মায়ের সার্টিফিকেট

   ✍️ প্রসেনজীৎ সাহা

অদিতির বিয়ে হয়েছে আজ আট বছর হলো। অদিতির ছেলে রিদ্ধিমান এর আজ প্রথম স্কুল।অদিতি আজ সকাল থেকে খুব ব্যস্ত। সকাল থেকে রান্নাঘরে গিয়ে সকলের জন্য আলাদা আলাদা জলখাবার তৈরি করছে সে। শ্বশুর মশাইয়ের মিছরির জল, স্বামীর জন্য কফি, শাশুড়ি মায়ের ঘন করে দুধ চা, সব‌ই একা হাতে তৈরী করছে সে, ওইদিকে আবার ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরী করতে হবে, স্বামীর অফিসের টিফিন গুছাতে হবে। এ সব কিছুই যেন তার দায়িত্ব। অদিতি যেন এই পরিবারের ব‌উ নয়-একটা টাইম মেশিন। সকাল থেকে এত কিছু করার পর যখন ডাইনিং টেবিলে জলখাবারের মধ্যে চিঁড়ের পোলাও তে লবন কম হয়েছিল তখন কেউ তাকে কটু কথা শুনাতে ছাড়েনি। এইটা অদিতির জীবনে নতুন ঘটনা নয়, আটবছরে বহুবার শুনেছে সে এই কথা গুলো। তবুও সে কিছু বলে না, সে মনে করে তার ছেলে বড় হলে তার সব দুঃখ দূর হবে। এইভেবে সে ছেলেকে বড় করতে থাকে। আজ তার ছেলের আটাশ বছরের জন্মদিন, সে এখন একজন সরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মী।তার জন্মদিনে এসেছে বহু মানুষ যারা খুবই শিক্ষিত। সেখানে অদিতি অনুষ্ঠানের সব খাবার তৈরি করে ছেলের জন্মদিনের কেক কাটা দেখবে বলে সাধারণ ভাবে সে সবার সামনে চলে আসে। যখন তাকে দেখে সবাই রিদ্ধিমান কে জিজ্ঞাসা করছিল যে ইনি কে ? তখন রিদ্ধিমান বলে ইনি হচ্ছেন আমাদের বাড়ির আশ্রিতা মহিলা, ওনার স্বামী-সন্তান ওনাকে পছন্দ করেন না,তাই ইনি আমাদের বাড়িতে থাকেন। ছেলের মুখে এই কথা শুনে অদিতি আর নিজেকে আটকাতে পারেননি। সে সবার সামনে ছেলের গালে সজোরে একটা থাপ্পর মারে। ছেলের মুখে বাজে কথা সে অনেক শুনেছে, কিন্তু তবুও ছেলের গায়ে কখনো হাত তুলে নি সে। কিন্তু তার ছেলের থেকে এরকম সার্টিফিকেট পাবে সেটা সে কখনো কল্পনাও করেনি হয়তো। অদিতির এখন মনে হচ্ছে তার শ্বশুর মশাইয়ের কথাটাই ঠিক, ওনি বারংবার বলতেন যে "রিদ্ধিমান আমাদের যোগ্য উত্তরসূরি,ওর শরীরে এই পরিবারের রক্ত ব‌ইছে।" আজ সেটা অদিতি স্পষ্ট দেখতে পেল। সেইদিনের সেই ঘটনার পর অদিতি পরদিন সকালে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়, তখন সবাই ঘুম থেকে উঠে হাতের কাছে কিছুই তৈরি পায় না আর। কারণ তাদের বাড়ির সেই আশ্রিতা টাইম মেশিন অদিতি নামক মানুষটি যে আর নেই এই বাড়িতে।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন