ইডা কেমন বিয়া


               ✍️ রাজেশ পাল 

মিলন  - কিগো অনির্বাণের মা বাড়িতে আসোনি তুমি ? কই তুমি ?

শিবানী - ওমা মিলন দি যে , আসুন দিদি আসুন , ঘরে আসুন ।

মিলন - নানা ঘরে আইতাম না , তোমরার ঘরে আইতে ডর লাগে ‌। আচ্ছা কিগো পাড়ার সবাই ইডি কিতা কয় তোমার পুলা বইলে এক পুলারে বিয়া করবো ? ইডা কি সত‍্যি ?

শিবানী - হ‍্যাঁ ! দিদি এটা সত্যি কথা , আনির্বাণ , আবির নামের একজন ছেলেকে ভালোবাসে এবং সে তাকেই বিয়ে করতে চায় । আমাদের কোনো অসুবিধা নেই, কারণ ভালোবাসা মনের মিলন । ছেলে সমকামী এবং সমকামিতা কোনো রোগ নয়  , ছেলের খুশিতেই আমরা খুশি ।

মিলন - ওমা ইডি আবার কেমন বিয়া ? তারা পুলা না মাইয়া ? জামাই কেডা আর বৌ কেডা ?ইত্তা কিতা হইতাচে আমাদের ভদ্র সমাজে ? মানে ইডা কি সত্যি পুলার লগে পুলার বিয়া হয় ? ওমা কেমনে ?  আবার মাইয়া মানুষেরও বিয়া হয় মাইয়ার লগে ? কলি যোগ , পাপে একদম ছাইয়া গেছে গা সংসারটা , এই যে মহামারী এতানের লিগা হইতাচে , ছি ছি , জীবনে ও এমন শুনচিনা । ইতাতো রোগ ওঝা-বৈদ‍্য দেখাও ভাল হইয়া যাইবো । সর্বনাশ , পুলা দেহি ইডা হিজরা । পাড়ার নাম ডুবছে ।
  
"মুখ সামলে কথা বলুন , কঠোর আওয়াজে মিলনের সামনে উপস্থিত হলেন অমরেশ রায় অর্থাৎ অনির্বাণের বাবা ।" 

অমরেশ - আমার ছেলেকে গালাগালি দেওয়ার সাহস কে দিল আপনাকে , আর কাকে আপনি হিজড়া বলছেন , সমকামী পুরুষ মানে হিজড়া নয় , অশিক্ষিতদের মতো কথা বলবেন না । নিজের ছেলেকে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করালেন , ছেলের বউকে দিনরাত অত‍্যাচার করেন বাপের বাড়ি থেকে সম্পত্তির ভাগ আনার জন্য , মদ খেয়ে ছোট ছেলে রাস্তায় পরে থাকে , নারী জনিত ব‍্যাপারে দুবার গেলো লাল ঘরে আর এখন আপনি এসেছেন আমার ছেলের দিকে আঙ্গুল তুলতে ।
   হ‍্যাঁ আমার ছেলে গে , সে একজন সমকামী কিন্তু সে একজন অমানুষ নয় । আর পাড়ার নাম ডুবলো মানে , কয়েকদিন আগেতো ননীদার বাড়িতে পুলিশ এসছিলো , ছেলে নাকি ননীদা এবং ইলাদি কে আর রাখতে পারবেনা , ওনাদের বলল বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে কই তখন কি পাড়ার নাম উজ্জ্বল হয়েছিল ?  নারী জনিত ব‍্যাপারে যখন আপনার ছেলে জেলে গেল তখন এই কথা গুলো কোথায় ছিল ? 
    আমার ছেলে যেমনই হোক তাকে নিয়ে আমার গর্ভবোধ হয় । একজন নারীকে বিয়ে করে একজন মুখোশধারী পুরুষ সাজার ইচ্ছে আমার ছেলের নেই । প্রকৃত পুরুষ হতে গেলে মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে এমনটা নয় । 
     আপনাদের মতো শিক্ষিত মূর্খদের জন্যই সমাজে সমকামীরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় । দোষ আপনার শিক্ষায় আছে , আমার ছেলের অনুভূতির মধ্যে নেই । গুনগত শিক্ষার প্রয়োজন আপনার মতো মানুষের দরকার , হাসপাতালে আমার ছেলেকে নয় আপনাদের বিদ্যালয়ে পাঠানো দরকার ।

মিলন - থাক্ থাক্ ! আমারে জ্ঞান দিতে লাগতোনা , আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে , নিজের পুলারে ঠিক করতে পারেনা আমারে কইতো আইসে । আমার পুলা জেলে গেছে দেইখ্যা কি হইসে , পুলা পান মাইয়ার পিচে ঘুরবো ইডাতো নিয়ম ।

শিবানী - স্ত্রীলতাহানি করাটাও নিয়ম ?
 মিলন - আমার পুলা স্ত্রীলতাহানি করছে না , মাইয়া ইডা আমার পুলারে ফাসাইচে ।
 অমরেশ - এইট পাশ একজন বেকার ছেলেকে ডাক্তারী পড়ুয়া একজন মেয়ে ফাসালো , wow interesting !
 
মিলন -  এখন কি আমার ছেলের দোষ বাইর করতাসো , নিজের পুলার দোষ ডাকনের লিগা ? নিজের হিজড়া পুলারে বোঝাও ইত্তা যাতে না করে , মাস্টারের চাকুরী করে যেকোনো মাইয়া পাইবো কউ মাইয়ারে বিয়া করতে ,বংশের প্রদীপ পাইবা ।

শিবানী - এইটা না হয় আমরা চিন্তা করবো , অনি কাকে বিয়ে করবে । আর বাকিটা আমরা আবির আর অনির উপর ছেড়ে দিলাম , বিয়ের পর ওরা কিভাবে কি করবে , কে কার সাথে ...Let them decide it ...It's not our concern. 

মিলন - এইসব ধর্মের বিরুদ্ধে , ইতা পাপ ।
অমরেশ - তাহলে হরিহর কে ছিল , আয়াপ্পা ভগবান কার সন্তান , শিখন্ডির কে ছিল ?
মিলন - তারাতো ভগবান , তারার সাথে মানুষের তুলনা কেমনে হয় ?
অমরেশ - আমি শুধু আপনার প্রশ্নের উত্তর দিলাম । 
আমি ডাক্তার অমরেশ পাল কথা দিচ্ছি আমি আমার ছেলের বিয়ে , আবিরের সাথেই দেবো , দেখি আমায় কে আটকায় , আমি এই সমাজের বুকে অপবিত্র কলঙ্কিত ভালোবাসাটাকে পবিত্র এবং কাঙ্ক্ষিত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো । যেই সমাজ নিজেই ঠিক না সেই এসেছে আমার ছেলের সত্বা নিয়ে কথা বলতে ।

মিলন - মাগো মা তোমরারে কেও বোঝাইতে পারতোনা । আমি যাইগা ‌। কলি যোগ , ঘোর কলি যোগ ।

শিবানী - আমাদের কে বোঝাতে আসবেনা দয়া করে , আমরা বোঝার ক্ষমতা রাখি বলেইতো ছেলের পছন্দকে নিজেদের পছন্দে পরিণত করেছি । আপনি এখন আসতে পারেন , নমস্কার ।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন