বর্ণমালার চাদর


              ✍️খোকন সাহা

এই দিতা !  মাথা তোল ।
কেন মেঘ দিয়ে মাখলি চুল।
অমিতাভই যদি দুঃহাতে  মাখিস্
তোর সুমেরু কুমেরু বুকে ,
কেন তবে লাল ফিতায় বাঁধলি -না
ঢেউ তোলা আঁধারের ঢল্ ।

যাবি যদি চল্ ।
অষ্টাদশীর কুলোতে ঝাড়ন্
একুশ ধানের শীষ  ;
খল্ খল্ নদীর পাশে
অগ্নিবৃত্তের মুখ ধোওয়া
আ-মরি !  বাংলা ভাষার বুকে  ;
মুখ তোলে ------
নগরনটির হাস্যমুখর  হংসপাখার তলে ।

আয়  আয় !  বন্দী সুন্দরের  নগ্ন উনুন  হতে
যত বারুদের বর্ণমালা ডেকে ওঠে
তোর নদীমাতৃক .  দেশমাতৃক. বন্দনার মর্মতল
ছিন্নভিন্ন করে ,
পারিস্ -তো,  দু-বেলার আত্মজীবনী সেলাই করে
রক্ত তোলপাড় ,  পরানমাঝির  বৈঠা দিয়ে
বন্ধ বন্যার  আর্তনাদ  ভেঙ্গে ফেল্  । 

কারুময় মাটির কাচুলি দিয়ে
ঢেকে ফেলা জলোচ্ছ্বাসের  প্রত্নময় ছেনীতে ---
যে আগুন   এখনও ,   রক্তে ডাকে বান -----
শুকিয়ে যাওয়া  ধূলট পথে
ফুল ফুটানোর   অমৃতজয়ী গান , ......
সেখানে পাঁজরের হাড় গুণে গুণে
বোকা মেয়ের  পায়ের কাছে
তীব্র চাবুক চিৎকার........ তৃতীয় বিশ্বের প্রাণঃ
.........তোর যত  ভাঙ্গনের প্রবাহ দিয়ে
গড়েছ মোদের  হাঃ  হাঃ , হো  হো.....
সূর্যের শর্ষক্ষেতে, মাধ্যাকর্ষনের যত নম্র নখ
ঝক্ ঝক্ করে ----- আমাদের শরীরে  ;
তাদের ধন্য করে,  কিসের শরীর থেকে
কাদের শরীরে গলে যাওয়ার আগে ......
হে বস্তির দূরন্ত মেয়ে !  অফুরন্ত মনিমঞ্জুষা !
ধূলোবালি গায়ে মেখে  সারাদিন টই টই ডাংগুলি ঘুড়ি ,
আর ক্লান্ত লাটাইয়ে যখন
কুড়োনো খাবার তুলে ঘুমিয়ে পড় ----
শহরের এঁটোবাস গলির ভাঙ্গা রিক্ সায় ;

------তখন , আমরাই তোর গায়ে
শীতের রোদের মত  জড়িয়ে থাকি
বর্ণমালার  চাদর  নিয়ে , অক্ষরবুটির আকাশছায়ায়
জ্বলে উঠি ,  রাত্রিশেষের ঝড়োপাতায় ।

তবু তোর  দু-চোখ ভরে
বিজয়ার বাজনা মুছে , এঁকে দি ----
অপুষ্টির অন্নসৃজন  শিল্পের দুনিয়া ।
আর দেশভ্রাতৃক নদীমাতৃক  বন্দনার মর্মতল
তোলপাড় করে -----
নানা ছাঁদে ,  নানা রঙে , এঁকে দি
তোর ভাষাজলতার  মনজলতার দীর্ঘ বেণী !

তবুও , বঙ্গভঙ্গের  আমরন অনশন   ঝেড়ে ফেলে.....
একবার ,  শুধু একবার
.....এই দিতা ,  মাথা তোল্ !  মুখ খোল্ !
তোর জাগরন  আমরনে চেয়ে আছে ----
পিতামাতার অন্নজল তুলে ধরা
বোবা দস্যু  রত্নাকরের দল ।
নতুবা ,  পৃথিবীর সব শব্দগুহায়
আজও লিখে চলে ----
ধমনীতান্ডব  অক্ষরের জয় ,
মানুষের......বিপন্ন....... বিস্ময় !
                 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ