নতুন বৌ ও ভূত

✒️মাধুরী লোধ

নতুন বৌ শ্রাবনী । শিক্ষিতা সুন্দরী রুচিশীলা ।বয়স ত্রিশ এর ঘরে । এটুকু খুঁত ।বি এ পাশ ,এম এ পাশ বি এড করতে করতে বয়স বেড়ে গেছে । চাকুরির ইন্টার ভিউ দিতে দিতে আরো বেড়ে গেলো বয়সের হিসাব ।ত্রিশ এর চৌকাঠ পাড় হতেই বিয়ের সম্বন্ধ আসা বন্ধ হতে লাগলো ।বাব মা নেই এই পৃথিবীতে তাই কন্যা দায় ও নেই । শ্রাবণী একা ।এক বাড়িতে থাকলে ও দাদার আলাদা স্্সার ।সে আছে তিন ঠেলার ঘর খোদা রক্ষা কর ।
এখন ও বিবাহিতা দিদি জামাইবাবু পাত্র খুঁজছেন ,নাক উঁচু শ্রাবণী এটা সেটা বলে কাটছেন বিয়ের প্রস্তাব কেন না তার পছন্দের পাত্র এখনো মেলেনি ।
শেষাবধি পাত্র পাওয়া গেল দোজব । আগে বিয়ে হয়েছিল বাচ্চা প্রসবের সময় মারা গেছেন স্ত্রী । একটা মেয়ে সন্তান আছে দেখাশোনা করছে ঐ শ্বশুর বাড়ির মানুষরা । শ্রাবণী না চাইলে ঐ বাড়িতে থাকবে ,এ নিয়ে ভবিষ্যতে কোন ঝামেলা হবে না ।
বিয়ের সানাই বাজলো , বরপক্ষ এলো বর যাত্রী নিয়ে ।সাধ্যমত দান সামগ্রী দিলো ভাইবোন রা মিলে ।বৌভাত হলো ।কনে পক্ষ বিদায় হবার পর শুরু হলো শুভ রাত্রির আয়োজন । রাত বাড়তে থাকে । আত্মীয় স্বজন দের কাজ আ্য শেষ হয় না । তবুও বর বৌকে নিয়ে আসা হয় ফুল শয্যার খাটে ।
নতুন পোশাক এ শ্রাবণী কে লাগছিলো লাবন্যময়ী রহস্যময়ী । নতুন বর কমলেশ ও সেজে গুজে এসেছে ।বৌদিরা আবার মালা বদল করাবেন ,কড়ি খেলাবেন , মিষ্টি মুখ করাবেন , শেষাবধি আবার আ্্টি বদল এর পর শুভ রাত্রি হবে স্বামী স্ত্রী তে , সারাজীবন পরস্পরের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে আজীবন সঙ্গী থাকবেন ।
বৌদিদের সামনেই আচমকা ছিঁড়ে গেল মঙ্গলসূত্র শ্রাবনীর গলার ,সারাঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বৌকে পড়িয়ে দেবার আ্্টি । বৌদির দল মালা বদল আর পাশা খেলা খেলিয়ে বর বৌ কে ফুল শয্যার অনুমতি দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে বাইরে । কিছু ক্ষন পর ফুলশয্যার ঘর থেকে আওয়াজ বে্য হতে থাকে হি হি হা হা । কখনো খিলখিলিয়ে হাসি কখনো বা হি হি সি সি করে কান্নার শব্দ ।এ বাড়ি ও বাড়ির আত্মীয় স্বজন দের চোখে মুখে দুশ্চিন্তায় ছাপ ।এ সময় নতুন বর বৌ কে ঘাটানো ঠিক নয় । তবুও বৌদির দল দড়জায় টোকা দেয় ।দড়জা খুলে দেয় নতুন জায়াই ।সকলে দেখতে পায় বর বৌ এর বালিশের মাঝখানে একটা কোল বালিশ শুয়ে আছে ,সেটার কারনে ওদের শুভ রাত্রি তে বিঘ্ন হচ্ছে ।
শ্রাবনী কোলবালিশ টা সোফায় রেখে আসার চেষ্টা করছে বার বার কিন্তু পারছে না ।
বৌদির দল বালিশ টা নিয়ে আসে বাইরে ওরা যাতে শান্তিতে দুজনে কাটাতে পারে দুজন দুজনকে বুঝিয়ে আসে ।
অনেক ক্ষন পর আবার শুরু হয় সোরগোল ।হা হা হি হি হো হো । স্বামী সতরীর মধ্যে কথাকাটাকাটি ,পাছড়াপাছড়ি । ধুমধাম হুটহাট ।হাউ মাউ । কখনো খিলখিলিয়ে হাসি আবার বৌ বলছে কাতুকুতু দিয়ো না লাগছে লাগ্ ছে । ফুল শয্যার রাতে এ হেন পরিস্থিতি হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না । নিশুতি রাতে দল বেঁধে বৌদির দল দিদির দল বুড়ো বুড়ির দল ধাক্কায় নতুন বর বৌয়ের দড়জা ।
দড়জা খুলে হতভম্ব আত্মীয় স্বজন এর দল শ্রাবণী আ্য তার বড় এ্য সারা শরীরে লেপটানো আছে সিঁদুর । দুজনের কি্্ভূত কিমাকার ।সারা ঘরে সিঁদুর ছড়ানো ছিটানো আছে বর বৌয়ের পাশা খেলার হাড়ি সরা ,ছড়ানো আছে মালা বদল এর মালা মুকুট ,দান সামগ্রী ভেঙ্গে চুরে ছড়ানো ছিটানো আছে সারা ঘরে ।বর চুপ থাকলে ও বৌ চুপ থাকছে না ।
শ্রাবনী রুদ্র রুপ ধারণ করে বলছে ভাত কাপড় দিবি বলে বিয়ে করলি ক ই ভাত কাপড় ? সেই তো তুলে দিলি চিতেয় । এখন আমার মা টা কে দুধ খাওয়াবে কে ? ঘুম পাড়াবে কে ? বড় করবে কে ?
ব্যস ,সকলে যা বুঝবার বুঝে গেছে । শ্রাবনী তে ভর করেছে পুরানো বৌ ।যে বাচ্চা প্রসবের সময় মারা গেছে ।তাই নতুন বৌ এর সাথে ফুল শয্যা হতে দিচ্ছে না ।
 ওঝা বৈদ্য ডাকা হলো , বন্ধ করা হলো সারা বাড়ি । আলাদা করে দেওয়া হলো নতুন বর বৌ এর বিছানা ।তার পর ও থামছে না এ বাড়ির রহস্য ময় কানড কারখানা । শ্রাবনী এখন ভয় পায় যে কোন জিনিসে । একটা জিনিষ যদি সে ঠাকুর ঘরে রেখে আসে সেটা নিজে নিজে চলে আসে রান্না ঘরে বা উঠোনে ।
এসব ভূতুরে বিষয়ে মাথা দিয়ে তার মাথা নষ্ট হবার জোগাড় । দিদি কে জানায় সব কিছু । দিদি জামাইবাবু হাতড়ে পায় না কি করা উচিত । সকলের একমত ছাড়াছাড়ি হয়ে যাক সমন্ধ ।বর পক্ষের মানুষ বলছেন নতুন বৌ পাগল ,কনে পক্ষ বলছেন ঐ খানে অপদেবতার বাসা ।এদের সাথে কোন সুস্থ শিক্ষিত লোক বাস করতে পারে না ।
ছাড়া ছাড়িতে মত নেই শ্রাবনীর বর এর ।বৌ পাগল হোক বা সূচিবায়ু বিকার গ্রস্থ হোক শ্রাবনী কে ছাড়বে না সে ।এক বৌ মরে ওকে সর্ব সান্ত করে গেছে এখন নতুন বৌ কে ছেড়ে দিলে সেটা হবে মৃত্যুর সামিল । দমে যান গার্জেন রা । উপায় খুঁজতে থাকেন সকলে মিলে ।
এ বাড়িতে টিকে থাকার অসাধ্য সাধন করে শ্রাবন্তী । বুঝতে পারে বরের আগের বৌ ওকে সহ্য করতে পারে না ।সব ভূতুড়ে কানড ঘটায় । রান্না ঘরে ছাই ছিটিয়ে রাখে আলনার কাপড় ফেলে আসে কলপাড়ে , ভাতের ফেন এন ফেল বারান্দায় অনেক রাতে ঝুমঝুম নূপুর বাজায় ঘুমাতে দেয় না ।
শ্রাবনী কে নেওয়া হয় শিব বাড়ি মনসা বাড়ি ।জীন এর কাছে । তাবিজ জল পরা গা বন্ধ করা হয় ।কদিন ভালো থাকে আবার যে কপাল সে মাথা ।
দিদি জামাই বাবু শান্তি যজ্ঞের আয়োজন করেন শ্রাবনীর বাড়িতে ।ডাকা হয় লাল শালু পরিহিত সাধু সন্ন্যাসী দের ।দল বেঁধে আসেন এলাকার মানুষ । আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব এ ভরে গেছে বাড়ি । বসানো হয়েছে শ্রাবণী কে ওর বর কে । হয়েছে খিচুড়ি প্রসাদ এর আয়োজন ।
সাধু সন্ন্যাসী গন যজ্ঞ শুরু করার আগেই ঘটে যায় অদ্ভুত এক কানড ।যজ্ঞ স্থলের পাতা আপনে চীৎকার করে কাঁদতে থাকে এক বছর বয়সী মেয়ে শিশু ।
একজন সন্ন্যাসী শ্রাবণী কে লক্ষ্য করে বলেন , আপনার মেয়ে কে কোলে নিন মা । উনি মেয়েকে আপনার হাতে তুলে দিয়ে শরী ধামে চলে যাবেন ।
শ্রাবনী সকলের আদেশ পালন করলো ।
যজ্ঞ শুরু হলো । অনেক ক্ষন বিশৃঙ্খলা চলার পর থেমে গেল ।
নতুন বর বৌ মেয়েকে নিয়ে থাকবার ঘরে আসে । শ্রাবনী দেখতে পায় খব সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো গোছানো হয়েছে ফুল শয্যার খাট । সারা ঘর ঝকঝকে তকতকে করে থরে থরে সাজানো গোছানো জিনিস পত্র । কোথাও নেই কোন বিশৃঙ্খলা ।
শ্রাবণীর কোলে মেয়ে শিশুটি খিল খিল করে হেসে চলছে ।
হাসতে থাকে বাড়ির মানুষ রা ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন