গোলু

✍️ -মৌসুমী গোয়ালা চারদিকে প্রবল ঝড় বইছে। ঝড় কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসতেই পড়তে লাগল ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি । টিনা কাঁচের জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল বাইরে। হঠাৎ দেখল গেরেজের সামনে ছোট গোল বাদামি রঙের কিছু একটা রাখা। ভালো করে লক্ষ্য করতেই বুঝল জিনিসটি নড়াচড়া করছে। আলো আঁধারিতে স্পষ্ট দেখা না গেলেও দুটো কান ও একটা লেজ দেখা যাচ্ছিল। বাবাকে ডেকে দেখাতেই, তিনি ছাতা মাথায় দিয়ে সেটিকে ঘরে নিয়ে এলন। টিনা খুশি হয়ে নাম রাখল গোলু। তার আকৃতি দেখেই এই নামকরণ। টিনা এবং তার মার যত্নআত্তিতে সারমেয় শাবকটি ধিরে ধিরে বড়ো হতে থাকল। বিপত্তি ঘটল টিনার ঠাম্মার তীর্থভ্রমন শেষে বাড়ি ফিরতেই। গোলুকে দেখেই তিনি রেগে ঢেকে একশা। তার মতে কুকুর ঘরে ঢুকলে শনিদেবতা রুষ্ট হয় তাই তার এখানে থাকা চলবে না। টিনার জেদের কাছে হার মানলেও তক্কেতক্কে ছিলেন কখন এই আপদ বালাই কে বিদায় করা যায়। সুযোগ বুঝে করলেনও ঠিক তাই। টিনা গ্রীষ্মের ছুটিতে মাসির বাড়িতে বেড়াতে গেলেই বাড়ি থেকে দূরে ছেড়ে দিয়ে এলেন। ইট কংক্রিটের জঙ্গলে গ্রীষ্মের দাবদাহে গোলুর প্রাণ ওষ্টাগত। পিচের রাস্তার গরমে শরীর ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। বাতাস উত্তপ্ত। তেষ্টায় জিভ শুকিয়ে কাঠ। বড়ো বড়ো ইমারতের ভিড়ে আশ্রয়ের স্থানটুকো খুঁজে পাওয়া মুসকিল। এদিক ওদিক অনেক ঘোরাঘুরির পর আস্তাকুঁড়ের খাবারে কোনরকমে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে রাখে একরত্তিটি। চরদিনের মাথায় টিনা মাসির বাড়ি থেকে ফিরে এসে গোলুকে না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। মনের মধ্যে কালবৈশাখীর তান্ডব চলতে থাকে। মায়ের শত বারণ সত্বেও সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পরে গোলুর খোঁজে। চারদিকে খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে পাওয়া গেল একটি বদ্ধ দোকানের শেডের নিচে। ভয়ে সিঁটিয়ে এককোনে বসা। টিনাকে দেখেই দৌড়ে তার পায়ের এসে কুঁই কুঁই শব্দ করতে থাকে। যেন অনেকদিনের জমানো দুঃখ অভিমান সব জানাচ্ছে। টিনাও গোলুকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। মাটি থেকে তুলে আদর করে সাইকেলের কেরিয়ারে রাখল। গ্রীষ্মের কালবৈশাখীর শেষে টিনার দু'চোখে শ্রাবনের ধারা। চোখের জল মুছতে মুছতে দু'জন এগিয়ে চলল বাড়ির পথে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন