★এ কোন ভারতে আছি?★
১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট এই দিনেই ভাগের বিনিময়ে 'স্বাধীনতা'র নামে 'ক্ষমতা হস্তান্তর' করা হয়েছিল। আজ দেশের এহেন স্বাধীনতার এত বছরের কাঠগড়ায় এসে সমগ্র দেশবাসী হিসেব-নিকেশ করছে স্বাধীনতার নামে আমরা কী পেলাম? এত দীর্ঘ সংগ্রাম করে আমরা দেশবাসী কি এই স্বাধীনতাই চেয়েছিলাম? এই স্বাধীনতা লাভের জন্যই কি দেশবাসী এত রক্ত দিয়েছিল? এমন হাজারো প্রশ্নের জবাব আজও খুঁজে বেড়াচ্ছে দেশবাসী। বিশেষ করে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্যে তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও রক্ত ঝরেছে সবচেয়ে বেশী সেই ক্ষুদিরাম-নেতাজী'র বংশধর বাঙালীদের বার বার যন্ত্রণা ও বেদনা ভরা চিৎকার--এ কোন স্বাধীন ভারত ? ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যে জাতির সন্তানদের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও রক্তের বলিদান সবচেয়ে বেশী সেই বাঙালীদের কি আজ বিনিময়ে এই প্রতিদান ভারত দিচ্ছে ? এই স্বাধীনতা কার ? যে স্বাধীনতা আজকের ভারত স্বাধীন হওয়ার মূল কান্ডারী নেতাজী সুভাষ'কে চিরতরে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল, যে স্বাধীন দেশে আজ বাঙালীকে 'উদ্বাস্তু', 'অনুপ্রবেশকারী' 'বিদেশি' তকমা দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্প ও প্রকাশ্যে আত্মহত্যা,খুন করানো হচ্ছে-- সে স্বাধীনতা কার জন্য ? জবাব চাইছে বাঙালীরা । জবাব দেবার মতো কি কেউ নেই ? যদি না থেকে থাকে তবে বাঙালীরাই ভারত থেকে বিশ্ব সবাইকে আগাম কিছু সত্য ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ বিপ্লবের কথা প্রকাশ্যে বলে দিতে চাইছে--- ভারত স্বাধীনতা লাভের সাথে সাথেই যেহেতু বাংলা ও পঞ্জাবকে ভাগ করা হয়; সেই সময় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন-- "Whenever the minorities of East Bengal will across the border; they will be welcome." অর্থাৎ দেশভাগের বলি হয়ে পরিস্থিতির চাপে পড়ে যদি সংখ্যালঘু বাঙালীরা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করে তবে সসম্মানে এদেশে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে । আর ঠিক এই উদ্বাস্তু নীতিতেই ধরা পড়ে গেল পুঁজিপতি ফ্যাসিস্টদের শোষণকামী কুৎসিত চেহারাটা । অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত পঞ্জাবী উদ্বাস্তু ( ৪৭ লাখ)-দের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন ঘোষিত প্রতিশ্রুতি মাফিক অক্ষরে অক্ষরে সুসম্পন্ন করে ফেলল । কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে আগত বাঙালী উদ্বাস্তু (প্রায় ২ কোটি)-দের ক্ষেত্রে তার এক ছিটেফোঁটাও আজ পর্যন্ত সম্পন্ন করলো না । মানে, বাঙালী উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ বিপরীত নীতি ! ইচ্ছাকৃতভাবে দেশীয় পুঁজিবাদীরা এই বাঙালী উদ্বাস্তু সমস্যাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে । এ এক দীর্ঘ বাংলা ও বাঙালী বিদ্বেষী গভীর ষড়যন্ত্র । যে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সম্প্রতি অসম, মনিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা তথা সমগ্র ভারতে বাঙালীরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশী এসব নামে চিহ্নিত হয়ে অত্যাচারিত ও শোষিত । আজ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এনআরসি নামে এক কালো আইনের অজুহাতে অসমে ১৯ লাখ বাঙালী ( হিন্দু বাঙালী ১৭ লাখ ও মুসলিম বাঙালি ২ লাখ )-কে বিদেশী, অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে দিল ! তাজা খবর এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশী বাঙালীদের আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে তথা পরিকল্পিত ভাবে বাঙালীদের হত্যা করানো হচ্ছে ! আর বাঙালীদের পঁচিয়ে মারার জন্য ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প খুলছে এবং আরো বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে ! সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই অসম চুক্তির ৬ নং ধারা অসাংবিধানিক ভাবে রূপায়ণ করে আসামের বাঙালীকে চিরতরে পঙ্গু করে ফেলার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে অসম বিজেপি সরকার । তাই বাঁচতে হলে বলা আবশ্যক যে, সাম্রাজ্যবাদীরা যে অসমের মাটিতে বাঙালীদের অনুপ্রবেশকারী, বিদেশী চিহ্নিত করে বন্দি, অত্যাচার ও খুন করছে সেই মাটির আসল ইতিহাস কী? ইতিহাস সাক্ষী-- ১৮৭৪ সালে এই দুর্বল অসমকে সবল করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বাঙলার অঞ্চল সিলেট, কাছাড়, গোয়ালপাড়া কামরূপ জেলা, বরপেটা, নগাঁও ইত্যাদি জায়গাগুলো কেটে অসমের সাথে জুড়ে দিয়ে বর্তমানের অসম প্রদেশ গঠন করে । অর্থাৎ এই অসম বাঙালীর আধিভূমি । এই অসমের ভূমিপত্র বাঙালীরাই । পাশাপাশি ত্রিপুরার ইতিহাসও চাই নাহলে বাঙালী বাঁচবে না । কারণ, ত্রিপুরাতে সেই সত্তোরের দশক থেকে ত্রিপুরার ভূমিসন্তান বাঙালীদের বাংলাদেশী, অনুপ্রবেশকারী ও বিদেশী তকমা দিয়ে গণহত্যার মতো ভয়ঙ্কর রাজনীতি চলেছিল তা বর্তমানে এনআরসি, সিএএ ইত্যাদিকে কেন্দ্র আবার জ্বলে উঠেছে । যার জ্বলন্ত আগুনে ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসে ত্রিপুরার বেশ কয়েকটি জেলায় বাঙালীকে মারণ আক্রমণ করে শরণার্থী বানিয়ে রেখেছে । অর্থাৎ যারা ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর মহকুমার আনন্দবাজার এলাকার থানাতে এখনও দীর্ঘ ৭১দিন ধরে শরণার্থী ও মৃত্যু পথযাত্রী । আর এই বিষয়ে বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায় ! আর এত কিছুর পরও ত্রিপুরার বাঙালীদের হুমকি ধমকি শুনতে হচ্ছে বাঙালী বাংলাদেশী ত্রিপুরা ছাড়ো কারণ, ত্রিপুরা ত্রিপুরিদের ! তাই আজ ত্রিপুরার আসল ইতিহাস জনসমক্ষে প্রকাশ করা সময় এসেছে । নাহলে বাঙালী বাঁচবে না । ইতিহাস সাক্ষী-- আজ থেকে ৫০০ বছর আগে এই ত্রিপুরার নাম ছিল 'শ্রীভূম' । যার ভূমিসন্তান বাঙালীরা । তাছাড়া রাজন্য আমল থেকে ত্রিপুরার রাজভাষা বাংলা হওয়া ও রাজ আমলের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল ও তথ্য প্রমাণ ইত্যাদি স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ দেয় যে, ত্রিপুরার ভূমিসন্তান বাঙালী । কিন্তু আজ উল্টো অসম, ত্রিপুরা সহ সারা ভারতে বাংলা ও বাঙালীর ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে ও ষড়যন্ত্র করে মুছে দেওয়া হচ্ছে ! আর তাই বাঙালীকে আবার মরতে হচ্ছে । অর্থাৎ, আজ বাঙালীর মাটিতেই বাঙালীকে বিদেশী ও অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করা হচ্ছে ! এ কোন্ সাম্রাজ্যবাদের একনায়কতন্ত্র চলছে ? যে স্বাধীন ভারতের জাতীয় গান ও সংগীত দু'জন মহাপুরুষ বাঙালীর দেওয়া আজ সেই বাঙালীরাই অসমের মাটিতে উপেক্ষিত ও তাঁদের বংশধরেরা বিদেশী ! এ কেমন অবিচার ? এ ভারত কি এখনো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবলে ? নাকি ক্ষমতা হস্তান্তর করা ব্রিটিশের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ ও দেশীয় পুঁজিপতিদের কবলে এ বর্তমান ভারত ? এরা বাঙলার অর্থনীতিকে শোষণ করছে ও বাঙালী জাতিটাকেই পুরোপুরি দুর্বল ও ধ্বংস করার কাজে মত্ত রয়েছে । মোদ্দা কথা, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যদি সারা দেশেই বাঙালীদের নিয়ে এমনই বিদেশী, অনুপ্রবেশকারী এসব ষড়যন্ত্রের খেলা খেলতেই থাকে তবে তাদেরকেই বলে দিতে হবে বাঙালীর আসল জায়গা কোনটা ? তার জন্মভূমি কোনটা ? আমরা বাঙলার ইতিহাস চাই । আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই । সাফ কথা, পঞ্জাবীদের যেমন পুনর্বাসনের রেজিমেন্ট দেওয়া হয়েছিল ঠিক তেমনি বাঙালীদের জন্যও পুনর্বাসন ও রেজিমেন্ট অবিলম্বে দিতে হবে । তাছাড়া জাতির এহেন সংকটজনক পরিস্থিতিতে ভারতীয় সংবিধানের ১-এর ৩ নং ধারা মোতাবেক বৃহৎ বাঙলা থেকে কেটে নেওয়া অঞ্চলগুলোকে আমাদের পুনরায় ফিরিয়ে দিতে হবে এবং এদের একত্রে জুড়ে দিয়ে এক শোষণমুক্ত স্বয়ং সম্পূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করে দিতে হবে । এ দাবী যুগের দাবী । এ দাবী বাঁচার ও অধিকারের দাবী । এই দাবী স্বাধীন ও সাংবিধানিক । অর্থাৎ "রাঢ়-সমতট-বরেন্দ্র-বঙ্গ-শ্রীভূমি-- এই পাঁচটি ক্ষেত্র নিয়ে যে সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল, বাঙলার সেই সমস্ত অঞ্চলকে আবার এক করতে হবে । বাঙলায় আজ একতাবোধের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী । এই একতাবোধ জেগে উঠলেই ভাঙ্গা বাঙলা আবার জোড়া লাগবে ।" ( প্রাউট প্রবক্তা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার ) । সার কথা হল-- সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনই সব সমস্যার একমাত্র মকরধ্বজ । সারা ভারতসহ পুরো বাঙলার অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্যেই আজ নোতুন এক বিপ্লবের ডাক দিতে হবে । নাহলে ভারত বাঁচবে না । দেশবাসীর ভালো করে মনে রাখা উচিত যে, বাঙলা বাঁচলে ভারত বাঁচবে আর ভারত বাঁচলে বিশ্ব বাঁচবে । বাঙালী জাতি সবসময় একটা স্বপ্নই দেখে, "ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো"। তাই এবার সময় এসেছে আরেকটা প্রকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামের । প্রস্তুত হও দেশবাসী...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন