-সজীব পাল
পৃযতটা না বৈচিত্রময়,তার চেয়েও জীবন,জীবনের গল্পগুলো যেন হাজারো গুন বৈচিত্রের সমাহার ।
মানুষ যা কল্পনাতে আনতে বিস্মিত হয়,ছমছম করে সমস্ত দেহ !তা কখনো কখনো কঠিন বাস্তবতায় কারোর জীবনের থিয়েটারে ঘটে যায়।আর তখনই সেই মানুষটা নিজের গতি থেকে বিমুখ হয় । বেছে নেয় এক অভিনব শোকের পথ ।
আজ আকাশটা একটু স্নিগ্ধ । মৃদু বাতাসে শীতল অনুভব হয়। অন্যদিনের চেয়ে আজ তীর্থের মন ঢের ভালো। তীর্থ এই ভালো লাগার অনুভূতিটা টের পাচ্ছে , কিন্তু সে নিজেই জানে না ভালোলাগার কারণ।তার হঠাৎ মনে পড়ল একটা পুরানো কথা,আগের লোকেরা বলতো ,"দুঃখের আগে নাকি সুখের বাতাস বহে।"
সে হঠাৎ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে বললো,দুর! এইসব কি ভাবছি! সবসময় যে একই রকম লাগবে তার কোনো কথা নেই। তাছাড়া এই পার্কটা বেশ ভালো। এখানে আসলে সবারই মন ভালোহয়।
তীর্থ মনারচক পার্কে বসে আসে ,তার ভালোবাসার অপেক্ষায়।এইপার্কেই তারা ভালবাসাকে সময় দেয় একটু বেশি।
তীর্থ ইট পাটকেল দিয়ে গড়া একটা টুলে বসে আছে। আর মোবাইলে ছবি দেখছে।
আচম্বিত পিছন থেকে একজন তার চোখ ঢেকে দেয় হাতদিয়ে। তীর্থ নিজ হাতে ওই চোখ ঢাকা হাতগুলিতে স্পর্শ করে বলে তৃষা ?
তুমি কি করে বুঝলে আমি তৃষা?
তৃষার সাথে তীর্থের সাতমাস ধরে চলছে ভালোবাসার সম্পর্ক ।তৃষা অনেকটা পরির মতো দেখতে ,তীর্থের চোখে। তার চোখগুলি একটু ঈর্ষৎ বড়ো ।যা নারীদের সৌন্দর্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা পালন করে।নাকটা চিকন করে সরু । মুখের গঠনের সাথে মানানসই ।
তৃষা আজকে কালো সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছে। সুন্দরী মেয়েদের কালো পোশাকে ভালো মানায়। তৃষা সবকিছু ম্যাচিং করে পড়ে।
তোমাকে যে ভালোবাসি তাই!
ভালোবাসলে বুঝি সব বলা যায় না দেখে?
যায় যায় । সব বলা যায় । আচ্ছা এত কথা না বলে কাছে আসো-তো!
এই কথা বলে তীর্থ তৃষার হাতে টান দিয়ে পাশে বসায়। এবং ডান হাত দিয়ে তাকে আরো নিকট আনে । মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে তীর্থ বলছে,"তৃষা ,
তৃষা একটু শিশুর মতো তীর্থের বুকে মাথা রেখে বলছে, "হু"
কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না-তো?এইভাবে বুকে মাথা রেখে সারাটা জীবন থাকবে!
না থাকবো না!
কেন?
আমি যদি আজকে মরে যাই ,তাহলে কিভাবে থাকবো?
তুমি মরবে না,।তীর্থ আরো কঠিন ভাবে তৃষাকে ধরে বলছে,যম আসলে তাকে বলে দেবো ,আমরা এখনো বৃদ্ধ হয়নি। তোমার নাম্বার দিয়ে যাও ,আমরা বৃদ্ধ হলে তোমাকে জানিয়ে দেবো। তখন এসে নিয়ে যেও।
তৃষা হেসে উঠল,"হা হা হা হা!"
তীর্থ তার মুখের দিকে চেয়ে আছে ,কি নিষ্পাপ হাসি।এইরকম মেয়েকে কেউ ভালো না বেসে পারে না।সবটা যেন অপার্থিব সুখ।
তীর্থ তার গালে হালকা তীক্ষ্ণ চাপ দিয়ে চুমু খেলো। কপালে।
আমাকে দেবে না ,-তীর্থ বলল।
ন্যাকামো করো না তো! অবুঝ শিশু । এই কথা বলে তৃষা যখন চুমু দেওয়ার জন্য মুখ তীর্থের পানে আকর্ষিত করছে,তাৎক্ষণিক তীর্থের মোবাইলে কল বেজে উঠল ।
তৃষা আকর্ষণ মুহুর্তেই নষ্ট হয়ে গেলো।
মোবাইলের নাম্বার চেয়ে তীর্থ বলল,প্রিয় আজকে উঠি! আর্জেন্ট কাজ আছে চলি?
আমি কি একা থাকবো এখানে!
তুমি একা থাকবে কেন তুমিও চলে যাও।
তীর্থ রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে তৃষা র সাথে কথা বলছে মোবাইলে । তীর্থ তৃষাকে বলছে ,তোমাকে একটা বললে রাগ করবে না তো?
ওপাশ থেকে তৃষা বলছে,আলবাত করবো।
তাহলে থাক বলবো না । আচ্ছা ভাত খেয়েছ?
খেয়েছি।আর কি বলতে চাইছিলে ওটা বলো।
বলছিলাম ইয়ে ..মানে ...।
কি ইয়ে মানে করছো ! এখন আসবো তোমার কাছে ?
আরে না না এইসব কিছু না। বলছিলাম ,তোমার বয়ফ্রেন্ড্ আছে?
হুম আছে! কেনো বলো তো?আর ওর নাম তীর্থ বিশ্বাস ।
আরে আমি না ।তোমার কোনো আগে বয় ফ্রেন্ড ছিল?
একজন ছিল,
সিরিয়াসলি!
হ্যাঁ-গো।তবে এখন নেই ।এখন শুধু তুমি আর তুমি।
তীর্থ তৃষাকে বলছে,কাল যদি সে ভালোবাসার দাবি করে ?
করলে করবে! বলবো আমার সব ভালোবাসা তীর্থকে দিয়ে দিয়েছি ।আমার কাছে এখন মনটন কিছু নেই।
আই লাভ ইউ সোনা।
আই লাভ ইউ টু সোনা ।তৃষা বলছে ,রাখছি এখন ভীষন ঘুম পেয়েছে।
আচ্ছা ।
তীর্থ আজকে একটু দেরি করেই তৃষার সাথে দেখা করতে যায়। তৃষা মনমরা ভাব নিয়ে বসে আছে ।
তীর্থ বলছে হ্যালো ম্যাডাম আজকে এত নীরব কেন?
তৃষা কোনো জবাব দিলো না। তীর্থের কথাটা উপেক্ষা করে অন্যদিকে ফিরে রইলো। তীর্থ কাছে গিয়ে তৃষাকে স্পর্শ করতে গেলে সে ঝারকা দিয়ে উঠে দাঁড়ায় ।
তীর্থ অনেকটা আতঙ্কিত সুরে বললো,তোমার কিছু হয়নি তো ,?শরীর ঠিক আছে ?বাড়িতে কেউ কিচ্ছু বলেছে?
তৃষা তীর্থের দিকে ফিরে বলল,তুমি আমাকে ভুলে যাও তীর্থ,তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারবো না!
রসিকতা করো না । চলো বসে কথা বলি।
মোটেই রসিকতা করছি না,সিরিয়াসলি বলছি।আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি ,আর সে কথা আমি তোমাকে রাত্রে বলেছি।
তীর্থ এবার অনেকটা সিরিয়াস মাইন্ড হয়ে যায় । কিন্তু তুমি-তো বলেছিলে ওকে তুমি ভুলে গেছো।
ভুলে গেছি! তোমাকে ভুলতে পারি ওকে নয়।
তীর্থের চোখে কোণে জল জমতে শুরু করে দিয়েছে । তাহলে আমাদের যে ভালোবাসা?
তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম ঠিকই,তবে ওর থেকে বেশি নয়।আর তোমার সাথে ভালোবাসাটা অনেকটা ছেলে খেলার মতো ।
আমাদের মধ্যে যে শারীরিক বিষয়গুলো ওইগুলিকেও তুমি ছেলে খেলা বলবে? তোমার ভালোবাসা ছেলে খেলা হলেও ,আমারটা তো ছেলে খেলা ছিল না।আর তুমি সেটা জানতে।তার পরেও কেন এই অভিনয়ের জালে আটকা দিলে আমার হৃদয় ।
তৃষা অনেকটা অভিমানের কণ্ঠে বললো,আমি এইসব কিছু জানি না । আমি অনেকদিন আগেই বলতে চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসার কথা ,কিন্তু পারিনি।তুমি যখন নিজে জানতে চাইলে আমার পূর্বের কথা,তখনই সিদ্ধান্ত নেই আসল কথা বলার জন্য ।
তৃষা আর কিছু বলতে গেলে তীর্থ থামিয়ে দিয়ে হাতজোড় করে ,পাগলের মতো হাঁটতে শুরু করে । ওখান থেকে চলে এসে বাড়িতে ঘরের দরজা বন্ধ করে নয়নের জলে সমস্ত দুঃখ ভুলতে চায়। কিন্তু ভালোবাসা চোখের জলে ভুলে যাওয়া যায় না । তীর্থ সেটা বুঝতে পেরেছে। সে নিজেকে সংযম করে ,স্থির করেছে তৃষার সেই ভালোবাসার লোকটির সাথে কথা বলবে।
তীর্থ বন্ধুদের সাথে কথা বলে তৃষার সেই ভালোবাসার লোকটির খোঁজ নেয়।
আচ্ছা তোমার সাথে তৃষার পরিচয় কত দিনের?
তৃষার সেই ভালোবাসার লোকটির নাম বিনয়। বিনয় বলল,বছর খানেক। কিন্তু আপনে কে ?তৃষাকেই বা কিভাবে চিনেন?
আমি তাকে ভালোবাসি ।
ভালোবাসেন মানে? নেশা করেছেন নাকি?
দেখো ভাই আমি সম্পূর্ণ সুস্থ,আর যে কথাটা বললাম ওই কথাটাও সত্যি । তোমার মতোই ওর সম্পর্ক আমার সাথে সাত আট মাস।ও তোমার জন্য গতকাল আমার ভালোবাসা অস্বীকার করেছে।
তো হয়ে গেলো । আমি কি করবো ।দেখলে তো কতটা ভালোবাসে আমাকে।
তীর্থ একটু উচ্চ কণ্ঠে বললো ,কি করে ভুলবো! ওর সাথে চলা দিনগুলি ? আর তার সাথে আমার সব হয়েছে ,পারবো না ভুলতে পারবো না। তুমি ভুলে যাও! প্লিজ!
আপনার সাথে যেমন সব হয়েছে ,আমার সাথে ও সব হয়েছে ।এখন বলুন আমি কি করে ভুলবো?
তীর্থ বিনয়ের কাছে কোনো সফলতা না পেয়ে,পুনরায় তৃষার কাছে যায় । ভালোবাসার জন্য ।
তৃষা আর তার বান্ধবী কলেজে যাচ্ছে একসাথে। তীর্থ তাদের রাস্তার মোড়ে দেখতে পায়।
সে যখন তৃষাকে ডাক দেয়,সুস্মিতা পিছনে একবার দেখে আবার হাঁটতে থাকে। সেও তাদের পিছু নিচ্ছে ।
প্রায় পাঁচ মিনিট হাঁটার পর তৃষার বান্ধবী তীর্থের কাছে আসে। তারপর বলে;"কি চাই আপনার পিছু নিচ্ছেন কেন? বাত্তামিজি করছেন? দেখুন ভালো ভালো বলছি ফিরে যান না হলে খারাপ হবে।
তোমার বান্ধবীকে বলো না একটু কথা বলতে ,ওকে খুব ভালো বাসি ।বাঁচব না তাকে ছাড়া ।
না বাঁচলে মরে যান! আর আপনার চেয়ারা দেখেছেন আয়নায়? ওর সাথে আসছেন প্রেম করতে!
এই কথা ওকে বলতে বলো। তোমার সাথে কোনো কথা নেই ।
তৃষা রাগাম্বিত চোখে তীর্থকে বলছে, তোমার কানে যায় নি ! বললাম তো তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না।
তীর্থ এবার ক্ষুব্ধ হয়ে বললো,তোমার যদি আমার প্রতি এতটাই অপছন্দ তাহলে আমার অনুভূতি নিয়ে খেলার অধিকার কে দিলো তোমাকে? আমার ভালোবাসা তোমার কাছে কোনো মূল্য নেই?
তৃষা তোমাকে এখনো কাছে পেতে চাই!
তীর্থের চোখে ঝর্না বইছে নিরবধি ।
তীর্থ কাঁদতে থাকে, ভালোবাসার জন্য । তবুও তার ভালোবাসার দাম দেয়নি তৃষা ।কেঁদেই যাচ্ছে তীর্থ । অক্লান্ত । প্রেম কাঁদিয়ে যায় ,আর কিছু শিখিয়ে যায় ।
তীর্থ মনকে বুঝিয়েছে,পৃথিবীতে কিছু জিনিস চাওয়া যায় কিন্তু পাওয়া যায় না ।আর না পাওয়াটাই ভালোবাসার অমর কাহিনী ।
লেখক পরিচিত - লেখক সজিব পাল জন্ম 2000সালের 20 জানুয়ারি বাঁশ পুকুর নামে একটি ছোটগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই পাঠ্যবই কবিতা গল্প থেকে লেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ।পরে কালক্রমে ধীরে ধীরে ফেসবুকের মাধ্যমে লেখার বহিঃপ্রকাশ ।"মনন স্রোত " ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতা "দীর্ঘপ্রতিক্ষা" তারপর সময়ে আরো প্রকাশ হয়।তার সাথে 'নবোণ্মেষ ' প্রথম গল্প "আধার সময় ",'।সৃষ্টি' (নলুয়া) এবং 'আগন্তুক "(পশ্চিমবঙ্গ) ইত্যাদি ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখক হিসেবে যুক্ত ।কবিতার চেয়ে গল্পের প্রতি বেশি অনুরাগ ছিলেন উনার। তাঁর জীবনের সবটা জুড়ে গল্পের আওতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন