✍️ স্বর্ণ কমলিকা চক্রবর্তী
বৃষ্টি আজ সারা দিনেও কমবে না, তা বলে কোন কিছু বন্ধ নেই ,বাজারহাট, স্কুল ,কলেজ ,অফিস সবই খোলা ।ছেলের সকালে স্কুল কিন্তু সে উঠবে না। মোহিনী পড়েছে বিপদে ,ওর আজ একটা ক্লাস টেস্ট আছে ।কাল রাতে কষ্ট করেসব শিখিয়েছে। এখন যদি পরীক্ষা না দিতে পারে তবে তো নাম্বারের পার্সেন্টেজ কমে যাবে। বৃষ্টিও যে একটা শুরু করেছে ,সেই মধ্যরাত থেকে ঝরছে এখন তো একটু বিশ্রাম নিতে পারে। কি করে যে আজ ঘুম ভাঙবে জানে না সে।
মোবাইলটা খুললো
সে, আজকাল খুব সুবিধা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ থাকাতে। সব খবরা খবর এই গ্রুপে চলে আসে ,সে তো মনে মনে ঠাকুর কে ডেকেই মোবাইলটা খুলেছে মেসেজটাও পেয়ে গেল যেটা সে দেখতে চেয়েছিল। স্কুলের একটা গ্রুপ রয়েছে তাদের যা কিছু জানানোর বিষয় সব এই গ্রুপে প্রিন্সিপাল স্যার পোস্ট করে দেন, ফোন করার কোন প্রয়োজনই পড়ে না। সে চাইছিল প্রিন্সিপাল স্যার সেটাই পোস্ট করেছেন, মানে আজ সকালের সমস্ত পরীক্ষা বাতিল করে দেয়া হয়েছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দরুন ।আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ।
পুরো মেসেজটা পড়ে আনন্দে হুররে বলে চেঁচে উঠল মোহিনী। মনে হচ্ছে সেই ছাত্র, পরীক্ষা দিতে হবে না স্কুলে যেতে হবে না এমন দিনে শুধু ঘুম ।সত্যিই ছেলে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে ,পড়েছে তো সে। অতএব পরীক্ষা যে ওর ই ।
জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। বাইরে রাস্তার বেশ জল জমেছে ছাতা মাথায় সব এখন বাজারের দিকে যাচ্ছে। যারা গত রাতে বাজার করে নিয়েছে তারা ভাগ্যবান কারণ জল দিয়ে তাদের যেতে হবে না ।ওর বৱ সেই ভাগ্যবানদের দলে পড়ে কারণ আজ তাদেরও বাজার করা হয়ে গেছে।
যেই বাজারের কথা মনে হলো অমনি বিদ্যুতের মতো মাথায় খুব তাড়াতাড়ি একটা প্রশ্ন মাথায় এলো। সব খোলা ঠিক আছে ,কিন্তু ছায়া ?সে ছুটি নেবে না তো? বলতেই পারে। ফোন করে যে "এত বৃষ্টিতে রাস্তাতে অটো পাচ্ছি না তাই আজ আসবো না।
ঘড়ির দিকে তাকালো সে ।ওর আসার এখনো সময় হয়নি ,ফোন তো হাতেই আছে। ফোন তো আসেনি, এ টো বাসন গুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে গতকাল এত বাসন না ভরালে ভালো ছিল। যেদিন ছায়া বলে যায় যে আগামীকাল আসবে না সেদিন বাসনের প্রতি মায়া বেড়ে যায়। শুধু শুধু বাসন ভরাতে মন চায় না ,আর যখন আসে তখন যে কত বাসনের প্রয়োজন হয়।
গতকাল প্রচুর বাসন ভরিয়েছে এখন মনে হচ্ছে বাসন গুলো ওর মাজতে হবে, নিজের উপরই কেমন একটা রাগ উঠতে লাগলো। বাবা-ছেলে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, ঘুম থেকে উঠেই বলবে ," রান্না হল আজ আমাকে তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে প্রচুর কাজ জমে আছে ,"নিত্যদিনের ডায়লগ ওর মুখস্ত ।কিন্তু ছায়া তো এখনো এলো না, সময় যে বয়ে যাচ্ছে ।
নির্দিষ্ট সময়ের ১০ মিনিট পর টুংটাং শোনা গেল, দৌড়ে গিয়ে খুশি মনে দরজা খুলল সে ।আর ওর চিন্তা নেই ,ছাতাটা বারান্দায় রেখে ছায়া বলল "বৃষ্টির জন্য রাস্তায় অটো খুব কম ছেলে বলেছিল এমন দিনে না বার হতে কিন্তু দাদার অফিসরয়েছে তোমার কষ্ট হবে তাই চলে এলাম। "সে বলল "সত্যি কষ্ট হতো ,এক কাপ গরম চা খেয়ে কাজে লেগে যাও "।ছায়া বলল "ঠিক আছে গরম চা দাও।"8 সে বাসন মাজা শুরু করেছে ওর ফোনটা এল ।ফোনটা ঘাড়ে চাপা দিয়ে কথা বলতে বলতে ওর কাজ শুরু হল। মোহিনী রান্না বসিয়েছে ওর কানে মোটামুটি কথাগুলো সব চলে আসে ।সে শুনতে চায় না কিন্তু বারনও করতে পারছে না। কি করবে সে?
ছায়া আর পাঁচটা বউয়ের মত সংসার করতে চেয়েছিল। কিন্তু যে সংসারটা করতে সাহায্য করবে তাকে তো সবার আগে সংসারী হতে হবে। শুধু কি ছেলে মেয়ে জন্ম দেওয়া ,প্রতি রাতে মদ খেয়ে এসে পুরুষত্ব ফলানোর জন্য বউকে প্রচন্ড ভাবে মারধর করা ,এটাই সংসারী পুরুষের লক্ষণ ?যেটা নাকি ছায়ার ঘাড়ে পড়েছিল। ভেবেছিল সংসার করবে ।সফলতা অর্জন করতে পারলো না ।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল যে সে বাচ্চা গুলো নিয়ে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু খাবে কি? কোথায় থাকবে? বাপের বাড়িতে সে যাবে না। লেখাপড়া তো শেখেনি কিন্তু বাচ্চাদের স্কুলে পড়াচ্ছে। অতএব এখন চারটে বাড়িতে এসে কাজ করে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসে মোটামুটি এখন সে ভালোই চলছে। সে চার বাড়ি থেকে প্রচুর সহায়তা পায় বাচ্চাদের লেখাপড়ার ব্যাপারে কিন্তু এত কিছুর পর যে ওর মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। মনের ব্যাকুলতা সে বুঝতে পারে অন্য কারোর বোঝার কথা না।
পতি মহারাজ খুশি হয়ে আরেকজন কে নিয়ে খুশিতে জীবন কাটাচ্ছে ।কিন্তু সে? ওর কথা কে ভাববে?
ভগবান সত্যিই ওকে একজন ভাবার লোক দিল অটো দিয়ে ওর সঙ্গে যে মহিলা প্রায়ই আসে এবং কথাবার্তা হয় সে ওর এক পরিচিত বন্ধুর ফোন নাম্বার দিলো ছায়াকে ।ছায়া কেন জানি মিসকল দিল সেই নাম্বারে ।
আজ প্রায় দু মাস ছায়া শুধু ফোনে ওর সেই বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে। যখন সে কথা বলে ওর চোখে মুখে একটা তৃপ্তির আভা ফুটে ওঠে ।সেই বন্ধুর চারচাকা গাড়ি রয়েছে ,সকালে কাজে বেরোবার আগে ছায়াকে ফোন করে। সেও এই ফোনের অপেক্ষায় থাকে ।
প্রত্যেক মানুষের তো একটা মনের চাহিদা থাকে সেটা যদি সে কথা বলে পূরণ করতে পারে তবে কি সেটা দোষের? মোহিনি বুঝতে পারছে না সে ছায়াকে কি বলবে ?ওর কি বলা উচিত সে যেন ওই ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখে ?কেন বলবে সে ?সে যদি একটু সময় নিজেকে একটু অক্সিজেন দিতে পারে তবে ক্ষতি কি জীবনে? সুখের সংজ্ঞাটা জানতো না। না হয় ফোনে সে বিবাহিত ছেলের সঙ্গে কথা বলে সে সুখ শব্দটার মানে খোঁজার চেষ্টা করছে,। এবং হয়তো পাচ্ছে ও।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন