'রুজা কেবল একটা নাম নয়, অনুপ্ররেণা'

       ✍️মোঃরুবেল
রুজা পৃথিবীর আলো দেখেছে সবে ৯ মাস অতিক্রান্ত হয়েছিল।।তার জন্ম হয় ত্রিপুরার মন্দির নগরী নামে খ্যাত উদয়পুরে। তখন রুজা কাছে একান্ত আপন এবং নিতান্তই চেনামুখ ছিল তার গর্ভধারণী এবং জন্মদাতা। দুর্ভাগ্যক্রমে রুজা তার বাবার আদর অনুধাবন করতে পারিনি বেশি দিন।রুজা বাবা নামক বটবৃক্ষের বুকে বেশিদিন নিরাপদে শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারেনি।কারণ রুজার যখন বয়স ৯ মাস, তখন অদৃশ্যের কি নির্মম পরিহাস - বাবাকে চলে যেতে হয়েছিল সমস্ত জাগতিক মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে।আমার মতে তা ছিল আল্লাহর নিষ্ঠুরতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।   সেদিন অকাল রোদনে 'থ' বনে গিয়েছিল  রুজার পরিবার সহ গোটা উদয়পুরের আকাশ। সেদিন থেকেই এক বুক দুঃখ নিয়ে রুজা'কে কোলে-পিঠে লালন পালন করছে তার মা। পরবর্তী সময় ( রুজার বয়স তখন ৩ বছর) তাকে আগরতলায় চলে আসে তার মা কর্মসূত্রে। জীবন যাপনের মসৃণ প্রণালীটার ছন্দপতন হলেও ভেঙে পড়েনি রুজার মা। রুজাকে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর দু চোখ হয়তো কিছুটা দুঃখ লাঘব করে( সাময়িক স্বস্তির জন্যে ক্ষতপূর্ণ  মনে মলম লাগানো মতো আর কি) কিন্তু অকালে চোখের সামনে নিজের প্রিয় মানুষটির প্রাণ অন্তর্ধান হওয়ার দুঃখের ছাপ  ঢাকা অসম্ভব।এক আকাশ সুখও হার মানবে এই দুঃখের কাছে।তবু সংসারের ঘানিটা সেই সময় থেকে এখনো টেনে নিয়ে যাচ্ছেন উদ্যম সাহসিকতাকে আপন করে। বর্তমানে রুজা ১৪ এ পা রেখেছে। এই একরত্তি মেয়ে এখন থেকেই মার দুঃখের ভাগাভাগি করে নিতে শিখে গেছে। যে বয়সে  আমাদের মন ছেলেমানুষি আর আবদারে ভরপুর ছিল। আর রুজা তার ঠিক বিপরীত। রুজা'র মার বয়স এখন প্রায়ই ৫৫ ছুঁই ছুঁই।মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন যা এই বয়সের কিছুটা প্রতিফলন। মা'র অসুস্থতায় রুজা দায়িত্বজ্ঞানের সাথে সর্বদা মা'র পাশে থাকে। এই যেমন ডাক্তার দেখানো, ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক মা'র যত্ন নেওয়া, সময় মতো ঔষধ সেবন করানো ইত্যাদি কাজগুলি যথেষ্ট সাবলীলভাবে করে থাকে রুজা। শুধু তাই নয়- রুজাতে রয়েছে হরেক গুণের সমাহার। যেমন চিত্রশিল্পী; তেমনি গানেও বড্ড মিষ্টি কন্ঠ। রুজার কন্ঠে ভীষণ মানায় যে গানটা তা হল- সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা 
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা ।তার কন্ঠে আমি বহুবার শুনেছি গানটা। অজান্তেই আমার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ালো বুকে। এই গানটাতে রুজা আল্লাহর কাছ থেকে কি জানি শান্তির বার্তা শুনতে চায়।
রুজার এইসমস্ত দায়িত্বজ্ঞান ওগুণের কাছে আমি নতজানু। আমি রুজার থেকে দায়িত্ব শিখি, অনুপ্ররেণা পায়।
রুজার মা আমার আদর্শ শিক্ষিকা, উনার মুখপানে তাকালে অনেক শ্রদ্ধা জাগে। আর যেদিন থেকে রুজার কথা শুনলাম তাকেও আমি আমার শিক্ষিকা মানতে শুরু করলাম।( যার কাছ থেকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় সেই আদর্শ শিক্ষক-শিক্ষিকা; এবার সে হোক বয়সে ছোট আর বড়ো)
আমি মনে করি প্রতিটি মায়ের কুলে একটা করে রুজা থাকা দরকার। তাহলে হয়তো বৃদ্ধাশ্রমের মতো সামাজিক ব্যাধিগুলি অনাদিকালের জন্য আরোগ্য লাভ করবে। তখন বৃদ্ধাশ্রমের চিলিকোঠায় পড়ে থাকবে না  কোনো জন্মদাতা - জন্মদাত্রী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন