✍️ পদ্মাবতী মন্ডল
তিরিশ বছর হারিয়ে গেছে , চোরা নদীর স্রোতে !
এই জীবনে পাইনি কিছুই ; অশুভ বরাতে ।
পুজোর আগে পাইক এসে উঠোন খুঁড়ে নিত
নরম , এঁটেল, দোঁয়াশ দিয়েই এক মিত্তিক হত ।
বয়স যখন সবে তেরোর ঘরে -
আপন মামা বেচে দিলেন পতিতার সংসারে ;
ত্রিকোন জমির কেনাবেচা হবে , কারো নেই কোনো দায় ।
সেই বয়সে থেকে রোজই নতুন বাবু পাই !
কঁকিয়ে ছিলাম সেদিন অনেক
কাতরে ছিলাম রাতে !
তেরো বছুরে চঞ্চলা রোজ গোঁঙায় বিছানাতে ।
তবুও ওরা ছাড়লোনা কেউ , সমাজ দিলো কুৎসা !
তেরো পেরিয়ে চোদ্দ এলো হয়ে উঠলাম বেশ্যা ।
দেওয়ালের ঐ ক্যালেন্ডারে ঝুলতো দেবীর ছবি ;
পুজো হত ! ঢাক বাজতো ; বিকিয়ে দিতাম সবই ।
পথে বেরোলেই সমাজ আমায় নষ্ট মেয়ে বলতো
সেই সমাজই রাতে আমার বিছানাতে গলতো !
নিন্দা হত , চর্চা হত , মুখ লুকাতাম আমি
এই সমাজে ছিলনা আমার আপন কোনো স্বামী ।
সবার স্বামীই লুকিয়ে কেবল আমার কাছে আসতো
একটা আধটা ঘন্টা আমায় ভীষণ ভালোবাসতো ।
ভালোবেসে কেউ দেয়নি সিঁদুর একটু খানি
সারাজীবন বেশ্যা হয়ে , পেলাম অপমানই !
কেন সমাজ ? কেন তোমার এমন তর বিচার ?
বলতে পারো শুধু ওদের ভাগ্যে কেন তিরস্কার !
দোষ কী শুধু একা ওদের ?
দোষ সমাজের ছিলনা !
তবে কেন তোমার সমাজ সেই দায়ভার নিলোনা ?
কেন ওরা কোনঠাসা হয় অন্ধকার ঐ ঝুপরিতে ?
কেন ওরা রোজ ভিজে যায় দুই নয়নের বৃষ্টিতে ?
দুর্গা দেবীর মূর্তি গড়ো যাদের ঘরের মৃত্তিকায়!
সেই মেয়েরা কেমন করে অশুচি আজ "ঐ পাড়ায়?"
নতুন আবাহনে মা'কে এবার কিছু বলতে দাও
প্রতি পুজোর সিঁদুর খেলা এবার ওদের খেলতে দাও
ওরাও সিঁদুর মাখুক মাথায় , অঞ্জলী দিক অষ্টমীর
মা'কে বরণ ওরাও করুক ; বোধন ঘটুক
উন্নতির!
তেরো বছরের মালতী আজ তেতাল্লিশ এর মা-
লজ্জা ছেড়ে এগিয়ে এলো ঘোমটা নিলনা !
এক পা দু পা মন্ডপেতে এগিয়ে এলো ধীরে
সমাজ তখন অবাক চোখে ধরছে ওকে ঘিরে
প্রথম সিঁড়ি পেরিয়ে সেদিন বেদীর উপর কে ?
সমাজ যাকে নোংরা বলে দাগিয়ে দিয়েছে ,
মায়ের পায়ের সিঁদুর সেদিন মাথায় ওদের উঠলো
চারিদিকে স্তব্ধ তবুও ঢাকে কাঠি পড়লো
পুরোহিতের হাত কাঁপছে , এসব কিসের ইঙ্গিত !
কাঁসর ঘন্টা শঙ্খধ্বনী প্রলয় সুরে সঙ্গীত ।
হঠাৎ পৃথিবী শান্ত হল বৃষ্টিমুখর ধারা
নিয়ম ভাঙা সিঁদুর খেলার সাক্ষী থাকলো ওরা
সমাজের চোখে পতিতাও আজ হয়ে গেছে পরিনীতা
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেণ সংস্থিতা "
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন