কেবলই চলমান, চলতেই আছে, চলতেই আছে কিন্তু আমাদের জীবনের কোন্ এক সীমানায় থেমে যেতে হয়।
 টানতে হয় নিজেকে ইতি, বলতে হয় আর নয় এখানেই শেষ।  বোধহয় এমনটা হওয়ার কারন, শেষ হলেই শুরু হবে নতুন কিছুর।

অনেক বছর হয়ে গেল দেখা হয় না, এখন মুঠোফোনেই দেখা ও কথা হয়, তবে অনেক কম। 
শেষ কবে দেখা হয়েছে মনে নেই, তবে মনে পড়ে সেই দিনটির কথা।
তুমি শেষ কথাটুকু বলতে এসেছিলে সেদিন, কিন্তু আমার একটুকুও মনে হয়নি সেদিনই ছিল শেষ দিন।
সেদিন কোন এক মায়ার টানে তুমি এসেছিলে, আজ তুমি নেই কিন্তু আমি বিশ্বাসী আমি যে মায়ার টান তৈরি করে দিয়েছি তা এখনো ফুরিয়ে যায়নি তোমার মধ্যে।
অনেক যুগ পর কোনদিন যদি আমাদের দেখা হয় তবে একটুর জন্যও আমার মনে হবে না যে দীর্ঘদিন পরে আমাদের দেখা হয়েছে, মনে হবে এইতো সেদিন মাত্র আমাদের দেখা হয়েছিল। সেই পুরান তোমাকে আমি ফিরে পাবো, সেই মায়ারটানের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আমি দেখতে পাবো না।  
সেদিন তুমি মুখে বেশি কথা বলোনি, তবে তোমার মন, তোমার চোখ অনেক কিছু বলছিল। 
 তোমাকে আমার করে পেতে পারেনি কিন্তু সেদিনই ছিল "আমার হয়ে" তোমার সাথে আমার শেষ দেখা।
সেই দিন তোমার হৃদয়ে ছিল কিছু পাওয়ার আনন্দ ও আমাদের বিচ্ছেদের শোক। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের মতো কিংবা উপন্যাস লেখার মতো বড়ো প্রেম কাহিনী না হলেও একটি ছোট গল্পতো হতে পারে আমাদের নিয়ে। রাধা- কৃষ্ণের যদি মিলন হতো তবে তা প্রেম কাহিনী হতো না, আমাদের যদি মিলন হতো তবে "শেষ দেখাটি" শেষ স্মৃতি হতো না, অসমাপ্ত গল্প ও হতো না।

কালের নিয়মে

সুজন দেবনাথ ✍️

জীবন নামের রেল গাড়ীটা
ছুটে চলছে অবিরাম,
পৃথিবী নামের এই স্টেশন চত্বরে
কোনো বিরামের স্থান নেই,
শুধু নেওয়ার চেষ্টায় ব্যাস্ত সে গাড়ী।

যতক্ষণ আছে ইঞ্জিনে দম 
ততক্ষণই সে দৌড়ন্ত,
এই স্টেশনে দেখেছি শূণ্যপতি থেকে
কোটিপতি সকলেই একই পথের বাঁকে,
এখানে অনন্ত নিয়মে চলছে অবিরাম 
নিত্য আসা যাওয়ার খেলা।

কেউ খেলতে আসছে, আবার কেউবা 
খেলা শেষে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায়, 
ফেরা অনিবার্য কেউ আগে আর কেউ পরে।
ফেরার টিকিট হাতে নিয়েই তো সবার
এই স্টশনে ভীড় জমানো।

পাওয়া, না পাওয়া, শূন্যতা, পূর্ণতা
এসবের হিসেব কষে আর লাভ কি?
এই স্টেশনে তো সবার শূন্য হাতে আসা
অথচ পূর্ণতার অন্তিম লগ্নেও সেই শূন্যতা!
তবুও এই ব্যস্ত ভূখণ্ডে, ব্যস্ততার ভিড়ে
ব্যস্ত জীবন কালের নিয়মে।

গোত্র বিসর্জন

সুচিত্রা  দাস ✍️

সূর্য  জ্বলছে ধিকিধিকি গহ্বরে ক্ষতের নক্ষত্রের বসত ভিটা।
বছরের পর বছর কাটে ঘষামাজায় সন্ধ্যেটা নিকষকালো রাত্রি নামায়।

 অভিমন্যুর বৃত্তস্থরা কখনো কখনো আশ্বিন মুখি হয় ; কেউ চিলেকোঠায় নিমজ্জিত  অবসাদে মাথা চেপে ধরে 
তেলচিটে  বিছানায়  স্বপ্ন দেখে রাজসিংহাসনের।

একাদশীর বাঁকা  চাঁদ মুচকি  হাসে, স্বপ্নের মহীরুহ  পুড়ছে তোমার  আমার,পৃথিবীর  বৃত্তটা ডিম্বাণুর জন্ম দেয় আমাজনের অক্সিজেনে।

আধোয়া পা দুটো মালকোচা ধুতির আড়ালে লাথি মারে  নিকষকালো রাত্রিটা তখন ভয়ংকর।

চমৎকার  সেই দৃশ্য  জুড়ে বেলোয়াড়ি ফোয়ারার  ফানুস উড়ে বহুতলের ছাদে।

মাটির বিয়োগ  ব্যথায় আকাশ  একঢোক জল গিলে।

ধর্ম বর্ণ কোথায়  গীতা  ভাগবদ, মহাভারতের শকুনির কলা কৌশল নদীর কলকল স্রোতে বয়ে যায় কতশত ডিম্বাণু ;  দুর্যোগের ঘনকালো ছায়া বৃত্ত ঘিরে ধরে আধ্যাত্মিক  যোগ  খুঁজে  গরীবের দল।

কখনো বা সধবারা বৈষ্ণবী হয়ে  উঠোন পেরিয়ে শিথিল  করে দেবে বুকের  ইতিহাস।

আর যাই ঘটুক  সভ্যতার বাউন্ডুলে হৃদয়  তপ্ত  মহাকালের গহ্বরে  গোত্র বিসর্জন  দিয়ে পড়বে হয়ত সাদা থান।

পরম বন্ধু

সুপর্ণা মজুমদার রায় ✍️

বৃহত্বের সাথে আমিত্বকে
বিলিয়ে দিতে চাই, 
আত্মাকে আজ পরমাত্মার
বন্ধু বানাতে চাই। 
পরমাত্মার ক্ষুদ্র কণা 
আত্মাকে সবে জানি, 
পরমাত্মাকে কজনই বা 
বন্ধু বলে মানি? 
প্রকৃতি তো তাঁরই রূপ 
সৃষ্টি স্থিতি লয়, 
বৃহত্বের মাঝে সবই স্থিত 
বৃহত্বের মাঝেই ক্ষয়। 

-----------*******------------

রাত

পান্থ দাস ✍️

খুঁজি যে
একাকীত্বে তোমায়
ক্ষণে ক্ষণে,

অপেক্ষার 
বাঁধ যে ভাঙে,
পড়ে যখন
সন্ধ্যা রাতে
খুব মনে।

দিন যে 
অসহায়
রাতকে খোঁজে,

প্রহরীরা ভাবে,
দিনের তীব্র আলোয়
দিনকে
গভীর রাত করেছে।

শীতের ভোর

মনচলি চক্রবর্তী ✍️

শীতের শিশির ভেজা  ভোরে রোদ আর
কুয়াশার চলছে দারুণ খেলা। 
সোনালী ধানের গাছের শীষে
সোনা রোদ জড়িয়ে সাদা মেঘের ভেলা ।
হিমেল বাতাসে ভেসে 
পাখিরা যায় দূরে পাখা মেলে।
মাঠে কাটছে চাষিরা  সোনার ফসল
 ডিঙ্গি নিয়ে ভেসে যায় মাছের আশায় জেলে।
নতুন চালের পিঠেপুলির গন্ধ ভেসে আসে 
চারপাশে ।
 মন ভরে উঠে  পৌষের তেলেভাজা, আর
নলেন গুড়ের পায়েসে।

অবহেলিত পিতা


অভিজিৎ চক্রবর্তী ✍️

যে বাবা জন্ম দিলো মানব শিশুকে। 
তিলে তিলে মরছে বাবা হীন নরকে।। 
নিজের রক্তে শিশুকে তিনি করেছেন লালন পালন । 
সে শিশু আজ বড়ো হয়ে করছে বাবাকে শোষণ।। 
নিজে না খেয়ে কাঠ হয়ে শিশুকে করালেন ভোজন। 
সে শিশু আজ জীবন্ত পিতার করছে অন্তদহন।। 
প্রতিটি চাহিদা  নিঃস্বার্থে করেছেন বাবা পূরণ। 
ছেলের হাতে তিলে তিলে হচ্ছে তাহার মরণ।। 
ভোগবিলাসী ছেলে তাহার মাটিতে পড়ে না পা। 
কথায় কথায় শিখেছে দিতে পিতার আর্তে ঘা।। 
বড়ো হয়ে ছেলের যখন হয়ে গেলো বিয়ে। 
বউয়ের কথায় বাবার চোখে অশ্রু পড়ে বেয়ে।। 
সংসার করেছে ছেলে, পৃথক হতে চায়। 
মা বাবাকে দূরে ফেলে সুখের নৌকা বায়।। 
চুপটি করে মুখ বুঝে  কান্নায় ফেটে পড়ে। 
ছেলে আমার বউয়ের কথায় গেলো দূরে সরে।। 
সন্তান আজ ভুলে গেছে অতীতের সেই দিন। 
অদ্ভূত রূপে শোধ করল বাবা মায়ের ঋণ।। 
বাবা মা আজ নতুন করে সংসার বানাবে । 
শহর থেকে রিক্সায় চেপে বৃদ্ধাশ্রমে যাবে।। 
আরও কত কীর্তি সন্তানের মা বাবা আছেন চেয়ে।। 
একই সাথে থাকবে দুইজন সঙ্গী সাথী নিয়ে।

সর্বনাশা ফোনের নেশা

প্রতীক হালদার ✍️

ফোন ছাড়া আর চলবে নাকো 
ফোন না থাকলে সবই অচল,
বাজার জুড়ে রাজত্ব তার
তাকে পেলেই জীবন সচল।

ফোনের সাথে রোগ-ব্যাধিরা 
আজ যে বাড়ির দোর গোড়ায়,
অ্যাপগুলোও চালাক ভীষণ 
খুব সহজে মন ঘোরায়।

যন্ত্রণাটা হচ্ছে ঘাড়ের 
সমস্যাও চোখে ,
ঘুমের কথা ভূলে গিয়ে 
দু-চোখ ফোনে ঝোঁকে।

মনের ও যে হচ্ছে ক্ষতি 
পড়ছে ভীষণ চাপ,
ফোনের জন্য যায় এগিয়ে 
তবু সমাজটা এক ধাপ।

ফোন না হলে ঘুম আসে না
হয় না খাওয়া-দাওয়া,
ফোনের নেশায় মত্ত সবাই 
ফোনই চাওয়া-পাওয়া।

অতৃপ্ত আশা-আকাঙ্খা

স্বপন দেবনাথ ✍️

আমার অতল গহ্বরে,
প্রত্যহ সৃষ্টি হয় কতগুলো অতৃপ্ত আশা-আকাঙ্খা ,
যার পূরনের প্রত্যাশা দেয় না চ‌‌ক্ষুবৃন্ত দুটো বুঝতে।
প্রতিটা রাতের অন্ধকারে তাদের আমি
দেখতে পাই - কুয়াশার অন্তরালে ; আর 
আবর্তিত হয় আমার চতুর্দিকে।

জীবন পথ

মিতা বন্দোপাধ্যায়✍️

অসময়ে জীবন বলিদান এক সামাজিক রোগ ,
সুন্দর বলিষ্ঠ প্রাণটাকে নিমজ্জিত  করে গোঁড়ামির অন্ধকারে ।
শত বিদ্রুপে তৃষ্ণার্ত হৃদয় ব্যকুল হয়ে ওঠে ,
মূর্খতায় নষ্ট হয় পরিমিত  গৃহস্থালীর প্রদীপ ।
প্রতিদিন অনন্ত আকাশ দিয়ে যায় কত , রকমের স্বপ্ন ,
এই বোবা কালা সভ্যতার যদি হতো নির্বাসন
মন বাগিচা ভয়ে শিউরে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে ,
জীবন নদীর বাঁকে কত স্মৃতি ভরে থাকে ।
মোহনার পথ গরিয়ে যায়  প্রায় সময়ের আগে ,
বুকের আগুন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সয়না।
জীবন সাম্রাজ্যে অমলিন মায়াজালে রেখো স্বজন সৃজন স্মৃতি ,
সুখ নদী পার হয়ে যায় অনায়াসে ;
দুখের মাঝি পার হতে পারেনা পার হতে  কিছুতেই , সহজে।

অজানা ভালোবাসা

মিঠু মল্লিক বৈদ‍্য✍️


আমি ভালোবাসি বলে জোড় করবো না কখনো
তবে ওকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম একদিন,
ওর শীতলতায় নিজেকে নিয়ে যেতাম শান্তির ঘরে,
প্রখরতায় জ্বলে উঠতাম জ্বলন্ত অঙ্গারের মতো।

নিরহংকার চলনে খুঁজে নিতাম সুখ,
মাধুরীতে জীবন সুবাস, দীপ্ততায় তৃপ্তি।
সুমধুর বিভূষণে বাঁচার রসদ, আর নীরব
চাহনিতে এগিয়ে চলার মন্ত্র।

সত‍্যি বলছি; ভালোবাসি বলে জোড় করবো না,কারণ  আমি জানিই না ওকে কি করে ভালোবাসতে হয়।
জানিনা ওকে ভালোবাসার মতো স্পর্ধা আছে কিনা,
জানিনা ওর পাশে আমায় মানাবে কিনা !

তবে হ‍্যাঁ ; ওকে ছাড়া কেমন যেন ছন্নছাড়া আমি,
ওকে নিয়ে ভাবতে, স্পন্ধিত হৃদয়ে ভালোবাসার 
আগুন জ্বালিয়ে শব্দালঙ্কারে ঊর্বশীর রূপে
সাজিয়ে তোলে কেমন যেন তৃপ্তি অনুভব করি।

কারণে অকারণে ওকে নিয়ে অহেতুক মাতামাতিতে
ধমনী করে টগবগ, বয়ে যায় রক্ত প্লাবন।
সে আমার একান্ত প্রিয়, প্রাণপনে অনুভব করি 
বিন্দু মাঝে সিন্ধু দর্শন ওর গভীরতায়।


সে যে আমার ভালোলাগার কবিতা, অজানা ভালোবাসা।