✍️ মিঠুন রায়
সকালবেলা থেকেই আজ মন ভালো নেই ফুঁচকির।মুখ যেন গুমরো গুমরো ভাব।ফুঁচকোর ভালো নাম অয়নিকা সেন।আসলে দাদু আদর করে ছোটবেলায় নাম দিয়েছিলেন ফুঁচকি।আর কি,এখন বাড়ির সবাই ছাড়াও পাড়া পড়শীদের কাছেও অয়নিকার একটাই পরিচিতি ফুঁচকি।সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে প্রথম বিভাগে।কিন্তু তার দীর্ঘদিনের শখ কলেজে ভর্তি হয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করার।কিন্তু পিতৃহীন ফুঁচকির দাদু-ঠাকুরমার ইচ্ছে এবার অন্তত নাতনীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো।এ নিয়েই পরিবারে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে বাক্ বিতন্ডা।
কিন্তু আজ সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই ফুঁচকি জানতে পারল বাড়িতে বিকেল বেলায় পাত্র পক্ষ আসছে তাকে দেখার জন্য।খবরটা শুনেই তার চক্ষু একেবারে চড়ক গাছ।এ কি কান্ড!সরাসরি দাদুর ঘরে গিয়ে হাজির।আমি কি তোমাদের বোঝা হয়ে গেছে নাকি?নতুবা বল,প্রয়োজনে আমি টিউশন করব।তবু এখন বিয়েতে বসব না।কিন্তু দাদু সদানন্দ বাবুও নাছোড়বান্দা।প্রবীন মানুষ।জবান যখন দিয়েছেন ছেলের পক্ষতো আসবেই।এনিয়ে আর কোনো কথা তিনি শুনতে রাজী নন। পাত্র অবিনাশ গুপ্ত।পাশ্ববর্তী শহরে সরকারি বিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষক।ভদ্র স্বভাবের ছেলে।যাই হোক নির্ধারিত সময়ে পাত্র পক্ষ বাড়িতে হাজির হল।অবিনাশের মা তো ফুঁচকিকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছেন।নিজের গলার গয়না দিয়ে তাকে আশীর্বাদ করেছেন।অবিনাশের সাথে একান্তে আলাপচারিতায় ফুঁচকি তার মনের ইচ্ছের কথা জানায়।সেও একবাক্যে রাজী হয়ে যায়।বেশ শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে বিয়ের দিন তারিখও হয়ে গেল।
একমাত্র নাতনির বিয়েতে কোনও ধরণের খামতি রাখতে রাজি নন সদানন্দ বাবু।সাড়ম্বরেই সম্পন্ন হল বিবাহ পর্ব।বাসর রাতে হল এক নতুন বিপত্তি।আচমকা একটা ফোন আসে অবিনাশের মোবাইলে।
-কি ডালিং, কেমন আছো।নতুন বউয়ের সাথে তোমার বাসর কেমন কাটছে, একবারও ভাবছো না আমার জীবনটা নষ্ট করে শেষপর্যন্ত অন্যের জীবনটা নিয়েও খেলছ তুমি!তুমি মিথ্যাবাদী, একটা প্রতারক।কেউ তোমাকে ক্ষমা করবে না।আমার জীবন নষ্ট করে তুমি নরকেও শান্তি পাবে না।
হঠাৎই লাইন কেটে গেল।বার বার অবিনাশ সেই অপরিচিত নম্বরটা ডায়াল করছে, অথচ কেউ রিসিভ করছে না।তবে গলার স্বর শুনে অবিনাশের আর বুঝতে বাকী রইল না,এই ফোনটা অবশ্যই ছিল রিয়ার।রিয়া ছিল তার কলেজ জীবনের সহপাঠী।শুধু সহপাঠীই নয়,এক সময়ের প্রেমিকা।কিন্তু রিয়াকে অবিনাশের পরিবার কখনো পছন্দ করেনি।বাধ্য হয়ে সে নিজে থেকেই রিয়ার কাছ থেকে সরে আসে।কিন্তু, একি!রিয়ার সাথে যে তার বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত কেটেছে।তবে কি রিয়ার কাছে ঐসব প্রমাণ এখনো রয়েছে।সিগেরেটের ধোয়ায় ভরে গেছে ঘর।অন্যদিকে ফুঁচকি ততক্ষণে ঘুমের দেশে।সারাদিনের ক্লান্তি যে তাকে অনেক আগেই অন্য জগতে নিয়ে গেছে।
সিড়ি দিয়ে বাড়ির ছাদে উঠেন অবিনাশ।নিজেকে যে আজ বড়ো অপরাধী মনে হচ্ছে।তবে কি রিয়া ও ফুঁচকি দুটি মেয়ের জীবন আমার কারণে নষ্ট হল! শেষরাতে ছাঁদ থেকে ঝাপ দিয়ে প্রাণ দিল সে।ভোরের আলো ফুটতেই বাড়িতে কান্নার রোল।নব বধূর হাতের মেহেন্দীর রঙও মুছেনি।এখনো পায়ে আলতা।এরই মধ্যে চিরদিনের মতো মুছে গেল সিঁথির সিদুর।লাল বেনারসীর বদলে চিরদিনের জন্য তার পরিধেয় হল সাদা থান কাপড়।ফুঁচকির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।
মুর্ছিত ফুঁচকিকে নিয়ে ভর্তি করানো হল স্হানীয় হাসপাতালে।বৃদ্ধ সদানন্দবাবু আজ নাতনির দুঃখে দিশেহারা।আমিইতো এই ছোট্ মেয়েটার জীবন নষ্ট করেছি।সেতো এখন বিয়ে করার পক্ষে ছিল না।নিয়তির এ কি নির্মম পরিহাস!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন