কন্যা সন্তান
✒️দেবাঞ্জনা সেন
বাড়িতে শোকের ছায়া পাশের বাড়ি থেকে জানতে চাইলেন--
মৃদ ও গম্ভীর স্বরে উত্তর দেওয়া হলো --
বাড়িতে কন্যা সন্তানের আগমন হয়েছে,
তাই আনন্দ করে বাড়ানো যাবে নাকো মনের মায়া।
কোন্ শিশুটি পুরুষ হবে ? কোনটি হবে নারী --?
সেটি তো সৃষ্টি কর্তা ঠিক করে দেন,
ঠিক করেন না তো কোন নারী।
যুগ আসে,যুগ যায়--
আজও প্রতিটি নারী অসহায়,
প্রতিটি ক্ষণে রত থাকে জীবন সংগ্রামে
শুধু শোষণ চলে শাসনের নামে।
অনেকতো হল নারী হয়ে মুখ বুজে ঘরের কোণে থাকা--
পুরুষ শাসিত সমাজে নিজেদের শক্তিকে আড়াল করে রাখা।
এবার সময় এলো, নিজেকে শোষণ মুক্ত করে
অনন্যা করে তুলার পালা।
কথায় আছে -- " আমরা নারী আমরা সব পারি --
কথাটির মধ্যে লুকানো শক্তিটির বহিঃপ্রকাশ করে
প্রতিটি কন্যা সন্তানকে প্রান খুলে --
বরণ করে ঘরে তোলে নেওয়ার পালা "।
ফিনিক্স
✒️স্বর্ণা রায়
ছাই থেকে যেমন ভাবে ফিনিক্স পাখির জন্ম হয়,
তেমন ভাবেই গভীর রাতে ওভার থিংকিং জন্ম নেয়
সকাল হলে ফিলিংসরা সব নতুন বাসায় মত্ত হয়,
মরিচীকায় পা ফেলতেই যেমন ভাবে জ্বলে উঠে,
বৃষ্টিস্নাত রাতের পর সকালটিও তেমন ভাবেই শীতল হয়
তারপর আবার রক্তস্নাত স্বপ্নিলরা দৃষ্টিকটু হয়ে চেয়ে থাকে।
প্রস্থান
✒️মন্দিরা লস্কর
যখন কেউ চলে যায়
নিশ্চুপ তাঁর চলে যাওয়া দেখি।
সদর দরজা পেরিয়ে যেতে যেতে কেমন করে পেছনে ঠেলে দেয় বিষাদ!
তাঁর প্রস্থানের পথে ছিটিয়ে দেই জল,
যে জল ঘামার্ত শরীর বেয়ে কলকল ঝর্ণার মত নেমে আসে,
ধুয়ে নিয়ে যায় বরফের মত জমাট দীর্ঘ শ্বাস কিংবা
নুড়ি পাথরের মত স্মৃতি।
আজকাল নিজেকে খুব বেশি জ্যান্ত মনে হয়,
এদিক ওদিক হাত পা চালাই খুশি মত।
খুব অস্বস্তি বোধ হয় কারোর চোখে চোখ পড়লে,
ঠিকরে বেরোতে চায় পাথুরে চোখ।
কী করে সামলাবো এই অস্থিরতা!
নিথর চলে যাওয়ার পেছনে যখন পড়ে থাকবে আমার নড়াচড়া
চেয়ে থাকবে জ্যান্ত চোখ !
পেটুক
✒️কামনা দেব
পেটুক বাবা গোবিন্দের বাপ
কথায় কথায় দেখায় সে ধাপ।
পেটে নজর লেগেছে তাঁর
গলায় আছে মাদুলি হাড়।
পেটুক দু-জন বসছে খেতে
খায় যে পদ্ম পাতার পাতে।
পেটটা তাঁদের বিরাট বড়
আমন্ত্রণে চিন্তা করো।
অসাম্প্রদায়িক বিদ্রোহী কবির শ্যামা সাধনা
✒️জহরলাল দাস
১)" কালো মেয়ের পায়ের তলায়,দেখে যা আলোর নাচন",
২)"আমার শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে,জপি আমি শ্যামের নাম........",
৩)"শ্মশানে জাগিছে শ্যামা............"
৪)"শ্মশান কালীর নাম শুনেরে ভয় কে পায়"...........
৫)" বল রে জবা বল, কোন সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরনতল............"
৬) "আর লুকাবি কোথায় মা কালী "..........
৭) " রাঙা জবার কাজ কি মা তোর........"
৮) "মহাকালের কোলে এসে গৌরী হল মহাকালী.....
৯) "শ্মশান কালীর নাম শুনেরে.....
১০) "আমি শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে/জপি আমি শ্যামের নাম........
১১) "মা হবেন মোর মন্ত্র গুরু/ ঠাকুর হলেন রাধাশ্যাম।"...............
উপরোক্ত গানগুলো শুনে বেশির ভাগ মানুষই প্রথমে একটু বিভ্রান্তিতে পরে যাবেন নিশ্চয়ই। কারন ভক্তিগীতি পর্যায়ের এই শ্যামাসংগীত গুলো নিশ্চয় সাধক কবি রামপ্রসাদ সেন কিংবা কমলাকান্ত ভট্টাচার্যের হবে অথবা অষ্টাদশ কিংবা ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্য কোন হিন্দু ভক্ত কবির হবে। কিন্তু না মাতৃ-চরনে নিবেদিত হৃদয় আকুল করা এই গানগুলো উপমহাদেশের অন্যতম অসাম্প্রদায়িক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের। যিনি জন্মসূত্রে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ও হিন্দু ধর্মের এক দেবীর বন্দনা করেছেন মনে প্রাণে। নজরুল রচিত এই সব শ্যামা সঙ্গীতের ভাব ভাষার অসাধারণ গভীরতা ও স্পন্দন যা প্রতিটি মাতৃ অনুরাগী পাঠককে ভাবালোকে অণুরনিত করে।
নজরুলের এমন শ্যামাসংগীতের সংখ্যা দু'শোর ও অধিক।
উপরে শুধু কয়েকটি গানের প্রথম লাইন উল্লেখ করলাম।
" বলরে জবা বল", আমার কালো মেয়ে রাগ করেছে কে দিয়েছে গালি "........
এমন কয়েকশত শ্যামা সঙ্গীত কবি রচনা করেছেন যেখানে শ্যামা মায়ের প্রতি অনাবিল ভক্তি ও নির্ভরতা সোচ্চার রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুধু গান লিখেই তিনি থেমে থাকেন নি। সেই সব গানে তিনি সুরারোপ ও করেছেন।
শ্যামা সঙ্গীতের যে দর্শন তা তিনি অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করেছিলেন। শ্যামা মায়ের প্রতি অগাধ ভালবাসা ও বিশ্বাস না থাকলে এমন আত্ম নিবেদনের গান লেখা সম্ভব নয়।
কৈশোর বয়সে যখন "লেটো" গানের দলে যোগদান করেন তখন থেকেই হিন্দু সংস্কৃতির সাথে জড়িত বিভিন্ন পালাগান, উপাখ্যান ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উপর গান রচনা করতেন ও গাইতে থাকেন। ইসলামী সংগীত ও তিনি রচনা করেছেন।
নজরুলের কাছে ধর্মীয় গোঁড়ামির কোন স্থান ছিল না। মন্দির, মসজিদ দুটোকেই সমান চোখে দেখতেন কবি। মন্দিরে তিনি খাঁটি হিন্দু আর মসজিদে তিনি মুসলমান। এজন্য জীবনে কবি উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছ থেকে অনেক সমালোচনা, অনেক মানসিক নিপীড়ন উনাকে সইতে হয়েছে।
কিন্তু কোন চাপের কাছে তিনি মাথা নত করেননি।
পুত্র বুল বুলের মৃত্যুর পর মানসিক শান্তি খোঁজার জন্য কবি আধ্যাত্মিকতার দিকে আরো ঝুঁকে পরেন। এসময় তিনি লালগোলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক যোগীবর বরদাচরন মজুমদারের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। বরদাচরন মজুমদার ও ছিলেন একজন তন্রসাধক এবং কালী ভক্ত।
এই বরদাচরন মজুমদারের নিকট হতে আধ্যাত্ম্য শিক্ষা সম্বন্ধে নানা কথা জেনে তিনি কোরান, গীতা, চন্ডী,উপনিষদ,পুরান, তন্ত্র প্রভৃতি গভীর ভাবে অনুশীলন করতে লাগলেন।
কালী ভক্ত ও সাধক হওয়ার জন্য নজরুল ব্যামাক্ষাপার কাছে ও গিয়েছিলেন।
পুত্রের মৃত্যু এবং পরবর্তীতে অসুস্থ স্ত্রী প্রমিলা দেবীর আরোগ্য কামনায় কবি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। মাতৃ সাধক, তন্ত্র সাধক
বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঔষধ এনেছেন। নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করতে মাতৃ সাধনার পাশাপাশি মাতৃ সঙ্গীত অর্থাৎ শ্যামা সঙ্গীত ও রচনা করেছেন। যে গুলো ভাব, ভাষায় ও ভক্তির গভীরতায় অতুলনীয়। একমাত্র নজরুল ইসলামের পক্ষেই এটা সম্ভব। এমন ও কথিত আছে নজরুল সন্ন্যাস গ্রহণ করতে রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠে ও নাকি গিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে রাজেশ্বর মিত্র তাঁর "আগরতলায় শচী দেববর্মণ" স্মৃতিকথায় লিখেছেন --- স্বামী পরজানানন্দের কাছে শুনেছি হিমাংশু দত্ত ও নজরুল ইসলাম উভয়ই রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠে স্বামী অভেদানন্দের কাছে সন্ন্যাসে দীক্ষা নিতে এসেছিলেন। কিন্তু তখন ও সময় হয় নি বলে অভেদানন্দজী তাঁদের অপেক্ষা করতে উপদেশ দিয়েছিলেন।"
তবে নজরুল নিজ ধর্মকে ও কখনো অশ্রদ্ধা করেন নি। নিজ ধর্মের প্রতি ও তিনি সমান সহাভূতিশীল। মন্দির মসজিদে তাঁর কোন ভেদাভেদ ছিল না। তিনি সাম্যের গান গেয়েছেন। তিনি ছিলেন সাম্যের কবি-সম্প্রীতির কবি সর্বোপরি মানবতার কবি।ভক্তিগীতি পর্যায়ের শ্যামা সঙ্গীত, আগমনী সঙ্গীত, বিজয়া , দুর্গা-সরস্বতী বন্দনা, খেয়াল,ঠুমরী, বাউল, কীর্তন তিনি যেমন রচনা করেছেন তেমনি ইসলামী সংগীত,গজল , জারি সারি, মারফতি, মুর্শিদি ইত্যাদি ও তিনি রচনা করেছেন এবং তাতে তিনি সুর ও দিয়েছেন। তাই তো তিনি কবি সব্যসাচী। তিনি হিন্দু - মুসলিম সবার কবি। সবার সঙ্গীত স্রষ্টা, সুরকার ও গায়ক। নজরুলের মতো এমন অসাম্প্রদায়িক, মুক্তমনা, সর্বধর্ম সহিষ্ণু মানুষ তাই আজ ও বিরল। তাই তো তিনি গান--" মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান"।
নজরুলের ভক্তিগীতি পর্যায়ের ঐসব শ্যামা সঙ্গীত, কীর্তন, ভজন, ইসলামী গান তাই সর্বজনীন। হিন্দু, মুসলিম সবার কন্ঠেই এইসব গানগুলো তাই আজ ও গীত হয়।
শৈশবের স্মৃতি
✒️ইন্দ্রজিৎ দাস
আবার ফিরে পেতে চাই শৈশব বেলা।
ফিরে পেতে চাই সেই পুরনো ভোরের আলো ফুল কুড়ানো দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই রোজ সকালে উঠে বই এর পাতায় মাথা গুঁজে পড়াশোনা করতে বসা বাল্যকাল।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের খেলাধুলার সবুজ মাঠ।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের শীতের ভোরে টিউশন পড়তে স্যারের বাড়িতে যাওয়ার দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের সোনায় মোড়ানো দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের সবুজ ধানের খেত, পুকুরে বালি হাঁসের ছানা সহিত বিচরণ, ভোরে কাক ও চড়াই পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ।
ফিরে পেতে চাই বিকালে পাড়ার ছেলে মেয়ে ভরাট খেলার মাঠ।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের শাসন ও আদর।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের স্কুল রোমে বসে পাশে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষ এবং ছুটে যাওয়া যানবাহন চলাচল শব্দ শুনে জানালার ফাঁক দিয়ে ঘুরে তাকানো দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের স্কুলের মাঠ -ডে- মিলের লাইনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের মাঝে খুনশুটি করা দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের স্কুলে সবার আগে পৌঁছে প্রথম সারির বেঞ্চে বসার জন্য ছুটে যাওয়া দিন।
ফিরে পেতে চাই স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া দাওয়া করার দিন।
ফিরে পেতে চাই সেই শৈশবের স্কুল ছুটির শেষে সব ছেলে মেয়েদের একসাথে ছুটোছুটি করে বাড়ি ফেরার সেই চিৎকার করে উঠা সোনালী দিন।
অবরোধ
✒️প্রদীপ চক্রবর্ত্তী
একদিকে রাস্তার ধারের বৈদ্যুতিন বিলবোর্ডে
কল্পিত উন্নয়নের রঙিন ফিরিস্তি
অন্যদিকে ডাকাবুকো রাজপথের দু'পাশে
নীরব গাড়ির স্থবির মিছিল
সভ্যতার গলা টিপে ধরা হিংস্র পশুদের
অরণ্যে রুদ্ধ হয়েছে জীবনের চাকা।
পিতার কোলে অসুস্থ শিশুর আর্ত চিৎকার
অ্যাম্বুল্যান্সে মৃত্যুপথযাত্রীর যন্ত্রণাকাতরতা
পাজির পা-ঝাড়াদের দেওয়াল পারে না টলাতে
উর্দিধারী সান্ত্রীদের হেঁটমুন্ড বন্দুক
কাঁধে ঝুলে স্বস্তির নিদ্রায় মগ্ন।
মুক্তকচ্ছ রাজা শেকল গলায়
ভোটযুদ্ধে উৎরানোর ভোজবাজি দেখাতে
গণতন্ত্রের অপঠিত অধ্যায় খুলে
অভয়মুদ্রায় বলেন- ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি----
জীবাশ্ম
✒️সোমা গঙ্গোপাধ্যায়
কিছু পাগল করা ইচ্ছে
আর সুপ্ত অভিমান,
জরাগ্রস্ত এই কলমের বুকে
জমুক ঘাম,
নৈঋতের দিকে ছুটে যাক্
কোনো বন্ধা মেঘ,
ভাঙুক এবার মৌন সময়ের জড়তা।
ছিন্নমস্তা মানবতা
হৃদয়ে জাগায় দগদগে ক্ষত
জেগে থাক্ তুই একাকিনী নির্বোধ
এই কুহকিনী রাতে,
বেঁচে থাক্ তুই জীবনের প্রয়োজনে
পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে নয়
এক ক্ষয়প্রাপ্ত চাঁদ হয়ে,
যেখানে হৃদয়ের প্রকোষ্ট থেকে
নি:সাড়িত হবে না আর কোন
নিস্তব্ধ তরঙ আহত নৈশব্দে।
আবারো ঘন মেঘ
জমেছে দু' চোখ জুড়ে
পান্ডুলিপি ভিজছে অঝোরে
স্মৃতির জীবাশ্ম ছুঁয়ে।
আর কত কাঁদাবি মেঘ,
আর কত কাঁদাবি আমায়?
আমার মা
✒️বাপ্পা সরকার
মা, মাগো, আমার মা তুমি জগত জননী মা
জগত জুড়ে তোমার পরিশ্রম তোমার মহিমা------
আছে চরিয়ে তোমার স্নেহ তোমার সাধনা,
মা, জগৎ মাঝে তোমার নেইকো তুলনা।
কত কষ্ট করে তুমি ছোট থেকে করলে বড়,
তোমার কৃতিত্বে আমি মানুষ, তুমি মা দুঃখ হড়ো।
মা, জন্ম থেকে তোমায় পেয়ে হয়েছি আমি ধন্য,
তোমার কোলে এমন শান্তি মা তুমি বায়ু, তুমি অন্ন।
যখন আমি ছোট ছিলাম তোমায় কত দিয়েছি কষ্ট
রাত -বিরেতে কেঁদে উঠতাম তোমার ঘুম যে হত নষ্ট
কত স্নেহ করে তুমি বুকের সুধা করিয়েছো পান,
ইচ্ছে করে মা তোমায় নিয়ে বাঁধি একটি স্নেহের গান।
মা তোমার কষ্ট সার্থক হবে সেই দিন
যদি মানুষের মাঝে পাই সন্মান।
মাগো তোমায় পেয়ে ধন্য আমি
তোমার চরণ, আমার কাছে স্বর্গ সমান।
মা তোমার কাছে যে ঋণ তা
শোধ হবে না কোন দিন,
যতদিন বাঁচবো যেন তোমার আশীষ
পাই আমি প্রতিদিন।
মা, আমার মা সবার মা মায়ের নাই তুলনা,
মাকে সবাই ভালোবাসো মায়ের স্নেহ ভুল না।
লং তরাই
✒️অরূপ রায় বর্মণ
একটা ভালো কবিতার জন্যে
বার বার ঘুরে ঘুরে ফিরেছি, তোমার চারপাশে
তোমার ভ্রুভঙ্গি, তোমার অপলক দৃষ্টি
কাছে এসে বার বার দূরে যাওয়া,
ভেসে ভেসে মন ছুঁয়ে যাওয়া
সবেতেই খুঁজেছি কবিতা ছোঁয়া।
আমার কাছে নেই সমুদ্র
নেই তারা ভরা নীল নীল আঁচল
বালির পাড়ে বসে বসে
ঢেউয়ের আকুতি শুনবো !
সেও নেই আমার কাছে।
আমার রয়েছে শুধুই
এক বুক উঁচু উঁচু পাহাড়,
সুন্দরী, অহংকারী, সবুজ সবুজ
ঢেউ খেলানো পাহাড়,
তাই যেন আঁচল;
সেখানে আমার প্রবেশ
নিতান্তই অবারিত আর আকাঙ্খিত,
নেই কোনো বাধা, নেই কোন বিরহ,
শুধুই মিলন আর ভালোবাসার গান।
কোনো এক শীতের ভোরে
আমি ঘুরে মরি পাহাড়ের ঢালে
তার ছোট্ট সুষ্পষ্ট উপত্যকার মাঝে
রাস্তা দুভাগ হয়ে যায়, আর আমি
ভেসে যাই সবুজের সাথে!
কখনো এপথে, কখনো বা ওধারে।
ঝর্নারা এখন স্তব্ধ ,
তবু তার পথরেখা উজ্জল, উন্মুক্ত আর চিহ্নিত
একটু হাওয়াতেই ঢলে ঢলে পড়ে
ফুলেরা, পাতারা,
জড়াজড়ি খেয়ে যায় পরস্পরে।
আমি দিশেহারা, বার বার ছুটে যাই
সবুজ প্রান্তরের এদিকে ওদিকে,
মিশে যাই নিবিড় আলিঙ্গনে সবুজের সাথে।
ভাবি কি লাভ বসে থেকে
বর্ষা কিংবা বসন্তের আশে,
ঝোপঝাড় হাতছানি দেয়
চোখ টিপে টিপে হাসে কুয়াশার ঘেরাটোপে
এই তোমার ভালোবাসা, এই তোমার বাসর
এখানেই যাও মিশে আজ
নীরব প্রতিশ্রুতিতে।
তোমায় দিলাম
✒️সাধন নমঃ
চাও নি কিছুই
তবুও মনের মধ্যে দীপ্ত বাসনা।
বহু দিবা-রাত্রি যাপন করেছ,মুখ ফুটে বল নি কিছুই।
তবুও আমি তোমায় একটা সকাল দিলাম,
তাতে তুমি সূর্যের রক্তিম আলো দিও।
একটা দুপুর তোমার হাতে দিলাম,
তাতে তুমি রবির প্রখরতা এনো।
একটা শীতল বিকেল দিলাম বধূ,
তুমি তাতে কোকিলের গান বুনো।
সন্ধ্যাটুকু রাখলাম শুধু,কথার আসর বসাবো।
দিনান্তে বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে
তোমার খোঁপায় গুঁজে দেব
একশ আট টা লাল গোলাপ।
গোপনে কইব কথা কপোলের ফাঁকে ফাঁকে,
হৃদয়ে বাজিবে বাঁশি তব ছোঁয়াতে।
আমার শেষ রজনীটুকু দিলাম বধূ
স্বপ্ন এঁকো নানা আদলে।
হিমাদ্রি শিখর পাড়ি দিয়ে
ফিরবো তোমার আঁচলে।
বিয়েবাড়ি
✒️সুদীপ চক্রবর্তী
বড়লোকের বাড়ি, বিয়ের জমজমাট উৎসব;
হাজার লোকের আয়োজনে ব্যস্ত আছে সব।
ব্যান্ড পার্টির বাজনার তালে বাড়িটি গমগম,
বাড়িতে আজ হবে হাজার লোকের সমাগম।
কাজে কর্মে নাচে গানে বিভোর বাড়ির সবাই,
বিরহী হয় কনের হৃদয় শ্রবণে বিয়ের সানাই।
পুরুষেরা আছে সক্রিয়
বাহিরের সব কাজে,
মহিলাগণ কাজের ফাঁকে মত্ত আছে সাজে।
মাছ-মাংস-পনির-পোলাও চলছে আয়োজন,
ত্রুটি কিছুই রাখেন নি আর যা যা প্রয়োজন।
কনের বাবার যেমন অর্থ তেমনই হৃদয়বান,
উদার হস্তে মেয়ের বিয়ের খরচ করতে চান।
প্রথাগত কাজে ব্যাপৃত মাতা থাকেন নিরবে,
অন্তরে ভীষণ কষ্ট মেয়েটি বাড়ি ছেড়ে যাবে।
পাড়াতে সবার সুসম্পর্ক পরিবারটির সাথে,
তাইতো সবাই বিয়েবাড়ির আনন্দেতে মাতে।
দিবসের তৎপরতা শেষে সন্ধ্যা নেমে আসে,
নানানরকম আলোর বন্যায় বিয়েবাড়ি ভাসে।
অতিথি অভ্যাগতরা ধীরে আসতে শুরু করে,
বরের অপেক্ষায় আছে সব সাজগোজ সেরে।
বিয়ে বাড়ির গেটে হঠাৎ পৌঁছায় বরের গাড়ি,
বরের সাথে আসে শতাধিক বরযাত্রীর সারি।
বাজনা বাজে, সানাই বাজে, সাথে উলুধ্বনি,
বরণডালায় বরণ করতে আসেন বাড়ির গিন্নি।
দিনেকের রাজা বর বাবাজি বসেন রাজাসনে,
মালাবদল আর সাতপাক বাঁধে দম্পতি দুজনে।
পরিজনেরা আপ্যায়নে রত অতিথি অভ্যাগতে,
খাবার টেবিলে জোরহাতে, চেয়ে নেবেন পাতে।
মহাভোজ শেষে তৃপ্ত সকলে, কর্তা খুশির ছন্দে;
বিবাহানুষ্ঠান আদ্যন্ত সম্পন্ন, সুষ্ঠুভাবে মহানন্দে।
পর দিবসে, বিদায়বেলায় বিষাদের সুর বাজে,
মা-মেয়েতে করুন কান্না, সকলে অশ্রুতে ভিজে।
গানটি শ্রবণে পিতার হৃদয় বেদনায় যায় ছেয়ে,
"তুই যে আমার পুতুল পুতুল সেই ছোট্ট মেয়ে.."
বরের হাত ধরে, নিজঘর ছেড়ে, শশুরবাড়ি যাত্রা;
বেদনা অধীর বাড়িটিরও যেন যন্ত্রণা অতিমাত্রা।
প্রেম
✒️সুমনা দাস পাটারি
যদি আবার কখনো প্রেমে পড়ি
তুমি ছবিতে একটা লাইক দিও
যদি আবার কখনো প্রেমে পড়ি
তুমি আর জনমে আমার হয়ো
যদি আবার কখনো প্রেমে পড়ি
তুমি ছন্নছাড়া, আমি বাঁধবো তোমায়
যদি আবার কখনো প্রেমে পড়ি
তুমি ভেবে দেখো
আমাতে- তোমাতে মানায়।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যসমূহ (Atom)